গল্প
গল্প খোঁজা
সুজাতা কর
রিনি পাতিপুকুর বস্তি থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় আসে। ন'টা থেকে তার ক্লাস। সে একটি বেসরকারি কলেজের BCA-এর ছাত্রী। সকালে তার কিছু খাওয়া হয়নি। বাড়িতে স্টোভ জ্বলেনি। গতকাল রাতে তার বাবা জুয়ায় মাস মাইনের সমস্ত টাকা হেরে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরেছিল। সে সময় তার মা চার বাড়ি কাজ সেরে সবেমাত্র তাদের জন্য ডিমের ঝোল- ভাত রাঁধতে বসেছে। আগামী সপ্তাহে রিনির কলেজের ফিস জমা করার শেষ তারিখ। না জমা করলে নাম কাটা যাবে। তার বাবা জ্যাম-সস তৈরির কারখানায় কাজ করে। বাবার মাইনেতে তাদের সংসার চলে। মায়ের চার বাড়ির রান্নার টাকা রাখা হয় রিনির কলেজের মোটা ফিসের জন্য। কিন্তু তার বাবা কোনো মাসেই মাইনের পুরো টাকা সংসারে দিতে পারে না জুয়ার নেশায়। ফলে মায়ের টাকায় হাত পড়ে। কাল আর মা ধৈর্য রাখতে পারেনি, ফুঁসে উঠেছিল, জোরে ধাক্কা দিয়েছিল বাবাকে। বাবা ঘুরে দাঁড়িয়ে সপাটে এক চড় কষেছিল মায়ের গালে। মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে বিছানার চাদর খাবলে ধরেছিল রিনি। কাল রাতে রিনি আরো দু'ঘন্টা বেশি পড়াশোনা করেছে। আজ সকালে রিনি দেখেছে মায়ের গালে কালশিটে। তার ওপরে বাসি চোখের জলের দাগ। আজ তাকে প্রোগ্রামিং নলেজের একটা বইও কিনতে হবে।
ছ'টা নাগাদ দুটো বাচ্চাকে পড়িয়ে রিনি বাস ধরে। বাঙ্গুর অ্যাভেনিউ-এর প্রবেশ রাস্তার সামনে ভি,আই,পি রোডে নামে। একটু এগিয়ে যায় সামনে। গাছপালা ঢাকা রাস্তাটা নির্জন, অন্ধকার। দুটো এলাচ মুখে দেয় রিনি। সকাল থেকে প্রায় না খাওয়া। মুখে বাজে গন্ধ হতে পারে। ব্যাগপ্যাক থেকে নতুন বইটা বের করে। সস্নেহে হাত বোলায়, গন্ধ নেয় বুক ভরে। বইটা ফের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। রাস্তার দিকে তাকায়। দূর থেকে একটা বাইক আসছে। রিনি সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সমস্ত ইন্দ্রিয় টানটান হয়ে ওঠে, একটু উত্তেজনা। আকাশের দিকে তাকায়, বিড়বিড় করে। বাইক চোখের দৃষ্টির সীমায়। উজ্জ্বল হলুদ শার্ট। রিনি আঙ্গুল ক্রস করে। বাইক সামনে এসে দাঁড়ায়, হেলমেট খোলে। রিনি দেখে তার খদ্দের আর কেউ নয়, পিসতুতো দাদা মনোজ। বিহ্বল রিনি গল্প খোঁজে।
No comments:
Post a Comment