Tuesday, July 2, 2024


 

স্মৃতির বিদ্যালয়
   সুদীপা ঘোষ 

যেদিন প্রথম তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, কিছুটা ভয় কিছুটা আশঙ্কার দোলাচলে মন ভরেছিল। গুটি গুটি পায়ে ভেতরে ঢুকে এদিক ওদিক চেনা মুখ খুঁজছিলাম। দুই তিনজন চেনা পরিচিত বান্ধবীকে পেয়েছিলাম। শুরুর দিকে তাদের সাথে সাথেই থাকার চেষ্টা করতাম। আস্তে আস্তে নিজের অজান্তেই কবে যে তোমাকে ভালবেসে ফেললাম বুঝতেই পারিনি। কতটা ভালবেসেছি, বুঝতে পারলাম  যেদিন শেষ বারের মত তোমার কাছ থেকে চলে এলাম। তুমি এখন শুধুই স্মৃতি ।অবশ্য শুধু স্মৃতি বললে ভুল হয় ,স্মৃতির মণিকোঠায় এক উজ্জ্বল জায়গা নিয়ে আছো।
                 হ্যাঁ, তুমি আমার "স্মৃতির বিদ্যালয়"। মালদার বহু পুরনো বিখ্যাত "বার্লো বালিকা বিদ্যালয় " - আমার বিদ্যালয়। এখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে থাকি। কিন্তু যখনই মালদায় যাই , একবার অন্তত তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি ,ভেতরে ঢোকার সুযোগ পেলে এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে দেখি ,তুমি কি সেই আগের মতই আছো! না, প্রত্যেকবারেই দেখি একটু একটু করে পরিবর্তন হচ্ছে। তোমার বদলে যাওয়া দেখে কখনো সামান্য মন খারাপ হয় । কিন্তু পরক্ষণেই ভাবি এ তো স্বাভাবিক। সময়ের সাথে সাথে বদলে যাওয়া ,একটু একটু করে উন্নতি করা - এটাই নিয়ম এবং সার্বিকভাবে ভালো। সবকিছুর মাঝখানে তুমি তো সেই তুমিই আছো। বিকেলে স্কুল ছুটির পরে যখন তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াই, মূল দরজা বন্ধ থাকলে বাইরে থেকেই কিছুক্ষণ তোমাকে দেখে ফিরে আসি। কখনো ভেতরে ঢোকার সুযোগ পেলে মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে বারবার চারদিকে ঘুরে ঘুরে তাকাই। কোন্ ক্লাসে কোন্ ঘরটাতে বসতাম, এখনো মনে আছে আমার। প্রত্যেকবার নতুন নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম দিনটিতে সময়ের অনেক আগে যাওয়ার চেষ্টা করতাম, যাতে সবার সামনে বসতে পারি। আবার কাছের বন্ধুরা যাতে আমার আশেপাশেই বসতে পারে, তার জন্য জায়গাও রেখে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। শিক্ষিকাদের আমরা বলতাম দিদিমণি। তাঁদের  কেউ কেউ সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেই ভয়ে কুঁকড়ে যেতাম, আবার কারো সাথে মন খুলে অনেক কথা বলতাম। 
                  তোমার খোলা মাঠে বন্ধুদের সাথে হইচই করে খেলা, সুযোগ পেলেই উপরে নীচে সব ঘর বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি করা, টিফিনের সময় গেটের ওপারে ছোট ছোট খাবারের দোকানের পসরা আর তাদের কাছ থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে পয়সা দিয়ে খাবার নেওয়া - সবই এখনও স্মৃতির মণিকোঠায় জীবন্ত বন্দী। জানি সম্ভব নয়, তবুও  বারবার মনে হয়, যদি আবার ফিরে যেতে পারতাম সেই  স্কুলের দিনগুলিতে , যদি আবার ফিরে পেতাম সেই গোল্লাছুটের  ছেলেবেলা, তাহলে আমার আড়ি করা বান্ধবীদের সাথে আবার ভাব করে নিতাম, অনেক ভুলচুক শুধরে নিতাম।

No comments:

Post a Comment