সামার ক্যাম্প
অভিজিৎ সেন
মুহূর্তও অনন্ত হয়ে ওঠে, সীমানাও অসীমকে ছুঁয়ে যায়, যাপিত সময় হয়ে ওঠে জীবনের রসদ, সৌন্দর্য কী করে আকর্ষণের কেন্দ্রবস্তু হয়ে ওঠে জয়ন্তীতে তিনদিনের "সামার ক্যাম্পে" না এলে বুঝতেই পারতাম না কখনো। কোচবিহার থেকে খুব বেশি দূরে নয় কাছেই জয়ন্তী পাহাড়,মাত্র ঘন্টা দুয়েকের পথ। সড়কপথে সহজেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া যায়,আছে রেলস্টেশনও । সেখানের অতিবাহিত করা প্রতিটি মুহূর্ত কতটা রোমহর্ষক,আনন্দদায়ক এবং গতিশীল ছিল শব্দ চিত্রে সেই অনুভূতি ব্যক্ত করা বেশ কঠিন । চিত্রনাট্যের মতো তিন দিনের অনুভূতি এই ক্ষুদ্র জীবনে আমি পূর্বে পায়নি। ২০২৫ এর জুন মাসের তিন থেকে পাঁচ তারিখ,এই তিন দিন তিন রাত আমাদের কাটাতে হয়েছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর অনুশীলনের এবং নিয়মানুবর্তিতার মধ্যদিয়ে । আমরা এখানে শুধু বেড়াতে আসিনি অন্য একটি উদ্দেশ্যে এসেছি। সকাল থেকেই বেশ গরম পড়েছে । নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট স্থানে আমরা জমায়েত হলাম। এরপর অভিভাবক সহ একশত জনের একটি দল নিয়ে ছুটে চললো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাস গাড়িটি। তিনদিনের ঘোরার পাশাপাশি জয়ন্তীতে ক্যারাটের অনুশীলন এবং পরীক্ষা হবে, তাতেই অংশ নিতে এসেছি আমরা। কিছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা এসেছে ব্যারাকপুর থেকে, আবার কেউ উত্তরপ্রদেশ থেকে। ব্যারাকপুর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন রাশিয়ান শিক্ষার্থী ছিল। বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত নানা বয়সের শিক্ষার্থী এবং তাদের শিক্ষকগণ এসেছেন, নিজেদের দীর্ঘ দিনের ক্যারাটের অভিজ্ঞতাকে উপস্থিত করতে। অভিভাবকরা শুধু বেড়াতে যাচ্ছেন না, তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলেছেন কারণ এই ক্যাম্পটির মূল উদ্দেশ্য বাৎসরিক ক্যারাটে পরীক্ষা। সকল শিক্ষার্থী এখানে অংশ নিয়েছে, তবে পরীক্ষা দিয়েছে তারাই যারা আগ্ৰহী এবং সানসি বা শিক্ষক যাদের উপযুক্ত মনে করেছেন । আমি তার মধ্যে একজন। মাত্র ২৫ জন আমাদের ডোজো থেকে সুযোগ পেয়েছি। এইভাবে বিভিন্ন ডোজো থেকে যারা পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পেয়েছে তাদের সংখ্যা একশোর বেশি । এখানে ৫ থেকে শুরু করে ৫০ বছর বয়সি ছাত্রও আছে ।
ক্যারাটের পরীক্ষাকে বলা হয় 'গ্রেডেশন'। অর্থাৎ নতুন বেল্ট পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে হয় শিক্ষকদের সামনে। আমি নিজে একজন ছাত্র। আমি পরীক্ষা দিতেই জয়ন্তীতে "সামার ক্যাম্পে" যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে যোগ দিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা আমার অবশিষ্ট জীবনের চলার পথে আলো দেখিয়ে যাবে। "Discipline and Dedication" এই দুটি শব্দ ক্যারাটের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। যাই হোক আমরা যাত্রা শুরু করলাম আমাদের কোচবিহারের খাগড়াবাড়িতে অবস্থিত বীণাপানি ক্লাব ডোজো থেকে। ডোজো অর্থাৎ যে স্থানে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়। এটাকে ক্যারাটে অনুশীলনের বিদ্যালয় বলা যেতে পারে। যেখানে সানসি অর্থাৎ শিক্ষক আমাদের ক্যারাটে অর্থাৎ খালি হাতে আত্মরক্ষার নানা কৌশল শিখিয়ে থাকেন । পাশাপাশি আমাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তিও কিভাবে বৃদ্ধি পাবে তারও অনুশীলন করান । বিভিন্ন যোগব্যায়াম, দাচি (স্ট্যাঞ্চ) ঝুঁকি(পাঞ্চ),উঁকি (ব্লক) গিরি(কিক) ফাইট ও কাতা( ফর্ম বা প্যাটার্ন) অর্থাৎ পাঞ্চ, কিক, গিরি এবং ব্লকের সম্মিলিত রূপ । যেখানে কাল্পনিকভাবে আমাদের ধরে নিতে হয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করছি, "কাতা" ক্যারাটের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমাদের ক্যারাটের স্টাইলের নাম 'kyokushin' means"The ultimate truth" । ক্যারাটের জন্মদাতা হলেন Gichin Funakoshi এবং Kyokushin ক্যারাটের প্রতিষ্ঠাতা হলেন Sosai Masutatsu Oyama । প্রতিদিন নিয়ম করে তিন থেকে চার ঘণ্টা অনুশীলন করলে তবেই ক্যারাটির মতো সুন্দর ও বলিষ্ঠ শিল্পটির কিছুটা আয়ত্ত করা সম্ভব। ক্যারাটে নিজেকে,অন্যকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ক্যারাটে অনুশীলনের মধ্য দিয়ে সুগঠিত বলবান,শৃঙ্খলা পরায়ণ, প্রগতিশীল সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব । ক্যারাটে প্রশিক্ষিতরা কর্ম জীবনের সকল ক্ষেত্রেই যথেষ্ট সহিষ্ণু, পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল, সাহসী ও সৎ মানসিকতার পরিচয় দিয়ে থাকে। বিপথে পরিচালিত যুবসমাজকে সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম এই শিল্পকলাটি । যা সুন্দর সমাজ গঠনের একটি অন্যতম শর্ত। বছরে একবার "সামার ক্যাম্প" হয়ে থাকে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির মূল্যায়নের জন্য। এমন একটি ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে আমরা চলেছি, গাড়ি চলেছে ছুটে কোচবিহারের খাগড়াবাড়ি হয়ে সোজা উত্তরে আলিপুরের দিকে । পথে জায়গায় জায়গায় অন্যান্য শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের গাড়িতে তুলে নেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকের কাছে একই সাথে এটা একটি শিক্ষনীয় এবং দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের পরম সুযোগ। তাই তাদের উৎসাহ দেখে সত্যি বিস্মিত না হয়ে পারছিলাম না। গাড়ি বানেশ্বর এসে পৌঁছালে ড্রাইভার আচমকা ব্রেক করে থামিয়ে দিল। যাত্রীরা হইচই শুরু করলে ড্রাইভার বলে,'সামনে দেখুন দলবেঁধে মোহনেরা রাস্তা পার হচ্ছে' সত্যি এটা কখনো দেখিনি। শুনেছি অনেক। এমনকি রাস্তার ধারে সাইনবোর্ডে লেখা আছে। "এখানে গাড়ি ধীরে চালান"। তার কারণ মোহনেরা বা কচ্ছপেরা এভাবেই যাতায়াত করে। একটু একটু করে উত্তরের পাহাড়ি সবুজ অরণ্যের কোমল ছোঁয়া আমাকে অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে। অদ্ভুত এক আবেশের মধ্যে আমি ধীরে ধীরে হারিয়ে চলেছি । গাড়ির জানালা দিয়ে প্রকৃতির অনাবিল অখন্ড সৌন্দর্যের প্রাণরস নিজের শ্বাসবায়ুর মধ্যে যতটা সম্ভব পূর্ণ করে নিচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে রাস্তার দু'ধারে বৃক্ষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘন সবুজ অজস্র পত্ররাশি পথের দু'ধারে অদ্ভুত এক মায়াঞ্জন রচনা করে রেখেছে । তার উপরে পরিষ্কার নীল আকাশ। দূর থেকে মেঘের রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। ঘন নীল পাহাড়। সেই পাহাড়ের টানেই আমরা ছুটে চলেছি। কিছুক্ষণ পর পৌঁছে গেলাম কালজানি নদীর সেঁতুর কাছে । গাড়িটা এখানে এসে দাঁড়ালো। মিনিট পাঁচেক।
আমি গাড়ি থেকে নেমে এলাম। কালজানি নদীর নির্মল শান্ত জলপ্রবাহ সুদূর থেকে শান্ত গতিতে রহস্যে মোরা মোহনার দিকে চলেছে নিরন্তর ছলাত্ ছলাত্ ধ্বনি তুলে । সমগ্র নদীকে আমরা চাক্ষুস করতে পারি না, নদীর মাঝপথের সাক্ষী হয়ে থাকি মাত্র, মানুষ তার সংক্ষিপ্ত জীবনকে নদীর প্রবাহের মধ্যেই বারে বারে তাই যেন খুঁজে চলে আজীবন । মানুষের জীবন কোন অজানা উৎস থেকে শুরু হয়েছে এবং আবহমান কাল ধরে বয়ে চলেছে আর এক অনন্ত রহস্যের দিকে। নদীর সাথে জীবনের সাদৃশ্য এখানেই, তাইতো নদী এবং তার প্রবাহ মানুষের জীবনের দোসর । নদীর তরঙ্গের মতো জীবন যাপনের সময়-রূপ তরঙ্গ-মালা কত যে স্মৃতি নিয়ে ভেসে যায়, তা কতোটা আনন্দের, কতোটা ভয়ের,কতোটা বেদনার, কতোটা অপ্রাপ্তির সব মিলিয়েই আমাদের জীবন। নদীর উৎস, নদীর উচ্চ, মধ্য, ও নিম্ন অববাহিকায় বয়ে যাওয়া, নদীর বাঁক নেওয়া, গ্রীষ্মে শুকিয়ে যাওয়া, বর্ষায় যৌবন ফিরে পাওয়া, শরতে, শীতে ধীর শান্ত গতিবেগে বয়ে যাওয়া, সাদা কাশে দুইতীর ভূমি ঢেকে থাকা, আবার কোন নদী গতি হারিয়ে মজা নদীতে পরিণত হওয়া, ফল্গুধারায় নদীর বয়ে যাওয়া, নদীর জলে ভেসে যাওয়া নৌকা ও মাঝি, নদীর পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া একতারা হাতে বাউল, দোতারায় গাইতে গাইতে চলে যাওয়া কোন অজানা এক গিদাল, নদীর ঘাট, প্রতিমা নিরঞ্জনের ঘাট, আবার কোথাও গড়ে ওঠা মন্দির, আবার কোথাও শ্মশান সব মিলিয়ে নদী আর জীবন এক ও অভিন্ন--সবই যেন মানব জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত...... আমাদের জীবন এমনই সুখে-দুখে চড়াই উৎরাই ধরে এগিয়ে চলা জীবন-- পৃথিবীর যেকোনো নদী এই সত্যটাই আমাদের সামনে প্রতি মুহূর্তে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। তাই নদী চিরকালই মানুষের চৈতন্য প্রবাহে,অবচেতনে জীবন্ত সত্তা হয়েই বেঁচে থাকবে আবহমানকাল ধরে । নদীর এই চলমানতার সঙ্গে জীবন-স্পন্দনের সুতো সর্বদাই যেন বাঁধা। বর্ষাকালে এই কালজানি নদী কী বিকট রূপ ধারণ করে তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না ! নদীর কালগ্রাসে সব ধ্বংস হয়ে যায় আশেপাশের জমি,বাড়ি এবং গ্রামের পর গ্রাম । আবার গাড়িটি চলতে শুরু করল। যাত্রীরা যাত্রাকে আনন্দদায়ক করবার জন্য কেউ গান গাইছে কেউবা গাড়িতে বসে বসেই নৃত্যের মুদ্রায় হাত নাড়াচ্ছে। গাড়ি চলতে চলতে এবার আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রবেশ করলো। হিমালয়ের পাদদেশ এখান থেকেই শুরু হয়েছে। ডুয়ার্সের মোহনীয় আকর্ষণ আমাদের মনকে একটু একটু করে ছুঁয়ে চলেছে। প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে এক অদ্ভুত আকর্ষণ আছে। পাহাড়ি সৌন্দর্য এখান থেকে চোখে পড়ে। গাড়ি যতই এগোচ্ছে ততই লোক সংখ্যা বাড়িঘর কমতে শুরু করেছে। সবুজ নীরবতা ও বুনো আদিমতা একটু একটু করে যেন কোন এক রহস্যের গুহার দিকে আমাদের নিয়ে চলেছে। আমরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পাহাড়ি সংকীর্ণ পথ ধরে ধীরগতিতে এগিয়ে চলেছি। দুধারে শুধুই সবুজ অরণ্যের বন্য আহ্বান। কিছুটা যেতেই রিজার্ভ ফরেস্টের শুরু। গাড়ি চেকপোস্টে এসে থেমে গেল। গাড়ি থেকে নেমে আমাদের একজন ক্যারাটে প্রশিক্ষক তিনি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললেন। তাদের অনুমতিপত্র দেখালেন। এরপর তারা আমাদের যাওয়ার অনুমতি দিলেন।। এখান থেকেই গভীর অরণ্যের সূচনা। আমরা গভীর অরণ্যের বুকে এবার ভেসে চলেছি।
একটি মাত্র রাস্তা। বক্স রিজার্ভ ফরেস্ট । এক ধারে অগণিত সাল,সেগুন এবং অন্যান্য বৃক্ষের সারি । দূরে গাছে উঁচু ডালে বসে ময়ূর কেকাধ্বনি করছে । বানরগুলো ইচ্ছেমতো লাফালাফি করছে। সবুজ গভীর অরণ্য থেকে ছুটে আসা গন্ধ, মন মুগ্ধ করা এই গন্ধ বাতাসের তরঙ্গে দুলে দুলে আমাদের শ্বাসের সুরঙ্গ পথে মিশে সমগ্র চৈতন্যকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে এবং বুনো আবেশের আনন্দে আমরা হয়ে উঠছি আত্মহারা । অরণ্য যেন দুহাত বাড়িয়ে আমাদের বুকে টেনে নিচ্ছে। কত দিনের পুরনো আত্মীয় আমরা প্রাচীন অরণ্যের । সত্যি তো মানুষ এই আদিম প্রকৃতির বুকেই একদিন জন্মগ্রহণ করেছে। এটাই তার আতুরঘর,শৈশবের খেলাঘর। তারপর সে তার বুদ্ধিমত্তা পরিশ্রমে নিজেকে করেছে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার তাকে অরণ্যের সংহারকে পরিণত করেছে। একটু একটু করে সে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে অরণ্যের বুক থেকে। মানুষের ক্রমাগত লোভ অরণ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে চলেছে। অরণ্য না থাকলে মানুষের সভ্যতাও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, লোভী মানুষেরা সে কথা কবে বুঝবে ? কিন্তু আজ এই নির্জনে আত্মিয়ের মতো বৃক্ষগুলি আমাদের যেন সে পুরনো কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আরণ্যক সারল্য মানুষ কৃত্রিমতার চাপে হারিয়ে ফেলছে। অরণ্য আমাদের সে সারল্যই ফিরিয়ে দিতে তার প্রসারিত হাত সর্বদাই বাড়িয়ে রেখেছে। তাই তো মানুষ যখন বৈষয়িক চাপে বিষাক্ত হয়ে ওঠে তখন অরণ্যের কাছে ফিরে যায় প্রাণ বায়ুর জন্য, অরণ্যের সবুজ সারল্যের সংস্পর্শ পাওয়ার জন্যে । পথে যেতে যেতে কত নাম না জানা পাখি উড়ে গেল। কত অজানা ফুল ফুটে আছে গাছে গাছে। এখানে গাছ ফুল পাখি দেখলে মনে হয় না তারা কৃত্রিমতারা কোন বাঁধনে আটকে আছে, আমাদের সাজানো বাগান অথবা খাঁচায় ধরে রাখা কোন পাখির মত । তারা যেন মুক্ত আকাশের মতোই মুক্ত। তাই এই খোলা অরণ্যে প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারি আমরাও। গাড়ি যত এগোচ্ছে অরণ্য আরো গভীর থেকে গভীর হয়ে উঠছে। গাড়ির ড্রাইভার খুব সতর্কভাবে ধীর গতিতে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে চলেছে। পথে যেতে যেতে ভেতরের যাত্রীদের চোখ এখন অরণ্যের প্রতিটি অংশে। মুহূর্তের জন্য কেউ চোখ সরিয়ে নিচ্ছে না। কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। সকলের চোখগুলো যেন দূরবীন হয়ে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার মত শুধু সার্চ করে চলেছি। যদি কারো কিছু চোখে পড়ে। অর্থাৎ এখানে বাইসন, হাতি সহজেই চোখে পড়ে যায়। সবাই যেন বাজি ধরে বসে আছে। কে কার আগে সে দুর্লভ বস্তুটিকে দর্শন করে। কিন্তু আমাদের কারো চোখেই কিছুই পড়লো না এই করে করে আমরা জয়ন্তী পাহাড়ের ভুটান সীমান্তের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলাম, এখানেই আমাদের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ হবে পরীক্ষাও দিতে হবে। এখানে হোমস্টের ব্যবস্থা আছে । প্রত্যেকটা কটেজ এক একটা ফ্যামিলিকে দেওয়া হয়েছে। এখানে সবগুলো কটেজ তিন মাস আগেই সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছিল। আমরা যেখানে উঠেছিলাম সে কটেজের মাত্র দশ হাত দূরে বয়ে যাচ্ছে জয়ন্তী নদী প্রবল স্রোতে। তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছ জয়ন্তী পাহাড়। যেখানে আছে মহাকাল ধাম। কি অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ের সেই দৃশ্য। সাদা মেঘের বুকে একটি দোলনার মতন যেন ভেসে আছে। সকাল বেলার সৌন্দর্য এক আর দুপুরের পাহাড় এক অপূর্ব নীল সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। আবার সাঁঝের হালকা আলোয় এই পাহাড় মায়াবী হয়ে ওঠ। সূর্য ডুবে গেলে আমরা গিয়ে নদীর পাড়ে বসলাম। তখন ওপারের পাহাড়টি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢেকে গেছে। আবচ্ছা অন্ধকারে মনে হলো যেন দাঁড়িয়ে আছে এক প্রকাণ্ড ঐরাবত। আমাদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু মানুষ সেখানকার হাতিদের আচরণের, স্বভাবের কথা আমাদের বলছিল। তারা বলল যে কোন সময় বন থেকে হাতি চলে আসে। হাতি এসে লবণ এবং,ভাত খেয়ে যায়। হাতি দল বেঁধে এলে শান্ত থাকে। দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সে পাগলের মত হয়ে যায়। তখন আশেপাশের যা থাকে সব ভেঙে তছনছ করে দেয়। তারা বলল কিছুদিন আগেই একটি হাতি তাদের রান্নাঘর তাদের,ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে চলে যায়। বন্যার কথা শুনতে চাইলে তারা বলে সে এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে এই নদী। এই সমস্ত এলাকা জলের তলায় চলে যায়। তখন তিন মাস আমরা উঁচু জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হই। এই সমস্ত অসুবিধা নিয়ে এখানকার মানুষ এ প্রকৃতিকে ভালোবেসে কিভাবে এক হয়ে আছে তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। এত কষ্ট থাকা সত্ত্বেও মানুষ এই এলাকা ছেড়ে চলে যায়নি। খাদ্যের,ওষুধ পত্রের,বিদ্যা শিক্ষার সবকিছুতেই অভাব রয়েছে। তারা বলল সামান্য জিনিসের জন্য তাদেরকে যেতে হয় শামুকতলা বাজারে। আমাদের বাড়ির উল্টোদিকে ছিল একটি মাত্র হাই স্কুল । জয়ন্তী নদীর পাড়ে ছোট ছোট ঘরগুলো কোনটি পাকা বাড়ি আবার কোনটি কাঠের তৈরি। কাঠের তৈরি ছোট ছোট কটেজে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের ভীড়ে ঠাসা থাকে সিজন টাইমে । তবে বর্ষা কালে সব বন্ধ রাখা হয় । এ সময় হলো বন্য প্রানীদের প্রজনন কাল । এ সময় জয়ন্তী নদীও বিকট রূপ ধারণ করে।
জয়ন্তী নদী বর্ষাকাল ছাড়া ভিন্ন সময়ে প্রাণবন্ত কিশোরীর মতো নৃত্যের ভঙ্গিতে কুলু কুলু স্বরে নূপুর নিক্বন ধ্বনির মতো তরঙ্গের পর তরঙ্গ ভেঙ্গে এগিয়ে চলেছে। শান্ত স্নিগ্ধ জলরাশি জোছনার মত ছড়িয়ে আছে । নদীর শীতল জলের স্পর্শ এক মোহনীয় আকর্ষণে তাদের শরীর মন স্নিগ্ধ করে রাখে পর্যটকদের মনকে। তোদের পথ চলার ক্লান্তি মুহূর্তে দূর করে দেয় । কতো যে নাম না জানা বুনো পাখি শান্ত স্তব্ধতার বুকচিরে জেট প্লেনের গতিতে বন্য রহস্য থেকে আর এক বুনো রহস্যে মিলিয়ে চলেছে তার শেষ নেই। ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা সম্মোহিত হয়ে উড়ন্ত পাখিগুলোর ডানায় মনকে পাঠিয়ে দেয় রহস্যের অমীমাংসিত অরণ্যের গভীরে। তাই তো মানুষ দুঃসাহসীকতার প্রত্যয়ে ভর দিয়ে বারে বারে ছুটে আসে বন,পাহাড়,গহন অরন্যের টানে । এ টান মানুষের আদিম টান,যা আমাদের জিনের মধ্যদিয়ে বিবর্তনের পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। সবুজে ঘেরা গভীর অরণ্য আমাদের রক্তপ্রবাহের মধ্যে উন্মাদনা ভরে দেয়। আমরাও কৃত্তিম জীবন শৈলীর শেকল ভেঙ্গে অরণ্যের সবুজে, অরণ্যের স্তব্ধতায়, অরণ্যের হিংস্রতায়, অরণ্যের আদিম আলিঙ্গনে নিজেদের দিই মিশিয়ে। এ কয়েকটি দিন বা কয়েক ঘন্টা মুক্ত ভাবনাহীন, যন্ত্রণাহীন সময়ের স্রোতে ভেসে যাই। মনকে উড়িয়ে দিই ছকেবদ্ধ ফ্যাকাশে জীবনকে অরণ্যের দুরন্ত বন্য সবুজ ছন্দে।
আমরা পৌঁছে গেলাম নির্দিষ্ট স্থানে। পৌঁছানোর পর আমরা নির্দিষ্ট হোম স্টেটে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ক্যারাটের পোশাক পড়ে নির্দিষ্ট স্থানে এসে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ালাম । বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এসেছেন, তাঁর বাড়ি শ্রীলঙ্কায়। তিনি হলেন শিহান। অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকের । কিছুক্ষণ পর আমরা সারিবদ্ধ ভাবে নদীর পাথর ও বালুর মাঝে প্রশিক্ষণ শুরু করলাম। দু ঘন্টা ধরে প্রশিক্ষণ দিলেন "শিহান"। আমরা নতুন নতুন কৌশল তাঁর কাছ থেকে শিখলাম। এরপর নদীর স্রোতের মাঝে কখনো দাঁড়িয়ে কখনো শোয়া অবস্থায় নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কৌশল আমাদের করতে হলো। সাহস, শক্তি ও ধৈর্য এবং কৌশলের সমন্বয় আমাদের প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য। এভাবেই সময় ধরে যেমন প্রশিক্ষণ হত তেমনি ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ এবং ডিনার নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে। ভোর চারটার সময় ঘুম থেকে উঠে ক্যারাটে পোশাক যেটাকে জাপানি ভাষায় "গ্যি " বলে তা পরিধান করে সাড়ে চারটার মধ্যেই দলবদ্ধ ভাবে নির্দিষ্ট স্থানে প্রশিক্ষণ নিতে চলে গেলাম। ৭ টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নেবার পর আমরা ফিরে এলাম। আবার বারোটা থেকে দুটো পর্যন্ত। লাঞ্চের পর আবার বিকেল চারটা থেকে ছটা পর্যন্ত। এই পর্যায়ে ক্রমে তিন দিন ধরে প্রশিক্ষণ এবং তিনদিনের দিন পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে শেষের দিন রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বনফায়ারের মধ্য দিয়ে আমাদের তিনদিনের "সামার ক্যাম্প" সমাপ্ত হলো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা, তাদের অভিভাবকরা কেউ নৃত্য,গান,কবিতা পাঠ করছিল। সমস্ত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্প থেকে পাওয়া নির্দিষ্ট টিশার্ট পরিধান করে উপস্থিত হতে হয়েছে। আমিও সেখানে স্বরচিত একটি কবিতা পাঠ করলাম। আমি সত্যিই আশ্চর্য হলাম যখন দেখলাম রাশিয়ান ছেলেটি যে গ্রেডেশনের পরীক্ষা দিতে এসেছিল এখানে, সে যথাযথ উচ্চারণসহ সুর তাল সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে রে" সহ মোট দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত এমন গভীর দরদভরা আবেগ দিয়ে উপস্থিত করল, সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গেছে সকলে। আশ্চর্য হয়ে গেছি এই কারণেই যেখানে বঙ্গসন্তানেরা বাংলা গান ভুলে গিয়ে ভোজপুরি সংগীতের মাদকতায় উন্মাদের মতো নৃত্য করে আজকাল যে কোন অনুষ্ঠানে,সেখানে রাশিয়ান ছেলেটির এই গান গাওয়া আমার কাছে একটি মহার্ঘ্য উপহার ছাড়া আর কিছুই নয়। এই দৃশ্য আমাকে বাঙালি হিসেবে, বাংলাভাষী হিসেবে গর্ববোধ করে আবার। এমন মধুর এমন কোমল এমন প্রাণের বাংলা ভাষার চর্চা যদি বিদেশী মানুষটি অত্যন্ত যত্ন সহকারে করতে পারে তবে বর্তমানে বাঙালিরা সে কথা কী করে ভুলে যাচ্ছে ? কী করে অস্বীকার করছে বাংলা ভাষাকে, একশ্রেণীর বাঙালি। যাই হোক তিনদিনের "সামার ক্যাম্পে" না গেলে আমি এমন একটি শিক্ষা পেতাম না।
ক্যারাটে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমি স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে এখানকার বহু কাহিনী বহু ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত গল্প শুনেছি। লোক জীবনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রূপকথার কথা শুনিয়েছে আমাকে চায়ের দোকানের মজনু তামাং নামের ষাটোর্ধ্ব প্রবীন ব্যক্তিটি। এখানে ভুটিয়া, নেপালি, আদিবাসী, খ্রিস্টান এবং বিহারী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা একত্রে বসবাস করছে দীর্ঘদিন ধরে। আমার হোমস্টে থেকে কিছুটা দূরে বাজার। সেখানে সকালে সহজেই চা, কফি পাউরুটি ডিম পাওয়া যায় । সন্ধ্যায় চাউমিন,মমো । কিন্তু রাত আটটার পর থেকেই ধীরে ধীরে অরণ্যের নীরবতা নেমে আসে গাঢ় অন্ধকারের সাথে। সে অন্ধকার পথে হেঁটে চলেছি নিজের বাসস্থানের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ পাশের জঙ্গলটি নড়ে উঠলো, তারপর দেখলাম একটি হরিণ চোখের সামনে দিয়ে ছুটে চলে গেল। কিছুক্ষণ আমি, দীপ ও আদিত্য(শিক্ষার্থী) নির্জন নদীর তীরে গিয়ে বসলাম পাথরের উপর। পেছন থেকে ভারী বুটের শব্দ শুনতে পেলাম। দেখলাম পাঁচজন সশস্ত্র বিএসএফ জাওয়ানরা আমাদের পাশ দিয়ে নদী পার হয়ে অন্ধকারে এক একজন একটি পাথরের উপরে বসলো। চোখ রয়েছে তাদের ভুটান সীমান্তে পাহাড়ের দিকে। জানলাম রাতে এই পথ দিয়েই চোরাকারীরা পশুর চামড়া, হাতির দাঁত,মাদক, আরো বহু কিছু পারাপার করে অবৈধভাবে । এমনকি এই পথ দিয়ে যেতে পারে দেশের শত্রু। তাঁরা আমাদের ধীরে ধীরে বলল কথা না বলতে, আলো না জ্বালাতে এবং নদীর প্রবাহে পাথর না ছুড়তে। বুঝলাম তাতে চোরা চালানকারীরা সচেতন হয়ে যাবে। বুঝে যাবে এখানে সীমান্তরক্ষীরা আছে। শীত,গ্রীষ্ম,বর্ষা তাঁরা এভাবেই সীমান্ত রক্ষা করে চলেছে। আমরা ফিরে এলাম ঘরে। মাত্র চোখটা লেগেছে। রাত তখন দুটো হবে হঠাৎ চিৎকার। আমরা জেগে উঠলাম। বৈদ্যুতিক আলো জ্বালালাম ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় এলাম। আলো জ্বালালাম । এবার চোখের সামনে যা দেখতে পেলাম তা দেখে যেমন আনন্দ পেলাম তেমনই প্রতিটি মুহূর্ত ভয়ের শিহরণ আমাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত বয়ে গেল সেই মুহূর্ত গুলো। একটি দলছুট পাহাড় প্রমাণ হাতি পাগলের মতো ঘরের সামনের পথ দিয়ে ছুটে চলে গেল। আমরা ভয়ে কাঠ হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এরপর একদল লোক দূর থেকে ছুটে আসছে হাতে তাদের আগুনের মশাল। তারা আমাদের দেখে ঘরে চলে যেতে বললো, আমরা লোকেদের দেখে তাদের কথা শুনে স্বাভাবিক হয়ে ঘরে ফিরে গেলাম। স্বাভাবিকভাবেই সে রাতে ঘুম আসেনি। ভোরের দিকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হলাম। কিন্তু চারটায় ঘড়িতে এলাম বেজে উঠলো। আর বিছানায় নয়। জেগে উঠলাম। প্রস্তুত হলাম ক্যারাটে অনুশীলনের নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার জন্যে, ঠিক তখনই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে প্রবল বেগে বৃষ্টি হতে শুরু করল। পাশাপাশি ভয়ানক বজ্রপাত। ভুটানকে বজ্রপাতের দেশ বলা হয়। আমরা তো ভুটান সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছি। সেই ভয়ানক শব্দের বজ্রপাত আমাদের অন্তরাত্মাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। শিহানের নির্দেশ এলো--অনুশীলনের সময় এক ঘন্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। আমরা জয়ন্তী হাই স্কুলে পরিবেশ সচেতনতা শিবিরে, প্লাস্টিক বর্জন, অরণ্য সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে একটি আলোচনা সভায় সমস্ত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক, নিকটবর্তী বিএসএফ ক্যাম্পের কমান্ডার, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান এবং স্থানীয় টুরিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এভাবেই তিন দিন চলে গেল। এবার আমাদের ফেরার পালা।
এক দুর্দান্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুশাসনের শিক্ষা নিয়ে জয়ন্তীর অপূর্ব মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যকে পুনরায় দুচোখে উপভোগ করতে করতে গাড়ি করে আমরা বনের পথ ধরে এগিয়ে চলেছি । যতই এগিয়ে চলেছি মন, যেন ততই বিষন্ন ও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। যেন কোন এক পরম আত্মীয়ের স্নেহের আঁচলের আশ্রয় ছেড়ে আবারও বর্ণহীন ছকে বাঁধা শ্বাসরোধী বিষাক্ত এবং কৃত্রিম জীবনে প্রবেশ করতে চলেছি। আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে খাঁচার পাখির মত বন্দী করতে চলেছি এই অরণ্যের মুক্ত জীবন ছন্দকে পিছনে রেখে। সবুজ অরণ্যের হাতছানি আমাদের রক্তের কণায় কণায় বয়ে যাবে তবুও অনবরত। আমাদের এই টান কখনোই ছিন্ন হবে না। জয়ন্তীর অপূর্ব মেঘে ঢাকা স্বর্গীয় সৌন্দর্য আমাদের মনে যে আবেশঘন মাদকতা ছড়িয়ে দিয়েছে, সেই সৌন্দর্যের টানেই মন আবারও ফিরে যাবে এই উদার উন্মুক্ত সবুজ অরণ্যের রহস্যে হারিয়ে যেতে............. এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা...........
(ছবি- লেখক)
No comments:
Post a Comment