মুজনাই সাপ্তাহিক
বিশেষ সংখ্যা
জাতির জনক
শ্রাবণী সেনগুপ্ত
জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন কতক পরিমাণ ।গান্ধীজির ঐতিহাসিক ভূমিকার তাৎপর্য্য আমরা অস্বীকার করতে পারিনা।একথা আজ স্বীকার করতেই হবে যে-স্বাধীনতা দিয়ে বিচার করলে গান্ধীজির ঐতিহাসিক ভুমিকা ভারতের জন্য এক যুগান্তকারী ঘটনাবিশেষ,সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় স্বাধীনতার নেতা হিসেবে তাঁর স্থান আজও অটল। গান্ধীজির অহিংসা,তাঁর বিকেন্দ্রীকরণ, কুটির শিল্প ইত্যাদির প্রতি বিশেষ বাণী ছাড়াও তিনি যে ভারতের মুক্তি সংগ্রামের নেতা ছিলেন সেই ঐতিহাসিক তাৎপর্য নেহেরু বিবৃত করেছেন তাঁর 'Discovery of India 'বইটিতে।
গান্ধীজি শুধু স্বাধীনতার আন্দোলনই সংগঠিত করেন নি,সেইসঙ্গে তিনি হয়তো অজান্তেই সমাজতান্ত্রিক পটভূমিকাও তৈরি করেছিলেন।তিনি নিজেকে হরিজন বা ভাঙ্গি বলে পরিচয় দিতেন।তিনি ছিলেন শ্রেনীহীন সমাজের এক উপাসক।সর্বোদয় সমাজ,শোষণহীন, শ্রেণীহীন সমাজের আদর্শই ছিল তাঁর প্রতিদিনকার জীবনচর্চা।ভারতের ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে গান্ধীজি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় স্বাধীনতা অন্দোলনের সম্মিলিত শক্তিসমূহের নেতৃত্ব দিয়েছেন।ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে গান্ধীজির স্থান সর্বাগ্রে।ধনী,বণিক,চাষী,মজুর, নারী-পুরুষ,শিক্ষিত,অশিক্ষিত, বহু শ্রেনী উপশ্রেণীর মানুষজন সবাইকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছেন তিনি।নিজের অসামান্য ক্ষমতা ও শক্তির বলেই তাদেরকে প্রায় দুই যুগ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।গান্ধীজির বিভিন্ন লেখাতে তাঁর সত্যকে জানার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ পেয়েছে।তবে তিনি নিজে যা আবিষ্কার করেছেন,প্রত্যয় করেছেন তাকেই অবিনশ্বর ও শেষ সত্য বলে জাহির করতে কোনো চাপ সৃষ্টি করেননি।তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক।জীবনভর সত্য সন্ধানের পর তিনি সত্য থেকে সত্যতে পৌঁছাতে চেয়েছেন।প্রকৃত বৈজ্ঞানিকের মতো তাঁর মন ছিল সর্বদাই জিজ্ঞাসু, সদাসতর্ক,নতুনকে গ্রহণ করার মতোন সাহসী।সত্যই ছিল তাঁর কাছে ঈশ্বরের মতোন।তাই কোনো সময়েই তিনি নিত্য নতুন সত্যকে গ্রহণ করতে অসমর্থ হননি।তিনি মনে করতেন সত্যকে আবিষ্কার করা অহিংস পথেই সহজ ও সম্ভব।গান্ধীজির বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্ধবিশ্বাসের কোনো স্থান ছিলনা।উদার দৃষ্টিভঙ্গী তাঁকে সম্পূর্ন আধুনিক করে তুলেছিল।তিনি ভারতের ইতিহাসে spirit ,passion for truth খুঁজে পেয়েছিলেন,তাই তাঁর ভারতবর্ষের প্রতি এত শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস ছিল।তাই তিনি বারবার বলেছেন যে-তিনি নিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করেন যে -ভারত সমগ্র বিপ্লবের আদর্শ লক্ষ্য হতে পারে।
গান্ধীজি একজন সত্য সাধক,মহান পথিক,একজন মহান নেতা।তাঁর অনেক চেষ্টা,অনেক কাজ,অনেক ভাবনা,অনেক দূরদৃষ্টি ও সাধারণ জ্ঞান আমরা তাঁর কাছ থেকে গ্রহণ করব।জীবনের প্রতি,মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার শ্রদ্ধার শক্তি,আর অহিংসার বাণী-যে অহিংসা হল সভ্যতার পরম সুন্দর মূর্তি।নিজেকে তুচ্ছ করে তাঁর অপূর্ব আত্মত্যাগের কাহিনী বিশ্বের কাছে এক অনন্য উদাহরণ। বিশ্ব সভ্যতা ও সাম্যবাদ স্থাপনের পথে তিনি যে জাতীয় অহিংসা,সহনশীলতা ও বিশ্ব প্রেমের মনোবৃত্তি রচনা করতে চেয়েছেন তা আগামী সভ্যতার জনজীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান।গান্ধীজি যে নৈতিক আদর্শের নমুনা তাঁর নিজের জীবনে ও মরণে দেখিয়ে গেছেন,যা তাঁর দেশব্যাপী সত্যাগ্রহের মধ্যেও সমস্ত জাতির প্রাণে একদিন প্রেরণা জাগিয়েছিল।আজকের এই ভোগবাদের যুগে তাঁর অনুপস্থিতি টের পাওয়া যায় ।মহান বিশ্ব সভ্যতা গঠনের পথে আজও তাঁর আদর্শকে গ্রহণ করে অনেক সাধনা ও দুঃখবরণের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।তাঁর মতো ব্যক্তি পৃথিবীতে ও ইতিহাসে কদাচিৎ জন্মান।গান্ধীজি আমাদের ঐতিহাসিক শক্তি জুগিয়ে দিয়ে গেছেন।আমাদের নিজেদেরকে শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছেন,তার মূল্য দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment