রুপকঃ
দেবব্রত তাঁতী
অন্যকে নিজের বশে বা অধীনে রেখে দিয়ে নিজেই স্বাধীন বা
মুক্ত হতে চাওয়াটা পাপ, মহাপাপ । অথচ দেখ একটা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে রয়েছি সবাই ।
একজন অপরজন কে সে নিজেই আবার অন্যের অধীন । এই দেখুন না একটা মেয়ে পড়াশোনা করে
নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে । তার জন্য কম সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়নি । সব বাধা বিপত্তি
অতিক্রম করেই সে এই জায়গায় পৌঁছেছে । অথচ তার বাড়িতে গিয়ে দেখ সকালে ঘুম থেকে উঠে
বারান্দায় এসে খাঁচার পাখিটা কে শুভসকাল জানায় ।তাকে নিয়ম মাফিক খেতে দেয় । তার সব
চাহিদা পূরণ করে । কিন্তু সেই পাখি টা খাঁচার শিক গুলোকে ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ঠুকরে
ভাঙ্গার চেষ্টা করে । পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে । উড়ে যেতে ইচ্ছে করে । সেই মেয়েটা কি
জানে না । নাকি না জানার ভনিতা করে । পাখিটির মনের কথা বুঝতে চাইনা । অথচ কিছুকাল
পূর্বে মেয়েটির মনের কথা কেউ নাকি বুঝত না বলে কি না কি কাণ্ড ঘটিয়েছিল ।
পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রেখে দিয়ে ঘরবন্দি করার চেষ্টা বিফল ।
একটা সময় এলেই সেই সব কিছুই টপকে পালিয়ে যেতে ভয় পায় না । বরং সাহস ভেতরে ভেতরে
তৈরি হয়ে থাকে বন্দী দশায় । তুমি টের পাও না তা । এই যে কাঁটা তার দিয়ে ভাগ করে
দিয়েছ মাটি । তাতে কি কিছুই হল আদতে ? পাখি আকাশ বাতাস এইগুলোকে তো ভাগ করতে
পারলে না কেন ? পাখি তো বেশ ডানা মেলে উড়ে এদিক থেকে ওদিকে যায় আর ওদিক থেকে এদিকে
আসে । যেন মনে হয় যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব এর ফলে এক মায়ের পেটের দুই ভাই বেরা দিয়ে
ঘর বাড়ি আলাদা করে নিলো । কথা বলা বন্ধ । হটাত করেই যখন ঘূর্ণি ঝর এল কিংবা তুফান
তখন আবার সবাই মিলে গেলো । বড্ড হাসি হাসতে ইচ্ছে করে । এসব কিছু জেনেও মানুষ
মানুষ কে দূরে সরিয়ে দেয় সে যতয় আপন হোক ।
১৫ ই আগস্ট নাকি
স্বাধীনতা দিবস ! কিন্তু শুধু কি এই দিনটি স্বাধীন থাকতে পারবো ! নাকি এটাও একটা
মিথ্যে কিছু । যদি শহিদ দের শ্রদ্ধা জানাতেই হয় তাহলে ফুলের মালা দিয়েই একদিন
স্মরণ করেই লাভ কি ? তাদের জীবনের আদর্শ যদি আমাদের জীবনে প্রতিফলিত না হল তাহলে
লোক দেখানো শ্রদ্ধা বা সন্মান দেখিয়ে কোন লাভ নেই । যেদিন প্রথম ভারত স্বাধীন বলে
ঘোষণা হল রেডিও তে সেদিন তো একজন চিৎকার করে বলেছিল –“এ সব ঝুট হ্যা” । এ
স্বাধীনতা নয় ! ওরা ভিক্ষা দিয়েছে । কিন্তু সেই পাগলের কথা আমরা কেউ শুনিনি ।
পতাকা হাতে ঢাক ঢোল কাঁসি শঙ্খ বাজিয়ে গোটা দেশ মিছিলে দাঁড়িয়ে আনন্দে হাসতে হাসতে
কেঁদে ফেলেছিল । কেউ মনে রাখেনি । এই দেখুন না । মানুসের জন্মদিন একদিন হয় ।সশরীরে
হয় মায়ের গর্ভ থেকে । কিন্তু গরিবের জন্মদিন পালন বলে কিছুই হয়না । কারন গরিবের
খবর গরিবেরা জানে । অন্য কেউ নয় । জাতীয় সঙ্গীত গায়তে গায়তে গায়ে কাঁটা দেয় ।
শরীরের লোম খাড়া হয়ে ওঠে । “বন্দেমাতরম” বলতে বলতে ভিজে ভিজে ছেলে মেয়ের দল নিজস্ব
এলাকায় ঘুরে বেড়ায় । আর বলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম এই দিনে । কিন্তু এই মেয়ে
ছেলেরা জানে না আসল কিছু ইতিহাস । ভারতের আগুনের ইতিহাস । বিপ্লবের ইতিহাস ।
স্বাধীন মানেই কি শুধু মাত্র দেশ স্বাধীন । মানুষের স্বাধীনতা কোথায় ?
No comments:
Post a Comment