শিশুদের বিকাশের ক্ষেত্রে বাবা মায়ের ভূমিকা
মনোমিতা চক্রবর্তী
"ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা
সব শিশুরই অন্তরে ।"
কবির মতো আমাদেরও ধ্রুব বিশ্বাস যে শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ এবং তাদের মধ্যে নিহিত রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা ।আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যাশা যে, আজকের শিশু একদিন আদর্শ নাগরিক হয়ে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং দেশের সুনাম বৃদ্ধি করবে।
আমার মনে হয় আজকের ফুলের মত সুন্দর নিষ্পাপ শিশুদের ভবিষ্যত সমাজের কর্ণধার হিসেবে তৈরী করতে গেলে শিশুর সামগ্রিক বিকাশ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আর এ বিষয়ে মূল ভূমিকা পালন করেন শিশুর বাবা ও মা। প্রত্যেক বাবা-মারই উচিত শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যাতে যথার্থভাবে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা।
কিন্তু বেশিরভাগ বাবা-মায়েরা শিশুর শারীরিক বিকাশের দিকে খেয়াল রাখলেও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে অতটাও যত্নশীল হন না।
বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ বাবা-মায়েদের সন্তানকে দেওয়ার মতো সময় খুব কম। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে যেমন ভাবের আদান-প্রদান ঠিকমতো হয় না তেমনি একটা দূরত্বও কিন্তু তৈরি হয়।
আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখি শিশুরা খেতে না চাইলে বা কোনো কিছু নিয়ে জেদ করলে তাদের বাবা মায়েরা মোবাইল বা টিভির স্ক্রিনের সামনে শিশুকে বসিয়ে দিয়ে কার্টুন দেখিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে এবং খাওয়াতে চেষ্টা করে। এভাবেই বাবা মায়েরা সন্তানদের মধ্যে একপ্রকার গ্যাজেটের আসক্তি তৈরি করে। আর এই গ্যাজেটের আসক্তির ফলে শিশুদের অন্য কোন চিন্তাশক্তির সুযোগ তৈরি হয় না। এটা কিন্তু শিশুর মানসিক বিকাশে অনেক বড় বাধা হয়ে যেমন দাঁড়ায় তেমনি শিশু তার ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে এবং এর সাথে সাথে শিশু কিন্তু তার বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে।
এক্ষেত্রে বাবা মায়েদের ধৈর্যশীল হতে হবে ।ধৈর্য ধরে শিশুদের খাওয়াতে হবে ।কারণ একটি শিশুর খিদে পেলে সে স্বাভাবিক নিয়মেই খাবে। তার জন্য শুধু প্রয়োজন বাবা মায়েদেরএকটু ধৈর্য ধরে সময় দেওয়া ।
শিশুরা কিন্তু বেড়ে ওঠার শিক্ষা পায় তাদের পরিবার থেকেই। কিছু কিছু শিশু তাদের পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে, বা বাবা মায়েদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখতে দেখতে বেড়ে উঠলে তারা জীবনে হতাশ, অসামাজিক এবং অসহিষ্ণু যেমন হয় তেমনি নিরাপত্তাহীনতাতেও কিন্তু ভোগে।
আবার বাবা মায়েদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে বেড়ে ওঠা শিশুদের মধ্যে কিন্তু সুখ ও নিরাপত্তা বোধ জাগ্রত হয়।
শিশুদের সুস্থ জীবনের জন্য বাবা-মাকেই সতর্ক হতে হবে। শিশুদের মধ্যে জাগাতে হবে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা।
তাই শিশুদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য বাবা মায়েদের শিশুদের প্রতি শাসনসুলভ মনোভাব ছেড়ে, বন্ধুসুলভ মনোভাব রাখতে হবে। শিশুকে বেশি করে সময় দিতে হবে, কথা বলতে হবে, খেলতে হবে শিশুদের সাথে। শিশুকে সুশিক্ষা,নিরাপত্তা, ভালোবাসা, মনোযোগ ,কোয়ালিটি টাইম এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দিয়েই বড় করতে হবে। তাহলেই কিন্তু শিশুদের বিকাশ সুস্থ ও স্বাভাবিক হবে।
No comments:
Post a Comment