সম্পাদকের কথা
সদ্য জন্মেছে নতুন বছর। একদমই ছোট্ট সে। এরপর ধীরে ধীরে বড় হবে সে আমাদের লালনে, আমাদের পালনে। তাকে সুস্থ, সুন্দর, সতেজ, সংস্কৃতিমনস্ক রাখার দায়িত্ব আমাদের।
একই দায়িত্ব আমাদের ছোটদের জন্য, শিশু কিশোরদের জন্য। আমাদের প্রদত্ত শিক্ষাই তাদেরকে চালিত করবে আগামীতে।
এই ভাবনা থেকেই ইংরেজি নতুন বছরের অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি রাখা হয়েছে ছোটদের জন্য। লিখেছেন বড়রাও, ছোটদের জন্য। ছোটরাও যোগ দিয়েছে সাথে।
আমরা নিশ্চিন্ত ছোটদের জন্য করা এই সংখ্যাটি সকলের ভাল লাগবে।
কেননা ছোটদের যারা ভালবাসে না তারা কি করতে পারে আমরা সব্বাই জানি!
লেখা ও ছবিতে ভরিয়ে তুললেন যাঁরা-
সোমা বোস, সুব্রত নন্দী, মৌসুমী চৌধুরী, দেবযানী সিনহা, সুপর্ণা চৌধুরী, অজিত কুমার দত্ত, সুস্মিতা পাল কুন্ডু, জয় চক্রবর্তী, তৃপ্তি মিত্র, সম্পা দত্ত, পিয়াংকি মুখার্জী, দীপশিখা চক্রবর্তী, অনিমেষ, শৌভিক কার্য্যী, অদ্রিকা ঘোষ, মোপাশা বসু, মৌরুসি দত্ত, সায়ন চক্রবর্তী, অনন্যা বোস, অদ্রিজা মন্ডল, দেবাঞ্জনা রুদ্র, সৃঞ্জয় রায়, অন্তরা রায়, ঈপ্সিতা হালদার, জনয়েত্রী চক্রবর্তী
সম্পাদনা-অলংকরণ-বিন্যাস- শৌভিক রায়
গল্প
কুস্তি
সোমা বোস
-
মাম্মাম, এই দ্যাখো… হি হি, আমার হাতটা কেমন চেটে দিচ্ছে। খুব সুড়সুড়ি লাগছে… হি হি… হি হি…
-
কে রে? কা’কে আনলি আবার?
-
দ্যাখো না, দ্যাখো না। হি হি… হি হি...। আমার সব আঙ্গুলগুলো কেমন করে চেটেচেটে দিচ্ছে…।
-
একি! নেড়ির এই নোংরা বাচ্চাটাকে কোথা থেকে তুলে আনলি? ইসসস, সব নোংরা হয়ে গেলো! নামা, নামা, শীগগির কোল থেকে নামা!
-
থাকুক না মাম্মাম, কুস্তি আমার কোলে একটু থাকুক না। ওর খুব শীত করছে দ্যাখো...। আমাদের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে ও
আর ওর ভাই চুপ করে বসে ছিল, জানো?
-
কুস্তি? ওর নাম? কে দিলো? তুই? হা হা…….।
-
না না, আমি না। ওই বান্টিদাদা ওর নাম দিয়েছে।
-
ওদের আবার শীত লাগে নাকি? ওরা তো ওভাবেই থাকে রাস্তায় রাস্তায়। টুপাইসোনা, তুমি আমার ভালো মেয়ে না? আমার ভালো বেবী না? তাহলে ওকে ওর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এসো, যাও।
-
নাআআআ, ও আমার কাছে থাকবে; আমার সাথে থাকবে।
-
ওরকম জেদ করেনা টুপাই। ওকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে এসো, যাও।
-
নাআআআ... (কান্না) আমি ওকে ছাড়বো না।
-
শোনো, শোনো, দ্যাখো। তোমাকে যদি কেউ আমার কাছ থেকে চুরি করে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দ্যায়, তাহলে তোমার কিরকম মনে হবে? খুব কষ্ট হবে না মাম্মামকে ছেড়ে থাকতে? হবে তো?
গোলগোল চোখে তাকিয়ে থেকে টুপাই এক্কেবারে চুপ…, তার কোলে থাকা কুস্তিও তার আঙ্গুল চাটাচাটি বন্ধ করে এক্কেবারে চুপ...।
-
কি হল? কষ্ট হবে তো?
(টুপাই এরপরেও চুপ…)
-
আরে কথা বলছ না কেন? কষ্ট হবে তো? নাকি হবে না?
-
হুঁ
-
তাহলে এই বাচ্চাটারও তো ওর মা’কে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। হচ্ছে তো?
-
হুঁ
-
শুধুশুধু তুমি কেন ওকে এই কষ্ট দেবে? তাই ওকে ওর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এসো সোনা। তুমি তো আমার ভালো মেয়ে, যাও। তাছাড়া ওর মায়েরও তো কষ্ট হচ্ছে, যেমন তোমাকে ছেড়ে থাকলে আমার হয়। তাই না?
-
ওর মা’র কাছে তো ওর মতো আরো অনেক আছে। ওকে আমার কাছে রাখলে ওর মা’র কাছে তো তাও আরো অনেক থাকবে।
-
না, টুপাই। মায়ের তাও কষ্ট হবে, ও তুমি বুঝবে না। যা বলছি তাই শোনো, ওকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে এসো।
-
বান্টিদাদা তো ওর ভাই লড়াইকে নিয়ে গেছে। আমিও তাই...
-
নিকগে। ওর ভাইয়ের নাম লড়াই? তুই আর তোর বান্টিদাদা পারিসও বটে! হা হা…….।
-
রাখি না মাম্মাম, ওকে আমার কাছে রাখি না…!
-
“না” বললাম তো। কথা শোনো টুপাই।
অগত্যা টুপাই কান্নাকান্না মুখে কুস্তিকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো, বলা ভালো বেরিয়ে যেতে বাধ্য হলো। কি হত কুস্তিকে একটু কাছে রেখে দিলে! মাম্মাম খুব খারাপ, একটুও ভালো না। মাম্মামের মনে একটুও দয়ামায়া নেই। ওই তো কুস্তির মা, কুস্তির আরো কতগুলো ভাইবোনকে নিয়ে দিব্যি আনন্দে আছে! কোথায় কষ্টে আছে? ওই ভাইবোনগুলো তো একসাথে খেলবে। কুস্তি নাহয় আমার সাথে খেলতো। আমি তাহলে কা’র সাথে খেলবো? ধুত, ভাল্লাগেনা!
আরে ওটা কে? বান্টিদাদা?
-
ওই বান্টিদাদা, জানিস, কুস্তিকে মাম্মাম আমার সাথে থাকতে দিচ্ছে না!
-
আরে লড়াইকেও তাই। আমার ঠাম্মাম তো ওকে তাড়াবার জন্যে ওর গায়ে এমন জল ছিটোতে লাগলো! তাইতে আমিও ওকে ছেড়ে দিলাম। ওর একটুও ইচ্ছে ছিল না আমাকে ছেড়ে থাকার। কিন্তু কি করব বল বুনু? এই শীতের মধ্যে ঠাম্মাম ওর গায়ে সমানে জল দিলে তো ওর জ্বর এসে যাবে বল?
-
তাহলে কুস্তিকেও ছেড়ে দেবো? ভ্যাঁ… (কান্না)
-
এ বুনু, কাঁদিস না। ওর মা-বাবা তো এপাড়াতেই থাকে। তাই আমরা রোজ ওদের দেখতে পাবো, ওদের সাথে খেলবো। তাহলেই হবে। কাঁদিস না।
-
হুঁ
এখন থার্ড টার্মিনাল পরীক্ষা শেষ, তাই এখন তাদের স্কুল ছুটি। কোনো হোমওয়ার্কের ঝামেলাও নেই। তাই টুপাই আর তার বান্টিদাদা রোজ তক্কেতক্কে থাকে। দুজনের মা আর বাবা অফিসে বেরিয়ে গেলে, তারাও যে যার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে পরে। এখন ওদের খেলার সাথী এই কুস্তি আর লড়াই। বান্টিদাদার ঠাম্মাম অবশ্য খুব বকাঝকা করে, তাদের কমপ্লেক্সের সিকিউরিটি গার্ডদেরকে ডেকে ডেকে বলে, যাতে কুকুরগুলোকে কমপ্লেক্সের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ওদের দুজনকে কাছে পেয়ে কুস্তি আর লড়াইয়েরও খুব আনন্দ। ওরা লেজ নেড়ে নেড়ে আর চেটেচেটে অস্থির করে দেয় ওদের। আর এরাও বাড়ি থেকে কেক, পেস্ট্রি,
বিস্কুট নিয়ে এসে ওদের সবাইকে খাওয়ায়। দুইপক্ষই মহানন্দে থাকে।
ওদের ভাইবোনগুলোর মধ্যে এরা দুজনই খুব মারকুটে স্বভাবের। সুযোগ পেলেই অন্য কারোর লেজ কামড়ে দিয়ে পালিয়ে আসে, নয়তো ঘাড়ের ওপরে উঠে ধ্বস্তাধস্তি করতে থাকে। নয়তো জড়ামড়ি করে কুস্তাকুস্তি করতে থাকে। মানে একটা না একটা কিছু চলতেই থাকে। মাঝেমাঝে অন্যপাড়ার কুকুরগুলো এসে খুব ঝগড়া করে ওদের বাবা-মায়ের সাথে। তখন টুপাই তো খুব ভয় পেয়ে একছুট্টে বান্টিদাদার কাছে চলে যায়। বান্টিদাদার খুব সাহস, বলে “বুনু, ভয় পাস না। মজা দ্যাখ”।
লড়াই দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুব গলা মেলায় তাদের সাথে, যেন ওর গলা শুনেই সবাই চুপ করে যাবে। অথচ ওর মতো পুঁচকেকে কেউ পাত্তাই দেয় না। আর কুস্তি? কুস্তি খুব সাহস নিয়ে তীরবেগে তেড়ে যায় বেপাড়ার ঝগড়ুটেগুলোর দিকে। মনে হয় যেন ওর ভয়েই সব পালিয়ে যাবে এক্ষুনি। কিন্তু ও এতোই ছোট যে ওকে ওরা কেউ খেয়ালই করে না। ও তীরবেগে এগিয়ে গিয়ে বেপাড়ার কুকুরগুলোর একেবারে মুখোমুখি হলেই কিন্তু ঘাবড়ে যায়। তারপর কুঁইকুঁই করতে করতে দৌড়নোতে ব্রেক কষতে থাকে। কিন্তু থামতে থামতে বিপক্ষের অনেকের পায়ের তলা দিয়ে গলে অনেকটা ভেতরে চলে যায়। তারপর আবার উল্টোদৌড়ে পড়িমরি করে ফিরে আসে নিজের দলে। বান্টিদাদা তো ওর কাণ্ডকারখানা দেখে হেসেই গড়াগড়ি যায়। টুপাই কিন্তু ভয়েভয়ে গোলগোল চোখে সব দেখতে থাকে।
এরমধ্যে একদিন সকালে দৌড়োদৌড়ি করতে করতে পাশের বড় নর্দমায় পরে গেলো কুস্তি। আর নর্দমার পাশে ওর মা, বাবা আর বাকি ভাইবোনেদের ভীড় জমে গেলো। তাদের সম্মিলিত চীৎকারে টুপাইকে নিয়ে বান্টিদাদাও হাজির। কুস্তি নিজেও হাঁচোড়পাঁচোড় করে নর্দমা থেকে উঠে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই পারছে না। টুপাইয়ের তো কান্নাই পেয়ে যাচ্ছে দেখে। বান্টিদাদা বলাতে সে একবার ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে একটা লাঠি নিয়ে এসে দিলো। কুস্তি সেটা ধরে একবার ওঠার চেষ্টা করলো, কিন্তু ফসকে পরে গেলো। তারপরে আবার। কি হবে তাহলে? এসময়ে সিকিউরিটির হারাণজেঠু এসে ওই লাঠিটা দিয়েই কায়দা করে ঠিক তুলে দিল কুস্তিকে। কিন্তু কুস্তির কি হল? আর তাকাচ্ছেও না, কোনো আওয়াজও করছে না। হারাণজেঠু রাস্তার পাশের কলের সাথে জুড়ে থাকা পাইপের জল দিয়ে ওপর থেকে ধুইয়ে দিলো ওকে। তাও ওর কোনো নড়নচড়ন নেই।
টুপাই কাঁদতে কাঁদতে একছুট্টে চলে গেলো কুস্তির কাছে, পরম যত্নে কোলে তুলে নিল ওকে। তারপর ফ্ল্যাটের বেল বাজাতে লাগলো জোরে জোরে। তানিয়াদিদি তার দেখাশোনার জন্যে তাদের ফ্ল্যাটে তাদের সাথেই থাকে। খুলে দিল দরজা। তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একদৌড়ে সে চলে গেল বাথরুমে। গিজার চালিয়ে দিয়ে জল গরম হতে যেটুকু সময়। তারপর মাম্মামের বডিশ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে স্নান করিয়ে একটা তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে রেখে সে নিজেও স্নান করে নিলো। তানিয়াদিদি এদিকে বারবার ভয় দেখাচ্ছে মাম্মামকে সব বলে দেবে বলে। কিন্তু তার কুস্তির শরীর খারাপ, তাই উলটে সে তানিয়াদিদিকে বকেঝকে গরম দুধ দিতে বললো কুস্তির জন্যে। সেই গরমদুধ কুস্তির মুখের কাছে ধরলে সে চোখবুজে চুকচুক করে সবটা খেয়ে নিলো, তারপরে একসময় ঘুমিয়ে পরলো। তখন আস্তে করে ফ্ল্যাটের বাইরে কমন করিডরের এককোণায় নিজের কিছু পুরানো জামাকাপড় দিয়ে বিছানা সাজিয়ে তাতে তোয়ালে জড়িয়ে শুইয়ে দিয়ে এলো তাকে। এরপর ফ্ল্যাটে ঢুকে খেয়েদেয়ে দুপুরের নিশ্চিন্ত ঘুম।
কপালে কারোর হাতের ছোঁয়া পেয়ে সে ঘুম ভাঙ্গলো টুপাইয়ের। দেখলো তার বাবাই তার পাশে বসে তার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর বলছে “আমাদের মেয়ের মতো মেয়ে হয়ই না। কতো বড় মন ওর! নাহলে এখানে আশেপাশে এতগুলো বাচ্চা তো আছে। কিন্তু ওর মত করে ওই কুস্তির প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছে কেউ? তার এত সেবা যত্ন করার কথা ভেবেছে কেউ? তাহলে? আমার টুপাইসোনাকে কেউ বকবে না”। চকিতে উঠে বাবাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো টুপাই আর চকচকে চোখে বলে উঠলো “তাহলে ওকে ঘরে নিয়ে আসি?” বাবাইয়ের ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানানোর অপেক্ষা না করেই একদৌড়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো সে। কিন্তু তার সাজিয়ে দেওয়া বিছানার ওপরে কুস্তি নেই তো! কোথায় গেলো? তবে কি বান্টিদাদা নিয়ে গেছে তার ফ্ল্যাটে? জোরেজোরে সে বেল বাজালো বান্টিদাদার ফ্ল্যাটে। আজ সে কুস্তিকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি পেয়েছে, তাই আজ অন্য কারোর কাছে কুস্তিকে সে থাকতে দেবে না। অন্যদিন হলে নাহয় তাও…। কিন্তু বান্টিদাদাও যে বলছে সেখানে নেই। তাহলে? এতটাই সুস্থ হয়ে গেল যে নিজে নিজে তার মা-বাবার কাছে চলে গেলো নাকি? খোঁজ, খোঁজ। নাহ্, সেখানেও নেই। তাহলে কোথায়? কোত্থাও নেই তার কুস্তি...।
ডিসেম্বরের এই সময়টায় স্কুলে বড়দিনের ছুটি। মা আর বাবা, দুজনেই অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়েছে প্রতিবারের মতো। প্রতিবছর এসময়টায় টুপাইরা কাছেপিঠে কোথাও ঘুরতে যায়। এবছর তারা ভুটান নামে একজায়গায় ঘুরতে এসেছে। বাপরে, কি ঠান্ডা! রাত্তিরবেলায় একটা হোটেলের সামনে তাদের গাড়িটা দাঁড়িয়ে। বাবাই গেছে হোটেলের ভেতরে কথা বলতে। টুপাই গাড়িতে বসে আছে তার মান্তুমামা আর মাম্মামের সাথে। বাবাই বলেছে গাড়িতে চুপ করে বসে থাকতে। পরে এসে তাদের ভেতরে নিয়ে যাবে। বাইরে দ্যাখা যাচ্ছে সব কিছু বরফে ঢাকা আর খুব শান্ত। তার মান্তুমামা বললো “চল টুপাই, গাড়ি থেকে একটু নেমে দাঁড়াই। পাগুলো ভাঁজ করে থেকে থেকে ব্যাথা হয়ে গেছে।”
মান্তুমামার সাথে যেই না ওরা দু’জন গাড়ি থেকে নেমেছে, ওমনি কোথা থেকে একটা ইয়া বড় লোমওলা কুকুর এসে ঘেউঘেউ করতে লাগলো তাদের দেখে। টুপাই ভয় পেয়ে চোখ বুজে তার মান্তুমামাকে শক্ত করে চেপে ধরলো। কিন্তু পায়ের কাছে নরম নরম আর গরম গরম কি যেন একটা। আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলো কুস্তির মতো কেউ পায়ের কাছে। যেই না নীচু হয়ে কোলে তুলতে যাবে সেই নরম তুলতুলেটাকে, ওমনি বাবাই ডাক দিলো সবাইকে ভেতরে যাওয়ার জন্যে। আর সেই বড় লোমওলা এসে সেই তুলতুলেকে ঘাড় ধরে তার পায়ের কাছ থেকে নিয়ে চলে গেলো নিমেষে। পাবে না, কোনদিন সে কুস্তিকে তার কাছে পাবে না…। এতো ঠান্ডার মধ্যে টুপাইয়ের গাল বেয়ে নামছে গরম জলের ধারা।
পাপনের দুঃখ ------
সুব্রত নন্দী
আজ সকালটা পাপনের কাছে খুব তাড়াতাড়ি মনে হচ্ছে।সোমবারের কথা হলেই মন খুব খারাপ হয়ে যায়। আবারতো সেই নিঃসঙ্গতা, আবারতো সেই একাকিত্ব।কাজের লোক মনি মাসির পরিচর্চায় বেড়ে ওঠা।মা বাবা কি সত্যিই বোঝে না ছোট্ট পাপনের মনের কথা? ওর কাছের বন্ধু অনিকেরতো মনে কত আনন্দ!তার তো খেলার কত সাথী। তার যে নিজের ছোট্ট বোন আছে। সাথে আবার দাদু ঠাকুমার সাহচর্য্য।ওর মাও তো সব সময় বাড়িতেই থাকে।মায়ের মতো রোজ সেজেগুজে অফিস যায় না।
আবারতো সেই গতানুগতিক জীবনধারা।একদম ভালো লাগেনা পাপনের।এই ব্যাপারে মা বাবার মধ্যেও মাঝে মাঝে আলোচনা হয়।পাপন নাকি দিনদিন একরোখা অবাধ্য হয়ে উঠছে।মাতো মাঝে বাবাকে বলছিলো,আমি আর চাকরি করবোনা।এই অশান্তি আর ভালো লাগেনা।
কিন্তু পাপনের কি দোষ?ওর যদি অনিকের মতো ছোট্ট বোন আর দাদু ঠাকুমা থাকতো, তা হলে ওরও সব ভালো লাগতো!কিন্তু কে বুঝবে ওর মনের দুঃখের কথা।
অনিকতো রোজ দাদুর হাত ধরে পার্কে যায় বিকেলবেলায় খেলতে।সাথে আবার বোন রুমি।ওর মনে কত ফুর্তি।আর পাপন,সারাদিন এই চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি।সাথে আবার নানা রকম বাধা নিষেধ।খেলতে বসলেই,মনি মাসির ফোন,মাকে: দিদি পাপন কথা শুনছেনা।দুধ খায়নি,ড্রয়িং নিয়ে বসেনি,পড়তে বসেনি।আরো কত কি।পাপনেরও আর ভালো লাগেনা।রোজ হোমওয়ার্ক করো গৃহশিক্ষকের কাছে।আর স্কুলে গিয়ে প্রায়ই ক্লাস টেস্টে বসো।টিফিন টাইমটাও তো বৈচিত্রহীন।অনিকের টিফিনে কত কি ওর মা বানিয়ে দেন।কিন্তু পাপনেরতো সেই কেনা খাবার।তবে মাঝেমাঝে অনিকের টিফিন কিছুটা হলেও পাপনের ভাগ্যে জোটে।যখন দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক চলে।সর্বদা দুজনের মধ্যে কত আলোচনা ফুটবল নিয়ে।পাপনের মেসি বড়ো ,না অনিকের নেইমার।যত ঝগড়া ,এই মেসি,নেইমার কেন্দ্রিক।তাই এই দুই দলের খেলা থাকলে,দুজনেই শত্রু শিবিরের লোক!
আজকাল আর ভিডিও গেমস এ পাপন মজা পায়না।তবে প্রথম যেদিন বাবা ওর জন্মদিনে ভিডিও গেমস উপহার দিয়েছিলো।সেদিন ওর খুব আনন্দ হয়েছিলো।পাপন ভাবলো এবার বুঝি ওর নিঃসঙ্গতা কাটবে। কিছুদিন মনিমাসিও মাকে নালিশ করা বন্ধরেখেছিলো।পাপন যে সব কথা শুনতো মনিমাসির।বাবা মাও নিশ্চিন্ত কিছুদিনের জন্য।কিন্তু ,এখন আর ভালো লাগেনা ভিডিও গেমস খেলতে।ওর যে এই বদ্ধ চার দেয়ালের প্রাচীর থেকে বেরিয়ে অনিকদের সাথে খেলতে ইচ্ছা করে।রবিবারে তাও মা বাবা কখনও কখনও প্লানেটোরিয়াম, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর ,চিলড্রেন'স মিউজিয়াম দেখতে নিয়ে যায়।তাইতো রবিবারটা খুব আনন্দের।সেদিন বাবা,- মাকে বলছিলো ,ওর জন্য কার্শিয়াংএ একটা ভালো বোর্ডিং স্কুলের বন্দোবস্ত করে ফেলেছে।পাপন জানেই না সেটা কোথায়?মা শুনে দু একবার বলেছিলো,--'কি দরকার অত দূরে দেওয়ার?' তারচেয়ে বরং সে নিজে চাকরিটা ছেড়ে দিক। বাবা শুনেই গর্জে উঠলেন।কি ছেলের জন্য চাকরি ছাড়বে?তার মানে পৃথিবীতে চাকুরীরতা মহিলাদের ছেলে মানুষ হয় না বুঝি?তারপর আর মা এই সম্বন্ধে আর কথা বাড়াননি।পাপন নিজেও ভাবছে এই বদ্ধজীবন থেকে বোর্ডিং অনেক ভালো।হয়তো তার নিঃস্বঙ্গতা কাটবে সেখানে।কিন্তু সেখানেতো মা বাবা থাকবে না?এখনতো ছুটির দিনে মায়ের কাছে যদিবা আব্দার করে।তখন কার কাছে করবে আবদার?তাহলে উপায়।কিন্তু বাবাতো পাকা করে ফেলেছে বোর্ডিং স্কুল।পাপনের মনটা কেঁদেই ওঠে অজানা ভবিষ্যতের কথা ভেবে।এই কথা ভাবতে ভাবতে পাপন আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল।হটাৎ ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে,কি রে সোনা রোজ রোজ সকালে ডাকতে হয় কেন?বোর্ডিং এ গেলে কিন্তু এইসব দুস্টুমি আর চলবে না?.....
তিন্নিদের জলাভিযান
মৌসুমী চৌধুরী
প্রতিভা ম্যামের "এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স" ক্লাসে সব শুনে খুব মন খারাপ হয়ে গেল তিন্নির। পৃথিবীর পানীয় জলের স্তর নাকি ক্রমশ নেমে যাচ্ছে!!! জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া, স্যালোমেশিনের মাধ্যমে অতিমাত্রায় ভূ-গর্ভস্থ জল উত্তোলন, নদ-নদী, পাহাড়ি ঝরনা, ঝোরাগুলোর নাব্যতা হারানো এবং প্রাকৃতিক জলাশয় ক্রমাগত ভরাট হওয়ার ফলেই ভূ-গর্ভস্থ জলের স্তর এমন অস্বাভাবিক ভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে বলে পরিবেশবিদরা মনে করছেন। ফলে আগত দিনে দেখা দিতে পারে তীব্র জলসংকট। পানীয় জলের অপচয় বন্ধ করতে হবে কড়াভাবে, যাতে না ভবিষ্যতে জলের অভাবে আমাদের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে।রোজ ভোরে আর বিকেলে দল বেঁধে জল-অপচয় বন্ধে পাহারা দেওয়ার পরামর্শও দেন ম্যাম। ম্যামের বলা কথাগুলো খুব নাড়িয়ে দিলো তিন্নীকে..... বাড়িতে ফিরেও ভাবতে লাগলো কি করা যায়। বিকেলে পার্কে খেলতে গিয়ে মিঠু,
তিতলী,রাজু, চিন্টু,সোনাই,টুটু সবার সাথে আলোচনা করে ঠিক করলো তারা জল অপচয় বন্ধ করবে। সবাই ওরা পঞ্চম আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ফলে খুব দূরে গিয়ে নয়, পরিকল্পনা নিলো নিজেদের পাড়া থেকেই শুরু করবে এই "জল বাঁচাও অভিযান"। যে কথা সেই কাজ। টিফিন খাবার পয়সা থেকে জমিয়ে রাখা পয়সা চাঁদা হিসেবে দিয়ে ওরা কিনে ফেললো কর্পোরেশনের কলের নলের মুখে লাগানোর জন্য অনেকগুলো ট্যাপ। তিন্নী লক্ষ্য করেছে, ওদের গলিতে কর্পোরেশনের কোন কলেরই নলের মুখে ট্যাপ লাগানো নেই। ফলে সকাল-বিকেল প্রচুর জল এমনি এমনি পড়ে নষ্ট হয়। কর্পোরেশনের কলের নলের মুখে ট্যাপগুলো লাগাবার জন্য ওরা পাকড়াও করলো পাড়ার প্লাম্বার বিশ্বনাথ কাকুকে। কাকুও ওদের একটা ভালো কাজের উৎসাহ দেখে রাজি হলেন।
পরের দিন থেকে শুরু হলো দল বেঁধে অভিযান। কর্পোরেশনের কলে জল আসে ভোর ছ'টায়। ওরা ছয়মূর্তি আর প্লাম্বার কাকু কনকনে শীতভোরে সোয়েটার, চাদর, হাতমোজা, মাঙ্কি-টুপিতে নিজেদের মুড়ে বেরিয়ে পড়লো সরেজমিনে। প্রত্যেকের হাতে কল আর মুখে বাঁশি। ঠিক হলো, যদি দেখে এমনি এমনি পড়ে নষ্ট হচ্ছে জল, তাহলে সবাই তেড়ে-ফুঁড়ে বাঁশি বাজাবে আর প্লাম্বার কাকু নলের মুখে ট্যাপটা লাগিয়ে দেবে। ট্যাপটা বন্ধ করলে জল আর পড়বে না, খুললে আবার জল পড়বে। তিন্নিদের পাড়াটা ১২৩ নং ওয়ার্ডে, প্রচুর লোকের বাস এখানে। প্রথমদিনই এলাকার প্রায় এিশটি কলে ট্যাপ লাগানো হয়ে গেলো। এভাবে দশদিন বড়দিনের ছুটির মধ্যে গোটা ওয়ার্ডের কর্পোরেশনের কলগুলিতে লাগানো হয়ে গেলো ট্যাপ।
তারপর থেকে শুরু হলো তিন্নি এ্যান্ড কোং-এর কড়া নজরদারি। বন্ধুদের ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলেও তিন্নি কিন্তু ঠিক সময়ে পৌঁছে ডাকাডাকি করে বন্ধুদের জাগিয়ে তোলে। জল অপচয়ে শৌখিনী গীতা কাকীমা কলের মুখে খাবার জলের বালতি বসিয়ে রেখে গ্যাসে রান্না বসান,ওদিকে জল উপচে পড়ে নষ্ট হতে থাকে। তিন্নিদের চাপে নিজেকে বদলান তিনি। বাদল কাকু যতটা না গাড়ি ধুতে জল ব্যবহার করেন, তারচেয়ে বেশি করেন জল অপচয়। তিন্নিদের চাপে পড়ে তিনিও কুপোকাত। কোন বাড়ি বা আবাসনের ব্যক্তিগত কলেও জল এমনি এমনি পড়তে দেখলে তিন্নিরা কোন কথা শোনে না, নাগাড়ে বাঁশি বাজাতেই থাকে। তিন্নিদের বাঁশিতে কাজ হয়। ঠ্যালায় পড়ে তাঁরাও নিজেদের বদলান। ক্রমে পড়া থেকে ওয়ার্ড, ওয়ার্ড থেকে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে পৌঁছোয় তিন্নিদের জল বাঁচাও অভিযানের খবর। ১৪নং বরোর চেয়ারম্যানের কানেও পৌঁছোয় খবরটা। তিনি তিন্নি এ্যান্ড কোং-কে কর্পোরেশনের "জনস্বাস্হ্য ও পরিষেবা" বিভাগের অন্যতম মুখ হিসেবে তুলে ধরেন। পুরস্কৃত করা হয় তাদের। স্হানীয় কেবল টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয় তিন্নিদের কর্মকান্ডের খবর। বাবা-মায়েরাও গর্বিত হন তিন্নিদের এই সামাজিক কাজের স্বীকৃতিতে.......... সলতে পাকানো শুরু করেছিলেন প্রতিভা ম্যাম গত বছর।বছর পার হতে না হতে তিন্নিরা প্রজ্জ্বলিত দীপ হয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়ে..... খুব খুশি হন ম্যাম। কচি-কাঁচাদের উস্কে দিয়ে সফল হলে সত্যিই বুক ভরে যায় তাঁর......।
জোনাকির ইচ্ছে
দেবযানী সিনহা
জোনাকি রেজাল্টটা হাতে পেয়েই খুশিতে আত্মহারা, এবারেও সে প্রথম হয়েছে।মা আর ঠাম্মু অপেক্ষা করে আছে খবর শোনার জন্য।
আজ মিড ডে মিল একদম খেতে ইচ্ছে করছেনা কিন্তু খেতেতো হবেই,মা যে শুধু ঠাম্মুর জন্যই দুপুরের খাবার রেখে গেছে।স্কুলে না খেলে ঠাম্মুকেই না খেয়ে থাকতে হবে,ওকে জোড় করে
ঠাম্মু সবটুকু খাবার খাওয়াবে।তারপর মা বাবুদের বাড়ি থেকে ফিরলে মায়ের আনা শুখনো রুটি দুটো ভাগ করে খাবে মা আর ঠাম্মু। হাতে ধরে থাকা থালায় গরম ভাতের গন্ধ নাকে যেতেই জোনাকির ভাবনার ঘোর কাটলো।তাড়াতাড়ি ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে চুপ করে ডিম টা প্যাকেটে নিয়ে নিলো। দিদিমণিরা দেখলে আবার বকাবকি করবে।ডাক্তার বলেছে ঠাম্মুকে ভালোভালো খাবার খেতে দিতে,ঠাম্মুর হারক্ষয়ের রোগ হয়েছে,শরীরে রক্তও নেই।
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার দুপাশের দোকানগুলো জোনাকির স্বপ্নের দেশের মতো মনে হচ্ছিলো।অনেক অনেক ঝাউগাছ, লালসাদা জামা, টুপি আরো কতোকিছু দোকানের সামনে সাজানো।জোনাকি স্কুলের দিদিমণির কাছে শুনেছে ঔ লালসাদা জামা গায়ে সান্তাদাদু সবার মনের ইচ্ছে পূরণ করে।আজতো ২৩ তারিখ আর একটা দিন মাঝখানে তারপরই ২৫ তারিখ। হেটে যেতে যেতে জোনাকি অনেকগুলো ইচ্ছে মনের মধ্যে সাজাতে থাকে।কখন যে বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি।ছুট্টে গিয়ে ঠাম্মুকে জড়িয়ে ধরে, ঠাম্মু আমি ক্লাসে সবার থেকে বেশি নাম্বার পেয়েছি আমি ক্লাস ফোরে উঠেছি। ঠাম্মুর দুচোখের কোণায় খুশির জল চিকচিক করছে।শরীর আজ বলহীন তবুও জোনাকিকে বুকে টেনে নিলেন।
সবিতা টুবাই আর বুবাইয়ের জামাকাপড় ধুয়ে ছাদে মেলতে গিয়ে দেখে দুটো মোজা দড়িতে ঝুলছে।ভাবলো কাল তুলে রাখতে ভুলে গেছে।মোজাগুলো তুলতে গিয়ে দেখে মোজার ভেতর কাগজ খচমচ করছে।ও আগামীকালতো ২৫ডিসেম্বর।
বৌদিমনি প্রতিবছর আগের দিন রাতেই চুপিচুপি মোজার ভেতর থেকে কাগজ বের করে দেখে নেয় ওতে কি লিখেছে টুবাই আর বুবাই।তারপর কতরকমের উপহার রেখে দেয় মোজার পাশে।
আমার জুনিসোনাও বারান্দার তারে মোজা ঝুলিয়ে রাখে তার আঁকারখাতা চাই রংপেন্সিল চাই কতকিছু লিখে। সবিতা কোনোদিন সেগুলির একটিও দিতে পারেনি।এবার বৌদিমনির থেকে কিছু টাকা আজ চেয়ে নিয়ে জুনির সখের জিনিসগুলি এনে রেখে দেবে।
সবিতা হাতের কাজগুলো সেরে নিয়ে জুনির পছন্দের আঁকারখাতা,রংপেন্সিল,চকলেট কিনে নিয়ে ঘরে লুকিয়ে রেখে দিলো।রাতে জুনি ঘুমিয়ে পরলে সেগুলি মোজার পাশে রেখে দিয়ে আসবে।সকালে জুনি ঘুম থেকে উঠে দেখলেই খুব খুশি হবে।জুনিকে গল্প শোনাতে শোনাতে নিজেও ঘুমিয়ে পরেছে।রাতে আর জিনিসগুলো রাখতে পারলোনা।হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখে ভোর হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে জিনিসগুলো নিয়ে রাখতে গিয়ে, মোজার ভেতর থেকে কাগজ বেড় করে দেখে সবিতার বুক ফেটে কান্না এলো।
প্রিয় সান্তাদাদু,
তুমি সবাইকে অনেক ভালোভালো উপহার দাও,আমাকেও একটা উপহার দেবে?
আমাদের স্কুলের রাগি দিদিমণিকে একটু বলে দিও, আমাকে মিড ডে মিলের ভাত বাড়ি নিয়ে যেতে দিতে, আমি আর ঠাম্মু একসাথে বসে খাবো আর দুটো ডিম। একটা ঠাম্মু খাবে আর একটা আমি আর মা খাবো।
টুনটুনির ব্যথা
সুপর্না চৌধুরী
এক টুনটুনি সেগুন গাছের মগডালে গাছের পাতা দিয়ে সুন্দর একটি বাসা বানিয়েছিলো। বাসাটি এতো সুন্দর ছিলো যে সব্বার নজর কাড়তো। বাসার ভেতরে
টুনটুনি কয়েকটা ডিমও পড়েছিলো।
একদিন এক বাঁদরের টুনটুনির বাসাটি দেখে খুব ভালো লাগলো। সে টুনটুনিকে বললো,"আমাকেও ওই রকম একটি সুন্দর বাসা বানিয়ে দাও না, টুনি ভাই।" আনন্দিত টুনটুনি বাঁদরকে ঠিক ওই রকমই একটা বাসা বানিয়ে দিলো। এবার
বাঁদর সেই বাসার ভেতরে ঢোকার খুব চেষ্টা করলো; কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও
যখন পারলো না, তখন বাঁদর রেগে গিয়ে টুনটুনির তৈরি করা বাসাটি ছুঁড়ে ফেলে দিলো। আর টুনটুনির নিজের বাসাটিকে
ভেঙে, তার সব ডিম ফেলে দিলো এবং তাকে মেরে তাড়িয়ে দিলো।
টুনটুনির মনটা একেবারে ভেঙে গেলো। মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে সে সেই এলাকা ছেড়ে দূরে উড়ে গেলো। যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে একটা বড় বট গাছের ডালে গিয়ে বসলো। সেই গাছের বিভিন্ন ডালে পাখীরা মনের আনন্দে গাইছিলো, নাচছিলো। তাদের কলতানে
ভরে উঠছিলো চারদিক। সেই পাখীরা টুনটুনিকে দেখেই ছুটে এলো। তাকে ঘিরে
আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো, "কি মজা! আমাদের নতুন বন্ধু এসেছে! কি মজা!"
চড়ুই-বুড়ি বললেন, " তা ভাই টুনটুনি, তোমার চোখে জল কেন? কিসের দুঃখ তোমার? " টুনটুনি তখন সব ঘটনা খুলে
বললো তাদের। শুনে কাক-দাদু বললেন,
" সত্যিই ভাই, যা হয়েছে তা খুবই দুঃখের।
কিন্তু তুমি ওসব ভুলে যাও। মনে দুঃখ রেখো না। তুমি এই গাছে আবার নতুন করে বাসা তৈরি করে, আমাদের সাথে নতুন করে জীবন শুরু করো।" চড়ুই বুড়ি
বললেন," এই পৃথিবীর সবাই খারাপ হয়
না গো, টুনিভাই। আজ থেকে তুমি আমাদের বন্ধু হলে।" অন্য পাখীরা সবাই হৈ হৈ করে উঠলো,"কি মজা! টুনিভাই আজ থেকে আমাদের সাথে থাকবে!" পাখীবন্ধুদের পেয়ে টুনির মনটা আবার আনন্দে ভরে উঠলো। নতুন করে বাসা বাঁধলো সে.........
ছড়া ও কবিতা
ছোটর কথা
অজিত কুমার দত্ত
ছোট্ট হয়ে রইলেম আমি
তোমাদের এই আঙ্গিনাতে,
ছোট্ট তারা ফোটে যেমন
নীল আকাশে, আঁধার রাতে!
ছোট্ট পাখি টুনটুনি সে
তবু তো গায় গান,
বেলীর মত ছোট্ট ফুলই
সুগন্ধতে ভরিয়ে তোলে প্রাণ!
বিরাট আকাশ, ছোট্ট তারা
জ্বালায় তবু বাতি,
হক না ছোট খোকন সোনা
তবুও মায়ের সাথী!
স্বপ্ন
সুস্মিতা পাল কুন্ডু
আকাশ আমায় ডাকে আজও
নেই যে সময় আর ,
ছুটছি আমি সময় সাথে
বাড়ছে কাজের চাপ ;
রৌদ্র যখন ঝিকমিকিয়ে
মিষ্টি করে হাসে ,
গাছগাছালি পাখপাখালির
ডানার ফাঁকে ফাঁকে ;
ইচ্ছে করে এক ছুটেতে
সবুজ মাঠের পারে ,
রৌদ্রছায়ার লুকোচুরি
সবুজ ফড়িং ওড়ে ;
যাই হারিয়ে একটু খানি
রামধনু ওই ডানা !
প্রজাপতি ফুলের ওপর
মধুর আশায় হানা ;
বাতাস ডাকে , "আমার সাথে
পাল্লা দিবি আয় ,
বুনো ফুলের গন্ধ দেব
মাখবি গায়ে মাথায় !"
কষ্ট আমার দু'চোখ বেয়ে
নেমে আসে তখন ,
কি করে যাই ! সাতসকালে
মাজব বাসন এখন ;
ছোট্ট যদিও পারি না তেমন
মায়ের মতন অমন ,
কি করব ? অসুখ ভারি
মা বিছানায় এখন ;
তবুও আমি কাজের ফাঁকে
বই পড়তে বসি ,
জানতে হলে পড়তে হবেই
কলম তবে অসি !!
ঠান্ডা ঠান্ডা ছুটি
জয় চক্রবর্তী
মাগো তোমার পুকুরপাড়ে
ঢোলকলমির ফুল,
শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে
আনন্দে মশগুল।
তুঁত গাছেতে তুতী বসে
ঘুলঘুলিতে চড়াই,
শালিকপাখি খুঁটছে খাবার
করছে চালে লড়াই।
ঠাম্মা দাওয়ায় গান সেধেছে
মনের মানুষ আয়না,
ছোট্ট খোকার খেলনা যে চাই
ধরেছে সে বায়না।
সবুজ মাঠে ছুটবো এবার
বাঁধবো মোরা জুটি,
বছর শেষে পেলাম দেখো
ঠান্ডা ঠান্ডা ছুটি।
আজব ভাবনা
তৃপ্তি মিত্র
হতাম যদি ইচ্ছে পাখি কিংবা কোন পরি
মেঘবলাকা সঙ্গী করে দিতাম তবে পাড়ি ।
বাঁধা নিষেধ নেই যেখানে যেমন খুশি চলা
নেই যেখানে বাঁধা নিষেধ মনের কথা বলা ।
হিসেব কষা বারণ যেথা মিথ্যে অপবাদের
নেই সেখানে শাস্তি দেওয়া কঠিন অপরাধের ।
ঘৃনার ভাব নেই যেখানে ভালোবাসায় পুণ্য
আঘাত দেওয়ার নেই তো বালাই মন টা করে চূর্ণ ।
অনুশোচনার ধার ধারে না নেই তো দুঃখ কষ্ট
লাভ ক্ষতির হয় না হিসেব সেবাই হল শ্রেষ্ঠ ।
থাক না যতই হতাশা জীবনে আশায় বাঁধে বুক
বিষন্নতার মাঝে খোঁজে আনন্দে ভরা মুখ ।
সত্যি করে আছে নাকি এমন কোন জায়গা
বলতে পারো অকপটে মন যে সবুর সয়না ।।
বিল্লী রানির বিয়ে
সম্পা দত্ত
বাঘের মাসি বিল্লী।
যাচ্ছ কোথা দিল্লী??
আমরা যাব সঙ্গে।
সাজব নানা রঙ্গে।
ময়না টিয়ে বুলবুলি।
চল্ না সবে চলি।
কথা টা' অতি গোপন।
আমি যাচ্ছি বৃন্দাবন।
হুম্ ম্ তিলক কাটা ভন্ড।
না নিলে করব যাত্রা পন্ড।
ওরে বোকার হদ্দ।
তোদের নেই ছিরিছদ্দ।
করিস নে লেখাপড়া।
যখন তখন ঘোরা।
মোদের পরীক্ষা যে শেষ
তাই, আছি মোরা তাই বেশ।
তোদের কথার যত জ্বালা।
কান হল ঝালাপালা।
যাচ্ছি আমি সোঁদরবন।
সেথায় আছে ছোটোবোন।
তোরা করিসনে বিরক্ত।
এবার মন করেছি শক্ত।
যাত্রা করবি নে' ভঙ্গ।
খবরদার নিবি নে' সঙ্গ।
সখে কি' যাচ্ছি সোঁদরবন।
এবার বিয়ে টা' করব ই' এইপণ।
ছোট্টো বন্ধুরা
পিয়াংকী মুখার্জী
নীলাকাশ জুড়ে মেঘের পাল ,
মুক্ত মনে উড়ছে সকাল ,
বড়দিন-নিউইয়ারে মাতোয়ারা দেশ ,
চড়ুইভাতির জমছে রেশ ,
মায়ের বকুনি এ-কদিন দিয়েছে রেহাই ,
ঠাম্মার সুড়সুড়ি আর গল্পে নাচছি বেজায় ,
পরীক্ষা শেষের আলতো খুশি ,
মনের উঠোনে লাল দোপাটি ,
হাজার খানেক রঙ্গিন ঘুড়ি ,
লাটাই গেছে চাঁদের বুড়ি ,
জমানো সব শখগুলো যাই ,
উড়িয়ে দি শীতের হাওয়ায়,
পিঠে-পায়েস আর কেকের রাজ্যে ,
আবদার করি বায়নার মজে !
চলো....
নাচ-গান-ছবি-কবিতা ,
সাজাই মনের আনন্দে ,
নতুন বছরের অক্সিজেন ভরি ,,,
তাল আর লয়ের ছন্দে ছন্দে !
এবার ছুটি শেষের পালা...
পড়াশুনোর সাথে চলুক "আনন্দমেলা" ,
আগামীর প্রতিটা দিন ,
সংকল্প হোক্ নব নব প্রতিজ্ঞার ,,,
"মানুষ" হবার পথে ,
দৃঢ় হোক্ অঙ্গীকার !
শীতের ছড়া
দীপশিখা চক্রবর্তী
কুয়াশামাখা সকাল
ছড়িয়ে হিমেল চাদর,
ওম জড়ানো লেপ মুড়িয়ে
সোহাগমাখা আদর।
খেজুর গাছে রসের হাড়ি
মিষ্টি সুবাস ভরা,
শিশিরভেজা সবুজ ঘাসে
শুকনো পাতা ঝরা।
নয়নকাড়া ধূসর পাখি
লুকিয়ে বেতের ঝাড়ে,
বন্ধু করে নেবে যখন
যাবি নদীর পাড়ে।
শীতের সকালের হয়না জুড়ি
মিঠেল রোদের ছিটা,
শীতের দিনে ভারী মজা
খেজুর রসের পিঠা।
শীতের সকাল সোনালি রঙের
রোদ ঝিলমিল আলো,
মায়ের হাতের উষ্ণ পরশ
কার লাগে না ভালো?
শীতের সূর্য বড়ই অলস
ওঠে দেরী করে,
শীতের মজা লুটবো সবাই
গরম পোশাক পড়ে।
চোখের পাতায় স্বপ্ন নিয়ে
মাতব নতুন খেলায়,
থাকব না আজ বন্ধ ঘরে
লুকিয়ে শীতের বেলায়।
মানিক রাজা
অনিমেষ
ছড়া লিখবে মানিক রাজা,
অতিশয় কষ্ট ,
এই বই সেই বই ঘেঁটে,
মাথা করে নস্ট৷
ছন্দের সুযোগে মাথার চুুল ছেঁড়া,
ছন্দ না মেলাতে পেরে বাক্যের বাণে ঘেরা,
চায়ের কাপে সুগারফ্রী ধেলে,
সুগারটা রাখে কন্ট্রোলে,
রাতে রুটি না পেলে ,
ডুব দেয় ভাত ডালে৷
খুব ভালো স্বভাব তার ,
এমিনতে খুব সরল ,
হাতের নখ দাঁতে কাটে ,
শেষমেষে হয় অম্বল ৷
ছড়া লিখবে মানিক রাজা ,
মগজে নেই বুদ্ধী,
সারাদিন মগ্ন থাকে,
মাঠ ঘাট আর চায়ে ৷
ছড়া লিখবে মানিক রাজা ,
আমবাগানের মাঠে,
সস্তায় খাচ্ছে খাঁজা,
ছড়া লেখা ভুলে৷
বাংলা ক্লাসেতে সাহিত্যের ঘেচাংফু?
সুপারম্যান নাকি বাংলায় উল্লু,
ছোট ছোট ভাইরা চুপি চুপি বলি শোনো,
মানিক রাজা পাগল সেটা জেনে রাখা ভালো৷
মোদের ছেলেবেলা
শৌভিক কার্য্যী
সকাল সন্ধ্যে ধানের ক্ষেতে ,
কখনো শিশির ভেজা রাত্রে ।
সরিষা বনে লুকোচুরি
স্কুল পালিয়ে বাঁচতে ।
ভোরের আলো ফোঁটার আগে
ছুটে যাওয়া মাছ ধরতে ।
লাঠি হাতে মা খুঁজে আনত
কান ধরে পড়তে বসতে ।
তাল বনের ওই দিঘি পারে
সাঁতরে কতো খেলা ।
সারাটা দিন খোলা আকাশে
কেটে যেত কতো বেলা ।
খাল পাড়ের ওই বাঁশ বাগানে
লুকিয়ে হতো চড়ুইভাতি ।
রাম, শ্যাম ,যদু, মধু আরো
কত ছিল খেলার সাথী ।
ধুলো উড়িয়ে পাঠশালাতে
ছুটাছুটি দলে দলে ।
পাড়া গাঁয়ে সব অতিষ্ঠ ছিল
সবার কোলাহলে ।
এসব শুধুই গল্প কথা
শুনেছি বড়দের মুখে ।
বদ্ধ খাঁচায় আটকে থেকে
দিব্বি কাটাই সুখে ।
বড় বড় চশমা চোখে আর
উঠেছি প্রতিযোগীতায় মেতে ।
সকাল সন্ধ্যে বাড়ির বাইরে
বড্ড অলস লাগে আজ যেতে ।
সারাদিনটা বইয়ে ভাজে আর
সময় পেলে একটু নেমে ।
ছেলেবেলা কাটছে মোদের
মোবাইল ফোন ও ভিডিও গেমে ।
আমি এক কবি
অদ্রিকা ঘোষ/দশম শ্রেণি/কোচবিহার
কবিতা আমার প্রাণ
আমি এক 'কবি'......
আমার হৃদয় জুড়ে
কবিতার ছবি।
কবিতাই লিখি আমি
কবিতাই পড়ি,
কবিতার স্বপ্নে
মন প্রাণ ভরি।
কবিতাকে লিখি আমি
ছন্দের তালে,
যখন সময় পাই
সকালে বিকালে।
কবিতা লেখেন যারা
তাঁরা যে মহান,
তাই আমি কবিদের
করি সন্মান।
কবিতা লিখে ও পড়ে
ভুলি আমি ব্যথা
এই বলে শেষ করি
কবিতার কথা।
অঙ্কন
মোপাশা বসু
নবম শ্রেণী
রেলওয়ে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল
মৌরুসি দত্ত
সপ্তম শ্রেণী
টেকনো ইন্ডিয়া পাবলিক স্কুল
ফালাকাটা
সায়ন চক্রবর্তী
পূর্বাঞ্চল বিদ্যামন্দির
কলকাতা
|
Add caption |
অনন্যা বোস
পঞ্চম শ্রেণী
ফালাকাটা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
অদ্রিজা মন্ডল
বিদ্যাভারতী গার্লস হাই স্কুল
কলকাতা
It is too heavy to carry
on my hands.
please, save me,
stand by me, my sons and daughters.
Who am I ?
I am your "mother-earth".
দেবাঞ্জনা রুদ্র
প্রি নার্সারি
আনন্দমেলা নার্সারি স্কুল
ফালাকাটা
সৃঞ্জয় রায়
ষষ্ঠ শ্রেণী
কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়
কোচবিহার
অন্তরা রায়
পঞ্চম শ্রেণি
ফালাকাটা
ঈপ্সিতা হালদার
অষ্টম শ্রেণী
বুড়িখালী ক্ষেত্রমোহন ইনস্টিটিউশন
বুড়িখালী
হাওড়া
জনয়েত্রী চক্রবর্তী
ষষ্ঠ শ্রেণী
টেকনো ইন্ডিয়া পাবলিক স্কুল
কোচবিহার