Thursday, July 20, 2017














কেউ কথা দিয়েছিলঃ

দেবব্রত তাঁতী

কথা ১ঃ

তোমার মধ্যে এক অদ্ভুত ব্যাপার রয়েছে
সঙ্গী হিসেবে কাজল থাকলেও আমার পক্ষে
অন্য কাউকে সঙ্গী হিসেবে ভাবা অসম্ভব
নুপুর পায়ে চলতে ভীষণ ভালোবাসি ,
তোমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য
সমস্ত সাহায্যে বাড়িয়ে আছি হাত । 

কথা২ঃ
দোলনায় দুলতে দুলতে বড়ো হয়ে উঠেছি
অথচ এখনো মায়ের পাশে ঘুমায় তাই
রাতে বেশি কথা বলতে পারবো না । 
আমাকে পেতে গেলে আমার কথা মেনে নিতে
আর কিছু শর্ত রয়েছে

কথা ৩ঃ
নিজেই যদি নিজের কাছে ছোটো হয়ে যাও
তবে সামনের রাস্তা অবরুদ্ধ 
তুমি শুধু এগিয়ে যাও , আমি আছি পাশে
যা হচ্ছে হতে দাও , সামনে তাকাও
প্রথমে নিজের দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠো
এতো ঋণাত্মক মন নিয়ে তো 
কিছুই করে উঠার পূর্বে হোঁচট খাবে
তা ভালোবাসবে কিভাবে ?

কথা৪ঃ
আমি একটু দেমাকী, যা ইচ্ছে তাই করি
আমি একটু ভিন্ন , নাটক জানিনা , বুঝিনা
আমি অহংকারী , সামলানো অসুবিধা
আমি বাঙাল , কিন্তু রাঁধতে শিখিনি

শাড়ি পড়তে জানিনা , প্রেম ভালবাসা বুঝিনা
মন নেই, শরীরের গন্ধ রয়েছে , সন্ধ্যেতে 
এসো দেখা হবে । তখন মাথা থেকে পা পর্যন্ত
দেখো আর যা ইচ্ছা করো বুঝেছো 
শরীরে রসকোষ এনো , কিছু বলো 
যাও তো তোমার দ্বারা কিছুই হবেনা দেখছি । 
বিদায় । ভালো থেকো ।

সুপ্রীতি বর্মনের দু'টি কবিতা












অবৈধ প্রনয়




উষ্ণতার আলিঙ্গন চাদর তুমি সুখের প্রচ্ছদে অসুখের মলমল গালিচা।
অজস্র নবাব তাবেদারীর দৌরাত্ম্যে কখন দিয়েছে মেঝের নগ্নতায়,
কখন শৌখিন রাজবেশে আলোয়ান।
তুমি নির্বাক নির্লিপ্ত মৌনতার চুন জিহ্বাতে লেপে,
দই জমতে থেকে যখন ঘনীভূত রাতে,
 তখন তার আস্বাদন সহনের বাইরে।।
ঐ দূরে রাজকীয় লাম্পট্যে যখন ঝর্নার অথৈ জলে নগ্ন অর্ধখোলা বস্ত্রে,
নর নারী মিলে মিশে একত্রে ভোগ বিলাসিতায় মত্ত।
তখন চাপা গুমোট দীর্ঘশ্বাস অব্যক্ত হৃদয়ে চেপে,
ঘামের বাস্পীভবন তোমার অশ্রুজলের প্রতিচ্ছবি।
হায় নারী তুই এখনো পুরুষের ভোগ্য পন্যসামগ্রী হলি?

লেগেছে শীতের পরশ আমলকির ডালে ডালে।
পায়ের নুপুরের গুটিরন্ধ্রের মতন ঘুঙুরে,
উচ্ছাসে তোলপাড় পর্নমোচী পাতার আনমনা খসখস,
আর শীতের সূঁচ বিদ্ধ যন্ত্রনা থেকে স্বস্তি ঔষধ উষ্ণ আলিঙ্গন।
সেখানে গাঢ় অবগাহনে চাদরের আড়াল ক্ষুদ্র সুখে।
আত্মগোপন কপোত কপোতী চঞ্চু খুঁটে নিরিবিলি,
ঠিক ঐ পরিত্যক্ত বটবৃক্ষের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে।।
এদিকে কখন মনের অগোচরে বুকের যাঁতাকলে ধীরগতিতে,
গম যাচ্ছে পিষে আর পাকা গড়ন চন্দ্রমায় লাগছে একটু করে গ্রহন।
সবটুকু গোগ্রাসে গিলে খায় ঢেঁকুর বাকি এখনো।
ওদিকে তরতর করে টহলদারী ক্ষুধার্ত নেকড়ে,
কামাতুর দৃশ্যপট দেখবার ক্ষিধে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।
ওদিকে ভয় পেয়ে সন্তর্পনে সকলের আশ্রয়,
আমার চাদরের তলায়।।
সাবধানী স্বত্তা ভদ্র মুখোশের আড়ালে থেকে,
খাওয়ার লেশটুকু পরিষ্কার পাত,
পার্কের ঐ নীরব দর্শক গাছের তলায়।
প্রেমিকের হাজার প্রতিশ্রুতি প্রেয়সীর চুলের বেনী পাকিয়ে জট।
পর্নমোচী পাতার শেষ ঠাঁই সুখ নিতে চাইলে উড়ে কোন ঝোপঝাড়ে,
আর না হলে গাছকে ভালোবেসে গাছের গুঁড়ি আঁকড়ে ধরে।।
আমি শৌখিন চাদর আড়ালে ঢেকে রাখি গুপ্ত প্রনয় কথা,
স্বামী বোধে নারী প্রেমিকের ছদ্মনামে পুরুষের ভোগ্যবস্তু হলি আবার?

আমি চাদর আড়ালের ছায়াশরীর আমার নিত্য সঙ্গী।
তার নীচের পাতালে সকল পরজীবীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সহাবস্থান,
লার্ভারসের চোষক নলে উদরপুর্তি পরম আশ্বাসে।
রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন আশকারায় রজনী মধুচন্দ্রিমা।
তবুও সকল দৃশ্যপট উপলব্ধি মনের গভীরে থেকে যায়।
সুখের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এখানে একান্ত চোরাগলিপথ।
অবৈধ প্রনয়।




খোলা হাওয়া।



কালবৈশাখীর ঝঞ্ঝা চুলের মুঠি আছড়ে ধরে,
     বিদ্যুতের অশনি সংকেত কামড়ে বক্ষপিঞ্জর,
          গ্রামছাড়া রাঙা মাটির পথ ধরে কল্পরূপ মন,
             স্বকীয়তা খুঁজে খুঁজে হায়রান দ্বিধা সুখ বিভ্রম,
                  বস্ত্র বেবাগী ভুলুন্ঠিত অধিকারের আঁচল,
                      সবটুকু মুষ্ঠিগত করতে স্বপ্ন অসহায়,
                           নির্লিপ্ত রাতজাগা পাখি।।
খোলা জানালা বোবামুখ তারজালি,
   কোটরে হাজারো উপাখ্যান কিন্তু শব্দহীন বাক্য,
       অন্তরে কোনঠাসা মনের অন্তরালে দমচাপা ভস্ম,
            বোধগম্যের অতীত হাত বাড়িয়ে অযাচিত ভিক্ষুক,
                   শোন ওগো গৃহবাসী একটু তাকাও এধারে,
   ওরা থাকে ওধারে গুছিয়ে পরিপাটি জগৎ,
         প্রদর্শনীর ভিড়ে দমচাপা কোনঠাসা বোবা অস্তিত্ব,
             মানানোর মতন যেন গড্ডালিকা প্রবাহ,
                    একরাশ চিৎকার মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ,
                          গুটি গুটি পায়ে আসে ঘেঁটে যাবার ভয়ে,
                                সময়ের অজুহাতে সাত তাড়াতাড়ি পালায়।
নেই কোন সময় শুধু ছুটে যায় আগামী প্রজন্মে,
        শোনো ওগো গৃহবাসী একটু তাকাও এধারে,
             নির্লিপ্ত চোখের চাহনি দ্বিধা সুখ বিভ্রম সঙ্গপানে,
অশরীরী স্বচ্ছন্দ্য কেবল মুষ্টিমেয় পাঁচ একরে,
     কচকচানি জটলা বস্তাপচা পরশ্রীকাতরে,
        চারদেওয়ালের ও কান আছে,
              তাই ফিসফিস কানাকানি অধীর আগ্রহে,
                   পরপরতা চর্চায় কোনঠাসা,
                         দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় খোলা জানলা।
দ্বিতীয় পর্ব:

এইভাবে গভীর অলসতার পরজীবি শ্যাওলা,
      জঠরে প্যেঁচিয়ে স্বপ্ন ভ্রুনের অকালমৃত্যু,
         খোলা জানালা অসহায় চুপচাপ,
             কোটরে হারায় হাজারো উপাখ্যান।।
হঠাৎ রাস্তার মোড়ে উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে লাল রাস্তায়,
     ঝপাৎ করে তড়িঘড়ি ব্যাস্ততার পাল তুলে,
            ভাঙা সাইকেল থেকে নেমে এক ছুটে এসে,
                    জাপটে ধরে পরম সোহাগের আলিঙ্গনে,
                         তোমার সেই খোলা হাওয়া,
                              সাদা পালক গুচ্ছের সমাহার,
                                   মুক্তমনা বিহঙ্গ ঝপাৎ করে পুনরায় সম্বিত,
                                         আমার জঠরে বহু কষ্টে লালিত স্বপ্নভ্রুন।
একি পরম নিঃশ্বাস কি অবাধ মুক্তগতি,
    তোমার ভয় জড়ানো সন্দিহান অণ্বেষন,
       শ্বাসপ্রশ্বাসের দুস্তর উঠানামার তীব্র ভাবাবেগ,
           এই বুঝি খোলা জানালা বন্ধ হয়ে যায়,
               গৃহবাসীর নিষ্ঠুর হস্তক্ষেপে,
অতো সোজা নাকি তোমাকে ছিনিয়ে নেবে,
   বক্ষপিঞ্জর করে দেবে খালি আর করবে দমবন্ধ,
         ও আমার খোলা পাখি খোলা জানলা,
               এসো উড়ে ঝপাৎ করে বুকে ফিরিয়ে দাও,
                    সেই সন্ধ্যামনির তমনিশা প্রেম,
                           আমার খোলা হাওয়া।।















উষ্ণতা ছিল
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

উষ্ণতাতো ছিলই
তার ধরণ বোঝাই ছিল দায়।
সাদা ওড়নার আলতো ছোঁয়া
আজও মনে করায়- উষ্ণতাতো ছিলই।
অজান্তে চোখে চোখ, আর
সেই ভাষা বোঝার অজানা ইচ্ছা ছিল।
কত প্রতিক্রিয়ার দৃষ্টিবদল
এখনও বোঝায়- উষ্ণতাটা ছিলই।

আসলে মানুষ নিজেই শীতল হয়,
কিংবা তার চারপাশ হয় শীতলতর।
একটু উষ্ণতা চাই আজ আবার;
একটু উষ্ণতর।



















মধ্য রাতের খন্ড কবিতা- পর্ব ১৩

লক্ষ্মী নন্দী  


মাঝ বয়সি রাত্রি রোজ 
তুফান অালিঙ্গনে ঢুকে পড়ে 

অামার অন্দর মহলে।
অলীক কল্পনায় ছড়ায়
শব্দ অক্ষরে নৈঃশব্দের -ব্যাপ্তি।

তার, শীলিত ছন্দের 
উদ্দামতার কাছে
অামি যেন কেমন 
হারিয়ে যাই। 
এভাবেই, প্রতিদিন
বড় হতে থাকা রাত্রির 
-অাপনে যাপনে-
দারুন দানের মহার্ঘ যজ্ঞে
নিজেকে অাত্ম সমর্পণ 
করে ফেলি।
সেও- অারও নিবিড়
গভীর গাঢ় সঞ্চারী 
হতে হতে অামার প্রতিদিনের
অন্ধকারকে করে হরণ-।
রাত্রির উত্তাপ ক্লান্তিহীন স্নিগ্ধ
যার, দর্শন স্পর্শনের মধুর
বিচরণ সাহচার্য শেষে----
অামি হয়ে উঠি,
ঠিক যেমন- 
ভেষজ নিরাময়।
যা -দেখে কচি ভোরে 
অাপ্লুত হয়ে উঠে.
জবাকুসুম -সঙ্কাশং 
কাশ্যপেয়ং -সূর্যটা।














অ-কবিতার পর...
উদয় সাহা


এবার একটা 'কবিতা' লিখব
তুমি পড়বে।তুমি বলবে, সুন্দর
হয়তো বিতর্কিত অথচ প্রাসঙ্গিক
'ছুঁয়ে গেলে' পাঞ্জাবিবাবু বলবেন,'কবি নয় একটা বাঁদর।
এবার একটা 'কবিতা' লিখব
তোমার চোখে ভেসে যাবে ছবি--
তুমি বলবে, অসাধারণ
অবশ্যই বাস্তব এবং সমসাময়িক
গদিতে বসে তিনি বলবেন,'ধিক!শত ধিক!'
এবার একটা 'কবিতা'  লিখব
তুমি বুঝবে।ফুটে উঠবে হাসির রেখা চোখেতে
তুমি বলবে,খুব ভালো
একটা বিদ্রোহ আর একটা প্রতিবাদ
বাতানুকূল যানের ভেতর থেকেই বার্তা
যাবে,'ভেঙে দে ছাদ'।
এবার একটা 'কবিতা'  লিখব
তোমার আঙুল গুলো আদর ঢালবে কুৎসিত অক্ষরগুলোতে
তুমি বলবে,দারুণ
ভীষণ দরদি,আবেগপ্রবণ
উড়োজাহাজে তখন তিনি। চোখে তার অনন্ত অনল।
আমি একটা 'কবিতা' লিখব
তোমার জন্য...

অয়ন মন্ডলের দু'টি কবিতা















প্রেম


ঘেউ ঘেউ ঘেউ। নামছে রাত। অচেনা গলি। 
জোছনা প্রেম। একটান বিড়ি। গলা খাঁকরাই। 

ওয়াক থু। উঠে আসা ঢেঁকুর ।ভরা পেটে ফল। 
খালি পেটে জল। পানকৌড়ি প্রেম। 

হাসি-হাসি-খুশি। খেলনা বাটি। বরবউ সাজি। 
টিপমারা চোখ। ফুলে ওঠা বুক। পালকি চলা প্রেম। 

গাঙ ধারে জাল টানি। লাল কাঁকড়ার সুড়সুড়ি। 
ঝিনুকের মুক্তো। হাঁড়ি ভর্তি মিন। কেওড়াটক প্রেম। 

হাঁটতে হাঁটতে পা জড়াই। হাতে হাতে হাত ছোঁয়াই। 
ঠোঁটে ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকল। পদ্ম কুড়ি প্রেম। 



উড়ন্ত প্রেম

সারারাত ধরে আমি তোমার ওই 
কুমারী স্তনের 
কুয়াশা ভেদ করতে থাকি
লাগাই দাঁতের দাগ, ঠোঁটের ছোঁয়া
রং তুলিতে আঁকতে থাকি
স্বপ্নের খাতায় ---
সারারাত ধরে গুনতে থাকি নদীর ঢেউ
বালুচরে লাল কাঁকড়ার প্রেম
নীলিমায় উড়িয়ে দিই 
এক ঝাঁক বিহগ...
এঁকে যাই স্বপ্ন, দগদগে উড়ন্ত প্রেম

বিন্দু বিন্দু জল থেকে, লবণ জলের সুস্থতা মেখে
            ভালোবাসা ওড়াই ...










আমার বাংলা-----
            মৌসুমী গুহচৌধুরী


 বাংলা আমার মায়ের ভাষা
বাংলা আমার মনের আশা,
বাংলা তোমায় ভালোবেসে,
থাকতে চাই গো তোমার দেশে,
প্রথম যখন মা ডেকেছি,
বাংলা তোমায় কাছে পেয়েছি,
ছোট্ট হাতটা ধরলে তুমি,
অ আ ক খ শিখি আমি।
বাংলা তুমি আমার পড়া
তোমায় নিয়েই স্বপ্ন গড়া,
বড় হলাম তোমার সাথে,
বন্ধু তুমি চলার পথে।
বাউল আমি তোমায় নিয়ে,
কাব্য লিখি তোমায় ঘিরে,
প্রেমের ভাষাও শেখালে তুমি,
তোমার প্রেমে পাগল আমি।
ধানের ক্ষেতে এলোকেশী,
তুমি তখন প্রিয়াবেশী।
তুমি জননী,তুমিই জায়া,
প্রখর রোদে স্নিগ্ধ ছায়া।।

Wednesday, July 12, 2017

























সুপ্রীতি বর্মনের গুচ্ছ কবিতা



প্রথম প্রেম


যেদিন প্রথম মুক্ত বিহঙ্গের নীড়ের উষ্ণতা
          পেয়েছি তোমার কোলে শুয়ে।
          নিভৃত কুঞ্জউপবনে বৃক্ষের ছায়ায়
           এঁটো মৌখিক প্রনয়ালাপে নায়ক-নায়িকা
          সিনেমাটোগ্রাফি অঁচ্ছুত অস্তিত্ব পার্কের বেঞ্চে ঘেঁষাঘেষি বসে।

যেদিন প্রথম সানগ্লাসের ক্লাসিক লুকে সাদা কালো ধোঁয়াশা
           দীর্ঘশ্বাস জমে থাকা মনের কোণে গুমোট অস্বস্তি মেঘ
            ঘ্যানর-ঘ্যানর অভিযোগের শক্ত প্যাঁচালো সাপ বেকার তুই
             বলে দমবন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।
তখন হঠাৎ আমার জগত ক্যানভেরার রঙীন ক্যানভাস।
খসে পড়া পর্নমোচী হৃদয়ে বসন্তের নবাঙ্কুর পদচারনা নতুন যৌবন।

যেদিন প্রশস্তি সূচক অকথ্য অনুরননে বেজেছিল সানাই আগমনী
             কোন অচেনা আগন্তুক তার ছোঁয়ায় নতুন স্বর্গ।
               পাতালে লুকিয়ে থাকা ভ্যাপসা কটূক্তি কটকট শাসানি
                পরিত্যক্ত অবগাহন অমাবস্যা চন্দ্রমার ভালোবাসার স্পর্শহীন।
সেদিন শক্ত হাত দিয়ে টেনে বাহুডোরের আলিঙ্গনে করেছিলে আবদ্ধ।
পেয়েছিলাম স্বর্গীয় সুখ, এক নিশ্চিত আশ্রয়।

যেদিন সিনেমা হলে বুকিং পেছনের দেওয়াল ঘেঁষে পাশাপাশি সিটে
                  একে অপরে স্বত্তায় নিমগ্ন উষ্ণ অধরে নৈশিল মাদকতা।
                    সিনেমার চরিত্র হয়ে উঠা বিনা রিহার্সালে।
                    চমকের মূর্চ্ছনা আনা নিজের উচাটন মনে
                    সন্দিহান মন দর্শক ছাড়া চায় নিরিবিলি প্রেক্ষাপট।
                   চায় না কোন প্রশংসা বা হাততালি।
 শুধু চায় একে অপরের সান্নিধ্য মধুচন্দ্রিমা।
কারন সব চরিত্র এখানে কাল্পনিক।

যেদিন প্রথম হাতে হাত রেখে ঝিল বা কোন নির্জন লেকের ধারে
               কাঁধে মাথা রেখে সকল ভার অবসাদ দিলাম ঢেলে।
                শক্ত করে হাত ধরে করলাম প্রতিশ্রুতি।
               কোনদিন যেন এই হাত না ছেড়ে যায় হয় চোখের জলে প্রাক্তন।
আর দিগন্তে গোধূলির লাল সিঁদুর ধেবড়ে অস্তগামী রবি।
নিশ্চুপে ডুব দিল সমুদ্রের হৃদয় পাথারে।
তখন আমাদের এঁটো মৌখিক প্রনয়ালাপ তবুও দুরত্ব একরাশ সমুদ্র।

যখন কারোর পরোয়া শিকেয় তুলে সাহসী চির উন্নত শির যৌবন
                সাইকেলের সামনে সিটে বুকে মাথা পেতে শুয়ে।
                 ছুটে যাওয়া অনাবিল আনন্দ স্রোতে একসময়ের গুটিয়ে
                 থাকা শুঁয়োপোকা ঘরের কোনে দমবন্ধ শ্বাস ধামাচাপা আগুন।
আজ হয়েছে প্রজাপতি সাতটি রামধনুর রঙে এদিক ওদিক চ্ছন্নছাড়া।
জানে না সে ঘর কাকে বলে কারন তার এখন উদ্দেশ্যহীন যাত্রা।

যখন তুমি হাঁটু গেড়ে বসে সম্মুখ দ্বারে হাতে হৃদয় রাঙানো গোলাপ
                 গলায় উত্তরীয় নায়কের style এ করেছিলে propose.
                 যেন ভাবতে লেগেছিলাম আমি হলাম princess.
                  আর তুমি হলে স্বপ্নে দেখা রাজকুমার।
    আমার শৈশবের ফেলে আসা পর্নমোচী fairy tale
     আজ পেয়েছে তার মৌনতায় মুখর উদ্ভাবনী বসন্ত।

যেদিন প্রথম পেয়েছিলাম রৌদ্রদগ্ধ উষ্ণ কোমল ওষ্ঠের
               শীতঘুম কেড়ে উচ্ছাস উন্মীলিত শীতল তরঙ্গোচ্ছাস বসন্ত।
            .  অনবরত একগুঁয়ে সবটুকু শুষে নিতে চাও সুখের বিভ্রমে অসুখ।
               তবুও মৃগতৃষ্ণা অদৃশ্য দিগন্ত আপামর বালির বুকে।
                সন্দিহান অন্বেষণে আমার সহবাসের অশরীরী উন্মুক্ত ছায়ার
               সুযোগের অছিলায় অন্য শরীরে নিরলস অনতিক্রম্য প্রবেশ।
ভয়ে কুঁকড়ে থাকা যৌবনা কুমারীর অজন্তা ইলোরার স্থাপত্য কর্ম
           নগ্ন মৃত্তিকার অঙ্গে তিলোত্তমার খাঁজে খাঁজে কোন নিপুনা শিল্পী
           প্রানপ্রতিষ্ঠায় নিমগ্ন দিবারাত্র কঠোর পরিশ্রমের গলদঘর্ম।
আদরে চাদর ভিজে মধুচন্দ্রিমা রাতের চুম্বন ধরিত্রীকে মৈথুনে ক্লান্ত
           সকল অবসাদ ঢেলে দিতে লেগেছো পরম সুখে চোরা গহ্বরে অন্তমিল।
ওদিকে সর্বস্বান্ত আমি দিতে থেকে ভয়ে ঢেঁকির পাড় ভাঙে প্রমাদ গোনে।
যদি আসে নিঃশব্দে আগামী নবাঙ্কুর এই গর্ভে অসাবধানী দ্বিচারিতা।
ধিক্কার হঠকারিতা হয়ে যাবে নষ্টা কলঙ্কভাগী একরাশ ভস্ম ছাই
আমার আশ্রয় শৈশব লালনের মুখে চুনকালি ছি ছি লোকমুখে।
গুজবে কোনঠাসা বহিষ্কার জুটে আছে বলে একরাশ ধিক্কার।
এসব অশনি সংকেতের আগাম ঝড় ছাইচাপা ধিকি ধিকি আগুন
অব্যক্ত চাপ বুকে আগলে আছে একান্ত প্রিয় সোহাগের আলিঙ্গনে অসহায়।


যেদিন প্রথম উন্মুখ নয়নে উন্মীলিত হৃদয় প্রাঙ্গনে আত্মসুধা অন্বেষণে
           হয়েছিলো শুভদৃষ্টি নয়নে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস একাকীত্ব অন্ধকার।
         প্রথম উজ্জ্বল আলোর প্রকাশ কিন্তু ঘরভর্তি জনসমাগমে নয়,
        পৌরহিত্যের পাগল একরাশ মন্ত্রউচ্চারনের শব্দের মিছিলে
        অন্ধ অস্তিত্বের মন প্রশান্তি লোক ভোলানো আনুষ্ঠানিক বাগাড়ম্বর নয়।
চৌরাস্তার মোড়ে কিংবা পার্কে গাছের ছায়ায় ঝড়া ফুলদলে অতিথি বাসর।
কিংবা সিনেমা দেখা স্থগিত নতুন কোন আগন্তুক কে পেয়ে একান্ত সান্নিধ্যে।
একে অপরের চোখে নির্লিপ্ত মগ্ন নিঃশ্চুপে ডুব অখিল সমুদ্রে মনকাড়া জোছনা।
পানকৌড়ি এলোপাথারি ঐকান্তিক প্রেয়সী ডুব দিয়ে মাথা গুঁজে গুঁজে
খুঁজতে থাকে তার প্রিয়র বুকে ছোট সংসার।
নির্লিপ্ত অপলক স্থির চাহনি শুভদৃষ্টি নিঃশব্দে একে অপরের যুগ্ম সন্ধিক্ষন।
সেই আমার প্রথম প্রেম।

যখন কৃষ্ণকায় জ্যাকেটে বাইকের দুর্দান্ত অশ্বগতি পেছনে সঙ্গী প্রনয়াসক্ত।
অজানা উদ্দেশ্যহীন যাত্রা মনে শুধু একটাই আশ্বাস এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো?
নিত্য আসা যাওয়া সংসারী পথযাত্রীর মুখভার অস্বস্তির বিড় বিড়
দেখো কত অশ্লীল চালচলন চুম্বনের আঁশটে গন্ধ সাইকেলে বুকে মাথা পেতে লজ্জাও লাগে না বাবা বেহায়া।
তখন বুঝেছি পড়েছি প্রথম প্রেমে।

যখন আগন্তুকের গায়ে পড়ে ন্যাওটা স্বভাব ছেড়ে ছাড়ে না।
ওই ওই বলে ডাক চেনা জানা নেই তোমার নাম।
কিন্তু তুমি অবশ্যম্ভাবী দিনেরাতে অস্থির উন্মাদনা খচখচানি
করোটিতে একচেটিয়া মনের অধিকার শুধু চাই তোমায়।
পাগলের প্রলাপ কবে হবে তুমি শুধু আমার জেগে থাকা আঁখি স্বপ্ন তোমার।
উড়ে বসনাঞ্চলপ্রান্ত ছন্নছাড়া বেবাগ রথের দুর্বার গতি অক্লান্ত।
শুধু হন্যে হয়ে খুঁজে বেরায় পাগল ভিখারী একটু দেখবো একটু ছোঁয়া চাই তোমার শুধু ঐকান্তিক উন্মাদনার ব্যাধি।
তখন অফস্ক্রীনে missed call মুরলী মনোহর শ্যামের বাঁশি।
সজনী সজনী রাধিকা লো দেখ আবহু চাহিয়া তব গিরিধর শ্যাম।
উদগ্রীব বাহুডোরে আলিঙ্গনে গাঁটছোলায় এক উন্মুক্ত সংসার বিনা কোন দায় কোন পিছুটান।
শুধু আত্মলীন তোমার নিঃশ্বাস গোগ্রাসে গলাধঃকরন।
Missed call এ তোমার নিত্য আসা যাত্রী।
শুধু আমার ট্রেনের প্রতিক্ষায়।
অনাবিল বর্ষনে কথ্য ভাষার হেঁয়ালি প্রলাপ ঘন্টার পর ঘন্টা
আমার সকল জগত একদা তুমি হয়ে যাও
তাতেও পরে শকুনের শ্যেণ দৃষ্টি,
হে শকুন ভাগাড়ে যাও খাও না যেন আমার আঁখি।
দেখবো প্রিয়াকে দুচোখ ভরে বসে আছি দীর্ঘদিন প্রতীক্ষায়।
সকলের দৃষ্টিশূল বলতে লেগেছে লোকে
কিসের অতো কথা দুজনে
শেষ হয়েও থাকে অতৃপ্তির রেশ।
অবান্তর আলাপচারিতা।
সেই হল আমার প্রথম প্রেম।
আমার জেগে থাকা আঁখির স্বপ্ন।
শৈশবের বইয়ের পাতায় রূপকথা।



দ্ব্যর্থক


আমার পাড়ায় আজ চ্ছন্নছাড়া আকস্মিক,

কালবৈশাখীর তান্ডব লীলা        আদিগন্তে নীল সমুদ্রে।।

উড়িয়ে দিয়ে সবকিছু              ছিঁড়ে খুঁড়ে পেয়ে যেতে চায়,

তার সহাস্য বদনা                   বৃষ্টি নারী অপ্সরা।
           
           চুম্বনে ধরিত্রী হল শিহরিত কম্পিত কায়া।।


নতুন প্রতুষ্যের             আগমনী বর্ষার অভ্যুদয়ে

আর ঝিরিঝিরি তার             হৃদয়াঙ্গম প্রেমালাপ।

আঁখি সঞ্চালনে                     প্রতিক্ষীত উষ্ণতার,

ভ্যাপসা অস্বস্তির                     যাঁতাকলে ছটফটে

           এই বুঝি জীবন যায় যায়।।

সেখানে তব আগমনে               ভিজে গেল সকল অন্ধকার কোন,

                  অন্ধকারে নিমজ্জিত সহস্র বছর।

প্রতীক্ষার উষ্ণ আলিঙ্গনে             মরতে থেকে,

একরত্তি তোমাকে আরো কাছে পাবার বিষে,

দগ্ধ ম্রিয়মান ভগ্ন কুঞ্চিত হৃদয়,

তুমি এলে বৃষ্টি পায়ে পায়ে,

সোহাগের আলতার চুম্বনে             ভিজে যাওয়া কোমল দুটি চরন,

ক্ষনিকের তরে স্বস্তি                   বক্ষে সেই চরনের ঠাঁই,
         
          তোমার রঙে রাঙিয়ে দাও মোরে।।

হাওয়ার সাথে দোদুল্যমান                 আমার অখিল সমুদ্রে,

উথলিয়ে উঠে যেন প্রেম                বৃষ্টির পরতে ছলকে,

             না হয় আজ মনকাড়া জোছনায়।।

গঙ্গাপ্রাপ্তি হোক             নিমগ্ন দুটি হৃদয়,

আনন্দের ঈষৎ ক্রন্দনধ্বনি      খাট ভাঙ্গুক আজ তিমিরে,

নিঃশব্দ বাঁধভাঙা উচ্ছাসের           প্রেমের কলোরব,

তুমি আমাতে            আদরে চাদরে ভিজতে চাও,

মাখামাখি ওষ্ঠের              সিক্ত শিশিরকনা,

না না সেটা না বোধহয়          একটু আধটু ঘাম ঝরছে,

তোমার তপ্ত গাল বেয়ে              একেবারে তোমার হৃদয়ের সোপান,

           তোমার ওষ্ঠ কোমল পদ্মে,

যেই না তার গড়িয়ে পরা টুপ করে,

নিঃশব্দ চয়নে সকলের অলক্ষ্যে।

আর আমিও নিলাম তার সবটুকু রস নিগড়ে।।



নিষ্পাপ হাসি


ওই যে যখন আতঙ্কিত হৃদয় শঙ্কার প্রমাদ গুনতে থেকে,
চিল উড়তো শশ্মানের নির্জন প্রান্তরে।
আঁখির স্বপ্নের সুখ বিভ্রমে সমুদ্রের খুব কাছ দিয়ে,
দাউ দাউ অগ্নিতে বাস্পীভূত প্রত্যাশার সকল ছাই।
ঠিক তখনি হাত কাঁপতো থর-থর করে,
তুই সাইকেলে শক্ত করে ধরতিস মুষ্ঠি,
বলতিস লক্ষ্য রাখবি,  এই হাত কোনদিন ছেড়ে না যাস।
তখন মুখপানে চেয়ে তোর নিষ্পাপ হাসি আমার সন্তানসম।।


যখন ক্লান্ত অবশ শরীর ঘুমভাঙা বিনিদ্র রজনী,
অপ্সরা লাবন্য তনু আর আমার বক্ষায়িত সর্পিল কল্পতরু,
সোহাগের আটচালায় তোর পরম শান্তির ঘুম বুকে মাথা রেখে,
তখন তোকে দেখে ঠোঁটের কোনে ঈষৎ হাস্য।
ঠিক যেন কোন আগামী নবাঙ্কুরের নিঃশব্দ পদচারনা,
আমার বক্ষের অখিল সমুদ্রে।
ঠিক যেন আমার সন্তানসম।।


যখন একটু দাও তোমার তুমিকে,
সর্বস্ব বিলিয়ে উজাগরে শশধরা তিলোত্তমা পরম সোহাগের,
ওষ্ঠাগত চুম্বনে নিঃশেষ ভালোবাসার লালিমায়,
গোধূলির কুঁচবরন লাল শাড়ি পরে কন্যা,
তোর চোখের অব্যক্ত আদর মনকে নেয় কেড়ে।
বলে যেন এই তোমায় লাগছে বেশ ভালো।
কি নিষ্পাপ সেই প্রশংসার আর কাছে চাওয়ার আবদারের হাসি।
আমার আমিকে পাই যেন আরেকটিবার নতুন করে খুঁজে।
তৃষ্ণার্ত দীর্ঘ পিপাসিত বক্ষ করে যায় আর্দ্র।
ঠিক যেন আমার সন্তানসম।।