প্রবন্ধ/ নিবন্ধ
দ্বারবাসিনী : জেলা ভেদে নাম মাহাত্ম্য
জনা বন্দ্যোপাধ্যায়
বীরভূমের সতীপীঠগুলোতে যেমন ভিড় হয়, তেমনই কোটাসুর গ্রামের দ্বারবাসিনী কালী মন্দিরে ভক্তরা ভিড় করেন। বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর থানার অন্তর্গত কোটাসুর গ্রামকে কেন্দ্র করে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী আছে। কৌটেশ্বর রাজার রাজধানী ছিল এই অঞ্চল। তাই রাজার নাম অনুসারে গ্রামের নাম হয় কোটাসুর। এই গ্রামের কুলদেবতা হলেন মদনেশ্বর শিব। লোককাহিনী অনুসারে পঞ্চপাণ্ডব অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন এই মদনেশ্বর শিবকে পুজো দিয়েছিলেন দেবী কুন্তী। কোটাসুরের বাজার সংলগ্ন এলাকাতেই দ্বারবাসিনী কালীর মন্দির। এই কালীকে নিয়ে বিভিন্ন লোকগাথা লক্ষিত হয়। স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি কৌটেশ্বর রাজার আমলেই এই দ্বারবাসিনী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। এলাকা জুড়ে বিশাল জঙ্গলের মধ্যে মা দ্বারবাসিনীর নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করেন গ্রামের পুরোহিত দুর্গাপদ পান্ডা। তাঁর প্রচেষ্টায় জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়।
ইতিহাস ও পুরাণ মিলে দ্বারবাসিনী কালীর বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৩৭৭ সালে গ্রামের মানুষজনের উদ্যোগে মন্দির নির্মাণ করা হয়। গ্রামের পুরোহিত করুণাসিন্ধু রায় নিত্য পুজোর কাজ করেন। সাধনসন্ন্যাসীরাও মায়ের পুজো করতেন। প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ করে কালীপুজোর দিনটিতে বহু ভক্তের সমাগম হয়। পুরোহিতের দাবি মাকে ভক্তি ভরে ডাকলে ক্যান্সারও দূরীভূত হয়।
বীরভূমের তারাপীঠ থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে দ্বারকা নদের তীরে পুণ্যতীর্থ শক্তিপীঠ দ্বারবাসিনী মন্দির। ঘন জঙ্গলের মধ্যে নির্জন স্থানে এই মন্দির লক্ষিত হয়। দ্বারকা নদের পাশেই ঝাড়খন্ড বর্ডার। এখানে সন্ন্যাসী কান্দরের জল দ্বারকা নদে মেশে। এখানকার মন্দিরে দেবী দ্বারবাসিনী দুর্গা রূপে পূজিতা হন। প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে ভক্তরা আসেন। শোনা যায় এই মন্দিরে যে মনস্কামনা জানানো হয়, তা পূরণ হয়। প্রতি পৌষসংক্রান্তিতে এখানে মেলা বসে। দ্বারকা নদের ধারেই শ্মশান। জঙ্গলঘেরা এই অঞ্চলে বিকেল চারটের পর আর কেউ মন্দিরে ঢোকার সাহস করে না।
বীরভূমের মহম্মদ বাজারের বনপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বনভূমি। ইতিহাস অনুসারে ষোড়শ শতাব্দীতে এই অঞ্চল ছিল বীর রাজার রাজ্যের অন্তর্গত। শেষ বীর রাজাকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেছিলেন তাঁর সেনাপতি জুনেইদ খান। এরপর তাঁর পুত্র রণমস্ত খান এবং ১৭৫২ সালে মহম্মদ আসাদুজ্জামান খান দেবী দ্বারবাসিনীর নিত্য সেবার জন্য ভাগলপুর থেকে তান্ত্রিক পুরোহিত তিলকনাথ শর্মাকে নিয়ে আসেন। ইংরেজদের সহায়তায় মীরকাশিম আসাদুজ্জামানকে পরাস্ত করেন। এরপর ওই এলাকা ব্রিটিশদের শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়। আসাদুজ্জামানের পরবর্তী রাজা ঠিক মতো কর দিতে না পারায় ইংরেজরা এই অঞ্চল নিলাম করে। এরপর হেতমপুর রাজপরিবার কিনে নেয়। কিছু সময় এই মন্দিরের পুজোর দায়িত্ব শিয়াখোলের রাজবাড়ির হাতে চলে যায়। তবে এই মন্দিরের পুরোহিত বংশপরম্পরায় আজও পুজো করেন। এখানে কৃপানাথ ভৈরব পীঠ ভৈরব রূপে পূজিত হন।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলাধীন পোলবার দাদপুর ব্লকের সিনেট গ্রামে লৌকিক দেবী বিশালাক্ষী মন্দির বিখ্যাত। এখানে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে একদা প্রবাহিত কেদারমতী নদীর উত্তর পাড়ে লৌকিক দেবী দ্বারবাসিনী বিষহরি মন্দিরের অবস্থান। দ্বারবাসিনী মা মনসা এখানে পূজিতা হন। ভক্তরা বিশালাক্ষী ও বিষহরিকে দুই ভগ্নীরূপে পুজো করেন। হুগলী জেলার লোককাহিনী অনুযায়ী মা বিষহরি ভক্তের মনস্কামনা পূরণ করেন। দুবেলা নিত্য পুজো হয় এবং দূরদূরান্ত থেকে ভক্তেরা আসেন।
জেলাভেদে দ্বারবাসিনী কখনো কালী, কখনো দুর্গা এবং কখনো মনসা দেবী রূপে পূজিতা হন। দেবী মাহাত্ম্য এভাবেই পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলায় বিশেষ ভাবে লক্ষিত হয়!
সঙ্গীতের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় / পারস্পরিক শ্রদ্ধা গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাকির হোসেন ও আজকের ভাবনা
সঞ্জয় সাহা
ভারতীয় সংগীতে এক শোকের ছায়া। চলে গেলেন প্রখ্যাত তবলা বাদক এবং সঙ্গীতশিল্পী জাকির হোসেন। ভারতের শাস্ত্রীয় সংগীতে অগ্রগণ্য এ মহান শিল্পীর প্রয়াণ সঙ্গীতে একটি যুগে সমাপ্তি ঘটালো, যা শুধু ভারতীয় সঙ্গীত জগতের নয় বিশ্বের সকল শ্রোতাদের জন্য এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।
কবির ভাষায় ----
"বেদনা কী ভাষায় রে
মর্মে মর্মরি গুঞ্জরি বাজে!
সে বেদনা সমীরে সমীরে সঞ্চারে,
চঞ্চল বেগে বিশ্ব দিল দোলা।"
আমরা আজ এক সম্পদকে হারালাম। যার সুর, তাল,ছন্দ এবং বাদন দিয়ে তাঁর অসামান্য দক্ষতা এবং সৃষ্টিশীলতা তাঁকে পৃথিবীজুড়ে শ্রদ্ধার পাত্র করে তুলেছে। পশ্চিমী ক্লাসিকাল সংগীত, জ্যাজ এবং বিশ্ব সংগীতের ক্ষেত্রে তিনি অসংখ্য শিল্পীদের সাথে সফলভাবে সহযোগিতা করেছেন, যার মধ্যে জজ হ্যারিসন, জন মানলফলিন এবং রবি শংকরের মতো বিশিষ্ট শিল্পীরা রয়েছেন। তাঁর 'শক্তি' নামক যৌথ প্রজেক্ট সংগীতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যা নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
রবি ঠাকুরের ভাষায়, বলে উঠতে ইচ্ছে করে......
চাহিয়া দেখো রসের স্রোতে স্রোতে রঙের খেলাখানি।
চেয়ো না তারে মায়ার ছায়া হতে নিকটে নিতে টানি।
রাখিতে চাহ বাঁধিতে চাহ যারে
আঁধারে তাহা মিলায় বারে বারে --
বাজিল যাহা প্রাণের বীণা-তারে
সে তো কেবলই গান, কেবলই বাণী।
একজন শিক্ষক হিসেবে জাকির হোসেন নতুন প্রজন্মের সঙ্গীতশিল্পীদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিত। তার শিক্ষা এবং প্রদর্শনী গুলি ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত, নির্ভুল এবং গভীর। তাঁর শিল্পচর্চা আন্তর্জাতিক সংগীত উৎসব সহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শিল্পীদের একত্রিত করেছেন, যা সঙ্গীতের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক এক চরমতম দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমস্ত বিশ্ববাসীর কাছে।
" বেদনা কি ভাষায় রে
মর্মে মর্মরি গুঞ্জরি বাজে। "
জাকির হোসেন সঙ্গীতের জগতে তাঁর অসাধারণ অবদান রেখেগেছেন, যার জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, পদ্মভূষণ অন্তর্ভুক্ত। এই মহান ব্যক্তির মৃত্যু ভারতীয় তথা বিশ্ব সংগীতের জন্য এক অপূরণীয় শূন্যতা, তাঁর সঙ্গীত এবং তাঁর প্রভাব অমর হয়ে থাকবে অগণিত ভক্ত এবং শ্রোতার মননে।
সেই সুরে সাগরকূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে।
সেই সুরে বাজে মনে
অকারণে
ভুলে যাওয়া গানের বাণী, ভোলা দিনের কাঁদন-হাসি।।
জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণা ধারায় এসো
জয়তী ব্যানার্জী
"বাসনা যখন বিপুল ধুলায়
অন্ধ করিয়া অবোধে ভুলায় ,
ওহে পবিত্র ,ওহে অনিদ্র ,
রুদ্র আলোকে এস" ....
_____ এই রুদ্র আলোক ছটা যে কলেবর কৃপা পূর্ণ ,করুণা ধারা সদা প্রবাহিত এবং সেই জগন্মাতার অবতার ____পূর্ণ ব্রহ্ম সনাতনী__ আমাদের এই রাজরাজেশ্বরী, করুণা রূপিণী শান্তির মূর্তি, মঙ্গলময়ী মা। শ্যামা সুতা মাতা ; মা কালী নন ,এই মা যে সদাই উগ্রভাব পরিহার করে পূর্ণ মাতৃস্নেহের আঁধার হয়ে রয়েছেন। পরতত্ত্ব সুবিদিত হলেও মায়ের মত তিনি সন্তানের হিতে রত এবং গার্হস্থ্য জীবনে রয়েছেন লোক শিক্ষার জন্য।
শ্রী শ্রী মা সারদা
_____ শ্রী রামকৃষ্ণের মাতৃভাব বিকাশের জন্য রেখে যাওয়া ইচ্ছামূর্তি। আমাদের গণ্ডি ভাঙা মা_ পল্লী বাংলার স্নিগ্ধ আবেষ্টনী, যেন তাঁর সরল মাধুর্যমন্ডিত জীবনের চালচিত্র রচনা করেছিল। গীত সুধা রসের মাধুরী যে মায়ের জীবনকথার বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে আছে, তা হলো ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় জয়রামবাটি গ্রামের কথা। তাঁর আমোদর নদ, পূণ্যিপুকুর, তালপুকুর বা কলু গেড়ে পুকুরের কথা। আমোদর নদ- যে কিনা মায়ের গঙ্গা; সেই তালপুকুর- যার জল মা পান করতেন। সন্তানদের বিদায় দিতে তারই ধারে এসে দাঁড়াতেন অশ্রুমুখী মা , নবাগত সন্তান পথ হারাবে ভেবে লন্ঠন হাতে রাতের অন্ধকারে ;আবার পিদিম জ্বালিয়ে বসে থাকতেন দেরাজে।সেই কলু গেঁড়ে পুকুর যার ঘাটে মা বাসন মাজতেন ,কাপড় কাঁচতেন আবার পরিষ্কার করতেন রাধু, লক্ষ্মী দিদির এমন কি সন্তানদের ছেড়ে যাওয়া বিছানার চাদর, এই হল আমাদের মা।
সেই মা- যিনি পাতানো মা নন ,কথার কথা মা নন ,সংঘ জননী নন ,যিনি হলেন সত্যিকারের মা।
যেখানে কবির ভাষায়-
"কর্ম যখন প্রবল আকার
গরজি উঠিয়া ঢাকে
চারি ধার
হৃদয় প্রান্তে হে নীরব নাথ,
শান্ত চরণে এসো। "
এই শান্তচরণেই শ্রী শ্রী ঠাকুর বিল্ব পত্রে তুলি দিয়ে নিজ নাম লিখে, সমস্ত অঙ্গরাগ সহযোগে শ্রীমায়ের চরণে ভক্তি ভরে অঞ্জলি দিলেন আর বারবার করজোড়ে প্রার্থনা করলেন-
" যাগ-যজ্ঞ তপস্যা সমুদয় সাধন ভজন কর্মকাণ্ডের জপমালা সব কিছু সাঙ্গ হল, এবার সমর্পণ করলাম এই দুটি পদে।"
কি অপূর্ব দৃশ্য ___পূজ্য- পূজক ভাব রাজ্য ত্যাগ করে ভাবাতীত রাজ্যে একত্রে মিলিত হয়েছেন। পড়ে রয়েছে কেবল কঙ্কালসার দেহ দুটি; কি অদ্ভুত বার্তা জগতের কাছে __হয়তো বা তাদের রূপ পৃথক কিন্তু আত্মা অভেদ ।তাদের হৃদয় চিত্ত মন প্রাণ সতত সম্মিলিত, তিলেক মাত্র বিচ্ছেদ নেই তাদের সত্তায় । গার্হস্থ্য জীবনের পঙ্কিল ধারা- পাতে প্রতিমুহূর্তেই আমরা যে অনুভব করতে পারি-
অমৃতপূর্ন রামকৃষ্ণ- রূপী কলস লীলা গাঁথায় মত্ত,
"মগ্ন হয়ে রও -
হে আমার মন"
আবার এই মা'ই বলছেন, "যখন ঠাকুর চলে গেলেন আমারও ইচ্ছে হলো আমিও চলে যাই "_তখন তিনি দেখা দিয়ে বললেন "না ,তুমি থাকো, অনেক কাজ বাকি আছে", শেষে দেখলুম, তাই তো অনেক কাজ বাকি। তিনি বলতেন" কলকাতার লোকগুলো যেন অন্ধকারে পোকার মত কিলবিল করছে; তুমি তাদের দেখবে ",বলরাম বাবুর ভাষায় মা তো ক্ষমা রূপা তপস্বিনী।
"দয়া যার শরীরে নেই সে কি মানুষ, সে তো পশু !আমি কখনো কখনো দয়ায় আত্মহারা হয়ে যাই, ভুলে যাই আমি কে?" মা নিজেই শরৎ মহারাজের কাছে একথা স্বীকার করেছেন।
তাইতো এই করুণা ধারায় আমাদের আসতেই হবে। আমাদের মা আধ্যাত্মিক শক্তির একটি বিশাল আঁধার ,যদিও বাইরে গভীর সমুদ্রের মতো শান্ত- প্রশান্ত । তাঁর আবির্ভাব ভারতের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করেছে ।যে আদর্শগুলি তিনি তাঁর জীবন চর্চায় রূপায়িত করেছেন এবং অপরকে তাঁর আচরণে অনুপ্রাণিত করেছেন, তা শুধুমাত্র ভারতবর্ষের নারীর বন্ধন মুক্তির প্রচেষ্টাকেই আধ্যাত্ম্য রসে সঞ্জীবিত করে না; সমগ্র পৃথিবীর নারী জাতিকে তা প্রভাবিত ক'রে তাদের হৃদয় ও মানষ লোকে অনুপ্রবিষ্ট করে।
স্বামীজি এভাবেই মায়ের করুণা ধারাকে বর্ণিত করেছেন প্রতিটি ছত্রে ছত্রে ।প্রতিটি প্রাণীর জন্যই ছিল মায়ের অন্তহীন স্নেহ ব্যাকুলতা। মানুষের মাপে তাকে মাপা যায় না। দেবমাতা ওরফে মিস গ্লেন একবার এক কথিকাতে লিখেছেন ,"তার মনে যে মুহূর্তে মাকে একটু সেবা করার ইচ্ছা হয়েছে তৎক্ষণাৎ 'অন্তর্যামিনী মা' তাকে কাছে ডেকে একটু সেবাধিকার দিয়েছেন ।" যারা শ্রী শ্রী মায়ের দুর্লভ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা নিশ্চয়ই জেনেছেন।
ধর্ম কত মধুর, কত স্বাভাবিক, কতই না আনন্দময় ___সমগ্র মানব জীবনে ; তাঁরা এও অনুভব করেছেন, শুচিতা ও আধ্যাত্মিকতা হলো প্রত্যক্ষ বাস্তবতা, কল্পনা নয়, মায়ের পবিত্রতা যেন শ্বাসে প্রশ্বাসে ধরা দিত। মা ঈশ্বর অনুভূতিতে নিত্য স্হিতা ,করুণাময় প্রেমে তিনি যে কোন জীবের কাছেই অবারিত দ্বার।
স্বামী নিখিলানন্দজীর ভাষায় -----
" ভারতীয় নারী ও বিদেশিনীদের জীবন চর্যা, ধ্যান ধারণায় যথেষ্ট পার্থক্য আছে, ধর্মীয় ঐতিহ্য ভিন্ন রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতি ও পৃথক। তা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য নারীরা আশ্চর্যভাবে মায়ের জীবন মাহাত্ম্য ও মাধুর্য কি গভীরভাবে উপলব্ধি শুধু নয় ,তাতে একাম্ত হয়ে নিজের সাথে অনুরণণ করতে পারছে এবং জীবনাদর্শ কে অত্যন্ত সমাদরে গ্রহণ করছে ।এটা প্রতি মুহূর্তেই আমাদের শিক্ষণীয় বিষয়।
তাইতো মা কোন একটি দেশের বা জাতির ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যেই আবদ্ধ ছিলেন না। পরিগ্রহণ ও স্বভাবজাত মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহারে তাঁর স্থির চরিত্রটি কোন কালের নিরিখেই বিচার্য্য নয়।
শ্রী শ্রী মা আমাদের জীবনে বহতা নদী ,শুকিয়ে যাওয়া সরোবরের পালতোলা নৌকা; দেশ ও কালের কৃত্রিম সীমানাকে অনায়াসে অতিক্রম করে যিনি অনন্ত সত্তায় সদা সচেতন ভাবে দন্ডায়মান। তাকে কিন্তু কখনোই একটা যুগের পালয়িত্রী বলা চলে না।
অভেদা নন্দজীর ভাষায়____
মা নরদেহে অবতীর্ণা ব্রহ্মশক্তি,
মা সৈব সর্বেশ্বরেশ্বরী অর্থাৎ ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও শিবের নিয়ন্ত্রী,
আর শ্রী শ্রী ঠাকুরের ভাষায় ,
" অনন্ত রাধার মায়া
কহনে না যায়
কোটি রাম কোটি কৃষ্ণ
হয় যার রয়"।
প্রজাতন্ত্র দিবস পালন হলেও বিপ্লবীরা যোগ্য সম্মান পায়নি আজও?
বটু কৃষ্ণ হালদার
জানুয়ারি মাস একদিকে ভারতবর্ষের কাছে অত্যন্ত গৌরবের কারণ এই মাসেই বাংলা মায়ের কোল উজ্জ্বল করে এসেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।যাঁরা শুধুমাত্র ভারত বর্ষ নয় সমগ্র বিশ্বজুড়ে আলোচিত। আবার অন্যদিকে এই জানুয়ারি মাস অত্যন্ত বিষাদের কারণ এই মাসেই বহু বিপ্লবীদের ফাঁসি হয়েছিল।
স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে পালিত হয়ে আসছে প্রজাতন্ত্র দিবস।কিন্তু এই দেশের জনগণ কে যাঁরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা প্রদান করে গেলেন তাঁরা কি যোগ্য সন্মান পেয়েছে?কারণ এই জানুয়ারি মাসেই বহু বিপ্লবীরা ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জায়গায় গেয়েছেন।অনেক বিপ্লবীদের নিষ্ঠুর ভাবেই হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মহান বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্য সেন ও তারকেশ্ব র দত্ত।এদের কি মনে রেখেছি আমরা?
স্বাধীন,গণতান্ত্রিক,ধর্মনিরপে ক্ষ ভারতে ২৬ শে জানুয়ারী দিন টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসাবে পালন করা হয়।দেশের রাষ্ট্রবাদী জনগণ হিসেবে এই দিন টি প্রত্যেক ভারত বাসীর পালন করা উচিত।এই দিন পালনের জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুতি নেন সেনা বাহিনীর জোওয়ানরা।প্রতিটি ভারতবাসীর জন্যই ২৬ জানুয়ারি দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।কুচকাওয়াজ, বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।ভারতকে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত করা কোনও সহজ কাজ ছিল না। দেশের বীর সন্তান, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ, বলিদানের ফসল স্বাধীনতা। ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এই দিনটি সম্পূর্ণ রূপে সংবিধান স্বীকৃত। জেনে নেওয়া দরকার এই দিনটির গুরুত্ব কী।
আমরা জানি ১৯৪৭ সালের আগে ভারত বর্ষ ছিল ব্রিটিশদের অধীনে।সমগ্র ভারত বাসী ছিল তাদের গোলাম। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্রিটিশদের দোষ দিলে চলবে না। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, মুষ্টিমেয় কিছু ব্রিটিশরা ব্যবসা করতে এসে কিভাবে সমগ্র ভারতবর্ষে প্রায় ২০০ বছর রাজত্ব করে গেল? ভুলে গেলে চলবে না সেই সময় একশ্রেণীর জনগণ শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে ব্রিটিশদের জামাই আদর করে ভারতবর্ষে শাসন ও শোষণ করতে সাহায্য করেছিল।অর্থ, সম্পদের সাথে সাথে রায় বাহাদুর খেতাব অর্জন করেছিল। তাঁরা চেয়েছিল ব্রিটিশরা রাজত্ব করুক, আমরা তো বেশ আছি পায়ের উপর পা তুলে।অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার মজাটাই ছিল একেবারে ই অন্যরকম।সার্থকেন্দ্রিক কিছু মানুষের লোভ লালসা ভারতবর্ষের ভাগ্য লক্ষী অচিরেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। আর দেশমাতার অপমান লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরেই অপর শ্রেণীর নিঃস্বার্থ সন্তানরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে দেশকে স্বাধীন করার সংকল্প নিয়েছিল। স্বাধীনতা আনতে গিয়ে ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী,বাঘাযতীন,বিনয়,বাদল,দীনে শ,মাস্টারদা সূর্যসেনদের ফাঁসি কাঠে ঝুলতে হয়েছিল।কেউবা নির্দ্বিধায় ব্রিটিশদের হাতে নিজেদেরকে সমর্পণ করবে না বলে মুখে তুলে নিয়েছিলেন পটাশিয়াম সায়ানাইড।তরুণদের তাজা তাজা রক্তে দেশের মাটি লাল হয়ে উঠেছিল। জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড এর মত অমানবিক,বর্বর হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ফাঁসির নির্ধারিত সময়ের আগেই ভগৎ সিংদের ফাঁসি কাঠে ঝোলানো হয়েছিল। চন্দ্রশেখর আজাদদের মত বিপ্লবীদের ধরতে ব্রিটিশদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।তাদেরকে সন্ত্রাসবাদি উগ্রবাদী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।বহু বিপ্লবী দ্বীপে নির্বাসিত হয়েছিলেন।আবার অনেকেই সুখ স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে দেশ ছাড়া হয়েছিলেন। জেলে বন্দিদের প্রতি চলতো অকথ্য অত্যাচার।সবার ভাগ্যে গান্ধীজীর মত,জেলের মধ্যে দুটো কামরা বরাদ্দ থাকত না,দুধ,ফলমূল, ঘি দেওয়া হত না, বা জহরলাল নেহেরুর মত জেলে থেকে আগুনে ঝলসানো মাংস বাটার দিয়ে দেওয়া হত না।ফলের জুসও জুটত না। বহু বিপ্লবীদের দিয়ে খাটনির কাজ করানো হতো, আর খাবার দেওয়া হতো খুবই নিম্নমানের, কখনো বা জুটত বাসি খাবার।
সাঁওতাল, সিপাহী, নীল,কৃষক বিদ্রোহ গুলোকে প্রতিহত করতে অকাতরে লাঠিচার্জ করতেন এমনকি কখনো কখনো নির্দ্বিধায় গুলি চালিয়েছেন।তাতে বহু আন্দোলনকারী মারা গিয়েছেন,আহত হয়েছেন। শুধুমাত্র পুরুষরা নন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন নারীরা। বাংলার প্রথম রাজবন্দী ননীবালা দেবী,প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বীণা দাস,মাতঙ্গিনী হাজরারা অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেছেন।কেউবা গুলি খেয়েছেন।তাই স্বাধীনতা কিন্তু অহিংসা, সততা কিংবা চরকা কেটে আসেনি।স্বাধীনতা হল বহু বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ এর ফলাফল।
স্বাধীনতা লাভের পর,ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ নাম হল সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র ভারত।ভারতে সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয় ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারত শাসনের জন্য ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে।এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস।১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদ সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।২৬ জানুয়ারি দিনটিকে মহাত্মা গান্ধী নাম দিয়েছিলেন, 'স্বতন্ত্রতা সংকল্প দিবস'। ১৯২৯ সালের বছর শেষে জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে পূর্ণ স্বরাজ আনার শপথ নেওয়া হয় ।এরপরেই ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।পরে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে ভারত এবং ওই দিনটি স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা পায়।স্বাধীনতা দিবসের প্রায় আড়াই বছর পর তৈরি হয়েছিল দেশের সংবিধান। ১৯৪৭ সালে ড. বি আর আম্বেডকরের নেতৃত্বে গঠিত হয় খসড়া কমিটি। ১৯৪৭ সালে ৪ নভেম্বর ড: বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বাধীন খসড়া কমিটি প্রথম ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দিয়েছিল। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। এই সূত্র ধরেই ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
দেশের এক শ্রেণীর নিঃস্বার্থ সন্তানরা নিজেদের জীবন দিয়ে ভারতবর্ষের ভাগ্যলিপি রচনা করেছিলেন।অথচ স্বাধীনতা লাভের পর বহু বিপ্লবীরা যথাযথ মর্যাদা পায় এই ভারতবর্ষে। বর্তমানে চোরেদের নাম ইতিহাসের পাতায় উঠলেও,বহু বিপ্লবীদের আত্মকাহিনী ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়নি।তৎকালীন কিছু রাজনৈতিক নেতাদের আঙ্গুলি হেলনে বহু বিপ্লবীদের নাম ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পরে দেশের সরকার বিপ্লবীদের খোঁজখবর নেননি,পায় নি,ন্যূনতম সরকারি ভাতা। কেউবা হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন কেউবা ভিক্ষা করতে করতে অনেক অভিমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। যে দেশে নেতাজিদের মতো মহান দেশপ্রেমিকরা স্বাধীনতা আনতে গিয়ে জীবনের অমূল্য সময় নষ্ট করেছেন,সেই দেশে বিপ্লবীদের মর্যাদা না দেওয়া হলেও বহিরাগত রোহিঙ্গা,সন্ত্রাসবাদিদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।রাজ্যের লাগাম উঠছে অযোগ্য নেতাদের হাতে।
যার কারণে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে ভারত মূর্দাবাদ স্লোগান দেয়।এর থেকে চরম লজ্জার বোধ হয় আর কিছুই নয়।যাঁরা স্বপ্ন দেখতেন:_ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা,অথচ মৃত্যুর পরে এই দেশের মাটিতে তাদের ঠাঁই হয়নি।ইতিহাসের পাতায় বহু বিপ্লবীদের বিজয় গাঁথা স্থান পায় নি,বিপ্লবীরা ভিক্ষা করেছেন সেই দেশে কোটি টাকা খরচ করে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
ইতিহাস হল মানব সভ্যতার কাছে জীবন্ত দলিল।প্রাচীন ইতিহাস বলছে ভারত বর্ষ ছিল প্রাচুর্য্য, ঐশ্বর্য,অর্থ, ধন সম্পদ খনিজ সম্পদ, কৃষিজ সম্প দে পরিপূর্ন এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় দেশ। এই দেশের ধন-সম্পদের লোভে একে একে বিভিন্ন বৈদেশিকশক্তির আগমন ঘটেছে। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম বর্বর আরবদের আগমন ঘটেছিল। শুরু হয়েছিল লুটপাটের খেলা।সেই সংবাদ কানে কানে পৌঁছে যায় বহু দেশের লুটেরাদের কানে। এরপর একে একে শক, হুন,পাঠান,মুঘল, তুর্কি, তুঘলঘ, খলজি সহ বিভিন্ন ডাকাত দল ভারতবর্ষের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে লুটপাট করেছিল দেশের অর্থ সম্পদ। শুধু তাই নয় ফরাসির ডাচ বণিকদের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে উপস্থিত হয় ইংরেজরা। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে থেকে শুরু করে প্রায় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই ভারতবর্ষের অর্থ বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে মজবুত করেছিল।
ভারতবর্ষের জিনিস ধনসম্পদে ভারতীয়দের অধিকার ছিল সেই সম্পদ ব্রিটিশদের সন্তানদের মুখে সোনার চামচ তুলে দিলো। আর এই ভারতের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করছে মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে। এর গায়ে কি শুধুমাত্র বৈদেশিক শক্তিদের? ভারতবর্ষে কি তৎকালীন সময়ে কোন শক্তিশালী বংশধর ছিল না তা আটকানোর জন্য? নিশ্চয়ই ছিল কিন্তু তারা পারেনি শুধুমাত্র ভারতীয়দের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য। অথচ সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে একজন মানুষ কলঙ্কিত চরিত্র অপবাদ নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে। তার নাম হলো মীরজাফর। অথচ এই ভারতবর্ষে হাজার হাজার মীরজাফর ছিল। ব্রিটিশের সময় বহু স্বার্থপর রাজনৈতিক চরিত্রের ব্যক্তিত্ব ছিলেন যারা শুধুমাত্র নিজেদের কথা এবং নিজেদের পরিবারের কথা ভাবতেন। তার কারণে ব্রিটিশদের জামাই আদর করে এই দেশে ধন সম্পদ লুটপাট করতে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিলেন। তার বিনিময়ে সে সমস্ত রাজনৈতিক মির্জাফররা পেতেন অর্থ আর খেতাব। ভেবে দেখেছেন কেউ স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল দেশে ও বিশ্বাসঘাতক বনাম নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমীদের আত্ম বলিদান। তৎকালীন এক শ্রেণীর রাজনৈতিক মীরজাফরদের সহযোগিতা ও যোগ্য সঙ্গ না থাকলে কখনোই ব্রিটিশরা এ দেশে তাদের নোঙ্গর গাড়তে পারতেন না।
ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে লক্ষ লক্ষ দেশপ্রেমিক মৃত্যু কে স্বেচ্ছায় আত্মবরণ করেছিল তার একমাত্র কারণ ছিল দেশের মানুষ যাতে স্বাধীন মুক্ত সূর্য দেখতে পায়। দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ যাতে উজ্জ্বল হয়। অথচ স্বাধীনতার পরে আমরা দেশ সেবার নামে দেশীয় লুটেরাদের লুটপাটের খেলা দেখে আসছি এই যাবৎ। সেই সঙ্গে দেখছি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার।দেশীয় রাজনৈতিক নেতারা বংশ পরাক্রমে যুগের পর যুগ দেশের জনসম্পদ দুই হাত দিয়ে লুটছে। জনগণের টাকায় দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করছে সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে আর ব্যাংকে বেড়ে চলেছে শূন্যের পর শূন্যের অংক। আর রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে দেশের আইন ব্যবস্থাকে পকেটে পড়ে সাহায্যে শেখের মত দাগি ক্রিমিনালরা অপরাধ করেও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।আর যারা ভোট দিয়ে ভাবেন এই বুঝি আমাদের ভাগ্যের আকাশে নতুন সূর্যের উদয় হবে তারা দেশের উন্নয়নের স্বার্থে হাড়হিম করা পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করেও কর পরিষেবা দিয়ে যান তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন আর দেশের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়। রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য টাকা কোটি কোটি অপচয় করা হচ্ছে সেই সঙ্গে যথেচ্ছ সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। তাদের সন্তান পরিবারের লোকজনেরা মহাসম্ভব ভোগ করেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অযোগ্য ব্যক্তিরা দখল করে নেয়। দেশের টাকায় চলছে মহাভুরিভোজ।
অথচ এই দেশ দিন দিন দারিদ্র্যের চরম সীমায় পৌঁছাচ্ছে। বেড়ে চলেছে শিশু নারীর শ্রমিকের সংখ্যা। লকডাউনের পর থেকে চরণে পৌঁছেছে কর্মহীনদের সংখ্যা।শিক্ষিত বেকার যুবকদের হাহাকার বেড়ে চলেছে। শিক্ষিত যুবকরা সঠিক কর্মের অভাবে মানসিক বিকার গ্রস্ত হয়ে পড়ছে।নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।দুর্নীতির পথ বেছে নিচ্ছে হাতে তুলে নিচ্ছে বন্দুক,অস্ত্র,বোমা,গুলি। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রীর রাজনৈতিক নেতারা তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে দুর্নীতির পথে। সস্তা তারে শিক্ষিত বেকারদের জীবন বিকিয়ে যাচ্ছে। আর যারা নিজেদের বিবেককে বিক্রি করতে চায় না তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে চলছে জমি দখলদারি,উচ্ছেদ। সিন্ডিকেট ব্যবসা রমরমে চলছে। সে সমস্ত দখলদারি জমিতে বড় বড় বিল্ডিং ফ্ল্যাট বানিয়ে ব্যবসা চলছে। আর তাতে বেড়েই চলেছে ফুটপাত বাসি, নিরন্ন, আশ্রয়হীন, বিবস্ত্র মানুষের সংখ্যা। দেশের উলঙ্গ শিশুরা কনকনে ঠান্ডায় মাঝ রাতে চন্দ্র অভিযান সাফল্যের আলো তে নিজেদের শরীর গরম করতে চায়। ঠিক যেন গোপাল ভাঁড়ের তালগাছে র উপরে ভাতের হাড়ি বেঁধে নিচে আগুন জ্বালিয়ে ভাত রান্না করার গল্পের মত করুন দৃশ্য ধরা পড়ে। তিলোত্তমা কলকাতার,শিয়ালদা হাওড়া সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কনকনে ঠান্ডায় মাঝ রাতে গরম কাপড় জামা পরে হেঁটে পায়চারি করে দেখলেই দেশের চরম দুর্দশার মানচিত্রটা আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ফুটপাত, ঝুপড়ি, বস্তি এলাকাগুলোতে লক্ষ লক্ষ বয়স্ক বৃদ্ধ বাবা মায়েরা ছোট ছোট শিশুরা অভুক্ত পেটে স্বাধীন খোলা আকাশের নিচে প্লাস্টিক গায়ে জড়িয়ে কীভাবে ঠান্ডায় কাঁপছে। কোটি কোটি টাকা অপচয় করে জি-টুয়েন্টি সম্মেলন, স্বাধীনতা, প্রজাতন্ত্র দিবস পালনে মহা ভুরিভোজ হয় সেই দেশের অর্ধেকেরও বেশি জনগণ অনাহারে আধপেটা খেয়ে ওস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাত কাটায়। অথচ এসব নিয়ে যাদের ভাবার কথা তারা নিশ্চিন্তে ঘুমায় মহা অট্টালিকার আড়ম্বরে। এদেশে ছোট ছোট শিশুদের ভবিষ্যৎ চুরির সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুখের অন্ন ও চুরি যায় এর থেকে লজ্জার কিছু হতে পারে? দেশের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত চিন্তা ছেড়ে এতটা উঁচুতে তাদের বিবেক বসবাস করে যে তাতে কর্মহীন শিক্ষিত,বেকার,অনাহারে আধপেটা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা বিকলাঙ্গ শিশুদের কান্না হাহাকার,চিৎকার, তাদের কানে পৌঁছায় না। আর এইসব দেখার জন্যই কি নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিকা রা অকাতরে তাঁদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে স্বাধীনতা লাভের জন্য? এদেশে ভোট আসে,কালের নিয়মে পালাবদলের খেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশের লাগাম হাতে নেয়।কোটি কোটি টাকা খরচ হয় রাজনৈতিক নির্বাচনে। তাতে একশ্রেণীর গুন্ডাবাজ খুনি দাগি আসামে অযোগ্য বর্বররা নেতা থেকে মন্ত্রী হয়। তাদের কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স হয়। কুঁড়েঘর অট্টালিকায় পরিণত হয়। আর জীবন বলিদান দিতে হয় সাধারণ নিরীহ জনগণকে। সেই সমস্ত অযোগ্য নেতা-মন্ত্রী রা সাধারণ জনগণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বলা ভালো তাদেরকে ঠকিয়ে নিজেদের সন্তানদের মুখে তুলে দেয় রাজভোগ,পোলাও,বিরিয়ানি দুধের গ্লাস। গুন্ডা মস্তান খুনি দাগে আসামিরা যখন নেতা মন্ত্রী হয়ে যায় তাদের সন্তানরা নামিদামি স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়। আর ভোটদাতাদের সন্তানরা নামমাত্র স্কুলেও পড়ার সুযোগ পায় না।
এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রীদের হায়নার থাবা থেকে বাঁচতে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে:- "হে ব্রিটিশ তোমরা ফিরে এসো/ পরাধীনতা আমার জন্মগত অধিকার/ এদেশের লাগাম আবার হাতে তুলে নাও"।
No comments:
Post a Comment