Saturday, September 4, 2021


 

শিক্ষা, চেতনা ,বর্তমান ছাত্রসমাজ ও শিক্ষক দিবস
আফতাব হোসেন
শিক্ষক দিবসের কি আদৌ কোন গুরুত্ব আছে এখন ?

ঠিক কোন দিকে যাচ্ছি আমরা ?

কাদের হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ ?

ছাত্র ছাত্রীরা কি সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে ?

ভাবুন.. ভাবতেই হবে ...


আজ থেকে বছর কুড়ি আগেও স্কুল , বাসস্থান আর ধর্মস্থানের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য চোখে পড়তো না । স্কুলের দেওয়ালে অশান্ত যৌবনের কারুকার্য আর টেবিল চেয়ার সব বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়ার চূড়ান্ত রূপ হয়ে থাকলেও  কোনদিনও অশ্লীলতার সীমা পের করেনি বলেই হয়ত আজ অব্দি ওগুলোই স্মৃতি হয়ে মনের মণিকোঠায় কোথাও যেন রয়ে গেছে সক্কলের । অনেক বয়স্ক মানুষ কেও অনেক সময় স্মৃতি হাতড়ে  তার পুরোনো স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে যেমন দেখেছি তেমনি সদ্য মা হওয়া রমণীকে স্কুলের রি ইউনিয়নে সন্তান স্নেহে নিজের পুরোনো বসার জায়গাকে হাত বুলিয়ে চোখ ছলছল করতেও দেখেছি । প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকার আনন্দ বা দুঃখে এক হয়ে লন্ডনের ইঞ্জিনিয়ার রমেন আর লালনপুরের রাজমিস্ত্রি রাজেশ কেও একাত্মতার সুরে  বাঁধতে দেখেছি একসময়ে। আসলে একটা টান ছিল ।   একাত্মতা ছিল  । সম্মান ছিল ।


পরীক্ষায় ফল নিয়ে  একটা সময় ছাত্র ছাত্রীদের চেয়েও অনেক বেশি মানসিক উদ্বেগের মধ্যে শিক্ষক শিক্ষিকারা থাকতেন । অনেক সময় দেখেছি মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট ছাত্র ছাত্রীদের কাছে আসার আগেই টিচার্স কমন রুমে শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যেই সলা পরামর্শ করে ছাত্র ছাত্রীদের গুন আর ত্রুটি গুলো বের করে আনতেন । তারপর বাহবা বা মিঠা তিরস্কার জুটতো ছাত্রছাত্রীদের । ছাত্র ছাত্রীরাও মাথা পেতে নিত সব কিছু আর সঙ্গে নিজেদের ফলাফলের পর্যালোচনা করতে সাহস করতো । এমনকি ' ফেল করলে বাড়িতে আর পড়াবেনা ' জাতীয় ছাত্র ছাত্রীদেরও বাড়িতেও বোঝানোর কাজটিও একসময় স্কুল থেকেই নিয়ন্ত্রিত হত । সে সব স্বর্ণযুগ ছিল হয়ত ।

এরপর যুগের নিয়মে সে সবের পরিবর্তন হয়েছে । শিক্ষা স্থান এখন শিক্ষা স্থানের পাশাপাশি নানারকম সুবিধা উপলব্ধের স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে । এতে একদিকে যেমন অনেক শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের ভীষন রকমের সুবিধা হয়েছে ঠিকই ,  তেমনি শিক্ষক শিক্ষিকা দের হাত থেকে ' শাসন ' নামক অধিকার কেড়ে নিয়ে শিক্ষাদানকে ' ব্রতর ' থেকে অনেক বেশি ' পেশা ' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করিয়েছে নতুন নতুন সব নিয়মের বেড়াজাল । শিক্ষা স্থান যা কিনা ধর্ম স্থানের সমতুল্য হয়ে যুগ যুগ ধরে পূজিত হত ছাত্রদের কাছে তার ওপর বিভীষিকা নেমে এসেছে । প্রায় প্রতি দিনই শুনছি কোন না কোন স্কুলের ওপর ছাত্রছাত্রীদের হামলার খবর । কখনও রেজাল্ট খারাপ হবার জন্য, কখনও আবার শিক্ষা বহির্ভূত কোন পরিষেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্টির জন্য । শিক্ষক আর শিক্ষা কর্মীরাও প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন । দুর্ভাগ্যের ব্যাপার এই সব ঘটনার প্রায় সিংহভাগ এর প্রধান আরোপি হিসেবে প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের নাম উঠে আসছে । এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক । ঘটনা প্রবাহগুলোর হার যে হারে বাড়ছে তার থেকে এটা পরিষ্কার যে ছাত্র ছাত্রীদের কর্তৃক বা ছাত্র ছাত্রীদের নাম নিয়ে এই সব হামলা বা আক্রমন বিক্ষিপ্ত বা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নয় । ইহা এখন এক প্রকারের সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে ।

শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী সর্বপরি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনই কোন ছাত্র বা ছাত্রীর খারাপ দিকটির কথা চিন্তা করেন না । বরং সমস্ত খারাপ দিক কে কিভাবে ভালোর দিকে উন্নীত করা যায় তার চেষ্টায় সদা উদগ্রীব থাকেন । কোন এক ক্ষণিক সময়ের সিদ্ধান্তের বশবর্তী হয়ে শিক্ষককুল বা শিক্ষা স্থানকে অপমানিত করার বা  শিক্ষা স্থানে পরিকল্পিত আক্রমন করার একটি   কারন যেমন শিক্ষক শিক্ষিকা বা শিক্ষা কর্মীদের ওপর তীব্র শ্রেনিসৃষ্ট অসন্তোষ , ঠিক তেমনি অপমানকারীর বা আক্রমণকারী মধ্যে শিক্ষা ঢুকলেও সঠিক চেতনার বিকাশ  না ঘটাও আরো একটি কারণ । দীর্ঘদিনের এই অপচেতনা একদিকে যেমন শিক্ষার প্রসারকে বাধাপ্রাপ্ত করছে ঠিক তেমনি শিক্ষা র মানকেও নিম্নমুখী করেছে । 

তাই হয়ত সময় এসেছে শিক্ষা র নীতি বা শিক্ষা দান পদ্ধতি বা সার্বিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্র হিসেবে শিক্ষাস্থানের ব্যবহার এর দিকগুলো কে নিয়ে আরো একবার আলোচনা করার । না হলে যে শিক্ষা চেতনা আনতে পারে না , সেই শিক্ষা বিবর্তন ও আনতে পারবে না ।

আর বিজ্ঞান বলে বিবর্তনহীন সভ্যতার অবলুপ্তি নিশ্চিত ।


বিঃদ্রঃ - আন্দোলন,পার্টিবাজি,লবিবাজি,পশুপতি ঘোষ,ডি আই অফিস, ৫০০ টাকার এপ্রুভাল ,সবুজ সাথি, স্কলারশিপ,মিড ডে মিলে ডিম, কন্যাশ্রী , শিক্ষাশ্রী , ঐকাশ্রী , ভোটের ডিউটি , নেতারত্ন, আয়রন ট্যাবলেট , কেঁচোর ওষুধ, চাল ,ডাল, আলু, এমনকি ছোলা বা চিরুনী আয়নাকে ছাত্রদের নিকটে পৌঁছে দেবার কর্মসংস্থান কে একদিনের মোড়কে ডিজে বাজিয়ে পালন করাকে যদি ' শিক্ষক দিবস ' বলে চালান হয় ...


তাহলে আমি এর বিপক্ষেই রইলাম ।


No comments:

Post a Comment