Saturday, June 24, 2017





 















মধ্যরাতের খন্ড কবিতা- ১০
       লক্ষ্মী নন্দী
                             
রোজ রোজ
রাত্রি অামাকে 
সবার অলক্ষ্যে 
দৃশ্যহীন অন্তরঙ্গ 
করে তোলে।
অামিও অন্তরালে 
তার অভিসারের
অায়ত সজিবতার------
আচ্ছন্ন  পাগলামিতে
মেতে ওঠি ।
জেগে থাকি দুজনেই
দীর্ঘ রাত। তার অাদরে
তারই গভীরতায়
তার বুকে মাথা রেখে
নিশ্চিন্তে খুঁজি  
শব্দের স্বীকারোক্তি।
অামার অাত্মমগ্নতার
অলক্ষ্যে --
সে যেন কখন এগিয়ে 
যেতে থাকে 
অবচেতন। 
রাত্রি প্রমত্ত অামি 
চমকে উঠি । 
আহ্লাদী করে নাম
ধরে বলি
হে, মধ্যরাত----
তুই, অামার সঙ্গে 
অারও অারও
দীর্ঘক্ষণ চুপিচুপি 
নির্জন নৈঃশব্দে 
নিজস্ব হয়ে থাক।।।













শিকড়

সুপ্রীতি বর্মন।



হঠাৎ নাভিমূলের নিঃশ্বাসে ক্ষনজন্মা হল প্রনয়বৃক্ষ।
দুগ্ধসরোবরের পুষ্টিতে তার সমৃদ্ধি।
অল্প অগ্নি সৈকতের স্পর্শে দোলা লেগে উচাটন পাগলপারা।
তর তর করে শাখা প্রশাখা আদিগন্ত প্রসারিত।
জড়িয়ে ধরে নিগড়ে নিতে চায় ভাড়ারে সঞ্চিত রসটুকু।
আরোহনে পাগল হচ্ছে কখন শেষ সীমানায় পৌছাবে বলে।
অস্থিরতায় ব্যগ্র তেজ চাহিদায় অতৃপ্তি এক অনন্ত সমুদ্র।
শেকড়ের ভিত্তিমূল কবে থেকে নরম মাটির বুকের গভীরে প্রোথিত।
ঝড়ের উদ্দাম চ্ছন্নছাড়া খোলাচুলের ব্যখ্যা কারোর জানা নেই।
ধীরে ধীরে মাটির গর্ভে তার গোপন অন্দরমহল।
সেখানে শারীরিক চঞ্চল গতি।
সবটুকু জমি করতলগত করে নিতে চায় নিজের অধিকারে।
কোটরে লুকিয়ে আছে কত শত অজানা উপাখ্যান।
দুগ্ধসরোবরে রাজহংসযুগল প্রনয়ালাপে মত্ত।
চঞ্চুবিনিময়ে দুজনেই ওষ্ঠাগত।
জ্যোৎস্নার অঝোর বৃষ্টি ঐ দীঘিকে করতে লেগেছে উচ্ছ্বলিত।
ভেবেছি অব্যক্ত বেদানার পরিচয়ে গভীর
অমাবস্যায় যেন চন্দ্রমায় লেগে়ছে গ্রহন।
পাতাগুলো আমার মুখচোরা।
কখন থেকে নুইয়ে গেছে লজ্জা সংক্রমনের স্পর্শে।
আজ আমি কত অসহায় মাথা তুলে শুধু বেড়েই
চলেছি অসীম আগ্রহে উর্দ্ধপানে।
অনন্ত সমুদ্র আদিগন্ত তোমা আমা মধ্যিখানে।
দিবারাত্র কি দূর্বিষহ জ্বালা শরীর জুড়ে।
কখন ডুব দিতে পারবো ঐ দুগ্ধ ফেনিলে।
শিকড়ের গাঁটে গাঁটে যন্ত্রনা প্রচন্ড টানাপোড়েন।
অল্পস্বল্প মাটি চুঁইয়ে রন্ধ্রে দিয়েছি ক্ষনিকের যতি।।
যদি খোদিত করতে পারতাম গুড়িতে প্রেয়সীর নাম।
আর যেমন ছেলে ছোকড়া প্রায় লিখে বসে আনমনে উড়ো উড়ো প্রেম।
কিন্ত সেসব তো যত্ন নিয়ে লুকিয়ে রেখেছি কোটরে।
তারপর ভোরের উদিত রবি লাল টুকটুকে
যেন সোহাগ শেষে উঠলো সমুদ্রে স্নান সেরে।
কি অপরূপ সুন্দর তার আলতা চরন।
সমগ্র শরীর আমার আর্দ্র হল
ঝুপ ঝুপ নিঃশব্দ চরনে কুয়াশার কোলে মাথা রেখে।
অবশেষে পেলাম গাঢ় মাখামাখি ঘুম।
এইসময়ে সবকিছু ধোঁয়াশায় যাক অস্তাচলে।
এই নিরিবিলি নিভৃত কুঞ্জউপবনে
তোমাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন।

Thursday, June 22, 2017





































অন্যরকম প্রেম
পিয়াংকী মুখার্জ্জী


ঋশানী আর অনীশের শৈশব বন্ধুত্ব ক্রমশ প্রেমে পরিণত হল । আজ পঁচিশ বছর পূর্ণ হল ওদের বৈবাহিক সম্পর্কের , আজ ও ওরা নতুন। ঋশানীর কথায় বাবার আদুরে রাজকন্যার মত এতগুলো বছর অনীশ ওকে যেভাবে সামলাচ্ছে তাতে স্বামীকে যদি বাবার স্থান টা দেওয়া যেত তবে ও নাকি তাই করত !! অনীশ বলে ,"আমার মা দু বছর বয়সে আমায় ছেড়ে চলে গেছে , যদি সমাজ আমায় পারমিশন দিত যে স্ত্রী কে কোনো সিচুয়েশন এ মা বলা যায় তবে তোমায় একবারের জন্য হলেও মা ডাকতাম "॥ ছাদের ব্যালকনিতে বসে সন্ধ্যের গুঁড়ো গুঁড়ো আলো আঁধারিতে অর্কিড গুলোকে সাক্ষী করে দু পেয়ালা সুগন্ধী চা নিয়ে ওদের ভালবাসা এভাবেই কৈশোর যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যের পথে এগোচ্ছে !!













কাঁচা
উদয় সাহা

সারাংশ কম। গভীরতা প্রায় নেই বললেই চলে।
এককথায় কাঁচা।
কাঁচা আমি।
স্বীকার করি, পড়িনি ক্যাম্পবেল, হান্ট
জানি ধ্রুপদী তাঁরা। পড়িনি ইমানুয়েল কান্ট।
রমাপ্রসাদ, উইলিয়াম মরিস
মাস্টারমশাই বলেছিল, "পড়িস"।

কাঁচা। এক্কেবারে কাঁচা।
কিন্তু আত্মবিশ্বাসী আমি...
এক লাইব্রেরী লিখে বলতে পারি
" আমি শুধু তোমাকে পড়েছি
যে তুমি সারাজীবন কাজুবাটা, ঘি,
ভাজা জিরের গুঁড়ো দিয়ে জীবন সাজিয়েছো।"











বাজারের ব্যাগ
 সুপ্রীতি বর্মন




সকাল সকাল পিষ্টকের থলিতে চুম্বকটান দুগ্ধস্রোত বৎসল
হাম্বা উচ্চৈস্বরে কোমল ঘাস অনীহা উদাসীন
জিহ্বা লকলকে লালা নিঃসরন চর্ব্য মাতৃত্বের টান
হেঁচকা মেরে গুঁতিয়ে স্নেহের ধারালো মাঞ্জা
অদ্য প্রভাতে নীল আকাশ মুষ্টিমেয়
অর্জনের লড়াই কানাঘুষো আজ আরো আরো পেতে হবে।
বাজারের ব্যাগ হাতে সব্জী বাজারে
ক্রমবর্ধমান গতি।
ভিড়ের সমুদ্রে গুনেছি অজানা ঢেউ
আপন বেঁচে থাকার লড়াই।
বেঁচে আছি কি?
নীরব শূন্যতায় ফাঁদ অবশেষকে ভূগোলের সীমানায়
নতুন করে পূর্ণতার চন্দ্রের আলিঙ্গন।
প্রয়োজন অন্তঃসারশূন্য অনন্ত অশ্বগতিতে জীবাশ্ম।
হিসেবী তোলা খাতা মলাট বিহীন দীর্ঘশ্বাসে নিজেকে লুকায়।
ঘ্যাঁন ঘ্যাঁনে এক কর্ম ঘুমের ঘোরে
কুকুর ক্রন্দনে অশুভ কুসংস্কারের পচন
সাবানের সুগন্ধী ফেনায় ভেসে যায় প্রৌঢ়।
সন্তরপর্ণে মৌমাছিরা সঞ্চিত মধুমাসে
আপন হেলায় আত্মমিলনের সন্ধিক্ষনে
দিয়েছে দংশন গা কাঁপানো জ্বর।
অসুখ ইত্যবসরে বেমানান।
চাদরের comfort zone e আদরের প্রলেপ।
ভেলভেট পশম দ্রব্যমূল্যের বাজারে হাতটান।
তবুও মুখভার সাইকেলের গুঁতো
অনিচ্ছার অনেক চেন
একসাথে যেন কোন গোছা রসা নারকেল দড়ি
অহংকারী উচ্চনিনাদী বিজয়ের বীনা
ঝংকার শ্বাসে সপ্তম সুরে চুম্বন
এক পরম আলোকিত দেবালয়।
সেথা দেবাদেবী পরষ্পর আলোকপাতে
দৈহিক সর্পিল চন্দনে জড়ায়।
আর নাভিমূলে অঙ্গুলীচারনায়
উল্কা আঁকিবুকি এক ভব্য জগৎ।
সকল কোলাহলের অন্তিম শ্বাস।
তবুও বাজারের ব্যাগ হাতে সাবধানী সত্ত্বা
এক হিসেবীর কাঠপিঁপড়ে হিজিবিজি অন্তরের সাদাকাগজ
সব হিসেবের মিল অমীমাংসিত শূন্যতে ঠেকায়।
চতুর্দিকে ভোঁ ভোঁ মাছির কোলাহলে অবিমিশ্রিত
মাছের আঁশের ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত পথের ধূলায় গড়াগড়ি।
কিন্তু পেট চিঁড়ে সকল উত্তরাধিকারীরা দলাপিন্ড
মৈথুন শেষে হতবাক।
নগন্য কড়ির দামে হাটে বাজারে
অপাংক্তেয় কিন্তু চাহিদার
সংখ্যাগুলি তিরতির করে
পিঁপড়ের মতন সারি করে ঠিক পার হয়ে যায়।
পড়ন্ত বেলা ঠিকো গনগনে রৌদ্রস্নান
রকমারি উদরপুর্তির আয়োজন।
চলছি নেই যতি সদ্য আড়ম্বর।
ফ্ল্যাশব্যাক মৃদু গুঞ্জনে রেডিও F.M
আর সঙ্গপানে অলেখ্য মাধুরী।
তার নিঃশ্বাসে শুঁকেছি আমার ঘ্রান।
হিড়বিড়িয়ে দুশ্চিন্তার অজানা পাড়ভাঙা
নদীসৈকতের অনাবিল স্রোতের গহ্বরে
আমার নিশ্চিত রাত্রির সহবাস।
















বিশ্ব এক নাটকীয় রঙ্গমঞ্চ আর আমরা সবাই অভিনেতা.
দেবব্রত তঁাতী


এই নাটকীয় রঙ্গমঞ্চে অগোচরে কত না অভিনয় ঘটে আর অভিনেতার সৃষ্টি হয় । কোন সে অজানা থেকে এখানে এসেছি আবার কোন যে অজানায় চলে যাবো তাও অজানা বাকি জীবন টুকু শুধু অভিনয় করেই কেটে যায় । নাটকের রেহারসাল দিতে যেতেই স্যার বলেছিলেন যে- একটা ডায়লগ ও বলতে পারছিস না ? অভিনয়টা করবি কিভাবে ? জানিস না জীবনটাই অভিনয় । আমরা সবাই অভিনয় করেই চলেছি । অভিনয় করতে করতে মৃত্যু আসবে । আর ওটাই ক্লাইম্যাক্স । নাটক করতে করতে কেমন মরে যাওয়ার অভিনয় করে তেমনভাবে অভিনয় করব সবাই । আসলে এই সমস্ত কিছুর আড়ালে একজন বসে আছেন । তিনি লক্ষ্য করছেন আমাদেরকে । কারন তিনিই রচয়িতা যে , আর নাটক দেখা টা তার এক শখ । নেশাও বলতে পারো । সেই রচয়িতা কে সহস্র প্রনাম জানায় । কারন এখানে অভিনয়ের জন্য আমরাই রয়েছি বলেই । 
আমরা কেমন সব অভিনয় করি ? কেমন অভিনেতা আমরা ? তা তো এখানেই পরীক্ষার পাশ ফেল হয়েই যায় । যারা অভিনয় করতে জানে তারা এক ফ্রেমে বাঁধা পড়ে । আর যারা অভিনয় করতে পারেনা ঠিক মতো অর্থাৎ জীবন কে মেনে নিতে পারেনা । সে তো হারিয়ে যায় । 
অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে আমরা মুখোশ পড়েই অভিনয়ে নেমেছি । আরও ভালোভাবে বলতে গেলে সাপের মতো খোলস ত্যাগ করাটা আমাদের অভ্যেস । নইলে নাটকে অভিনয় করব কিভাবে ? রঙ না মাখলে যে হোলি খেলা হয়না ! তাই তো এত কিছুর আড়ম্বর । নিজেরা নিজেদের পছন্দ মতো সেজে গুজে নেমে পড়ি । আজ অভিনয়টা ভালো না করতে পারলে । কাল থেকে বাদ পরতে পারি । 
যদি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য কাউকে পুরষ্কার দেওয়া হয় তাহলে নিঃসন্দেহে মা পাবে । কারন মায়ের জীবন দেখলে দেখতে পাবে যে দুখ যন্ত্রণা মানসিক অত্যাচার সহ্য করেও কত নিরবে হেসে খেলে কথা বলে । যেন কিছুই ঘটে নি । মায়ের অভিনয়টা কেবল মা-য় পারে ।
একটা নাটকে যেমন দুখ-কষ্ট , হাসি-ঠাট্টা , কথা দেওয়া , কথা রাখা , না রাখা , বিশ্বাসঘতকতা করা ,প্রেম ,বিচ্ছেদ .. দেখা যায় তেমন সমস্ত কিছুই জীবনের পথে চলতে গেলেই ঘটে । আর ও গুলো সব কিন্তু অভিনয়ের মধ্যে পড়ছে । দেখতে পাচ্ছি কারর কাছে নাটকটা জীবন আবার জীবনটাই নাটক । এটা সকলের ক্ষেত্রে ও । আর সেই অদৃষ্ট রচয়িতা দেখছেন আর হাসছেন ।
উপসংহার এ বলা যেতেই পারে যে – জন্ম মানেই নাটকের পর্দা সরে গেলো এবার তুমি অভিনয় শুরু করো । অভিনয়টা ততদিন চলবে যতদিন না মৃত্যু আসছে । আর সেই জায়গা পূরণ করতে কেউ না কেউ আবার এসেই যাবে । 
সুতরাং বাঁচতে গেলেই অভিনয় টা তোমাকে করতেই হবে । এটাই স্বীকার উক্তি ।

Tuesday, June 20, 2017
















অপেক্ষা
সুপ্রীতি বর্মন



আমি অপেক্ষমান নিশ্চিত আশ্বাসে অন্তহীন পথ তোমা মাঝে
আলুলায়িত কেশ নির্বিকার তব দৃষ্টির চাহনি
সমাপ্তি ব্যর্থতার দিনে নখের আঁচড়ে ফ্রেমবন্দী।
ঝাপসা স্মৃতির হাতছানি উইন্ডস্ক্রিনে present scenario
তবুও হিয়া করতলগত লালসায় তোমার সত্তা দিগ্বিদিক হারায়।
অপেক্ষারা সর্পিল আকারে জঠরে স্থান পায়
একটু করে জমতে থেকে সীমিত পরিসরে হলাম আজ গর্ভবতী।
সংযমে মুখের কোনে ঠোঁটে বাঁকা হাসি চেপে
যন্ত্রনাদগ্ধ ক্লান্ত শরীর অবস্থার দুর্বিপাক
তবুও নিশ্চিত আশ্রয়ে বিশ্বাস ভুমিষ্ঠ হতে চায়।
আমি অপারগ রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার ঘ্রান।
সবটুকু শুষে অপেক্ষা কখনো আত্মতৃপ্ত গাছের পাতায়
যৌবনের সাঁকো পার্কের বৈকালিক হাওয়ায়।
সেখানে দিবারাত্র চখাচখীর মেলা
আত্মসুধা শোষনে সকলে নিমগ্ন।
জ্যোৎস্নামাখা লজ্জাবরনে পাতা অবধি নুইয়ে যায়।
ঠিক সেখানে চৌরাস্তার বাঁকে তোমার সাথে দেখা।
হাড়ভাঙা খাটুনি ছাপোষা নিত্য অফিস যাত্রী।
ক্ষনিকের এই প্রমোদ ভ্রমন বিলাসিতা।
পকেটে গড়ের মাঠ তবুও অনাবিল এই সুখ
যতটুকু পাবো শুষে নেবো তোমার প্রতি নিঃশ্বাসে।
যুদ্ধে বিবাদ দ্বন্দ্ব চিত্ত ঝড় তোলে
হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে অচেনা মোর অস্তিত্ব।
আজ কম সে কম সদুত্তরের প্রতীক্ষার
প্রমাদে গুটিকয়েক পত্রপল্লব ক্লোরোসিসে নিগড়ে যায় রসটুকু।
সিঁদুরের ছোঁয়ার অশনি ভয় দেখায়।
দিগবধূর সীমান্ত সিঁথির পথপার্শ্বে
গোধূলির পরিত্যক্ত প্রতিস্থাপক
শুভ্র অজস্র অগনিত কাশের ভিড়।
আকাশচুম্বী আমি শ্রেষ্ঠ প্রতিমা।
আমার অঙ্গের সৌষ্ঠবকান্তির খাঁজে তোমার হাতের শিল্পীসুষমা
আমাতে প্রানপ্রতিষ্ঠায় অপারগ তব পরশের পংক্তির চরন।
যতি চিহ্ন বিরাম টানে অকালে বৈরাগী প্রেমে পাগলপারা।
ব্যর্থ প্রয়াসে আনতে আমার প্রতিরূপ।
অপেক্ষারা দিন গোনে অস্তরাগে নীরব অভিমানে নিশ্চুপ
ডুব দেয় সকলের অলক্ষ্যে দিগন্তে।
কাজল কালো আঁখি অস্থিরতার ক্রন্দনে দিকবিদিক অথৈ সমুদ্র।
অপেক্ষমান গুটি গুটি পায়ে পুনরায় ঢেউ এর ছলে
সমুুদ্র সৈকতের বক্ষ ভিজিয়ে দেবে বলে।
অপেক্ষারা খুনসুটি সোহাগে চ্ছন্নছাড়া করে তোমায়
একটু আদরের প্রত্যাশায় বালিশে চোখের কোনে জল লুকায়।
তোমার হিয়ার মাঝে অন্তহীন মোর প্রেমাষ্পদ।
অক্লান্ত মোর চলতে থাকা বিশ্বাসের রক্ষাকবচ
তোমার শরীরের স্পর্শে লেগে থাকা তাবিজ।
চাঁদ পুড়তে থাকে মেঘের আড়ালে
যার একটুখানি নিয়ে তিল সম নজরকাঠি মোর চিবুকে
এঁকে যায় অবগুন্ঠনে প্রতি রাতি।
তবুও স্বীকৃতি অবৈধ চন্দ্রমার সোহাগ
আগামী রবিরশ্মিরাগে।
গর্ভে প্রচ্ছদ আশ্রয় অপেক্ষার পুঞ্জীভূত ক্ষোভ।
প্রসব যন্ত্রনায় উদগ্র তেজ
ভূমিষ্ঠ তো হতেই হবে আমায় বিশ্বাসের আঙ্গিকে।
কিন্তু পরিশেষে বিমর্ষ মলিন ম্লান তব জন্মদান।
যখন তুমি হয়ে যেতে চাও পুনরায় কোন আগন্তুক।
আমার অপেক্ষাদের গর্ভমৃত্যু শ্রেয়।














ভূমিকা
দেবব্রত তঁাতী


কেউ গল্পে আসতে চাইনা । সবাই কবিতায় বেঁচে থাকতে চাই । তাই কাব্যিক উপন্যাসের নায়িকাও নিজের নামের আক্ষরিক অর্থ নেই । তাই বোধ হয় রূপক নামে পরিচিত হতে চাই কবির কাছে । পাঠকের কাছে । মেয়েটি বন্য হরিণী হতে পারতো কিংবা পেখম তুলে নাচতে পারতো ময়ূরীর মতো । কে জানতো সে সূর্যের তেজ বুকে নিয়ে সূর্যানি নামে কাছে এসে পুড়িয়ে ফেলতে চাইবে যত ঋণাত্মক চিন্তা ভাবনার সেই ছেলেকে । কিন্তু তাও না হয়ে শেষে সৌর্হাযা নামে এসে আড়ালে সহ্য করবে সবকিছু । সে কি আদৌ সহ্য করার জন্য জন্মেছে ? না এই সমাজের অন্য আর এক দিক সে দেখাতে চাই ? পৃথিবীও তো নীরবে সব কিছু সহ্য করছে । মুখ ফুটে কিছুই বলেনা । এটা আমরা ভাবি বাইরের টা । আসলে পৃথিবীও প্রতিবাদ জানায় । তার শক্তি অসীম । তাই ঝড়-বৃষ্টি , সুনামি ভুমিকম্প এমন প্রাকিতিক নিয়মে ভেঙ্গে দেয় জীবকুলের অহংকার । এদিকে উপন্যাসের মেয়েটিও কি পারবে সমস্থ কিছু বেড়াজাল টপকে সমাজকে মানুষ করতে ? দেখা যাক পা বাড়িয়ে এগিয়ে এগিয়ে যায় নাকি দু পা পিছিয়ে রেখে কবিতা অসম্পূর্ণ রাখতে চাই । কারন আমরা তো এখন ধংসের মুখোমুখি । কাউকে জানতে চেয়ে বসলে সে খুব বিপদে পড়ে । দু দণ্ড কি শান্তি মিলবে কথায় কথায় ? ঝরনা কি জন্ম নেবে ? – এই বসন্তের শেষে , কারন আগামিদিনে প্রখর উত্তাপ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য ।





















নাটক

তুষার আহাসান

দরোজায় পা রাখতে ভয় হয়।
নিজের ঘর,নিজের বাড়ি।চৌকাঠের ওপাশে চিরচেনা নারী!তবু!
নারী চাকা ঘোরায় সংসারের।আমি তেলের যোগান দিই।
পারলে দায়িত্ব ও কর্তব্য না পারলে,ক্যাঁচ!
ঘরের লক্ষী,প্যাঁচা হয়!
--দুধওয়ালা আজও তাগদা দিয়ে গেল।
--মুড়িমাসীর জ্বর,নাতনিকে পাঠিয়েছিল।
--মুদির দোকানের খাতা নিয়ে এসেছিল সুধীর।
নিত্যদিন একই সুর।কথাগুলো বদলে যায় ভিন্ন চাহিদায়।সমস্যার জলে মাছ তড়পায়! ঠেকে পা দেওয়াও যেন সেই ঘাটে পা ডোবানো।হৈ-হৈ করে ওঠে আয়াজদা—
এই তো এসে গেছে নায়কের বাবা।চাঁদবদনা,আজ-ও কি পার্ট মুখস্ত হয়নি?
ছোট্ট একটা রোল,তাতেও ডিগবাজী!পুজোর সময়ে নাটক কি করে নামবে?
আমিই নামছি শুধু এদিকে-সেদিকে!সংসারের নাটক আর নাটকের সংসার
কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।খাবি খাচ্ছি সবার চোখে।
সেলাইকলে হাত-পা নাচাই।তালিমারা সাইনবোর্ডে নিচু মাথা।ফরমাশ-ও আসে
তালি-মারা।রোজগার-ও।
দরোজা খুলল ছেলে—বাবা,কাল আমার পরীক্ষার টাকা জমা দিতে হবে।
হাতের ছাতা দেয়ালের গজালে রাখতে-রাখতে বলি—দেব রে বাবা দেব।আমার রক্ত
বিক্রি করেও কাল তোর টাকা দেব।
আরে বাস,এ-তো আমার নাটকের ডায়লগ!
আয়াজদা নিশ্চয় হাততালি দেবে।

Monday, June 19, 2017















ফসফেটিক চশমাগুড়ো ঝরছে


রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়


অমসৃণ শব্দগুড়োর ইন্টারসেকশনে দেওয়াল
দেওয়ালে ঘষটানো তামার দাগ
দাগমুক্ত প্রজাপতির ০-মুখীনে
সাঁজোয়া শিবিরের রাস্তা।রাস্তার আড়ালপিচ
ভেঙে।তুলে।মুছে।কেটে।কুচিয়ে
তুলোট মলাটের পোষাক।পোষাক মুক্ত নই
অতএব - আপেক্ষিক জখম।
জখম - আপেক্ষিকতা
আপেক্ষিকতা = অসমাপ্ত ধ্রুবক জাতীয় বিকেল
গড় বয়সে : হিমকণাদের পতন
যোগ।বিয়োগ।গুন।ভাগ।বর্গ।বর্গমূল
থার্মোমিটারে কোণাকুণি অপরাধগুলোর উড়ালসেতু
উড়ান।বহুমাত্রিক
উড়ান : বহুমাত্রিক কম্পাস
উড়ান চলিতে বহুমাত্রিক কম্পাসের আণবিকতা
কালো পিঁপড়েরা বোঝে কেবল দিকযন্ত্রের ফসিলস
মধ্যরাতের খন্ড কবিতা- ৯
লক্ষ্মী নন্দী
                              
এই মাত্র অামার 
বিষাদ  ভাঙ্গলো
প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠা   
মন কে জাগিয়ে 
তুলল অন্তরের 
কার্নিভাল 
বাতিহীন জীবনকে 
ঘিরে ধরলো-শুভবুদ্ধি। 
অারো ভালো 
লাগলো,
যখন 
সমস্ত ঘুমিয়ে পড়া
বাড়িতে 
অামার ছায়া--
অনুসরন করল 
অামাকে-- 
সে মনোগ্রাহী 
সংযমী পারদর্শী হয়ে 
মিশে গেলো অামার -
স্বপ্নের ফিরেস্তায়।
অবাক   অামি 
তখন, 
অামিকে বললাম 
নির্জনতা এতো 
বিকশিত হয়ে                      
উঠতে পারে!!!
হেসে উঠলো 
মধ্যরাত।।।















আলোর রোশনাই

পিয়াংকী  মুখার্জ্জী
কাঁচের ফাঁক দিয়ে,চির খাওয়া আলোর ছিন্নভিন্ন হাজারখানেক টুকরো নিঃশব্দে প্রবেশ করছে আমার প্রতিটি স্নায়ুতে । যেদিন তুমি ছিলে আমার রঙ্গিন বিছানায় ,সেদিনও আলোর দল এসেছিল ,গুরুত্বহীন হয়ে ফিরে গেছে । আজও ভোরটা একইরকম ,আজ শুধু তুমি নেই স্পর্শে ।বদলেছে আলোর ভঙ্গিমা ,আজ আমি ভিখারী ! আর ওরা আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায় !................

সুপ্রীতি বর্মনের দু'টি কবিতা

















অলেখ্য জগত

চোখের ঘুম আঁখির কাজলের স্বপ্নের ছায়া।
ললাট চন্দনে চর্চিত সোহাগ কুমকুম।
স্তনযুগলশোভিত আলংকারিক আভূষণ।
পায়ের লাল আলতার ছাপ প্রিয়র মনে বাসা বাঁধে।
তোমার চুম্বনে পাই আমি খুঁজে নিজেকে।
এক অলেখ্য জগত।
ছুঁতে চাই তোমার আকাশ।
বুকে মাথা রেখে গভীর ঘুমে
আমার চন্দ্রমার একা জোৎস্নার রাত।
একচিলতে ছাদ আমার ক্ষুদ্র পৃথিবী।
ঝিঁ ঝিঁর উচ্চৈস্বরে।
খুঁজে নিতে চাই আরেকটিবার আমার ক্ষুদ্র সুখ।
আমি ভালোবাসা সদা অক্ষত আমার স্বামীর বুকে।
কামনা প্রিয়া তোমার চোখে।
আদরে দুষ্টুমিষ্টি তোমার ছলনাতে।
প্রেমিকা শৈশবের ছেলেখেলামি তোর সাথে।
বুকের কোনে নিখাদ প্রেম
আমার তোর সাথে সখ্যতার সূচনাতে।
জোরা পদ্ম তোর ভুরুযুগল
আমার ওষ্ঠের চুম্বনে শিশিরসিক্ত।
প্রেমে যৌনতায় অপ্রেমে শাসানি চোখরাঙানিতে।
তোর অঙ্গুলি চারনায় গড়িয়ে পড়ি আসমুদ্রহিমাচলে।
ভেসে তলিয়ে যাই অতল গভীরে।
একবার ঈষৎ হাস্যে তাকালেই তুমি
আমি পেয়ে যাবো অরূপ মনিকাঞ্চন।















খসে পড়ো

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই           চিরকালের তরে কেন পাইনা।
খসে পড়ো আমার অক্ষিসঞ্চালনে    দিব্য জ্যোতি আমার হৃদকমলে।
           সরসি নয়ন কেন কাজল ভ্রমরা।
   . তোমার বিরহের দিন গুনে আর পথ চেয়ে।

বসে বসে ভাবি তোমার সংস্পর্শ       মোর হৃদয়ে আঁকি।
যেথা একদা ফেলেছিলে ছাপ চুপিচুপি  খেলেছিলে লুকোচুরি।
         তারে ধরি ধরি করবো ভাবি।
         ধরতে গেলে আর পারিনা।

রৌদ্রদগ্ধ উষ্ণ কানন নির্জন প্রান্তর      কুঞ্জউপবনে শ্যামবিহারী।
বিহনে একেলা বেঁধেছে সুর             সঙ্গপনে পূজিব তারে একাকী।

ছুটে আসি ঘরদোরের সকল কর্ম      অবসাদ ও আলস্যের চাদরে মুড়ে।
লোকাচারে পরিত্যক্ত বক্র উঠান       মোর পায়ে পায়ে ধরে।

বলতে চাই সখী আর যেও না গো     শূন্য করে আমাকে একলা ফেলে
কিন্তু মোর কাছে তুমি সবথেকে দামী     খসে পড়েছো আমার তরে
        ঐ বৃহৎ বটবৃক্ষের তরুচ্ছায়াতলে।
স্বামী বক্ষে মাথা রেখে আলাপচারিতায় মগ্ন তোর প্রেয়সী
একটা শীতলতা ছুঁয়ে যায় সহসা আমার স্তনযুগলপ্রান্তে।
তোমার বক্ষের পর্বতমাঝে অখিল নিমগ্ন সরসি নাভিমূলে একরত্তি সহবাস।
খসে পড়ে আমাকে আরো বেশি আদ্র চায় করতে।