সম্পাদকের কথা
অতিমারি অতিক্রান্ত। জীবন আবার স্বাভাবিক গতিতে। তবে আগের সেই ছন্দ নেই আর। তাই নিউ-নর্মালের এই পুজো একেবারেই অন্যরকম এবার। প্রত্যাশিতভাবে সকলেই অপেক্ষা করে আছে তার। ইতিমধ্যে ইউনেস্কোর বিশেষ স্বীকৃতি পাওয়ায় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি রয়েছে এই উৎসবের দিকে। তাই সব মিলে উৎসবের আবহ শুরু হয়ে গেছে। নিজের মতো করে পুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই। মুজনাই পুজোর আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। প্রার্থনা করছে, সকলের পুজো ভাল কাটুক। একই সঙ্গে আশা রাখছে, মা দুর্গার আশীর্বাদে অশুভ দূর হবে। শুভশক্তি সকলের মঙ্গলবিধান করবে। প্রতিনিয়ত যে টালমাটাল পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে মানবকূল, তা কেটে গিয়ে আসবে এক নতুন দিন।
মুজনাই সাহিত্য সংস্থা
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
হসপিটাল রোড
কোচবিহার
৭৩৬১০১
ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)
- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, প্রচ্ছদ ছবি, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
মুজনাই অনলাইন পূজা সংখ্যা ১৪২৯
বর্ণাতীত
মাথুর দাস
আদিতে ছিল না বর্ণমালা, কর্ণ ছিল ঠিক,
শব্দের স্বননে ছিল ইঙ্গিত, দ্বৈরথ, চক্রব্যুহ ;
মনে মনে ভাব ছিল 'ভাব'-এরও সমধিক,
আবছায়া-ঘেরা প্রেম, প্রীতি, বৈরিতা সমুহ ।
তখনো মানুষ ছিল যথারীতি মানুষেরই মত,
বয়ে যেত বায়ু জল কালের প্রবাহ নিজস্বরে ;
প্রকৃতি-নির্ভর দিন, মধুরাত স্বপ্নিল চন্দ্রাহত,
বর্ণ নয়, ভাষা ছিল বর্ণাতীত শব্দের অক্ষরে ।
ভাষা কি এখনো বোধ্য, সর্বদা মানুষে মানুষে ?
না-বোঝা কথার স্রোত ওতপ্রোত বয় বিশ্বময় ;
হাজারো ভাষা, তবু বোধ-ও হয় বুঝি স্থানু যে,
শব্দ দিয়ে ধ্বনি দিয়ে প্রায়শ ইঙ্গিতে কথা হয় ।
সার্কাস
উমা শঙ্কর রায়
একটা মস্ত তাঁবুর মধ্যে আছি
অনেকদিন পাখিদের নীলাকাশের বায়না।
দড়ির মই বেয়ে উঠি তাঁবুর উপরে যাব বলে,
মইয়ের দুলুনি ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেলে
দড়ির জালে ভরসা জাগে।
দোল খেতে খেতে এখন
পকেটে জড়ো করেছি সম্পর্ক যত!
আত্মস্হ করেছি ভীষণ ব্যালেন্স--
দড়ির উপরই এখন চাকা ঘোরাই আমি।
পকেটস্হ সম্পর্করা হাততালি দিলেও-
আমি ভরসা রাখি দড়ির মই আর জালে।
বিষাদের সামনে এখন অনায়াসে দাঁড়াই,
জানি এই তাঁবুর আমি ব্যালেন্স বিশারদ!
মোহ
চন্দ্রানী চৌধুরী
এক আকাশ আলোর আয়োজনে
ভেসে আসে ভালোবাসার গান
আদর সোহাগ ঝাঁপি ভরে নিয়ে
বুকের কাছে সদ্যজাত প্রাণ ।
গোপন মনের রূপকথাদের নিয়ে
সব পেতে চায় বেহিসাবী মন
বাবা মায়ের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে
আঁকা হল ছোট্ট ছেলের ভুবন ।
আসমানি রং ইচ্ছেগুলো সব
লাগাম ছাড়া দামাল হতে চায়
দূরের পাখির নাগাল পাবে কবে
রোদ্দুর ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষায়।
স্বপ্নগুলো সাজিয়ে নিল ছেলে
পূরণ হল বাবা-মায়ের সাধ
যোগ্য ছেলে দূর বিদেশে যাবে
উঁচু হবে পরম্পরার কাঁধ।
বিদেশ যাত্রা সফল হল তার
পড়ে রইল দেশের ভিটেবাড়ি
সত্যি হল স্বপ্ন মা - বাবার
সাক্ষী হয়ে রইল নিঝুমপুরী ।
নতুন জীবন-জীবিকার টানে
ব্যস্ত ছেলে মায়ের আঁচল ছাড়ে
চোখের ভাষা হারায় এখন ভীড়ে
বয়স্ক প্রাণ একাকিত্বের অন্ধকা
চোখের জলে এখন শুধুই
বুকফাটা হাহাকার
নাম-যশের মোহে হারায়
সন্তানকে ছুঁয়ে থাকার অধিকার ।
নাম যশের মোহে হারায়
মা বাবা কে জড়িয়ে থাকার আব্দার
আকাশলীনা ঢোল
ঘাসের আগায় দু-এক ফোঁটা
শিশিরের কণা,
আকাশের বুকে কোথাও সাদা
কোথাও বা ঈষৎ কালো মেঘ,
ঘরে ঘরে বেজে চলেছে একটানা
আগমনীর সুর-মহিষাসুরমর্দিনী।
নদীর ঘাটে ঘাটে ভিড়, তর্পণ চলছে-
তেমনই কোনও ঘাটের এক কোণে
দাঁড়িয়ে, ছোট্ট একটা ছেলে,
সদ্য ঝরে যাওয়া শিউলি ফুলটার মতোই
সেও পিতৃ-মাতৃহীন।
পুজোর আনন্দ তো দূরে থাক,
তর্পণের সাধ্যটুকুও তার নেই-
চোখ জলে ঝাপসা হওয়ায় সে
দেখছে না কিছুই,
তাকেও দেখছে না কেউই।
দেখছে কেবল অন্তরীক্ষে থাকা একজন,
যাঁর আগমন-বার্তায় মুখরিত এই পৃথিবী-
সেই মহামায়ার দুচোখ বেয়ে
দু-এক ফোঁটা জলের ধারা বুঝি
নেমে এল বৃষ্টি কণা হয়ে-
স্পর্শ করল সেই অনাথ শিশুটির
মাথার কালো চুল, যেন পরমেশ্বরীর চুম্বন-
এক মহালয়ার ভোর হাত বাড়িয়ে দিল
আরও এক মহালয়ার ভোরের দিকে।
কেউ বলেনা কথা
সোমনাথ সাহা
"The truth is cruel but it can be loved, and it makes free those who have loved it."
নক্ষত্রের রুপালী আগুন ভরা রাতে কারা যেনো আমার গতি থমকে দিলো!
সন্তর্পনে তর্জনী তুললো আমার দিকে--
হ্যা হ্যা আপনি এই দিকে আসুন,
হাত তুলে দাঁড়ান, কি কি আছে বার করুন
জামা খুলুন-পকেট খুলুন-শরীর-মন সব খুলে রেখে দিন মাটির বুকে।
কি হলো বার করুণ!
শত শত বছরের নারীদের যন্ত্রণা বার করুন,
শত শত যুবকের বেকারত্বের বেদনা বার করুন,
কত শত কৃষকের আত্মঘাতীর কথা বার করুন,
একি! চুপ কেনো ?
আপনার সকল মৌনতা ঠিক যেন সন্ত্রাসের খুব কাছা কাছি বলে মনে হচ্ছে।
মৌনতাকে দাঁড় করাণ, প্রশ্ন করুণ-
সকল ব্যর্থ পুরুষেরা মনে মনে বীর্য ফেলে কেনো ?
অগ্নিকুন্ড থেকে কারা এসে আমাদের পুড়িয়ে দিচ্ছে ?
জবাব দিন ! উত্তর কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন ?
স্পষ্ট ভাবে বার করুন!
গোপনে থাকা অশ্রুজলে আর কত হারাবে স্বতন্ত্র মানুষের স্বত্ত্বা ?
তার পর হঠাৎ করেই জেগে উঠলো আদিম দেবতার মতোন বঙ্কিম পরিহাসে মৃত সূর্যের শিখা !
তুমি কে ?কে তুমি ?!
মানুষ নও?!
হ্যা হ্যা আমি মানুষ নই!
আমি অনাহার- আমি বেকার- আমি ভয়- আমি অভিশাপ।
No comments:
Post a Comment