মুজনাই
অনলাইন চৈত্র সংখ্যা ১৪৩০
রথচক্রগ্রাস
লিপিকর
ঔপন্যাসিক ভাবিয়া রাখিয়াছিলেন এটি তাঁহার নবতম সৃজনে ব্যবহার করিবেন।
ব্যস্ত মহানগরীর ব্যস্ততর এক মোড়ে রক্তিম নিষেধসঙ্কেত উচ্ছ্বাসের হরিৎ হইবার অপেক্ষায় সারি সারি নিষ্প্রাণ ব্যক্তিগত যানের মধ্যে প্রথমে ছিল একটি বাদামী বর্ণের গাড়ি। (ঔপন্যাসিকের কলমে চালিকার দেহবল্লরী হয়তো আরও কিছুটা মূর্ত হইত, কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে থাকুক গাড়ির লাল রঙের L চিহ্নটি। )
আলোকসঙ্কেত পাল্টাইলেও তরুণীর পথ-তরণীটি ঢাল অতিক্রম করিয়া ডাহিনে নিজ গন্তব্যে যাইতে পারিতেছিল না, পশ্চাতের চালকদের ক্যাঁকো-ফোনি নিছকই উপস্থিত সকলের রক্তচাপ বৃদ্ধি করিতেছিল। পার্শ্বের সারির গাড়িগুলি দ্রুত হুশহাশ চলিয়া যাইতেছিল। আরক্ষাকর্মীটি অনুধাবন করিতে পারিতেছিলেন কী ঘটিতেছে এবং সাহায্য করিবার ঈপ্সাও সামান্য হইলেও তাঁহার ছিল, কিন্তু গাড়ীচালনা বিদ্যাটি তাঁহারও অনধীত। তিনি নিরাসক্ত চক্ষে যান নিয়ন্ত্রণের সবুজ আলো পুনরায় লাল হইতে দেখিলেন। (শব্দগুনতি-ব্যস্ত হইলে হয়তো ঔপন্যাসিক আরক্ষা-দফতর, তাহাদের প্রতিনিধি-র মানসিকতা বা দক্ষতা লইয়াও কিঞ্চিদধিক অক্ষর ব্যয় করিতেন, আমরা নজর রাখি পরের গাড়ীটির উপর।)
বাদামী যানটির অব্যবহিত পশ্চাতে একটি শ্বেতবর্ণের ভাড়াগাড়ী আটকাইয়া ছিল। পূর্বের সবুজসঙ্কেতেই এই পথযোগটি তাহার অতিক্রম করিবার কথা, কিন্তু সম্মুখের গাড়ীটির অযোগ্যতাযোগ তাহাকে এক্ষণেও আটকাইয়া রাখিয়াছে। সৌভাগ্যক্রমে এমুহূর্তে তাহার কোনো সওয়ারী নাই। সঙ্কেত রক্তবর্ণ হইলে সে নিজ বাহন হইতে নামিয়া বাদামী গাড়ীর চালিকাকে নামিতে বলিল। তরুণীটি তাহা করিলে সে গাড়ীটি চালাইয়া ঢালের উপর দিয়া বামদিকের সরণীতে উঠাইয়া, তরুণীকে তাহার চাবিটি প্রত্যাৰ্পণ করিল। (জীবনের গতিপথ কীভাবে পাল্টায়, সে সম্বন্ধে ঔপন্যাসিক আরও সুন্দর পরিচ্ছেদ গাঁথিতে পারিতেন, আমরা দেখি গাড়ির মালকিন তাহার পরে কী করিল।)
বিড়ম্বিত তরুণীটি গাড়ীতে উঠিয়া, পুনর্বার যানে জান আনিয়া, চালককে ধন্যবাদ দিয়া, বামদিকের মার্গেই চলিয়া গেল, পরবর্তী পথসংযোগে উল্টামুখে ফিরিতে তাহার অসুবিধা হইবার আশঙ্কা কম, কারণ সেস্থলে চড়াই-উৎরাই আলোচ্য মোড়টির তুলনায় অনেক শমিত। (ঔপন্যাসিক হয় তো এই পর্বে আসিয়া নতুন ভাবনা, চরিত্র বা সঙ্কটের অবতারণা করিতে পারিতেন, আমরা লক্ষ্য করি, সেই বিশেষত্বহীন যান-চালকের পরবর্তী কর্ম।)
ট্যাক্সিচালকটি প্রায় দৌড়াইয়া নিজ বাহনে ফিরিয়া তাহা চালু করিল, লাল ফের সবুজ হইবার উপক্রম হইয়াছে। আরক্ষাকর্মীটিও তাঁহার উদ্বেগ মোচন উদযাপন করিতে দুই বেপরোয়া বাইক-ধারীকে সংহত চালনার নির্দেশ দিয়াই ক্ষমা করিলেন। আলোক, কালের নিয়মে ও যন্ত্রের দক্ষতায়, পুনরায় সবুজ হইলে ট্যাক্সি ডাহিনে নিজ গন্তব্যে গেল, তরুণী, ট্যাক্সিচালক, আরক্ষাকর্মী কাহারো সেই ঘটনা সম্বন্ধে বিশেষ চিন্তা রহিল না। (ঔপন্যাসিক চিন্তা করিতে লাগিলেন, এই খন্ডদৃশ্যটি তিনি কোন স্থলে ব্যবহার করিবেন, সেই অবসরে আমরা অন্য কোন অণুগল্পে মনোনিবেশ করি।)
No comments:
Post a Comment