Sunday, February 2, 2025


 


কবিতা 



সম্পর্কের স্বরবর্ণ

চৌধুরী নাজির হোসেন


ভালোবেসে রেখে গেছ নরম রোদের মতো
দু'একটি স্পর্শ, স্মিথ হাসি, অনশ্বর চিন্তারঙ
সমন্বয়ের দেরাজে ভাঁজ করা রুমালের পরিপাটি

সেসব পথে আমরা হাঁটিনি বলেই
গোলাপের গন্ধে রিরংসা ফুটে ওঠে, 
ভোরের আলোয় অমলতা মরে যায়, 
কুয়াশা কফিনে মুখ ঢেকে সুকুমার পরিচয়

মৃত আলো খুঁটে খুঁটে পথ চলি
ধুলো সরিয়ে সরিয়ে দু'একটি স্পর্শ খুঁজি

আজ সব অন্ধকার খুলে
রুমালের ভাঁজে সম্পর্কের স্বরবর্ণ পড়ব আমি। 



গোলাপি সন্ধ্যে 
আকাশলীনা ঢোল 

সেই সন্ধ্যেটারও রঙ ছিল হালকা গোলাপি,
যে সন্ধ্যেয় বিষাদ ঘনিয়েছিল 
রক্তিম গগনের পশ্চিম প্রান্তে,
যে সন্ধ্যেয় প্রথম বর্ষার মেঘেরা 
ধরণীকে জানিয়েছিল অভিবাদন,
যে সন্ধ্যেয় সাগরের বুকে 
জেগে উঠেছিল এক তীব্র অভিমান 
আর যে অভিমানের বীজ বপন 
করেছিল সেদিনের অস্তমিত সূর্য -
সেই সন্ধ্যেটাও ছিল গোলাপি।

আজকের সন্ধ্যের রঙটাও হালকা গোলাপি,
বর্ষার আর্দ্রতার বদলে এখন বাতাসে 
মিশেছে শীতের রুক্ষতা -
আকাশের বিষণ্ণতা এখন নাগরিক সভ্যতায়,
তার জীবন -রেলের চাকার শব্দ 
প্রতিনিয়ত আঘাত করে চলেছে 
নতুন দিনের অবাক করা সূর্যটাকে,
আরও একটা গোলাপি রঙের, আরও একটা 
হালকা গোলাপি রঙের সন্ধ্যে 
ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য -
সেই সন্ধ্যের চোখটা হবে পিঙ্গল,
ঠোঁটটা হবে গাঢ় বাদামি,
আর গাত্রবর্ণে থাকবে 
পৌরাণিক গোলাপি রঙের ছটা।


চলো প্রশ্ন করতে শিখি 

উৎপলেন্দু পাল 


অনেকদিন হলো 
রাজাকে প্রশ্ন করেনি কেউ , 
আসলে হয়তো 
প্রশ্ন করার সাহস হয়নি কারো -- 
কিংবা ধূর্ত রাজা 
প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি একেবারেই , 

কেউ প্রশ্ন করার আগেই 
তার সামনে ফেলে দিয়েছেন 
এক জটিল অসমাধানযোগ‍্য ধাঁধা , 
প্রশ্নকর্তা সেই ধাঁধার গোলকে 
কলুর বলদের মতো পাক খেতে খেতে 
হারিয়ে ফেলেছেন তার আসল প্রশ্নটাই , 

আর সেই সুযোগে 
মহারাজ তরতর করে বেয়ে উঠেছেন সিঁড়ি 
উঁচু , আরো উঁচু , 
এক্কেবারে সবার নাগালের বাইরে 
এক অনতিক্রম‍্য দূরত্বে 
চূড়ান্ত ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসনে , 

আর তার পারিষদেরা 
তার চারিদিকে গড়ে তুলেছেন 
এক কৃত্রিম অলৌকিক রংধনুর ছটা 
গড়ে তুলেছেন এক অতি পরাবাস্তব মূর্তি 
মানুষ আর ঈশ্বরের সংমিশ্রণে -- 
যা ধাঁধিয়ে দেয় 
তোমার আমার সকল প্রজার চর্মচক্ষু -- 
আর তিনি রাজদন্ড হাতে 
শাসন করেন তোমাকে আমাকে সক্কলকে । 

হয়তো তুমি বলবে 
প্রশ্নটা শুধু রাজাকেই কেন ? 
অন‍্য কাউকেই বা কেন প্রশ্ন নয় ? 
আমি বলবো , 
প্রশ্ন যদি করতেই হয় 
তবে তা করতে হবে সর্বক্ষমতাবানকেই , 
দূর্বলকে প্রশ্ন করে কি লাভ ? 
আর রাজাই যেহেতু সর্বক্ষমতাবান 
সুতরাং প্রশ্নটাও করবো শুধুমাত্র রাজাকেই , 

হয়তো তুমি বলবে , 
আমি বা তুমিই শুধু কেন ? 
মহারাজের শাসনকালে 
প্রশ্নতো আর কম জমেনি ! 
সবার মনেই নিশ্চয়ই জমে আছে প্রশ্নমালা -- 
উত্তরহীন সেসব প্রশ্নে জেরবার এ জীবন , 
তবে কেউ প্রশ্ন করছেনা কেন ? 
সমাজে তো প্রশ্ন করার অনেকেই আছেন 
প্রশ্ন নাহয় তারাই করুক ? 

কিন্তু তুমি জেনে রেখো 
যাদের প্রশ্ন করবার কথা ছিল 
তারা কেউই কথা রাখেনি , 
তাদের কেউ কেউ 
বিকিয়ে গেছেন ক্ষমতা বিকিকিনির হাটে -- 
সুবিধাবাদীরা গলায় মৃদঙ্গ ঝুলিয়ে 
দিনরাত গেয়ে চলেছেন রাজধূন , 
আর যারা প্রশ্ন করবে বলে এগিয়ে এসেছিলো  
তারা ফেঁসে গেছেন চক্রব‍্যুহের অন্দরে 
আর বেরোবার পথ পাননি , 
তবুও যারা দূঃসাহসে প্রশ্ন করে বসেছিল -- 
রাজরোষে কেটে গেছে তাদের উদ্ধত শির ।  

তাই আজ সময় দিয়েছে ডাক -- 
চলো আজ আমরাই প্রশ্ন করি , 
চলো শিখি কিভাবে 
মেরুদন্ড সোজা রেখে 
রাজশক্তির রক্তচক্ষুর সামনে দাঁড়িয়ে 
কঠিনতম প্রশ্ন করতে হয় । 




ডাক
গৌতম সাহা 

কারা ডাকে 
এই বৃষ্টির লাবণ্যে 
সন্ধ্যানামা এই ঝিম-ঝিম তারার মিছিলে 
আয় চলে আয় 
আমি কি তবে তাদের কাছে নেই 
তারা কি আমাকে হারিয়ে 
একা একা জ্যোৎস্নায় বসে আছে 
শুধু এক তরঙ্গ থেকে আরেক তরঙ্গে
এই ডাক পৌঁছে যায় 

আমি কি বধির ছিলাম এতদিন 
দিনের ভেতর এই আলো এসে 
দিনকেও ম্লান করে দিলো


প্রকৃতি ও জীবন 

     রীনা মজুমদার 

উঠোনেতে যাই
  সোঁদা গন্ধের খোঁজে
জঙ্গলেতে ধাঁই 
  বুনো গন্ধের টানে 

গাছ কেটে নগর গড়ছি
লিখছি হাততালির উপন্যাস 
অরণ্যে সবুজের হাহাকার 
আমার চোখে বৃষ্টি বারোমাস 

গাছের সাথে কথা বলে নিঃশ্বাস 
পাতার ঘরে অক্সিজেন যোগাই
 মুক্ত বাতাসে মনপ্রাণ ভরাই 
   ও সব এখন ইতিহাস 
তোমার প্রেমে অশনি সংকেত 
তোমার শাখায় আনন্দ-ক্ষত
প্রকৃতির চোখেও বৃষ্টি বারোমাস 

 প্রকৃতির ছায়ায় জীবন-উপন্যাস 
 জীবনের কাছে প্রকৃতি-বারোমাস...




অসমাপ্ত
অর্পিতা মুখার্জী

সময়ের সাথে জীবনের ফাঁকা বৃত্তটা হয় পূর্ণ,
তবু অধরা কিছু প্রান্তিক মন চিরকাল থাকে শূন‍্য।
কেউ থেকে যায় কারওর একটা অন‍্য ভালো বাসা হয়ে,
আবার কারওর মাঝে কেউ চিরদিন থাকে অনন‍্য একটা ভালোবাসা হয়ে।
শ্রদ্ধার অর্ঘ‍্য দিয়ে যে মন ভালোবাসার পূজো করতে জানে,
পরিশ্রম, ত‍্যাগ ও সাধনার পথেই খুঁজে যায় শুধু জীবনের মানে।
ভীষণ ভীড়েও একলা হতে শেখে যখন ছোট্ট একটা আলো ভরা মন,
শত আঘাতও ভোলাতে পারে না প্রিয় কিছু কথা আর প্রিয় কিছু ক্ষণ।
নির্জনতার শূন‍্য প্রহর সঙ্গী অপেক্ষায় ভেজা দু'নয়ন...
বাকী থেকে যাওয়া মুহুর্তের কাছে এক জীবন-স্মৃতির সমর্পণ


শীত ভ্রমণ 

প্রাণেশ পাল 


হিমের নিশিরাত মিশে যায়
হিম ভোরে শিশির ঘাসে --------
বিন্দু বিন্দু শিশিরে জীবনের ঘাম 
সোনা রোদে সময়ের জলছবি !

হিমের চাদরে শীতঘুমে ভালবাসা
হৃদয়ে বিষন্ন ঝরাপাতার শিহরণ, 
প্রকৃতি জড়ানো হলুদ চাদরে --------
উদ্বেলিত মন ভেসে যায় শীত ভ্রমণে !

শীতের রঙিন হাট,রঙিন মানুষ,রঙিন ভালবাসা,
ভ্রমণ, বনভোজনে কাঞ্চনরাঙা মন ------
হারিয়ে যায় অনন্ত জীবনের জয়গানে !

বেঁচে থাকার রসদ খুঁজি --------
বাউল,ভাটিয়াল,ভাওয়াইয়া-র সুরে,
পাললিকি ভালবাসার অনিন্দ্য স্মৃতি
হেঁটে বেড়ায় অবেলার বালুতটে !



সোহাগী আদর 

রীতা মোদক 

এখন ঘন কুয়াশা
শীতের বুড়ি আপছা আলোয় 
টুক টুক করে হেঁটে যায়...
 চোখের পাতায় জমে থাকে 
কুয়াশার স্তর।
আমরা কেউ কষ্ট চাই না
তবুও কষ্টরা নেমে আসে
শীতার্ত বৃষ্টির মতো।
কুয়াশা গাঢ় হলে,
কাঁপতে কাঁপতে রাত নেতিয়ে পড়ে।
জানলার ফাঁক দিয়ে এক ফালি চাঁদ দেখা যায় 
ঝিমিয়ে পড়া মাঘের শরীর তখন 
পশমী চাঁদরের সোহাগী আদর চায়।



অজীর্ণ শহরে 

সুনন্দ মন্ডল


আজ আর কোনো চিৎকার নেই

নেই কোনো হুল্লোড়


শুধুই নীরবতা

ক্লান্ত, নিথর যেন শৈশবের ছায়া


সেই গাছটাও নেই,

নেই হাতছানি


শুধুই অজীর্ণ শহরে

ধোঁয়ার গন্ধ

আর মেঘহীন বৃষ্টির দ্যোতনা


স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে প্রশান্তির সুবাস পাওয়া




বার্ধক্য
জুলি আখতরী

একদিন আমারও ভুলে যাওয়ার রোগ হবে।
বারবার একই কথা বলার অভ্যাস হবে।
কথায় কথায় মনখারাপের ঢেউ উঠবে চোখে।
কানে কম শোনা 
চোখে কম দেখা 
পায়ে কম চলা
হাতে কম জোর
 -‌তখন স্বাভাবিক বলে মনে হবে।
ছোটোদের মতো সবাইকে কাছে পেতে ইচ্ছে হবে।
প্রয়োজন ছাড়াই কথা বলতে মন চাইবে।

জানি এসব আমারও হবে।
অথচ আজ যখন আমার সামনে 
অন্য কেউ এভাবে আসে
আমি বিরক্ত হয়।
অভিযোগ করি।
রেগে যায়।
কটু কথা বলি।
কখনও বা করুনা হয়।

কিন্তু বয়সে কারণে এসব খুব স্বাভাবিক।
এ অযাচিত নয়।
অনন্ত পৃথিবীর মধ্যে এ এক অদ্ভূত সত্য।



তুমি আসবে তো?

  মহঃ সানোয়ার 


অগুণতি এতো মিথ্যার ভিড়ে বিশ্বাস জেগে আছে,

আঙিনায় ছড়িয়ে থাকা ডালিম ফুল তোমার স্পর্শ চেনে।

তোমাকে দেখে যে দুপুর বাহানা বানায় অনায়াসে;

আফসোস সে শুধুই ভালোবাসা বোঝে।

যে শৈত্যপ্রবাহকে তোমার নগণ্য মনে হয়,

সে কেবল উষ্ণতা চাই পুরো শরীর জুড়ে।

প্রতিদিন শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে

তোমাকে কাছে পাবার প্রবণতা।

কয়েক হাজার অপেক্ষার ধৈর্য,

কয়েক লক্ষ অনুভূতির অবসান ঘটিয়ে,

এই চেনা শহরের অচেনা কোন রং চটা ঘরে,

তুমি আসবে তো...?




কুয়াশার দুধ সাদা রং 
মজনু মিয়া

উঠেই ভোরে দেখি দূরে
দুধ সাদা রং ভাসে,
গাছ পালাদের ফাঁকে ফাঁকে
কুয়াশারা আসে।

শিশির ফোটা পড়ে রাতে
টুপটাপ টুপটাপ করে,
টিনের ঘরের চালের উপর
সারা রাতই ঝরে।

খুব সকালে উঠি যখন
কাঁপন ধরে হাত,পায়-
ঘাসের ডগায় শিশির জমে
সূর্য আলো চমকায়।

No comments:

Post a Comment