Friday, September 6, 2019






প্রথম পর্ব



সম্পাদকের কথা

ঝলমলে শরতে, প্রকৃতির অসামান্য রূপটান। কিন্তু মনে প্রসন্নতা না থাকলে সব বৃথা যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ উত্খাত হওয়ার আশঙ্কায় ভীত, কোথাও প্রযুক্তির ত্রুটিতে অসংখ্য মানুষ বাস্তুহারা, কোথাও অমানিশার ধারা, কোথাও আবার সন্ত্রাসের বলি আমারই প্রতিবেশী! 
তাই আসন্ন শারদ উত্সব বড্ড ফিকে মনে হয়।
তবু মানুষ আনন্দে মেতে উঠবে সব ভুলে। আসলে আমাদের চারদিকে এত সমস্যা যে, সব ভুলে এই মেতে ওঠা ছাড়া বোধহয় উপায়ও নেই।প্রশ্ন কিন্তু তাও রয়েই যাচ্ছে- উত্সবের আলোয় আদৌ কি আলোকিত হবে আমাদের এই ছন্নছাড়া যাবতীয়?



স্মরণ 

প্রখ্যাত নাট্যকর্মী, অভিনেতা ও পরিচালক ও মুজনাইয়ের অকৃত্রিম বন্ধু মদন রায়ের প্রয়াণে আমরা শোকস্তব্ধ। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।  







মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ভাদ্র সংখ্যা 


এই পর্বে আছেন 

মীরা সরকার, সুবীর সিনহা রায়, বেলা দে, রথীন পার্থ মন্ডল, সুদীপ ব্যানার্জী, মিঠু 

অধিকারী, দীপ্তিমান মোদক, মৌসুমী চৌধুরী, রীনা মজুমদার, দীপশিখা চক্রবর্তী, সায়ন 

তরফদার, রূপক চট্টোপাধ্যায়, দেবাশীষ সরকার, সুস্মিতা পাল কুন্ডু, নিশীথ বরণ চৌধুরী,

 মজনু মিয়া, প্রিয়াঙ্কা ভুঁইয়া, রোমানুর রোমান, সঞ্চিতা দাস, রীতা মোদক, লুবনা আখতার 

বানু, স্বপন কুমার চট্টোপাধ্যায়, আশীষ দেবশর্মা, বিজয় কুমার বর্মন, মাম্পি রায়, সব্যসাচী 

নজরুল, শ্যামল কুমার রায়


কবিতা (প্রথম পর্ব )

আগুন
মীরা সরকার 

 "এত তুচ্ছ জীবনের কোন স্বপ্ন হয় না।"
কথাটা কে যেন বলল?
অন্যমনস্ক ছিলাম আমি।
তবু স্পষ্ট শুনলাম ।
হাসি নাকি ব্যঙ্গ ছিল সাথে ?

প্রচন্ড রাগে বনে আগুন লাগিয়ে দিলাম।
হা হা হা হা। এবার?
সারা পৃথিবী শোনো -
জল চাই । বায়ু চাই।
বেঁচে থাকার জন্য মৌমাছিও চাই।
শুধু আমি তুচ্ছ?
দেখ ওই জ্বলছে । সারা দিনমান।
পোড়া পোড়া ঘ্রান।
আগুন! আগুন তো তুচ্ছ নয়।





দলিত মড়া
সুবীর সিনহা রায় 

দলিত মড়া পরম অশুচি অপবিত্র, শিয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাক
দাহ করে দাফন দিয়ে কী হবে, ছুঁড়ে ফেলে দে উচ্চ বর্ণের
চতুর্সীমার শুচিতা বাঁচিয়ে তোরা জলাজঙ্গল দূরে দূরে,  
চলেছিস নরকের জীব  মড়া বয়ে এ পথ দিয়ে পাপের ভাগী
হব কিনা শেষে স্বর্গদুয়ারে কাঁটা কে সাহস দিয়েছে ;
উচ্চবর্গীয় পুণ্যাত্মা যত ছোটে লাঠি হাতে--কোন অধিকারে
রক্ষিত পুন্য ঘাটে মড়া দাহ করে জাত মারিস তোরা
অস্পৃশ্যের দল !  কাঁধে বয়ে আনা অজাতের মড়া
দড়াদড়ি বেঁধে বহু উচ্চ সেতুর উপর থেকে কুৎসিত
অমানবিক দৃশ্যদূষণ ছড়িয়ে হিরহির করে নদীর চরে
নেমে গেল স্বজাতির লাঞ্ছিতহাতগুলি থেকে,    
পথের শুচিতা বাঁচে এবং জাতের পুণ্যক্ষয় রোধ



মরা ভাদ্র 
বেলা দে

দিবাকরের প্রবঞ্চনায়
  মেঘলা আকাশ ঢুকেছে সাজঘরে
মধ্যদুপুরে তৈরিই ছিলো আসবে বলে
     পাল্টে ফেলেছে পোশাক
  অনুষ্টুপ ছন্দের মল্লারী সাজ,
 সকাল সন্ধ্যা প্রাণের অস্তিত্ব
  চিবিয়ে খাচ্ছে মরা ভা দ্র,
অথচ  প্রবল ঝড়বৃষ্টি মাথায়
 এমাসেই এসেছে শ্রীকৃষ্ণ ভগবান,
  তালবড়া আদরে হবে তার জন্মানুষ্ঠান।




দুটি কবিতা
রথীন পার্থ মণ্ডল 

 অন্তর্তদন্ত

কটু গন্ধ বেরোচ্ছে 
খোঁজাখুঁজি চলছে ঠিক কোথায়
                       কি জ্বলছে 
মা খুঁজে বের করলেন
পলিটিক্সের সিঁড়ি বেয়ে ক্রমশঃ উঠতে থাকা
                 ছেলের 
বিবেক পুড়ছে
                মৃদু অথচ ক্রমাগতভাবে‍ ।






 আকাশের তারা 

আকাশের তারা ধরে শিশুটি বলল, 
"মা, খিদে পেয়েছে, খেতে দাও"
নদীর ভেতর থেকে মা বলল, "চুপ "

আকাশের তারা ধরে শিশুটি আবার বলল, 
"মা, খিদে পেয়েছে, খেতে দাও"
নদীর ভেতর থেকে বাবা বলল, " চুপ কর "

শিশুটি ধীরে ধীরে রাত হয়ে গেল। 




আসন্ন বিকেল আর তার চুপকথা
সুদীপ ব্যানার্জী


   (১)

সাধ জেগেছে মরা-দুপুর, দাঁড়াও দেবমূর্তি,ভাস্কর্যে

রোদের আনচান, কাঁপাগলার আরতি শুনে 
দু-একটা বালিশ,আরাম,মাথা পেতে দাও

এখনও মেঘলাই ড্রইংরুম

স্যাটেলাইটে ছবি অপরিষ্কার
ঝাপসা এদিক,পুরো ঘষা কাচ

বাজ পড়লেও ডোবার কথা কেউ বলছে না


     (২)

শুতে শুতে তোমারও রাত হয় বেশ
শুকনোপাতা দেখে তবে গুটিয়ে যাও কেন?
অসম রাস্তা, স্যান্ডেল পায়ে, অবরোধ।
দোকানের সব জল" সোল্ড আউট"

খুব কেঁদেছিলে না, প্রথমবার
অচেনার হাত ধরে? 


    (৩)

সংকীর্ণ ভেবেছিলাম ,বিস্তারে তার মৃতআদল
কেউ বলেনি কখন অচেনা নিমেষ ,সমতল
সাজালে খোঁপাতে ভাব

হাসি যে প্লাবনঘোর মানি,
ভেসে এলে মাঝরাত, আমিও দোকান মনোহারি
বেচে ফেলা ফিতে- চুড়ি, হয়রানি খাত শুয়ে যায়

শ্মশানের পাশে নদী হারানোর চুপটি শোনায়, 
ভালবেসে একগাছ

ভুলেরই কুটোতে বানানো 
মাথা দেহ দুইহাত

ঢেউও এলোমেলো শেখাল ...





ফিনিক্স পাখি 
মিঠু   অধিকারী

চিরহরিৎ বৃক্ষে বাস ছিল যে পাখিদের 
যারা প্রকৃতি মায়ের  অকৃপণ দানে
ভরে তুলেছিল   তাদের  ক্ষুদ্র জীবন।
আজ অরণ্যের বীভৎস দাবানলে,
পুড়ে যেতে  যেতে ভাবে 
পোড়া  ছাই থেকে নতুন  ভাবে  জেগে ওঠা
ফিনিক্স পাখি হয়ে  ফিরে  আসবে
আবার  এই পুণ্য বনবনানীর ক্ষেত্রে।




 দিন কাটে
         দীপ্তিমান মোদক

পূবের আকাশটা সিঁদুর পরলে
বিধবা মেয়েটির কথা মনে পড়ে।
সবাই বলে স্বামী মৃত...
সে বলে শহীদ।
সূর্য মাথার ওপর এলে
বাবাকে দেখি,
তার মাথার ঘাম পা মুছে দেয়।
অলস সূর্য ঢলে পড়লে
পাখিগুলো খাবার না পেয়ে
নিরাশায় বাড়ি ফেরে।
ঠাকুর ঘরে ঘণ্টা বেজে ওঠে।
সাঁঝবাতির সময় হল
আজও দিনটা কেটে গেল।
                             







কবিতা (দ্বিতীয় পর্যায়)

খুঁটি পুজো
          মৌসুমী চৌধুরী

দিন ক্ষণ দেখে গণতন্ত্র উৎসবের খুঁটি পুজো।
পাখির চোখ স্পঞ্জি গদি, ঠাণ্ডা ঘর, গাড়ির মাথায় লালবাতি...

দরকার জনতার মাথা আর আনুগত্য একশ ভাগ।
শিল্পীদের মেরুদন্ড বেঁকে গেলে তাঁরা যান 
মুখ দেখান আর সার্কাস ফেটে পড়ে হাততালিতে!

ময়লা ছেঁড়া ন্যাকড়া পরা বুড়িটার
আজ একটু অন্যরকম,
আজ একটু ভালোমন্দ, একটু ডিম-ভাত!

খুঁটি পুজো শেষে ভিখিরি বাচ্চাটা
কাগজ কুড়োয়, পাস্টিক বোতল।

ঠাণ্ডা গাড়িগুলো ধুলো  উড়িয়ে চলে যায়
আনুগত্য মাথা নোয়ায় একশ ভাগ... 



সভ্যতার দু'চোখ খোলা 
       রীনা মজুমদার 


"যতদিন বাঁচবো যেন দু'চোখ খুলেই বেঁচে থাকি"

 সামাজিক অনাচারে অবক্ষয়ে
  চোখ থেকেও অন্ধ যারা 
  দু'চোখ খুবলে নিয়েছি 
  অন্যায়ে, খোলা চোখে হেঁটেছি সামনে
কেউ আসেনি ধরতে জ্বলন্ত হাত 
   বোবা-কালা কালো রাত
   জড়পিন্ড বুদ্ধিহীন ভিড় l
   ভরিয়ে ভাসিয়েছে ছুঁড়ে 
   বাঃ, সাবাশ ! সাবাশ !
   যেন ঘৃণার তীক্ষ্ম তীর --

এক কালো রাতে হাড়-পাঁজর , রক্তঘাম, শ্বাস
হাজার কীটের অট্টহাসিতে সব কেড়ে নিলেও
      অক্ষত রাখতে পেরেছি !
        শুধু দু'টি খোলা চোখ
  এখনো অনেক দেখা বাকি -

মাটি ছুঁয়ে কফিনে দু'চোখ 
    খোলা রেখে বেঁচে আছি ...l




ফিরতেই হবে
দীপশিখা চক্রবর্তী 


যতবার বলেছ- "যাও",

আরও আটকে গিয়েছি আমি,

এমনটাই কি চেয়েছিলে!

এক অস্থির অন্ধকারে তৈরী 
নিজের ছায়ায় লেগে থাকে 
হারিয়ে যাওয়ার এক আধটা সংকেত,

বলতে পারো-
কেন এতসব কথা সাজিয়ে লিখতে হবে!

হয়তো আমি নিজেকেই বারবার 
পৌঁছে দিতে চেয়েছি শূন্যস্থানের কৃত্রিম নেশায়,

যাকে আকাশ ভেবেছি-
নিজের না থাকার চিহ্ন আঁকি লালে;

জানি কেন এখনও 
সত্যিকে অবিশ্বাস করে বুকের ওপর পাথর ভাঙি,

তবে ফিরতেই হবে এবার!

দ্যাখো-
আজ তোমার আমার গল্পের দৃশ্যরা ভেসে যাচ্ছে, 
ঝরে যাচ্ছে রোদের গুঁড়োর মতো, 
নিঃশব্দে। 





গীতবিতান ছুঁয়ে বলছি
সায়ন তরফদার

শ্রাবণের জলধারায় ধুয়ে গেছিস তুই
             আকাশে জমা মেঘ বৃষ্টি হয়ে
                   চোখ বেয়ে নেমে আসে...
নেমে আসে শ্রাবণের ধারার মতো 
                 হৃদয়ের মাঝে বর্ষা।

গীতবিতান ছুঁয়ে বলছি,
তোর চুপ করে যাওয়া, তোর কথা না বলা
আর তোর প্রতি অসীম অপেক্ষা----
খুবই বেদনাদায়ক, খুবই কষ্টকর।

রাগ করলি?
রাগ করলে ঝগড়া করিস,
                  চুপ করে থাকিস না।







মেঘলা হয়ে অাছি
রূপক চট্টোপাধ্যায়

কুয়াশা সুদূর 
রেখে যাও তোমার নিকট নির্যাতন! 
বিচ্ছেদের নৌকা ডুবি
তবু ভাসানের চাঁদমালার
আড়াল থেকে উড়ান খোঁজে নীল কন্ঠ পাখি! 
মেঘলা হয়ে আছে 
যুবক বয়সের মাঠ
হেঁটে যায় স্কুল বেলার মেঘ
মৌরি খেত পার হয়ে অনন্তের টানে অবন্তিকা নগরী প্রাচীনে! 

পূব দিক থেকে 
এখনো শাল সেগুন কেন্দু পাতার নীচে বেহুলা বেদনায় 
টলমল করে লালন লিখনী! 

আমি তার জন্য আমরণ একা
আমি তার জন্য অন্তমিলে 
এখনো বিচ্ছেদ লিখি নি!







অব্যক্ত কাহিনী 
            দেবাশীষ সরকার 


তোমার গভীর কালো  নয়ন ঝিলে ,  
ধীরে ধীরে পাড়ি দি ---- 
হৃদয় থেকে ভালোবাসার যৌবন  সঙ্গমে , 
তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে চিবুকের বুনো ঘ্রান  নিয়ে  
হারিয়ে যাই আদিম সভ্যতার গভীর বনানী ছায়ায় l

মেঘেদের আশিয়ানায় জেগে থাকে দুটি প্রাণ 
জোনাকি দের ভীড়ে , 
জোছনায় সিক্ত আঁচল আটকে যায় 
জলফড়িঙের ডানায় । 

সমর্পিত আঁখিতে সীমারেখা পার করে 
প্রতিটি যৌবন গ্রন্থির  হিল্লোল আহ্বান জানায় ----
অসীমতায় লীন হতে l 
সুপ্ত যৌবন গুহায় আঁচড়ের পর আঁচড়  কেটে  
আদিম সভ্যতার শিল্পে এঁকে যাই  সুপ্ত মনের 
চাওয়া ও পাওয়ার অব্যাক্ত  কাহিনী l 





ভালো মন্দের চিরকাল দ্বন্দ্ব  
সুস্মিতা পাল কুন্ডু 
সবার মধ্যেই থাকে দু'টি দিক ৷
একটি ভালো অপরটি , হয় তো বা মন্দ ,
মন্দটাতেই চোখ পড়ে যাদের আগে 
আমরা ভাবি বোকামো ;
তুমি হয়তো জানো না ,আসলে তারা অন্ধ  
অন্ধ ... 

সবার মধ্যে থাকে একটি মন ৷ 
সেই মনের ই ভেতর জড়িয়ে রাখে আশা ,ভালোবাসা
অনেক দ্বিধা - দ্বন্দ্ব ,
দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলায় দুলে দুলে আসলে মানুষ বাঁচে  
একটু ভালোবাসার জন্য  ,
ভালোবাসার জন্য  ...
সবার চোখেই  থাকে অনেক স্বপ্ন ৷
স্বপ্নগুলো সত্যি যদি অলীকই বা হল
তবুও তাদের নিয়েই যারা কেবল হন্য ,
ওরা আসলে লক্ষীছাড়া ,লক্ষীছাড়া ;
স্বপ্নসুখের নেশায় মেতে ওরা অসামান্য
অসামান্য... 
এই দুনিয়ায় কত  মানুষ অন্ধকার রাতে ,
সাহস আর শক্তি নিয়ে চলে একা পথে 
কোনো বাধায় হারায় না জেদ ;
লক্ষ্যপূরণ করতে পারে অপার অমিত তেজ ;
ওরাই পড়ে জয়ের তিলক সবাই যারা অদম্য  
অদম্য ....
আসলে ,  জীবনটাই যুদ্ধ , 
স্নেহ মায়া মমতা দয়া মায়া করুণা ভরা
হৃদয়টাতে 
শক্ত হাতে হাল ধরে এগিয়ে নেয় তরীখানি     
অপার অসীম জীবনবোধে ; 
জয়মাল্য পড়ুক বা নাই বা পড়ুক, 
কি আসে যায় তাতে ?
ওরাই আসলে অনন্য ....অনন্য ৷৷




নিয়তির দর্পণ 
নিশীথ বরণ চৌধুরী 

ইচ্ছে ডানা মেলে আকাশ চুম্বন 
          
জীবনের বন্ধুর বৃত্ত পথ
         
অতি সাবধানী  আমরা সকল
     
দূরে আরো দূরে ফেরারী মন,খেয়ালী পথ চলা। 
             
সাফল্যের ফুলদানি শূণ্য না পূর্ণ?
        
চারুশীলা রমণীর হাতে গাঁথা মালায়
        
            
সযত্নে হিসাব রাখা।
           
স্পন্দিত হৃদয়ের গোপন বিবরে
           
এক অদম্য  জিগীষা আবিষ্ঠ হয়,
           
খুঁজে দেখে কোথাও যদি থাকে
            
কাঙ্খিত উন্নতির উচ্চ আলয়।
            
অনুসন্ধিৎসু মন স্বপ্নের ঘোরে
              
দেখে অদৃশ্য ইশারায়--
             
আসে ধূলি ঝড় কবন্ধ নিশীথে।
             
তরুতলে স্বপ্নাহত পথিক জেগে,
             
ভাবে মনে কবেকার রাতে,
              
মরু ঝড়ে ভেঙে গেছে সুখের আলয়।
             
এখন একাকী দৃশ্যত ধ্বংসের খেলা
              
ইচ্ছে ডানার ভারে আহত বলাকা,
              
ভূলুণ্ঠিত নিরুদ্দেশে,নিছক সান্ত্বনায়
       
দেখে নিয়তির দর্পণে,বিম্বিত ছবি তুলে রাখা।






তীক্ষিত প্রহরের অপেক্ষা 
মজনু মিয়া 

আসবে কবেই বলেছিলে আজো আসোনি
আমি আষাঢ় শ্রাবণ চেয়ে রইলাম পথ পানে
বৃষ্টির প্রতিটি ফোটায় ফোটায় প্রত্যাশা রয়
কিন্তু চোখের জলে ভেসে যায় নিরুদ্দেশে।

পিঞ্জরের পাখি ছটপট করে বেরুতে পারে না
গুমরে গুমরে কেঁদে উঠে হতাশার জালে
কত জনের আসা যাওয়া দেখে মন কাঁদে
অনেক সময় পার হয়ে যায় তবুও আসে না।

ভেবে ছিলো বিনিসূঁতার মালায় জড়াবে
রঙিন স্বপ্ন আঁকাছিলো চোখ মন ও বুকে
কতবার বেণী করেছি চুলে খোঁপাও বেঁধেছি 
তবুও আসোনি, আজ তো ভাদ্র মাস আর কবে?




এই বেশ ভালো আছি
   প্রিয়াঙ্কা ভুঁইয়া

আজকাল আমি এই বেশ ভালো আছি,
নতজানু হয়ে শহুরে কংক্রিটের মাঝে বাঁচি,
নিঃসঙ্গ রোজনামচায় মুখ গুঁজে খুঁজি সুখ,
প্রতি মুহূর্তে হাঁটি মৌন মোমবাতি মিছিলে;
হাসি-কান্নার সমীকরণটা পারিনি মেলাতে,
লাশকাটা ঘরের শীতলতা ভাবায় না আর,
কবিতায় লুকিয়ে শব্দের রক্তাক্ত অভিমান
অগ্ন্যুৎপাতের মতোই বেরোচ্ছে লাভা হয়ে।
তবু কলমের ছোঁয়াচে আস্কারা থাকে বেঁচে,
বিশ্বাসের শেষ নির্যাসটুকুও থাকে গচ্ছিত,
পিঞ্জর মুক্ত করে উড়িয়ে দিই অচিন পাখি,
আশার হাতছানি ঘরের ফেরার চেনা রাস্তায়;
নিভৃতে কাঁদি, তবু অটুট থাকে মুখের হাসি,
মিথ্যে অভিনয়ের পারদর্শিতা হয়নি দৃষ্টিগোচর,
রক্তাক্ত দিনের মাঝে নিজেকে করি সহনশীল,
মৃত্যুর স্থবিরতা এখন কয়েকশো যোজন দূরে।
ভালো থাকার অভিনয়ে অভ্যস্ত হয়েছি নিমেষে,
নিজেকে খুঁজে ফিরি ভঙ্গুর অবয়বে দিনশেষে।।






কবিতা (তৃতীয় পর্যায়)




হৃদয়ের জানালা
রোমানুর রোমান

এই হৃদয়ের দরজা বন্ধ
কেউ খুলে না তালা,
বসন্ত নেই হৃদয় মাঝে
পরায় না কেউ মালা।
ছটফটিয়ে ক্লান্ত আমি
আলো বাতাস ছাড়া,
চাঁদ তো দেখা দূরের কথা
পাইনা কোনো তাঁরা।
পিপাসিত শুকনো পড়ে
ফুটবে কি আর ফুলে?
হাজার বছর পরে আবার
জানলা দিলাম খুলে!
তারপরেও আশায় থাকি
কবে প্রদীপ জ্বালায়,
কেউ কী মারে উকি আমার
হৃদয়ের জানালায়!




ভাবনা (ছড়া)
সঞ্চিতা দাস 

পাখা দুটো মেলে দেয় ভাবুকের ভাবনা,
কত দূর যাবি বাবা? বেশি দূর যাসনা
কাছাকাছি থেকে যাস পাখা কর বন্ধ,
বেশি দূর যেতে গেলে পাবি না আনন্দ
আকাশেতে ওঠে যদি ভাবনার রেশরে-
কি বলতে বলবি কি, শেষে পাবি কেশরে
তাই বলি কাছে থাক ভাবনায় কাজ কি?
রোজ রোজ যাহা দেখি,থাক কাছে ক্ষতি কি?
এইবার থাম বাপু লাগামের বন্ধে,
বেশ তো চলেছি দেখ দোলা লাগা ছন্দে


আমার  আমি 
রীতা মোদক 

মরচে ধরা আমি 
চিনতে পারিনি  নিজেকে । 
ঘুমিয়ে ছিলাম দশটি বছর 
আলগা স্রোতে গা ভাসিয়ে  ...
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর , 
আঘাতের পর আঘাত লেগে 
মরচেগুলো গেলো খসে !
অবাক চোখে দেখি চেয়ে ---
বহু  অপেক্ষার পর 
কঠিন আবরণ খসে গিয়ে , 
বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে 
এক আস্ত আমি । 
আমি নিজেকে মেলে ধরলাম 
আকাশের দিকে ---
আকাশ নীল হয়ে উঠল । 
বাতাসের দিকে তাকলে 
ঝিরিঝিরি হাওয়ায় 
আমার মন ভরে গেলো । 
নদীর তীরে গিয়ে 
আমি শীতল জলে স্নান সারার পর 
শুদ্ধ হলো ---আমার আমি ।






শেষযাত্রা।
লুবনা আখতার বানু


অদ্রিকীলার সমস্ত হিসেব 
                                  চুকিয়ে,
অজানা এক গন্তব‍্যের
           উদ্দেশ‍্যে রওনা হওয়া-
হয়তো সমস্ত দায়িত্ব ও 
              কর্তব‍্যগুলো আজো  
                              অসমাপ্ত!                           
তবুও এবার যাবার পালা-
হয়তো অনেক কাজ গুছিয়ে 
                        ওঠাও হয় নি!
তবুও আজ যাবার পালা-
অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো আজ 
                       ভাষাহীন,স্তব্ধ।
অপূর্ণ সখগুলো আজ 
                                মূল‍্যহীন-
অনেক কিছু বলার ছিলো,
বলা হলো না-
তবুও এবার যাবার পালা।
মাত্র কিছুটা পথ আর সবার 
                                    সাথে।
আর তার পরের যাত্রা 
                    নিতান্তই একার-
আর আঁখিপাত হবে না এই 
                   সুন্দর অন্তরিক্ষে।
আঁখিপাত হবে না অদ্রিকীলা 
                                    থেকে,
জ‍্যোতিরিঙ্গের ন‍্যায় জ্বলজ্বল
              করা ঋক্ষদের উপর-
হয়তো সুন্দর প্রকৃতিতেও
       আর আঁখিপাত করা হবে 
                                        না!                             
নিজের করা ভুলগুলোকে 
          সুধরে নেবার সময় নেই
                                   আজ-                            
শুধু হিতকর্মের
                প্রশংসাগুলো নিয়ে,
এবার যাবার পালা-
অজানা সেই না ফেরার এক 
                                    দেশে।







বৃহন্নলা
স্বপন কুমার চট্টোপাধ্যায়

ট্রেনটা চলে গেছে কিছুক্ষণ আগে
পরের ট্রেনটায় যাব বলে
বসে আছি আমি প্রত্যন্ত এক
স্টেশনের ভাঙাচোরা রকে।
দূরে এক পথ শিশু দাঁড়িয়ে
ফেলে দেয়া খবরের কাগজের
ঠোঙায় পড়ে থাকা সব টুকু মুড়ি
খেতে ব্যাস্ত  ছিল ব্যাকুল হয়ে।
মুড়ির ঠোঙ্গার দিকে লোলুপ দৃস্টিতে
তিনজন বৃহন্নলার দল
মনে ভাবি বৃহন্নলা রাও বুঝি
ভিখারি ছেলেটার অধম।
খাওয়া শেষ হলে ছেলেটি
কাগজের ঠোঙা দিলো ছুঁড়ে
ব্যাস্ত সাপদের মতো বৃহন্নলা এক
তুলে নিলো বুকে চেপে তায়
কাগজের গায়ে ছিল লেখা
নাবালিকা ধর্ষণের দায়ে
যুবকের ফাঁসির আদেশ,
বৃহন্নলা তারস্বরে চিৎকার করে
দেবতার আসনে বসাব তোমায়
হে ধর্ষক ,আমার গর্ভে যদি
দিতে পারো সন্তানের বীজ।




না ফেরার দেশে 
 আশীষ দেব শর্মা

স্বপ্নে গড়া মন মন্দির মোর 
ধুম্র মায়ায় ঢাকা , 
স্বপ্ন ভস্মের হৃদয় আগুনে 
 চিত্ত  হল ফাঁকা ।
জীবন জ্যোতি  জ্বেলেছে 
মম জননী ,
 বেলা গড়িয়ে মধ্যাহ্নে-জীবন
 বোঝেনি ।
বোঝাপরা করে হয়নাতো দিন 
শেষ ,
অতর্কিত বিপদে ভগ্ন সুখের লেস ।
      জীবনের খেলায় মেতেছি মোরা,
পথভ্রষ্ট পথিক আজ দিশেহারা ।
       আয়ুর গণ্ডি বেঁধে দিয়েছেন সেই জন,
সময়ে না ফেরার দেশে চলে যায় প্রিয়জন!!





আদরের ভাদর
বিজয় কুমার বর্মন


জামাই যায় শ্বশুর বাড়ী ,
খেতে ,শ্বাশুরির হাতে ভাত ,
শ্বশুর মশাই ব্যস্ত মানুষ ,
কাটেন কলার পাত !
জামাই জীবন সঙ্গে বাড়ীর
মিষ্টিদই আর কলা ,
বাড়ির তৈরি চিড়া,মুড়ি ,খই
আছেন ভাঁড়ি ভোলা !
বড় বাড়ির ছোটো জামাই ,
আদরের দূলাল !
জ্ঞাতী গুষ্টির শ্বাশুরীর আদর ,
জামাই লাজে লাল !
ভাগ্নে নাকি ভগবানের রূপ,
মামির হাতে খাবেন !
মামার বাড়ি মধুর হাঁড়ি ,
সমান আদর পাবেন !
খাওয়া দাওয়া উপলক্ষ মাত্র
সাগাই , মেলার বন্ধন !
জামাই , ভাগ্নে সানন্দে খান ,
সাধের গ্রাম্য ব্যাঞ্জন !
পরিবর্তনের নতুন ছায়া ,
আসুক যত ঝড় !
রাজবংশীদের এই পরম্পরা
থাকবে জীবনভর !



পরব টুসু পূজা  
    মাম্পি রায়

     ভাদুর এ লগন,
নদের জলে সবে মিলে
   করে মকর সিনান।

তালের পিঠে, তিলের নাড়ু,
       সন্দেশ, খেজুর, 
সাঁঝের বেলায় পলাশ তলায়
    চলে টুসুর  আসর।

মাথায় নিয়ে ধানের শীষ 
  বাহা গানের সাথে, 
কর জোড়ে আশীষ চাহে
   গাঁয়ের মেঠোপথে।




দাদার সিন্ডিকেট 
সব্যসাচী নজরুল

হাতে কি
দেখা দেখি
বলে একি!
বেড়া সরা
বস্তা ভরা
কাঁচা চামড়া।
নাই টিকেট
কি তাতে
দিনে রাতে
চলছে রকেট
দাদার সিন্ডিকেট
দাদার সিন্ডিকেট।
আছে কতই
দাদার মতই
এ কারবার
কে করে আর।
যা ওপারে
যা ওপারে।
শালা দামড়া
আছি আমরা
রাত পাহারায়
জলদি আয়।
করে ছক
এতিমের হক
সোনার ছেলে
দু'পা মেলে
আরামে খায়
বসে কেদারায়।




অন্তর দর্শন 
শ্যামল কুমার রায়


জীবন মানে?
তপ্ত মরুভূমিতে চলা
সকাল সন্ধ্যে- দুবেলা।

নিশ্চিত আরাম বলতে?
শৈশব, কৈশোরের ঐ পড়ন্ত বেলা।
যেখানে থাকে না কোনো জ্বালা,পোড়া 
নিশ্চিন্ত আশ্রয় আর ঘুম।
ওরই মাঝে-
ছোট্ট কাঁধে স্বপ্ন পূরণের পালা। 
দিন রাত এক করে ফেলা
এরই মাঝে মধ্যবিত্তের মোক্ষ লাভ। 

বেকার বেলা ছেড়ে 
বৈভবেতে চলা।

একাত্ম বোধ আর
এক সাথে চলা 
কর্তব্য কর্মে আষ্টেপিষ্ঠে
বেঁধে ফেলা।

মোহ, বড় মোহে
সব মুড়ে ফেলা।

কে বা জানত-
কমলে কালসাপ?
কিশোরী রাজন্যার 
ওতেই সব সর্বনাশ!

মরমে মরমে শুধু বিষাদের সুর 
নীরবে,নিভৃতে ঘুণপোকার ঘুরঘুর।

শুধু মুখোশ পড়ে থাকা 
আর রক্তাশ্রু লুকিয়ে বলা-
'এই তো,বেশ ভালো আছি।'





 মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ভাদ্র সংখ্যা  


প্রকাশক- রীনা সাহা 
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার 
ইমেল ঠিকানা- mujnaisahityopotrika@gmail.com
সম্পাদনা- শৌভিক রায় 

মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ভাদ্র সংখ্যা 

No comments:

Post a Comment