মুজনাই সাপ্তাহিক
নদী সংখ্যা
ইচ্ছেনদী
যাজ্ঞসেনী
শৈশবের সেই নদীকে যে কোথায় দেখেছিলাম এখন আর মনে পড়ে না। সেদিন ভোরবেলায় লাল থালার মতো সূর্য একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে। একটু একটু করে খুব কৃপণের মতো বয়ে যাচ্ছে বাতাস। নদীর জলে তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে সোনালি স্রোত। দূরে, অনেক অনেক দূরে নৌকো ভেসে ভেসে কোথায় যেন চলে যাচ্ছে। সেই নৌকোর মাঝিকে দেখা হয়নি কখনও। কখনও তাকে বলা হয়নি, ও মাঝি- এই যে এতো দূরপানে ভেসে যাও ভয় করেনা তোমার? নদীর তো কোন ঠিকঠিকানা নেই। কখন শনশন ঝোড়ো হাওয়ায় উথালপাতাল হবে। কখন আবার স্রোত ছুটবে কনকনে শীতের মতো হিমেল মৃত্য হয়ে। কখনও আবার সে তোমার নৌকোখানা নিয়ে মোচার খোলার মতো খেলা করবে ইচ্ছেমতো।
বলা হয়নি।
জানা হয়নি সেই নদীর নামও। শুধু জানি, বুকের ভিতরে একটা নদী মাতৃগর্ভ থেকেই জন্মাতে থাকে। পল যায়, সময় যায়, দিন মাস বছর -- সবই দেখতে দেখতে চলে যায় কেমন। শৈশবের সেই নদীও বড় হতে থাকে ক্রমশ। তাতে কখন জোয়ার কখন ভাঁটা বলা খুব মুশকিল। আর নাব্যতা?
সে নদীতে শেষ কবে ডুবুরি নেমে যে মুক্তোসন্ধান করেছিল! অথচ, কত মুক্তোই না রাখা ছিল তুলে আনার জন্যে।
বুকের ভিতরের সেই নদী প্রতীক্ষা করতে করতে করতে, একটা একটা করে ঢেউ গুনতে গুনতে গুনতে, একটা একটা নৌকোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে থাকতে, কবে যে কখন কেমন করে কত অবহেলায় মজে গেল, আমি তার হিসেব রাখিনি। মনে রাখিনি তার নামও।
দেখা হলে বলতাম, নদী ও নদী -- তোমার নাম নিশ্চয়ই ইচ্ছেনদী।
ছবি- শৌভিক রায়
No comments:
Post a Comment