Thursday, June 4, 2020






সম্পাদকের কথা 

মহামারী আর মহাপ্রলয় যে বিপদ আর ধ্বংস নিয়ে এসেছে হয়ত তার থেকে আমরা একদিন মুক্ত হব, কিন্তু মানব মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হল তার থেকে কবে মুক্তি মিলবে তা আমরা কেউ জানি না। এইজন্যই এদের নামের আগে 'মহা' শব্দটি যুক্ত হয়েছে।
এরকম অবস্থা আমাদের স্মরণকালে কেউ দেখে নি। তাই অভিজ্ঞতাও নেই বিরুদ্ধে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করবার। তবু চেষ্টা চলছে। সুখের কথা বহু ক্ষেত্রে সে চেষ্টা সফলও হয়েছে। তবু কিছু প্রশ্ন রয়েই যায়। যেভাবে লক্ষাধিক মানুষকে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হল বা যেভাবে এখনও বহু জায়গায় বহু মানুষকে সামাজিক বয়কটের সামনে পড়তে হচ্ছে, তাতে এটা বলা যেতেই পারে যে, আমরা এখনও প্রকৃত সচেতনতা থেকে বহু দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। ফলে বিপদ বাড়ছে বৈ, কমছে না। 
সবশেষে আবার সেই আশায় বুক বাঁধা, অপেক্ষায় থাকা...একদিন সুদিন আসবে, একদিন সুদিন আসবেই...





মুজনাই অনলাইন জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা, ১৪২৭  


মুজনাই অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা 
মুজনাই সাহিত্য সংস্থার একটি প্রয়াস 
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, ৭৩৬১০১, প ব 
ইমেল ঠিকানা- mujnaisahityopotrika@gmail.com
প্রকাশক- রীনা সাহা 
সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়  

মুজনাই জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা, ১৪২৭




অঙ্কন ও পদ্য পর্যায় 




শিল্পী- সোনালী কবিরাজ 





শিল্পী- শম্ভু দে 




কমুনিকেশন 
শিল্পী- অনিন্দিতা ভৌমিক





শিল্পী- কঞ্জনাভ মৈত্র



শিল্পী- অনির্বান চক্রবর্তী 





অট্টহাসিতে মাতবে গ্রহান্তর

অরুণ চক্রবর্তী   

আর কতদিন অন্যের লেজ ধরে টানবে বলো?
বানরের মতো লাফাচ্ছো এগাছে ওগাছে আর অন্যের লেজ নিয়ে টানাটানি 
নিজেরটা সামলে রেখো
লেজের আগুনেই দাউদাউ জ্বলেছিল অনেক লোভাতুর সীমান্ত রাজধানী ছাড়িয়ে ঘরের চৌহদ্দি 
রক্তলোলুপ আর কতদিন জ্বালাবে বলো হিংসার দাবানলে?
ঘরের চৌকাঠে দিনরাত রক্তমাখা হাতুড়ির ঠোকাঠুকি 
জ্যান্ত নিশ্বাস থেকে চোখ সব খুবলে অন্ধকার করেছে যারা 
তাদের জন্য হাততালির বোবা হাটে নিয়তই পরিত্রাহি চিৎকার
রাস্তার সারমেয়গুলোও দলবদ্ধ মিছিলে
পিশাচের অনন্ত চিৎকারে আর কতকাল ঘরবন্দী থাকবে ধূপধুনোর দল--
সিংহাসনের গর্জনপ্রসাদে হৈ হুল্লোড়ে মাতাও আকাশ বাতাস
তোমাদের হাতে সুন্দরীর দামি কাপড় শুকোয়
মহাভারতের দ্রৌপদী রাতের জ্যোৎস্নায় কতটা সুন্দর ফুটিয়ে তোলো কথায়
বসন্তে কোকিলের কুহু ডাকের ছবি সুন্দর এঁকে দেখাও ক্যানভাসে
বিশ্ব উৎসবে আকাশপথে উড়ে যাও জোড়ালো বক্তৃতায়
আর পাশের বাড়ির হাড় জিরজিরে শিশুটাকে দেখে 
প্রসাধনী মেখে  প্রচারকান্নায় ডেকে আনো বন্যা
বজ্জাতির পারদ নির্বাণচুল্লির কত কাছাকাছি দ্রুত পৌছে দিতে পারে 
আমাদের সব ব্যবস্থাই নির্ভুল সাজানো লোকালয়ে  
মনে রেখো সময় বদলাচ্ছে দ্রুত, দৌলতের রক্তচক্ষুও কাঁদছে দিনরাত মৃত্যুর হাহাকারে 
ছোটাছুটি করছে পাগলের মতো
সব দেখেও নিজেদের লেজ নিয়ে টানাটানি হানাহানি
এখনো দিনের আলো প্রকাশ্য
অবিলম্বে গুটিয়ে নাও লেজ
রাতের অবসানে নাহলে দেখবে দৌড়োচ্ছো অর্ধেক
শরীর নিয়ে আর চারদিকে দাইদাউ আগুনের লেলিহান শিখা--
শ্মশানের চেহারায় অট্টহাসিতে মাতবে গ্রহান্তর।




কোলাজ

সুবীর সিনহা রায় 

সাক্ষাৎ যমদূতের মত ট্রেনটা চলে গেল লাইনের উপর দিয়ে বিজয়গর্বে 
অন্ধকার ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আসু নির্বাচন লক্ষের দিকে, 

খুনি ট্র্যাকের এবরোখেবরো নুড়ি লোহা লক্কর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে 
কবন্ধ উলঙ্গ নিথর রক্তমাখা গেঁয়ো চাষাভুসো শ্রমশাড়ী হাড়গোড় 
বহুদিনের অভুক্ত বাড়িফিরতি ষোলো, ক্লান্তঘুমের ;                              
অনেক পথ বাকী ছিল বোধহয়                                    
একটা বিশাল মাঠে ইতস্তত হাত পা খিচুনিযুক্ত বীভৎস সব বডি,
পশু মানুষ আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না, গোঙানি কাতরানি 
সবারই নাক মুখ দিয়ে কারখানার বিষ গ্যাসাক্তবমি উদগীরণ হচ্ছে,
শেষ বিচারের মাঠে অনেকগুলি গেছে বাকীরাও যাবে হয়তো 



সব রক্ত টেনে নিচ্ছে, ফেকাসে হয়ে যাচ্ছে
তামাম দুনিয়ার মুখ, কী যেন এক মারণ ভাইরাস !
মহাশত্রু পেছনে ধাওয়া করছে 
বিষমাখানো শজারুকাঁটা ভর্তি গায়ে ; 
সব শেষ করে দেবে মনে হচ্ছে 



ময়দানে লড়াইতে নেমে বিপক্ষ শিবির ধ্বংস
করতে গেছে, ঢাল নেই তরোয়াল নেই, তো কুছ পরোয়া না কর্ বাজাও তালিয়া, 
টুটাওয়ালা থালিয়া, দিয়া জলাকর্ শত্রুকো 
খতম কর্ দেঁ, মিত্তোওওর  ! 
যব যব বিকাশকি ফুল খিলে তো আসমাঁসে
ফেক ডালো অসপতালমেঁ



কররোনা বলছে -- কেয়া হোগারে অব্ তেরা কালিয়া.... 



ডাক্তার সাস্থ্যকর্মিরা- সবাই সুস্থ খুসিবাসি  মেজাজে কাজকর্ম  করে যাচ্ছে, 
আমি সাতদিনে ট্রেনিং দিয়ে মেল নার্স বানিয়ে দেবো --কে একজন মুখ খুলেছে সবজান্তা



জিব গড়িয়ে লালা ঝরছে, একচেটিয়া  কারবার নাফা নাফা জাদা জাদা
কে একনম্বর  কে দুনম্বরি প্রতিযোগিতা  ফিজিক্সতো আছেই দরকারে জৈব শানাবো,
আবে থাম হাম কিসিসে কম নেহি     
                     
সামনে সাধারণ নির্বাচন আওয়াজ উঠছে, 
লাখকোটির রাজমহলের হর্মচূড়ার ব্লু প্রিন্ট রক্তমূল্যের আকাশবিহারী বিলাসি যানের ছবি,
ঝক্কাস  কেয়া বাত্ পাব্লিক বিশ লাখ



কোনএক শিল্পির ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে 
নিপু্ন দক্ষতা এবং ভাবনায় এক তল্পিবাহক গাধা,
বিস্তির্ণ মড়াভূমিতে লোভী হাত পাগুলো ছড়িয়ে মনের সুখে হাড়গোড় চিবুচ্ছে,
আর গাধার মুখের অাদলটা যেন একদম মিডিয়ার কলমের মতো  
বেশকিছু দৈনিকে ফুলপেজ জুড়ে হয়কথায় 
নয়কথায় ভেটকানো হাসির বিজ্ঞাপন , 
৩৬৫ ×ফুলপেজ × ? = কত কোটি, শালা নিন্দুকেরা বলে, জনগণমনঅধিনায়ক...
পকেট কেটে হচ্ছে ওদিকে পাগলা সুমনের বেবি ফেস দিন দিন খোলতাই হচ্ছে, গদগদ নেকাচো.. .  ভাবভঙ্গি



খবরে খবরে জঙ্গি হানা সেনাপ্রধানের      মালাভূষিত কফিনবক্স্ শত্রুরাষ্ট্রকে তুলাধোনা
ইত্যাদি , রাগরঙ্গ মিশিয়ে এক গান্ডু বল্লো --
নাবাজ ফরিশ গ্যয়া, গ্যয়া হাশিদ খান সব শালেকো মাড় গার দিয়া নিমরান খান, হাঃহাঃহাঃ
ওদিকে বঙ্গদেশে লাখেদা জিয়াবিবি আইনসভায় দাঁড়িয়ে বলে--
এই সব চুদুর বুদুর চইলতো ন.. 



সকালবেলায়  চোখমেলে কী সুন্দর উজ্জ্বল 
বিশাল  আকাশের কপালজুড়ে গোল সিঁদুরের
টিপ, মাতৃদিবস বুঝি ! এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি-- মিডিয়ায় সোশাল মিডিয়ায়  ভক্তির পরাকাষ্ঠা



আবার প্রজেকশনের ফোকাস ফেলছে
অনিশ্চয়তা অভুক্তি বিনিদ্রা অন্ধকার চিতার উপর,
ভস্ম থেকে একটা যৌনউত্তাপ বেরিয়ে আসছে, রোহিঙ্গা মোহিঙ্গা,... জীবন অদ্ভুত! 
                             
তাড়াখাওয়া আজাদি চাওয়া পলায়মান যুবক
অথবা বহু ক্লান্তপথ হাঁটা কোনো পরিযায়ীর পাফসকানো একটাছেঁড়া জুতো
উর্বরা জমিতে পড়ে ছিল তাচ্ছিল্যে, নূতন বরষার জল পেয়ে ফুলে উঠেছে,
একটা প্রাণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে নিচের মাটি থেকে একটা  ছোটো খলবলে সবুজ গাছ
ছোটো ছোটো  দুটো হাত বাড়িয়ে আছে আলোর দিকে  ;




   ফিনিক্স

মিঠু অধিকারী

     
নীল আকাশে আজ যে দেখি
কালো মেঘের  ছায়া,
শান্তি  নিবিড় এই ধরাতে
দূর্যোগেরই কায়া।

বন পুড়ছে, মন পুড়ছে,
তবুও  বাঁচি আশায় 
রূপকথার ফিনিক্সের গল্প
এই পোড়া  মনে আশা জাগায়।



বর্ণমালার আলোকসজ্জা

সবুজ সরকার


দুঃসময় কখনো একা আসে না
দুঃসময় কখনো একা আসে না,

সেই আশ্চর্য বিকেলে 
আমি পা মচকে ফেলেছিলাম
তুমি ব্যালকনির পর্দা সরিয়ে ঘরের ভেতরে ;
জানি, এ পাড়ায় এই শেষবার আসা।

দুঃসময় কখনো একা আসে না
শতদ্রুর নীল জলে ড্রাগন অধীর অপেক্ষায়
কোন এক বেইউলফ এর সন্ধানে একশ দশ কোটি
কোন এক মহাকাব্যিক সমাপতন। 

দুঃসময় কখনো একা আসে না
রক্তের দাগ না শুকানো পথে
হেঁটে যায় শিশু,
হেঁটে যায় মানব শৃংখল
হেঁটে যায় অমাবস্যা
হেঁটে যায় ভালোবাসা, জবরদখল। 

আসলে কোন দুঃসময়কে 
পড়ার বর্ণমালা আমরা শিখিনি।





গুহাসীমান্ত & অতিকেন্দ্রীক ইনার্শিয়া


শব্দরূপ : রাহুল গাঙ্গুলী


মোমবাতি নিভে যায়            হাওয়াকল
                                                 বিরাম

  মোম - মোম
                   বাতি - বাতি
                                     নিভে - নিভে
                                                        ??? ______

এশরীরে গোপন|অ|গোপন ~ হাওয়াকার্
                                       
                                             পুড়ে গেলে
                             শি                                       শি
                             কা                                      কা
                             রি         জড়ুল-বিশেষ          র


++++++++++


যে নক্ষত্রটি অমরত্ব লাভ করলো ~ এইমাত্র
---------------------------------------------------------------------
জল দিয়ে মোছা হলেও

                 } শরীর-শারীরিক { দূরত্ব

                                         জলকারি ম্যাজিক 

অদ্ভুত & অপ্রয়োজনীয়     ট     ট     ট     ট
                                            প    প    প    প
                                                ট     ট     ট     ট
                                                   প     প    প    প

             ঘাম → বরফ  ]
                                      বরফ-ডিম ফুটে  
                                                        ম=হা=কা=শ


++++++++++


১টি সাদাকাগজ & অদৃশ্য মানচিত্র
---------------------------------------------------------------------
দিনলিপি মুছেমুছে
                                          হাঁটাপথ          ||

                                         লিপি || দিন
     
                                 ||

                অপেক্ষায় ~ গুহা-নির্বাসন অভ্যাস 

লি ০ পি ০ দি ০ ন ______

শরীর থেকে               বিশালাকৃতি সুষুম্নাকাণ্ড 
                                 যতোদূর ~ পৌঁছায় মানচিত্র








স্বপ্ন

সুধাংশুরঞ্জন সাহা


ভিটেছাড়া মানুষের কোন দেশ নেই, বিশ্ব নেই।
সৃজনশীল মানুষেরও কোন দেশ নেই ।
আছে একটা পৃথিবী ।
সেই পৃথিবীকে রোজ ভাগ করে
ক্ষমতা, মাফিয়া, কালোটাকা আর রাষ্ট্র ।

মানুষ শুধু তাড়া খায় বাড়ি থেকে, মহল্লা থেকে,
জেলা থেকে,দেশ থেকে, রাষ্ট্র থেকে...।
তার কোন নিজস্ব দেশ নেই ।
নিজস্ব দেশ থাকে না।

একদিন পৃথিবীর সব বিষণ্ন মানুষ,
তাড়া খাওয়া মানুষ একজোট হবে ।
টান মারবে ক্ষমতার, রাষ্ট্রের ঝাঁপি ধরে,
আর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে সমস্ত কাঠামো ।
খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠবে সমস্ত আমজনতা।

আমি সেই স্বপ্ন দেখি রোজ ।





অভিসার

ওয়াহিদার হোসেন


পাপড়ির মতো দুই ঠোঁট খোলা 

নাভি অদৃশ্য আর কাছে যাবার
রোদেলা ডাক

হ্যাঁ এখানেই বর্ষা ছাউনি দিয়েছে 

এখানেই  রাতে জ্বলে উঠছে চাঁদ আর প্রতি আক্রমণ 

এখানেই নোঙর করেছে রাজ্যের বাউদিয়ারা

সারারাত চাঁদ আর তারাদের মাতাল উল্লাস 

ঘুমের আগে এখানে কিনারে এসে দাড়াই
চুপটি করে রাশ খুলে দিই
গোপন অভিযানে ডিঙি ভাসাই

এক্কা দোক্কা সারাক্ষণ সারারাত




নেমেসিস----

সোমনাথ  গুহ

আমাদের প্রতিটি মৃত্যুর দিন আগে থেকে লেখা
দেওয়ালের ক্যালেন্ডারে ঝোলা তারিখ 
সিলিং ফ্যানের পাখা
কিংবা জানলার পাশে রাখা দেশলাই
প্রত্যেকে ঝুকে আছে আড়াআড়ি  
প্রত্যেকেই জানে ওরা
আমাদের মুখ আঁকা রুমাল বাতাসে ওড়ে
হাওয়া ফেরি করে পাল
ভুল থেকে জন্ম নেয় ভবিষ্যৎ
মৃত ভবিষ্যৎ জন্ম দেয় আমাদের






অপেক্ষা
নন্দিনী চৌধুরী 

স্বপ্নময় চোখে ভগ্ন স্তুপের ভেতর 
চুপ করে বসে আছে অপেক্ষা।
বাঁধানো ফ্রেমে স্থির হয়ে আছে পেন্ডুলাম।
নারগেসি বনের বুলবুলির মতো
নীরব হয়ে গেছে খিদে।
শখের জমিতে ইমারত গড়ে,
না খাওয়া মানুষের মুখ।
মৃত্যুর সাথে কানাকানি করে বাতাসের সুর।
অভাব ঝাপটা মারে বন্ধ কপাটে,
গভীর রাতে চুপিচুপি খুন হয়ে যায় প্রতিবাদী ভাষা।
তবু্ও বকুলের বনে চাঁদ ভাঙে,
বৃষ্টি আজও ছুঁয়ে যায় চোখের পাতা।
পদ্ম পাতায় টুপটুপ করে ঝরে পড়ে সূর্যের রেনু কণা।
যুদ্ধ জয়ের ফাঁকে ফাঁকে
 দুঃখ কষ্ট গুলো গোপনে দেখে প্রিয় মুখ।
আজো ফুল ফোটে, হৃদয় জুড়ে লুটিয়ে পড়ে বসন্ত।
প্রেম আসে খোলা দখিনা বাতাসের সাথে।
শুষ্ক বালুচর ধরে জীবন চলতে থাকে ক্লান্তিহীন।

কঠিন সময়

প্রতিভা পাল সেন


সময় কঠিন, আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরা দুঃসময়ের বেড়াজালে!
আহত-মন বিপর্যস্ত, বিপর্যয়ের আঁধারে!
দুর্ভোগের রক্তচক্ষু, বিনাশ লেখে অন্তরালে।

নির্মম এ-সময়, প্রতি-পদক্ষেপে গোনে মৃত্যুর হাতছানি!
আগামীর অনিশ্চয়তায়, বেসামাল জীবন-কুটির;
প্রতিনিয়ত সময় বোঝায়, মুহূর্ত-বাঁচার কাহিনী! 

এ-সময় কঠিন ভীষণ, অসহায় এগিয়ে-চলা!
নির্লিপ্ত অবগাহন, নিশ্চুপে তাকিয়ে-দেখা!
মনের-আশায় অবতরণ, সুসময়ের কথা বলা!

কঠিন ভীষণ......




খিদে 

খুরশিদ আলম 


খিদে-নিয়ে ইস্যু বানাতেই পারো 
এতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না 

গাছ পাখিদের জীবনবৃত্তান্তেও লেখা থাকে অনন্ত খিদের কথা 

অথচ তুমি আমি হাততালি দিলে বাজনা বেজে যায়, জমকালো ইস্যু 

না তবু বলা বারণ -

খিদে পাওয়ার আগে তুমি আত্মনির্ভর হও 
স্তাবকতার মন্ত্র শেখো, 

এই মহান দেশে খিদে বুঝলেও ক্ষমতা বোঝা দায় 




সত্য যতটুকু....

 প্রবীর মাজি


ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছি,
অন্তহীন দিগন্ত জুড়ে।
অসীম সীমার অতন্দ্রপ্রহরী
জাগ্রত অসূয়াগুলোকে বিবশ করতে,
একটা পরশপাথর দরকার।
আজও খুঁজে চলেছি খড়কুটো জীবন!
ক্ষয়িষ্ণু বিবর্ণ হৃদয়
আর বন্যরক্তের উগ্রতা।
চঞ্চল পলকে শুধু মৃত্যুর হাতছানি!
ভয়ঙ্কর সত্যের মুখোমুখি হয়েছি বারবার।




ধোঁয়াশা

রুপক রায়


সবাই যখন ব্যস্ত দিনে
অজানা প্রেম আমায় খোঁজে
তখন আমি একলা মনে
          দূরত্বের আড়ালে
অন্ধ কথা লুকিয়ে থাকে
সুযোগ বুঝে লাফিয়ে পড়ে
          আত্মরক্ষার দলে
ঘামের স্রোতে মধ্যরাতে
ভাঙা জানালা দাঁড়িয়ে থাকে
          অন্ধকারের কূলে,...




দরিয়া
সুজাতা চক্রবর্তী

চাঁচানছোলার মাঠ আর কদ্দূর মুনিয়ার বাপ?
পায়ে যে আর বল লাগে না।
কোঁচড়ে ধানের শীষ লইয়্যা কত্ত হুড্ডাহুড্ডি/
হেই তামাইদ আমগো খুশির দিন গ্যাছে।
হেরপর আইল পরিবত্তন,সরকারি ট্যাহা
প্যাছে প্যাছে আইল আকাল
পেত্থমডায় ধরতে পারি লাই।

হেরপর দ্যাশ ছাড়লাম,মুনিয়া তহন কোলে/
কি খাটুনিই খাটছিলা তুমি 
মাইয়্যাডারে বাঁচাইতে /
হের আয়ু লাই তুমি করব্যা কি...।
আইজ আবার দ্যাশ ছাড়লাম
সরকার বাবু রাখতে চায় লা
রোগের বড় ভয়,/ছুইয়্যা দিলেই হইয়া যায়।
ও মুনিয়ার বাপ কথা 
কও লা ক্যান!
দু'দিন তামাইদ প্যাটের আন্দারে
সাড় পাই লা/
এতোখানি পথ ভাঙতে মনে লয়
ঘুম্যায় গ্যাছে।
জল খরচে দলা দলা রক্ত আসে...
কয়মাস আগেই ট্যার পাইছিলাম 
ধানের বীজ বুনছি/
এ ব্যাটা জন্মাইলে নাম রাহুম দরিয়্যা...
সব ভাইস্যা যাইব্যে এন্ধার ওন্ধার।

টিভিতে সুসজ্জিতা ঘোষিকার মুখ ভেসে ওঠে 
চ্যানেলে চ্যানেলে ইমেজ বন্দী 
দামী চিত্রগ্রাহকের ফটোশ্যুট...
"হাইওয়েতে মৃত সন্তান প্রসবকারী মা।"

রক্তাক্ত রাস্তায় একটা ভারতবর্ষ 
মুখ থুবড়ে পড়েছে,
রাষ্ট্রতন্ত্রের সুক্ষ্ম পোশাক গায়ে জড়িয়ে পাশে শুয়ে আছে 
ছোট্ট "দরিয়া "......।



ঘুরে দাঁড়ানোর গান
উদিত কোনার

ভালো লাগে না,ভালো লাগে না।
দিনগগুলো চলে যায়,
সময়টা বয়ে যায়,
স্বপ্নেরা উড়ে যায়;
পাখির মতন
কেন?

ভালো লাগে না,ভালো লাগে না।
করে যায় আমাকে দূর্বল,
ফেলে যায় আমায় একাকী,
করে যায় আমায় অনুভূতিশূন্য;
কিন্তু তবুও আমি হব না যে জীর্ণ।

ভালো লাগে না,মোর মন ভালো লাগে না।
ইচ্ছেরা আজ কোলবালিশে ঘুমিয়ে,হয়ে গেছি বড়ই অসহায়;
কবে তারা উঠবে জেগে,আমি যে তাদেরিই অপেক্ষায়।
হতাশার রাজ্যে দিয়েছি পাড়ি,জানিনা কবে ফিরব;
একদিন সময় আসবেই যেদিন হতাশাকেও জয় করব।

তবে কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারবেনা,
পারবে না আমাকে দমাতে;
তারা কখনোই পারবে না
আমাকে মরমের কথা শোনাতে।
শত বাধাই আসুক,আমি সবার বিরুদ্ধে লড়ব;
মনে রেখো,আমি একদিন বিশ্বকে জয় করব।।




চেক your কানেকশন...
   শঙ্কু মুখোপাধ্যায়

পাপিষ্ঠ মৌতাতের জিভ দিয়ে ঝরে
স্বপ্নের লালা!
রুমালের ঘ্রানটুকু দড়িতে লাগে,মনে আছে
শুক্রাণু থেকে গাছ বেড়ে চলে ডালপালা।
স্থিতপ্রজ্ঞ সময় নোঙর করে একাকী নদীতে
ভেসে যায় যে উদাসী রাজহাঁস!
মানুষ ঘন দুর্বল হয় কোনও এক যদিতে,
যদি ডানা মেলে হারিয়ে যায় নীলাকাশ।

একমুঠো ঘাসের সঞ্চয় ক্রীড়া
শিখতে ব্যর্থ দেহের রোম,
ব্রহ্মতালুতে বসে মালা জপে অগ্নিময় ব্রীড়া!
একটি ফুৎকারে নিভে যাক যজ্ঞাগ্নি হোম।

ফাটা আকাশ চড়াই হয়ে বোনে কেন বাসার স্বপ্ন,
বিছানায় সুখে শুয়ে থাকবে মোলায়েম কার্নেশন
আগ্রহে লাল উষ্ণ শূন্যস্থান পূরণের যত্ন!
মেঘ রাক্ষুসে গর্জনে বলে-
প্লিজ চেক your কানেকশন।




ওরা পরিযায়ী...মানুষ

নবনীতা সরকার


ঠিক কতটা পথ হাঁটলে 
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যাবে...
কেউ ওদের জানায় না...;
এই না জানাই..ওদের প্রাপ্তি ৷
'ওদের বুক ফাটে,তবু মুখ ফোটে না ৷'
ওরা শুধু হাঁটে ৷

ওরা ভাগ্যের পরিহাসে হাঁটে...
ওরা বিপন্ন প্রাণগুলি বাঁচাতে হাঁটে...
জীবনের না বোঝা অংকগুলির কাছে
ওদের অসহায় এই আত্মসমর্পণ...
হাঁটারই নামান্তর...৷
ওরা পরিযায়ী শ্রমিক....৷
হ্যাঁ.. মানুষও বটে...তাইতো ডানা নেই...৷
তাইতো হাঁটে ৷

আদিম এই হাঁটায়...
সুখ নেই ,শান্তি নেই,
খাওয়া নেই, ঘুম নেই 
শুধু কোথায় যেন..
একটা ক্ষীণ আশা আছে ....;
ওরা জানে 
হাঁটার শেষে আছে
মুক্তির  সুখ ৷
ওরা জানে 
হাঁটার শেষ ঠিকানা....
আশ্রয় ...;

এক নিশ্চিত,পরম আশ্রয়...৷৷





 চন্দ্রবিন্দু

 সুনন্দ মন্ডল

সোনার পাত্রে কলমী শাক!
কচুরিপানায় ভরে গেল কলসী।
বিশুদ্ধ আঁচ মাটির গায়ে
হরিণ বুঝতে পারে না কখন শিকার হবে!
আকাশের বুকে জেগে থাকে প্রহর
নিলাম উঠবে কখন ঐ বড় বাড়ির?
স্বর্ণপদক প্রাপ্ত যুবকও ঢোক গিলে
শ্বাস নিতে নিতে বলে, এ যাত্রা বাঁচাও।
ঘূর্ণিঝড় আসতে বাকি, সাগরের লোনা
ভেঙে ডুবে যায় একফালি আমের খোসা।
বাঁচার স্বপ্ন দ্যাখে মাঝ সমুদ্রের নাবিক
অবলম্বনে খড়ের টুকরো বৃথা!
লাভের অঙ্ক কষে একদল কাক,
বাজপাখির আঁচরে লেগে থাকে আঁশটে গন্ধ।
আর এরা স্বস্তি বিহীন ঘন অমাবস্যা কাটিয়ে
প্রতিপদে চাঁদের বিন্দু দেখে সত্যতা আঁকে। 




ঘূণটা ধরাই ছিল ...
সুস্মিতা পাল কুন্ডু 


ঘুণ ধরা ছিল....সর্বত্র --
খুব একটা বোঝা যায় নি বড়ো ;
কিংবা হতেই পারে , চোখের পাওয়ারটা বেড়েছিল --
অথবা , কাজে কাজে চশমা মোছার অবকাশ কম ছিল ,
কিংবা বাইরের পরিবেশে ধূলোর আস্তরণ বেশ পুরু ছিল 
কিন্তু এভাবেই কাটছিলো নিশ্চিন্তে সময়কাল ;
তাই ঘূণটা ঠাহর হয় নি বড়ো ,
খুঁজে পেতে দেখলে দেখাই যেত --
নজর ঘোরানোর খুব একটা দরকারও ছিল না ,তাই ঘোরানো হয়নি ততটা
সবটাই কিন্তু দূরভিসন্ধিমূলক না ....

হলো কি ,আজকাল আকাশটা বেশ নির্মল
আর ছন্দহীন সময়কাল 
অবসর অবসরে ....কাটছে সন্ধ্যে সকাল ...
তাই চোখ পড়ল ঘূণটায় ;
ঘূণ টা ছিল ...এতদিন জ্বালায় নি যদিও
কিন্তু বড়ো হচ্ছে ফাঁকফোঁকর
একটা স্তম্ভ টালমাটাল
জানিনা কিভাবে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে নড়বড়ে ভিতটা
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ...তাই ভয়টা গ্রাস করছে , হারাচ্ছে ক্রমশ ভরসা .... 
একটু যদি সুদৃঢ় হত সমাজ ব্যবস্থা ....!!



সবুজে ঘেরা হাট 

 রীনা মজুমদার


" গোধূলি আসে একটা দিনের মৃত্যু নিয়ে"
দীর্ঘ সময়ের কর্মজীবন,বৃদ্ধ চিরসবুজ বাংলো
বয়সের নিয়মে জায়গা বদল জারি হয়ে গেছে,
    সময়ের ছন্দপতন, তবুও
বিরাট পাওয়া বেশি দিন থাকা-
সোমরা, এতোয়ারী, বিসপাতিয়া ওদের
আগাগোড়া শ্রমের ভালোবাসায়
    মায়াময় ধুমায়িত চা-এ !
  পিঠে পাতার বোঝা নামিয়ে
  ওরা টিপ-সইয়ে হপ্তা নিত 
সাপ্তাহিক হাটে সংসার জুড়ে নিতে
  খুশির ঢেউ মুখে আছড়ে পড়ত 
ফুলমতির বছর পাঁচ মেয়ের লাল ফিতে,  
উপচেপড়া থলি টুঁকি দিত সজনে ডাঁটা
    হাঁড়িয়ায় সাত দিনের শ্রমকে 
    ভাসিয়ে দিতে পূর্ণিমার তীরে ।  
 চমক ভাঙত_ ফুলমতির ডাকে
    বড়াবাবু ! তোয় হিঁয়া ? কালে ?
কখনো, জীবন ভাষাহীন নীরব অনুভূতি
   হাটে শান্তির পরশপাথর খুঁজে-ফিরি ।

 শতাব্দীর ইতিহাসে স্তব্ধ জীবন 
     আঁধারে হাট, কাঁদে সূর্য ।
 জানে ওরা লড়াই, হাসবে সবুজ, আবার
আলো ছুঁয়ে যাবে হাটের কোলাহলে.....





ওরা হাঁটছে

সুব্রত নন্দী


ওরা হাঁটছে আবারও শিকড়ের সন্ধানে,
ওরা হাঁটছে বাঁচার উৎসমুখ দেখতে,
ক্লান্তি চোখে আবারও সঙ্গমস্থলে পৌঁছাতে।
ওরা অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের দল,
ওদের নেই কোনো খড়কুটোর হাতছানি!
তবুও প্রত্যাশারা সম্পূর্ণ রূপে মরেনি বসুধার পদতলে।
ওরা শেখেনি মুখোশের আড়ালে রঙের মারপ্যাঁচ,
ওরা জানে না সম্ভ্রান্ত মানুষের কারসাজি,
এদেশ আজন্মকালই ওদের কেয়া পাতার নৌকো।

আলো-আঁধারিতে পরিযায়ীর তকমা এঁটে ওরা হাঁটছে -
আবারও বাঁচার উৎস সন্ধানে সুনামীতে গা ভাসিয়ে -
হয়তো ঠিকানা হারিয়ে মৃত্যুর ক্যানভাসে শুধুই হাহাকার।
তবুও ওরা হাঁটছে বেঁচেবর্তে থাকার লড়াইকে সম্মুখে রেখে -
ওরা হাঁটছে জীবনকে বাজি রেখে -
ওরা যে সহায় সম্বলহীন পরিযায়ী শ্রমিক!



আমি অন্ধ হতে চাই 

ছবি ধর 

চোখ দুটো খুলে রেখেছিলাম  সবুজ দেখবো বলে  ,
উন্মুক্ত আকাশে ডানা মেলা পাখি দেখবো বলে ,
পেঁজা মেঘের ভেলা আর পরীদের ডানা আঁকবো বলে  l
বদলে যাওয়া নীল  বৃষ্টি ঝরাতে  থাকে  অঝোরে  ,
কান্না শুনতে থাকি বাতাসে  l
ভেসে আসে ত্রাহিরব  ওই  রামধনু  থেকেও
নদীর বুকে  মৃতের  ভরাডুবি l
কফিন বন্দী লাশ  নিয়ে ফিরছে ফেরিওয়ালা  l

ক্লান্ত নশ্বর  চোখ দুটো ঘুমোতে ভুলে গেছে l
মায়েদের  বুক চৌচির  উজাড় !
দূরের পৃথিবী আরও  উদাস 
আতঙ্কিত  নানাবিধ  ত্রাসে l
যন্ত্রণা নয়  বাঁচতে  চায়  সবাই 
জীবন পায় ক'জন  মৃত্যু পায় সবাই l
অবিরাম ধেঁয়ে আসে মহাপ্রলয় ---
বিজ্ঞান  অসহায় l
চিল শকুনের  বিরামহীন মহা পংক্তিভোজ l
আমি অন্ধ হতে চাই  , চেয়ে থাকতে নয়  l




 চুপিচুপি

রা তু ল


অন্ধকার থেকে সন্তর্পে বেড়িয়ে
দিনের আলোতে এলাম যখন
দেখি পাখি জাগা দিন
বসে আছি নীড়ের প্রান্ত ধরে

নিথর ঠোঁট কথা বলেনি
অপলক দূর...দৃষ্টি---
টুপ্ টুপ্ বৃষ্টি পরছে
ভিজছি কেবল
চুপি...চুপি।    




কিচ্ছু চাইনি আমি

বিজয় বর্মন


কেন এত শর্ত ,
পথে-ঘাটে গর্ত, খালি জলের কল ,
কোলাহলে মর্ত্য, জানতে কর্মফল।

নিভে গেছে আলো, 
মুখ হয়েছে কালো, ভেজা মাথার চুল,
সবই ছিল ভালো, কোথায় হলো ভুল ,

নতুন বিভীষিকা, 
পরিযায়ী ঠিকা, সব বেহাল বন্দোবস্ত,
সবার মাঝে একা, সংসার বড় মস্ত।


নিজেকে লুকিয়ে ,
গর্ত মাঝে ঢুকিয়ে, অক্সিজেন নাই,
শ্বাস নেওয়া ফুঁফিয়ে, বাঁচার উপায় নাই।


প্রশ্নের ঘনঘটা.....
ভোরের আলোর ছটা, রোদে পুড়ে দিন,
চোখে জলের ফোঁটা,কাটায় নিদ্রাহীন।





বিষাক্ত ছোঁয়াচ

অঙ্কুশ


আলসেমির দুপুর বিলাসিতার আড়ালে
ঘরময় গুনেছি মৃতদেহের স্তূপ।
বিষাক্ত ছোঁয়াচ গণ্ডি কেটেছে
বন্ধকি আঙ্গুল, মুখে কুলুপ।


পেটের তাগিদে পান্তা ফুরোয়
পথের গতি খরস্রোতা।
বিষাক্ত ছোঁয়াচ গণ্ডি কেটেছে
নোনাজল আর নকশিকাঁথা।


দেওয়াল আঁটা রোজনামচা, আর
খিদের জ্বালা মাইলফলকে।
বিষাক্ত ছোঁয়াচ গণ্ডি কেটেছে
পাশবালিশ আর ধূধূ সড়কে।




অনাথ আশ্রম
নিত্য রঞ্জন মণ্ডল

রৌদ্রহীন বকুলতলা
শীতল তার বাতাস হাতের বালা
অনাথ আশ্রম
পথের মাঝে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে
আদি নেই জ্যোৎস্নায় ভাঙা ঘরে
দুর্দম সে হাত – নদীর কিনারায় মন
নির্মল বাতাস যেন কত কাল চিনি
দেখেছি হাজার রবিবার – নাম তার বিনি ,
বাবু ঘাটের পাড়ে একা বসে থাকি
মাঝির গঙ্গার ছায়া ভেঙে চেসে আসে
মাতালের মদের গন্ধে ।


ভরসা
সত্য মোদক

পথ-ই তো দেয় সন্ধান
পেয়ে ছিলাম বুঝি তাই
বিশ্বাস আর ভরসা৷

এক মুষ্ঠি ভালোবাসা
শৈশব করেছিল হৃদয়
উদাস হয়েছিল মন
উড়তে দিয়েছিল উল্লাস৷

এক চিলতে প্রেম
উথাল পাথাল ঢেউ
ভেঙে দিয়েছিল অট্টলিকা
গুড়িয়ে ছিল পাথর৷

নুয়ানো শির
ছুঁতে চেয়েছে আকাশ
ভিজতে চায় মন
ভরসার আচলে...




শহরতলীর কাব্য

সায়ন তরফদার


লাল-নীল রঙে মেশা
শহরতলীর গান
আমার প্রাণে জাগে নেশা
পাখিদের গান

লিখতে চাই শহরতলীর কাব্য

ভেসে যাবো এই রাস্তায়
বৃষ্টিস্নাত বিকেলে
ঠোঁটে ঠোঁট বিস্ফারিত হওয়ায়
আয়ু বাড়ুক অকালে

সময় পেলে তোমার কথাও ভাববো।

ঝরে যাবো শীতের হিমে  
জাগবো এই বসন্তে
ট্রামলাইন লাগে কিসে?
শুধু কি কবিতা লিখতে?

লিখতে চাই শহরতলীর কাব্য
সময় পেলে তোমার কথাও ভাববো।



অন্য বসন্ত

পলাশ পাল


আজ তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে?
দেখা হতো তোমার সাথে অনমনীয়
অফুরন্ত ওই নীলচে চাদরের তলে।
কখন‌ও তোমার লাল রঙটা বৃষ্টি হতো
কখন‌ও বা আবির হয়ে ঝরতে।
নিজেকে পেতাম খুঁজে বসন্তের প্রতি মূহুর্তে।
আমার মন পাড়ায় লালের ছোঁয়া দিয়েছো।
আগুন রাঙা ওই হৃদয় গুলোর মাঝে
স্বপ্নের ছুঁচ দিয়ে কিছু স্বপ্ন বুনেছি সেদিন।
আজ সেই ছুঁচ ফাল হয়ে বেড়িয়ে বিলীন।
পচন ধরেছে স্বপ্ন বোনা ছেঁড়া সুতোয়।
হাঁটতে থাকি আমি,
ওই হৃদয় গুলোর খোঁজে...
সেদিনের রঙিন পরিবেশ আজ ধুলো মাখা পথ।
জমা হতে থাকে ইচ্ছের কত কথা।
বসন্ত ফেরে না..
বারেবারে মনে হয়, এ যেন এক অন্য বসন্ত..।






    ও যে রোজ আমার বাড়ি আসে

           রবীন আফরিন


প্রতি পদে মৃত্যু ভয় ।
ফুটপাত, মন্দির, মসজিদ, গির্জায় 
স্তরে স্তরে জমছে বিস্ময় ‌।‌‍‌ 
কালো পিচ ধরে অনুজীব হেঁটে চলে,
ট্রাফিক আইন মানে না ।
লাশের শরীর থেকে দানবেরা নেমে আসে
নতুন শিকার খোঁজে, প্রয়োজনে শুঁকে দেখে ।
জানালা দিয়ে দেখা যায়
প্রতিটি পাঁচিলের গায়ে ধারালো আঁচড়ের ক্ষয় ।
পৃথিবী জয়ের ইতিহাস লিখে দিতে 
যুগের বিনাশ ঘটবে কী?
কল্কি অবতার তবে বড়ো নির্দয় ।

নতুন সকাল নতুন বার্তা নিয়ে আসে,
তবে কী মৃত্যু আজ আমার ঘরে বসে!
যত মন ভাঙা প্রেম, প্রেম ভাঙা মন দিন গোনে ।
পাঠকের অভাবে কবিতারা মরে যায় ।

মনি ভিখারিনী এসেছে কী?
এলে বলে দিও এই দুর্দিনে যেন ঘরে থাকে ।
সেই মাছ ওয়ালিকে বুঝিয়ে বলো
কটা দিন সঞ্চয় থেকে চালিয়ে নিতে ।
ওরা মাস্ক, পৃথিবী দুটোই চেনে না ।

বাঁচার শেষ আর্তনাদ  লিখে দিয়ে যাই -
করোনা , তুমি ওকে ছুঁয়ো না
ও যে রোজ আমার বাড়ি আসে ।


            


মুখোশ 

রাজদীপ বসু

আমি আজ মুখোশে ঢাকি মুখ
প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ খুঁজে মনে।
নিজে বেঁচে বাঁচাতে পারি তোমায়ও।
'ভগবানআর 'অসুর'-এর টানাটানি চলে,
মানুষটা হারিয়ে গেল কোথায়?
চেনা মুখে আজ অচেনার ছাপ,
ছোটো ছোটো কাঁধগুলো ঝুঁকে পড়ে
গুরুদায়িত্বের বোঝায়।
তবুঘরে না ফেরার মুখে উষ্ণহাসি।
আর তুমি মুখোশ খুলেছো নিজের।
মানুষের চামড়া ছিঁড়ে
অমানুষগুলো বেরিয়ে আসে।
'ভগবানবিদায় নেন,
নির্বিচারে মার খেয়ে মরে 'অসুর'
অসহায় চিতায় পোড়ে মানবতার মুখ,
শোনা যায় তোমার নির্মম অট্টহাসি।।



রিং মাষ্টার

প্রনব রুদ্র

স্খলন সাগরে ডুবে গেছে হাত
হারিয়ে গেছে মানসিক সুস্থতা 
শরীরের আনাচে কানাচে জন্ম নিয়েছে পাপ
আজীবন প্রায়শ্চিত্ত করেও হয় না মুক্ত 
 আত্মার কলঙ্ক।
কার কাছে চাইবে ক্ষমা?
ঈশ্বর না আত্মার আর্তনাদে দগ্ধ 
নিজ সত্ত্বার
ন্যুজ জীবনের একাধিক পাপের কাছে?




আজ কাল

বিবেক রায়


ভাবতে অভুক্ত লাগে
নতুন কিছু নয়,
চেনা মুখের অচেনা ছবি
এ যেন এক ভয়ংকর মহামারী
যেখানে বিজ্ঞান ঘাবড়ে যাচ্ছে
দম বন্ধ হলেও ঘরেই বন্দি থাকুন
আমিও আর বাইরে আসি না দরজা খুলে
কেউ আর আসে না - চায়ের দোকানের ঝাপ বন্ধ
শুন শান রাস্তা ঘাট লোক ডাউন চলছে
কলকারখানা গুলো কাল্ত হয়ে  ঘুমে পড়ছে
পথের পাথর গুলো এতো দিনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে
মাথার উপরে নীল আকাশ
প্রকৃতির রূপ দেখে আমি চমকে উঠি
ঘুমের ঘরে পাখি গুলো কিচিরমিচির করছে
কয় এক যুগ শুনা হয়নি
অনেক বদলে গেছে এ প্রকৃতি
হাড়িয়ে ফেলেছি বলেই
আর এদিকে অন্য ছবি
এক বৃত্তের যেমন দুটি ফুল
আমিও না হাসতে  - না কান্না করতে পাড়ছি
আমার কলমও যেন থেমে গেছে
শুধু দেখছি , হয়তো কিছু করতেও পারবো
আমি তো রাজা নই
কে শুনবে আমার কথা
আর যদি রাজা হতাম
মোম বাতি নয় - এই ভয়ংকর মহামারীর দিনে
একশো গ্রাম অন্ন তুলে রাখতে বলতাম

আইন অমান্য করছে না বাবু গিলা শিক্ষিত বলে কথা 
ঘর বন্দি বেশ ভালোই কাটছে জীবন
গান বাজনায় খাবার চিন্তা নেই
শব্দ দূষণ থেকেও রেহাই পেয়েছ 
আর যে শ্রমিক  সুদালি টাকা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে
বাঁচার জন্য - মালিক আজ ছুটি দিয়েছে
হাজার হাজার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে
শ্রমিকদের পায়ে ফোসকা পড়ার ভয় নেই
ওরা তো নিজেই মোটর গাড়ি
আজ যে করোনার ভয়ে ঘরে ফিরছে
সে নিজেও জানে  না ঘরে ফিরবে
না পথেই খিদার জ্বালায় মৃত্যু হবে
সে কি আজও ঘরে ফিরতে পারবে
প্রশ্ন রয়েই গেলো
করোনার থেকেও যেন ভয়ংকর খিদের জ্বালা
যে সারাদিনে এক মুঠো অন্নের জন্য
রক্ত জল করে
এক মাত্র সেই জানে খিদের জ্বালা



ভ্রান্ত মোর ভাবনা
নন্দিতা কার্জী

গর্ব ছিল, সবার মাঝে প্রকাশ হয়ে
সব চাইতে উচ্চ আসনে আসীন রয়ে
দুলিয়ে আমার পাদুকা জোড়া
ললাটে দম্ভের লৌহবর্নের ফোয়ারা ।
বেশ খানিকটা সময় —
এভাবেই সময়ের ঘড়ির কাটা
চলতে চলতে হলো আমার কপাল ফাঁকা ।
ভাবনা খানি বেশ আমায়
হৃদয়ে দোলা দিয়ে হাতছানি দেয় –
"ওরে আয়, আয়, দাম্ভিকতার জীবনখানি কই দিলি ঢেলে ?"
পারবো কি সেই মিছে ভাবনাময় ভ্রান্ত ভাবনারে ছুড়ে ফেলে
এক অনন্ত দিগন্তের দিকে ছুটে যেতে
শুধু সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় বসে ধ্যানে মগ্ন হতে। 



খোকন ও বাইসন

অভিজিৎ দাশ


ফাঁকা পেয়ে সড়ক জুড়ে
       ছোটে একা বাইসন ,
হেঁকে বলে ,“ আমার সাথে
        লড়বে নাকি টাইসন ? ”

লকডাউনে বাইরে কেবা
          বন্দি সবাই ঘরে
এমন সময় আছে কে আর
           তাকে জাপটে ধরে ?

বুক ফুলিয়ে চলল সে যে
            উচিয়ে শিং জোড়া
খোকন হঠাৎ দৌড়ে গেল
             ভয় নেইকো , থোড়া। 

ঠিক তখনি বন বিভাগের
              ঘুমপাড়ানি গুলি
লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হলে
              থামত খোকার বুলি। 

ছোটা ভীমে মত্ত খোকার
             বুদ্ধি কত আছে ?
এই কথাটি কেউ ব‘লো না
            রেগে যাবে পাছে। 

রাগলে পরে জ্ঞান থাকে না
           কখন কী যে করে। 
বন্দি আছে সারা সময়
           ছোট্ট শোবার ঘরে। 

খেলাধুলা বন্ধ এখন
           বন্ধ যে পাঠশালা
কী করে ভাই আগলে রাখি
             একি বিষম জ্বালা! !




শ্রমিক চলছে 
রীতা মোদক 

শ্রমিক চলছে ভুখা পেটে 
ছেলে  বুড়ো  পায়ে হেঁটে 

শ্রমিক চলছে কর্মহারা 
চলার পথে হাজার ফাড়া 

শ্রমিক চলছে মাথায় বোঝা 
কোলে বাচ্চা আশ্রয় খোঁজা 

শ্রমিক চলছে দিশেহারা 
ক্লান্ত শরীর যাচ্ছে মারা 

শ্রমিক চলছে পথে ঘাটে 
নেইকো গাড়ি শুধু হাঁটে

শ্রমিক চলছে রেললাইন ধরে 
ঘুমের মাঝে কাঁটা পড়ে 

শ্রমিক চলছে দুশ্চিন্তা মাথায় 
দুর্ঘটনায় প্রাণ চলে যায় 

শ্রমিক চলছে রক্তাক্ত পায়ে 
ফিরতে হবে নিজের গাঁয়ে 


শ্রমিক চলছে ফোসকা পায়ে 
খাবার খোঁজে ডাইনে বায়ে 

শ্রমিক চলছে রোদ -বৃষ্টি -ঝরে 
ফিরতে চায় সে নিজের ঘরে


পরিযায়
মহসিনা বেগম 

পেটের দায় ভিন্ রাজ‍্যে গমন,
হঠাৎ শুনি অজানা এক শব্দ 'লক্ ডাউন'।
সবার গৃহের নতুন অতিথি স‍্যানিটাইজার আর মাস্ক,
তখন ক্ষুধার লড়াই লড়ছে ভুক্ষারী সমাজ।
দিন যায় রাত কাটে গৃহবন্দীর দশায়,
অট্টালিকায় হরেক - রকম খাদ্যের সুগন্ধ ছড়ায়।
কারো দিন কাটে রেশনের সারিতে কারো রাস্তায়,
কেউ চড়ে এ.সি ট্রেনে কেউ বাস-ট্রাকে গড়ায়।
কারো শিশু প্রাসাদে কারো রেলপথের ধারে;
উলঙ্গ শিশু কাঁদে অনাহারে।
মায়ের কোলে ক্ষুর্ধাত শিশু মরে ;
কোনো শিশু ব‍্যাগ -এর গাড়ি চড়ে।
কাঁধে লাসের বোঝা নিয়ে নর রাস্তায় চলে।
ভাগ‍্যের চাকা ঘুরছে আজি,
সমাজ তাদের বলছে পরিযায়ী।



জ্যৈষ্ঠের জলধারা 
মাম্পী রায়

চারিদিক ধিক্ ধিক্
              শন শন বহে লয়,
রোদ বৃষ্টির বীণা বাজে
               মধু মাহে শোনো ওই।
 ঊষা রানী দিয়ে হামী
                 ঈশান কোণে দাঁড়িয়ে
 হাক পারে বারে বারে
                   হাত খানি বাড়িয়ে।
হাসফাঁস করে জন,
                   পশু- পাখী, নদী, বন,
নেই বারি খরা ভারী
                    ধরাতল টানটান।
বেলা শেষে সাঁঝ বাঁকে
                  ঝোড়ো হাওয়া বহে যে,
সাদা মেঘে লাগে দাগ
                     বিজুলি ও গর্জে! 
হুঙ্কার ছাড়ে মেঘ, 
                     শ্রাবণ ধারা বর্ষে।
জ্যৈষ্ঠের মধু যেন 
                     মৌ সাঁচে হর্ষে।




অন্য দেশ
সহেলি দে


এ আমার অন্য মেঘের দেশ!
 নীল, কালো, সাদা, লাল এ নয় আমার বেশ!
            এ আমার অন্য মেঘের দেশ!
     সাত রঙের রামধনুটা উঠল যেই হেসে;
রঙিন সাজের সুখ আমার কোথায় গেল ভেসে!
                 সাদা কালোয় ঘনঘটা ,
                কাঁদছে অসীম লহরীটা,
বজ্রাঘাতে আসছে ছুটে ইন্দ্রকণার ওই ধ্বজ শ্রেষ্ঠ রথটা।
কোথায় গেল পেঁজা মেঘের রঙিন আলোয় মাখা ললাটটা?
        আমার চেনা আর্যাবর্ত ও দাক্ষিনাত্যের 
                সুখসাজানো রঙিন দেশটা।
               আমার বসন্তের রঙিন বেশটা।
            এ আমার অচেনা অজানা ক্লেশটা।
      কোথায় গেল আমার রঙিন বসন্তের দেশটা?
          দখিণা বাতাস যেই বইতে শুরু করলো-
      তখনই মহামারীর বজ্র মেঘমালার সঞ্চার হলো;
স্তব্ধ হলো চরাচর; বাজল ভয়ঙ্করের তীব্র মারণ ঝঙ্কার;
নেই আমার কাঁকনজোড়ার সাধের প্রণয়ী কঙ্কার;
             বাজল কোয়ারেন্টাইনের সাইরেন,
         বলল এসেগেছি আমি কভিড নাইন'টেন।
             আমি মৃত্যুপুরীর করোনা ভাইরাস, 
           ছড়াবো বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর ভয়ঙ্কর ত্রাস।




জামাই কাবু
সুজিত মুখোপাধ্যায়

জামাই সাজে বিষ্টুচরণ চুলে কলপ মেরে,
বাগিয়ে টেরি উঠল সেজে, ছুটির আমেজ ছেড়ে।
কড়া ঝাঁজের মাঞ্জা মেরে পাঞ্জাবি আর চোস্তা ,
বিষ্টু যে আজ কনক দামী, নয় বাজারে সস্তা।

জামাই ষষ্ঠী ফুলকো লুচি ছোলার ডালের ছক্কা 
খাঁসীর ঝোলে হাত ডোবান, বুকে টরে টক্কা।
মন খারাপের বৃষ্টি ভেজা ঝড়-ঝাপটা মেপে 
বিষ্টুবাবু বাইকটি হাঁকায় মাভৈ মন্ত্র জপে।।

মাঝ বয়সী বউ পিছনে ব্যাগ রয়েছে বাঁধা, 
রাতের ভোজন সেরেও কিছু করবে বাঁধা-ছাঁদা।
অষ্টাদশী ছোট শালীর আদুরে ফোলা গাল ,
শাশুড়ি মায়ের আশীর্বাদী পান খাওয়া ঠোঁট লাল।

বিষ্টু জানে টেকো শ্বশুর মুখে হাসি মিষ্টি, 
বলছে মনে, লক-ডাউনেও এ কি অনাসৃষ্টি! 
হাড় কেপ্পন শ্বশুরমশাই হিসেবে পাই আনা 
পুষিয়ে নেবে  বিষ্টু পেটুক আল্লাদে আটখানা!
ভাইরাসকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ফুঁকে 
খাবেই বিষ্টু জামাই ষষ্ঠী মুখোশ বেঁধে মুখে।

বাবা জীবন আটকে গেলেন শ্বশুর বাড়ির মোড়ে 
বহিরাগতের প্রবেশ নিষেধ, বাঁশ দিয়েছে গেড়ে। 
পাড়ার শ্যালক মুখোশ-বাঁধা, বললে, "জামাই বাবু!
পিছ টান দিন, শ্বশুর পাড়া করোনা জ্বরে কাবু।
আসছে বছর আবার হবে ষষ্ঠী দুধে-ঘিয়ে
এ বছরটা হাত ধুয়ে নিন স্যানিটাইজার দিয়ে।

বাইক ঘোরায় বিষ্টুবাবু, মনে ভারী কষ্ট
ফোনে শ্বশুর গদগদ, কারণ এবার স্পষ্ট! 




ঝকমারি
মাথুর দাস


কৈলাসে  ঐ আসে
রোনার ত্রাস যেই,
দেবরাজ দিলো টাস্ক
মাস্ক পরো সকলেই ;
সাজ সাজ রবে সবে
মুখ ঢাকে জোরদার,
ভোলানাথ  দেয় সাথ
শিহরিত  দু্র্গার ।
চটপট পরে মাস্ক দুইবোন
সরো আর লক্ষ্মী,
ঠিকঠিক পরে নেয় কার্তিক
নেই কোন  ঝক্কি ;
ঝকমারি  দুর্গার,
মনে দেখ নেই কোন সুখটি,
কী করে সে ঢাকবে
গোবেচারা গণেশের মুখটি !




আম কুড়োনোর দিন 
মজনু মিয়া 


পাকা আম কাঁচা আম 
কালো কালো জাম,
কুচ ভরে খুঁটে আনি 
তারা রাম পাম। 

দুধ দিয়ে ভাত দিয়ে 
ভালো করে মেখে,
আম দুধ খায় দাদু 
চেটে পুঁটে দেখে।

একদল ছেলে মেয়ে 
গাছ তলে থাকে,
কখন যে পড়ে আম 
থাকে তার তাঁকে।

এক আম পেলে পরে 
খুশি হয় খুব,
নাচ আর খুশি হয় 
দেখি তার রূপ। 



মিষ্টি মেয়ে বৃষ্টি
শেখ একেএম জাকারিয়া

মিষ্টি মেয়ে বৃষ্টি নাচে
মন মাতানো তালে,
জৈষ্ঠ্য মাসে ফুল ফুটেছে
কৃষ্ণচূড়ার ডালে।

ব্যাঙে ডাকে এদিক-ওদিক
জবর মজার খেলা,
জলে ভাসায় শিশু-কিশোর
কলা গাছের ভেলা।

ভেলার পাশে করছে খেলা
পানকৌড়ি ও হাঁসে,
গরু মহিষ সাঁতার কাটে
নদীর জলে ভাসে।

মিষ্টি মেয়ে বৃষ্টি আসায়
বইছে শীতল হাওয়া,
ঠাণ্ডা লেগে বুড়োবুড়ির
বন্ধ নাওয়া খাওয়া।



মাটির ঘর
সৃজন প্রধান

ও ভগবান ! হে মা দেবী দুগগা ! 
কেনি রে তুই কাড়ছু অত পরাণ ,
উনমিতে সব করছে হাঁশ ফাঁশ 
তারুর সাথে আইসচে আমফান ।

খড়গুলা সব পচেই গেল জলে ,
তারুর উপর ঝড় - জল আর বাজ ,
টকাটা আমার বাইরে পড়িয়া আছে ,
পেটে ভাত লেই , হারাইছে তার কাজ ।

বাইরে কাও যাইতে গেলেও বাধা ,
সবগা দিকে করোনার ছড়াছড়ি ,
ঘরের চালটা উড়াই গেল ঝড়ে 
ক রে মা ! কেনি অত মহামারী ?

আমি তো তোর মাটির ঘরেই বাঁচি ,
কেনি রে তুই , দিচ্ছু অত চাপ ? 
একটু খানিও বাঁচতে দুবুনি নাকি ?
ক না ঠাকুর , কি সে আমার পাপ ?

তেনারা শুধুই ভোটটা লিতে আসে 
বাকিটো সময় শুধুই রক্ত চষে ,
ওউটুকুটো শরীরখানি আমার ,
তাউ বলে কি , যাবেই আমায় পিষে ?

আরগা শুন ছানাপুলারা সব ,
বুকটা ফুলাই বেশ তো বড়াই কর ,
সাইন্সে পড়ি , হব আমি ডাক্টর ,
কাইতো দেখি , করোনাকে কেমন মারো ?

সবগা শালা , বেইমানিতেই সেরা , 
অখন আবার জুটছে দ্যাখো ঝড় ,
হে মা দেবী , কর্ না সব ভালো ,
দে না ফিরে , আমার ওউ মাটির ঘর। 



বন্ধ দিনের কথা
হিমাংশু রায়

লকডাউনের শুনশান পরিস্থিতি, 
আমি তাকে দিনভর গাছ পাতা আকাশ মেঘ দেখতে বলেছি।
রাত্রি হতেই সে উচ্চৈঃস্বরে নালিশ করে, বলে
আমার আকাশ ভালো লাগে না,মেঘ ভালো লাগে না।
সেই,এক আকাশ,একই  মেঘ কত দেখব আর 
রাত্রিবেলা তাই  তাকে  রাত্রির তারা দেখাতে ডাকি।
যদিও
এক আকাশ আর কত দেখব বলে, মিছিমিছি সে চুপটি করে থাকে।

আমি বলি আজকে তোমায় গল্প বলবো শুনবে যদি জলদি এসো।
তোমার মাথার  সেই তারার, যাকে মনে ভালোবাসো।
সে বলে অনেক তো তারা, কোনটার কথা বলবে
আমি বলি, তুমি যাকে বিশ্বাস করো,যাকে নিয়ে চলবে
গল্প শোনার কথায় সে চুপটি করে আসে
বাদাম নিয়ে খায়,বসে আমার পাশে।

আমি বলি তোমার তারা আর আমার তারার দুরত্ব কত মাপতে পারো?
সে বলল দশ আঙুল হবে হয়ত,বড়জোর এগারো বারো
আমি বলি কিছুটা ঠিক কিছুটা তার  নয়তো ঠিক
তুমি বলছ দুরত্ব কম,আপেক্ষিকতার হিসেব মাফিক
তুমি এখানে আমি এখানে মাঝে বাসা মৌনতার
যেমন করে দুটি তারা দুরত্ব তার শুন্যতার
তোমার তারার অনেক আলো আমারো হয়ত তাই
 দূরে দূরেই ঘুরিফিরি মিলি না দুজনাই
যেদিন তোমার কমবে আলো , চুপটি করে আবার এসো
এভাবেই বসব পাশে, একটু কাছে, ভালোবেসো।
দূরত্ব আপেক্ষিক তাই তুমি আর আমি যে দুরত্বে খেলা করি
লোকে সেই দূরত্বের কথা শুনলে হাসবে।

সে মাথা ঝাপটায়,বলে কি গল্প মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না
তারপর তাকে আর একটা গল্প শোনাই
বলি

ওই যে বড় তারাটা দেখেছ, ওটা অনেক বছর আগেই মারা গেছে
সে অবাক হয় বলে তাই,তাহলে দেখা যায় যে!
আমি বলি কিছু জিনিষ মরার পরেও বেঁচে থাকে
যেমন বেঁচে থাকে সম্পর্করা
প্রতিটা ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকা যেমন শেষ হওয়া সম্পর্কেও প্রান খুঁজে নিতে জানে,আলোর সন্ধান পায়।
মৃত সম্পর্ক নিয়ে বেঁচে থাকে হাজার হাজার বছর

সে আবার মাথা নাড়ায়
উহু এটাও বুঝলাম না একটা ভালো গল্প বলতে পারো না ছন্দ মিলিয়ে 
আমি তখন ছন্দের গল্প শুরু করি,বলি

তোমার যে তারার শহর,পাশেই আমার তারার গ্রাম
তুমি থাকো দালান কোঠায়,মিষ্টি শহর মধুর নাম
আমি আসি রাত্রি হলেই,আকাশে নিয়ে হলুদ চাঁদ
কেন আসি, উত্তর নেই,নিরুত্তরই নাহয় থাক।
তুমি থাকো কাঁচের ঘরে,অল্প আলো ছিটকে আসে
জানালা খুলে তাকিয়ে দেখ কেউ সত্যি ভালো..
তারপর থেমে যাই
সে বলে থামলে হঠাৎ গল্পটার কি হল?
আমি বলি কিছু কথা বলা ভালো, কিছুটা লুকোনো ভালো।
সে হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়,চিমটি কেটে আমায়  বলে
এমনি করে কেউ গল্প বলে, বেয়াদব খুব বেয়াক্কেলে ছেলে।
এমনি করেই মৃদু সে হেসে বলে   ঘুমুই এখন  রাত্রি  হল
গল্পগুলোর হিসেব মিললে,তবেই গল্প বোলো।
সে হেসে যায় নিজের ঘরে,চুপটি করে দরজা টানে
আর আমি হাসি, মনেমনে বলি
ভালোবাসার মানুষগুলোকে হাসতে,খুশি দেখতে যে কত সুখ,তা তুমি জানো না।
ভালোবাসার মানুষগুলি হাসবে, খুশি থাকবে,চোখের সামনে নিশ্চিন্তে ঘুমোবে,মানুষ এর চেয়ে বেশী কিছু চায় না।



জেগে ওঠো ঈশ্বর!
জয়তোষ ঘোষ 

ভোরের বাতাস আজ নেহাতই একা
 ইতালি থেকে ভারত শত শত লাশ ...
আট কিংবা আশি হোক লাখ লাখ কান্না,
সরে আসে চেনামুখ,সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সে ।
হাঁটাপথে শ্রমিকেরা সাথে অন্তঃসত্ত্বা 
কাটা পড়ে যন্ত্রদানে,কুয়োর ভেতর....
আমার ভারত সাথে, হাটে জাহানারা,
মুখ ঢেকে দান নেয় কাজ হারা বাবা ।
থেমে গেছে বিশ্ব আজ আমার ভারত
কত কান্না ভেসে আসে বাতাসে মানুষে...
ঘুমিয়েছো বহুকাল জেগে ওঠো আজ, 
কান্নাতো আদতে তোমাকে খোঁজে ঈশ্বর! 




গোধূলি লগ্নে
সার্বজনীন মাটি 

ঈদের দিনে     গোধূলি লগ্নে-
    ব্রীজ পাড়ে ঘুরলাম
      মামা ভাগ্নের দল,
বিচ্ছেদ ক্ষণে     প্রণয়ী মনে-
   আশিকের বুকে ব্যথা
    চোখের কোণে জল!
তোমার জন্য     হলাম হন্য-
    চারদিক খুঁজে ফিরে
       যদিবা দেখা পাই,
ধু ধু অরণ্য     মনটা ক্ষুন্ন-
    নিরবে কেঁদে এলাম
      সম্মুখে তুমি নাই!
তোমার দেশে    গিয়েছে মিশে-
     তৃণ মাটি জলে ফুলে-
         আমার তনু মন,
স্বপ্নেতে ভেসে    কষ্টেও হেসে-
     ভুলবোনা তোমারেগো
          করেছি এই পণ!
সুন্দর নারী     কি বলিহারি!
   আমি জানিগো তোমার-
          চরণযোগ্য নই,
সর্বস্ব ছাড়ি    দিব যে পাড়ি,
       বুকে ধরে তব নাম
          বাঁচব মরবই!




পৃথিবীর কঠিনতম অসুখ
সাবিউল ইসলাম

পৃথিবীর চরমতম সমস্যার কঠিনতম অসুখ করেছে এখন।
সভ্যতা আজ গভীর সংকটের মধ্যে পথ চলছে।
দেওয়ালের  বিজ্ঞাপনের মতো একটা ঢাকা একটার আড়ালে।
নৈতিকতার বড়ো অভাব বোধ হয় আজ।
ধামাচাপা শব্দটি গুরুত্ব পায় সবার অজান্তে ইতিহাসের পাতায়।
মানুষের সীমাহীন লোলুপতা বাঁধ ভেঙ্গেছে নবজাতকের।
হাঙরের গ্রাস আজ ক্ষুন্ন হয়েছে, আগ্রাসী মানসিকতার কাছে। 
মাৎস্যনায়ের পর্ব  শিথিল হয়েছে জলে, 
জনসমাজের দিবালোকে আজ তার উত্তরণ।
সভ্য মানবের দিন আজ ফুরিয়েছে,
বন্যেরা নিতে চায় শাসকের ভার। 
মানব আজ বিশ্ব চিত্রনাট্যের কারাগারে বন্দি,
বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের মিছিল দেখা যায় রাজপথে।
বিশ্ব মানব আজ সংকটের পথে ।
পৃথিবী আজ চরমতম সমস্যার কঠিনতম অসুখের দ্বারে।




 কলম ও ছবির যুগলবন্দী   
জাতোবেদা সাহা 

সাল যে আজ বিশ ; এসেছে দুর্যোগ, 
নিঃশাসে শুধুই বিষ ;মানুষের দুর্ভোগ। 
দেশের ভিত্ যারা ; করছে নির্মাণ, 
বিপদে আজ তারা ; আমাদের শ্রমসমাজ। 
পেটের দায়ে যারা ;  গিয়েছিলো দূরে, 
ফিরছে বাড়ি তারা ;করোনার ভয়ে । 
অনন্ত মাইল পথ ; দিতে তারা পারি,
হারাচ্ছে প্রাণ ; ফিরতে তারা বাড়ি। 

সাল যে আজ বিশ ; দেশে মহামারি, 
স্তব্ধ তাই দেশ ; ট্রেন চলছে সরকারি। 
ফেরাতে তাদের ; করো না রাজনীতি,
তারা তো দেশের ভিত্ ; তারা অর্থনীতি।
কাটবে এই দুর্যোগ ; আসবে নতুন দিন, 
শ্রম দিয়ে আবার তারা ; গড়বে নবীন। 
প্রার্থনা রইল আজ ; দুঃখ করতে লাঘব, 
পরিযায়ী তারা ; ভালো রাখুক , রাঘব।



মুজনাই অনলাইন জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা  ১৪২৭



No comments:

Post a Comment