স্মৃতির স্কুল
তন্ময় কবিরাজ
জীবনের বসন্ত যখন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে তখন কৈশোরের স্কুল জীবন যেন প্রচন্ড দাবদাহে এক পশলা বৃষ্টি। অচেনা পরিবেশের সঙ্গে নিজের অভিযোজন। জীবনের প্রতি উত্তরণে বিবর্তনের হাতছানি।ভালো লাগা মন্দ লাগার মধ্যেও জীবন সেদিন পার করেছে আঠেরোটা বছর।কি পেলাম কি পেলাম না,কি শিখলাম কি শিখলাম না - এসব আজ নেহাতই তুচ্ছ।শুধু নষ্টালজিক অবসরে থেকে যায় আনন্দ। প্রতিযোগিতার পাটিগণিত সেদিন ছিল না। সামাজিক দ্বন্দ্ব, বর্ন, ধর্ম সেদিন মানুষ চিনতে শেখায়নি।ভালোবাসার প্রকটগুনে প্রাধান্য পেয়েছে টিফিন পিরিয়ডে একসঙ্গে ভাগ করে খাওয়া, দৌড়াদৌড়ি, বন্ধুর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজার ভেজিটেবল রোমান্টিসিজম। তখনও চোখে স্বপ্ন এঁকে দেয়নি কেউ।স্বপ্ন একটাই স্কুল শেষে ক্রিকেট খেলা, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বেড়াতে যাওয়া, বন্ধুর মন খারাপে প্রাইভেট টিউশন ফাঁকি দিয়ে নদীর পাড়ে বসে বন্ধুকে সান্ত্বনা দেওয়া।সবার আগে স্কুলে গিয়ে জানালার ধারে বসার তাগিদ।কিছু হলুদ পাখি আর বাহারি প্রজাপতির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া নিজের হাজারও অনুভূতি।কতবার মন হারিয়ে ফেলার অপরাধে মাস্টারের কাছে মার খেয়েছি ,তার হিসাব আজ নেই। সেই প্রজাপতি আজও হয়তো ঘুরে বেড়ায় কিন্তু জীবন শুধু বদলে গেছে।আজ স্কুল জীবন নিয়ে ভাবতে গিয়ে ব্রিটিশ কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থকে খুব মনে পড়ে,বিশেষ করে তাঁর টিনটার্ন আবি কবিতার কথা।সেদিনের কৈশোর কবিতা লিখতে শেখেনি।আজ বাস্তব হয়তো সেদিনের কথা ভেবেই কবিতা লেখে মনের অন্দরমহলে।একটা অজানা পরিবেশ ক্রমশ চেনাজানা হতে হতে জীবনের গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় হয়ে উঠে। মাষ্টারমশাইদের যেমন শ্রদ্ধা করেছি, তেমনই তাঁদের নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ সবই ছিল।মান অভিমানের সর্ম্পক ছিল সেসব দিনের অ্যালবামে,একটা পরিবারের মধ্যে যেমন হয়ে থাকে। অঙ্ক ক্লাসে খুব ভয় হতো। মাথা নিচু করে বসে থাকতাম।কোনোদিন অঙ্কে ভালো নম্বর পাইনি। শুভাশিসবাবু খুব ভালো অংক করাতেন। নিহারবাবুকে আমরা অঙ্কের জাহাজ বলে ডাকতাম। মারতেন না কোনোদিন, ক্লাসের পাশ দিয়ে গেলেও সারা ক্লাস চুপ করে যেত, এমনি ব্যক্তিত্ব ছিল ওনার।আর একজন ছিলেন তড়িৎবাবু। ইংরাজি শেখার জন্য দেবেনবাবুর বিকল্প ছিল না সেদিন,তবে যে মানুষটি ইংরাজির প্রতি আমার ভালবাসা তৈরি করেছিলেন ,তিনি গোঁরাচাঁদবাবু।আমি কোনোদিন ভালো ছাত্র ছিলাম না।বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সখ ছিল।হয়নি। আর্টস পড়তে শুরু করলাম।ইতিহাস, সাহিত্যে ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মত বিষয়ে যাঁরা না থাকলে আমি কোনদিনই কিছু বুঝতাম না, তাঁরা সুপর্ণা ম্যাডাম, অধীরবাবু এবং অশোকবাবু।অনেক অনেক ভালবাসা পেয়েছি ওনাদের কাছ থেকে।তবে যে মানুষটি আমাকে আমার বাবার মত স্নেহ করতেন তিনি দিলীপবাবু। স্কুল জীবনে ভালো ভালো বন্ধু পেয়েছি চন্দন,সুমন, অপু, বিশ্বজিৎ, সঞ্জয়। স্কুলের কথা ভাবতে বসলে সবাইকে মনে পড়ে যায়।সবাই খুব ভালো থাকুক।যত মান অভিমানের সব ক্ষমা হয়ে যাক।শুধু স্মৃতিটুকু রয়ে যাক।
No comments:
Post a Comment