Thursday, March 30, 2017

নিঃশব্দে
মোনালিসা রেহমান 

নিঃশব্দ প্রহর 
প্রাণপাত করে আজন্ম 
শানিত চিন্তার প্রলেপ 
কিছুটা বাস্তবসম্মত 
কিছুটা শিষ্টাচারের নামান্তর 
কাল্পনিক হলেও 
একটা সীমারেখায় ভালোবাসায় 
জারিত হয় মন
নিষ্কলুষ গাছের ক্লান্তিকর 
দু ফোঁটা অশ্রুর মতন

এযাবৎ চলমান প্রক্রিয়া 
হঠাৎ থেমে যায় একদিন 
কবরের অন্ধকারে 
শান্তি সমাহিত প্রোথিত 
নিজস্ব ভুবনের পারে
খোলা মাঠ 
আলামিন ইসলাম


পূর্ণিমার স্রোত উপচে পড়ছে পৃথিবীর উঠোনে ,
অমাবস্যার সাথে তার ঘোর রেষারেষি ৷
আবেগের এরোপ্লেনে পাইলট কবি ,
মিনারের মতো মৌন বেশে বিস্মিত দর্শক!
বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ ,
সবুজের সাথে আলো করছে চুম্বন ৷
আকাশ -বাতাস সব নির্বাক সাক্ষী !
সুড়ঙ্গ ছেড়ে বাইরে এসেছে মেঠো ইঁদুরের দল , 
প্যাঁচাদের চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে .....
চারিদিকে ফসলের গান ,
অবাক যাচ্ছে কবি .....
এই নিস্তব্ধতার অরণ্যে,  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্যানভাসে খোলা মাঠ , অপার্থিব !
রুপকথার দেশের সাথে তার প্রগাঢ় সুমিল ,
যেখানে নীরব গল্পের ব্যস্ত  পয়াচারি ৷
কিংবা উপচে পড়া সৌন্দর্যের অসংখ্য  তরঙ্গায়িত ঢেউ !

Saturday, March 25, 2017

একটি শব্দের প্রেক্ষিতে মন্দিরা ঘোষ খুব সহজেই ছিঁড়তে পার তার শিরার মধ্যে স্বরগতি থামাতে পার অনায়াসে ভালবাসার অভিমুখ বদলে নিতে পার অবলীলায়। নদীর নরম বুকে যে উত্তাপ রেখে এসেছ তাকে রাখি কোথায় বলতো! সে তো খুলে রেখেছে আগল শেষ পারানির হিসেব টুকু বুঝে নিতে!

Friday, March 24, 2017

জীবনে বিকেল আসে 
- গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

সংসার সমর ছেড়ে গিরি গহ্বরে 
কেন ভীরু মোক্ষ মুক্তি মৃত্যুর কাছে তুই 
দিতে চাস ধরা ? 
সংসারের মাঝে থেকে মানুষেরে ভালোবেসে 
পান করে চলে যাবি দেহের মদিরা । 
জানি আমি ,এ জীবন অনুক্ষণ 
অবসাদে অসুখের স্বাদ বেদনা প্রচুর , 
তবুও বিকেল আসে রোদ যায় নিভে 
নিভে যায় জীবনের ঘুঘু ডাকা বিষণ্ণ দুপুর । 
জীবনে বিকেল আসে হয়তো বা কবোষ্ণ মুখর 
প্রেমের দুয়ার খুলে আজও আমি পীড়িতের কথাগুলি শুনি 
ধূসর মৃত্যুর মাঝেও একা একা জীবনের রশ্মিগুলি গুনি । 

মোক্ষ মুক্তি মৃত্যু নয় 
চলে যা রে জীবনের গেয়ে শুধু গান , 
সন্তানের মুখে চুমু খেয়ে 
জীবনের জ্যোতিটুকু করে যা অম্লান । 

Wednesday, March 22, 2017

এক দেশের এক গাধার গল্প
বিবেক চৌধুরী

ধোপার গাধা বোঝেই না কাদের কাপড় বইছে
তার পেছনের মানুষটাও কেন যেন
এড়িয়ে যায় কার শাড়ীতে কার বীর্য লেগে আছে

যারা কাপড় আছড়ায় তারা বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী
পচা ডোবা থেকেই পবিত্র কাপড় কেচে নেয়

কোন না কোন গণ্যমান্য তো আসেই তার দোকানে
গাধাটা কাগজ খায়,  সে খায় বিশ্বকে
অবশ্যই সাইড এফেক্টের কথাটা কেউ বলে না বলেই
রাম ও রামকৃষ্ণ,  গীতা ও ক্ষেপনাস্ত্র
তার প্রাজ্ঞ বুলি থেকে অকাতরে উপচে পড়ে।

এইসব বদহজমের চোটে ভালমানুষের পো
বোঝেই না কাকে কতটুকু কী বলতে হয়
হয়ত ভাবে বিশ্বকে সে-ই তো পাটপাট করে রেখেছে
মাতাল ভাইদের তো প্রতিদিনই সবক শেখায়
জনতাও নিশ্চয়ই তার ভাইদের বেশি কিছু নয়

পোড়া কপাল! জ্ঞানবৃদ্ধ সেদিন গীতা আওড়াতেই
কোথাকার এক পাগল ক্ষিপ্ত হয়ে তার গাধাটাকে
কোন তেপান্তরে তাড়িয়ে নিয়ে হারিয়ে দিয়ে এসেছে।
প্রেম দাও
শীলা ঘটক অন্ধকার দূর হোক সূর্যের রক্তিম আভা রাঙিয়ে দিক তোমার মুখখানি, ক্লান্ত জীবন চোরাবালিতে ডুবে যেতে যেতে শুধু তোমাকে খুঁজে খুঁজে ফেরে, হে পৃথিবী প্রেম দাও। ধুলোমাখা মলিন মুখের ফ্যাকাশে চোখ------- চায় শুধুই প্রেমটুকু পেতে। অন্ধকারে ঢাকা জীবন--- ভালোবাসা, বাজারে সাপলুডো খেলায় মত্ত। বেনোজল—গঙ্গারজল মিলেমিশে একাকার! পরিতাপে—পরিশ্রুত হোক এ জীবন হে পৃথিবী প্রেম দাও। ধূ ধূ মরুভূমির বুকে সাবানার দেখা মেলা ভার । স্বপ্নগুলো কালবাজারে চড়া দরে বেচে বাড়ি ফেরে ব্যবসায়ী ক্রুরতার হাসি হেসে। অমাবস্যার শান্ত রাতে কী ভীষণ নীরব তুমি! স্থবিরতা ত্যাগ করো একবার তোমার উদ্দীপনা দেখি একটা ঝড় উঠুক ভীষণ একটা ঝড় উঠুক। স্তব্ধতা ভেঙে উতলা হোক তোমার হৃদয় হে পৃথিবী প্রেম দাও।

Monday, March 20, 2017

"বিয়ে বিয়ে খেলা"
প্রশান্ত কুমার ঘোষ 

সমগ্র পৃথিবীটা একটা মঞ্চ-ইংল্যান্ডের "জাতীয় কবি" এবং "বার্ড অব অ্যাভন"
শেক্সপিয়ারের এই মন্তব্য অনুযায়ী প্রত্যেকেই  আমরা পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করে চলেছি।আমরা প্রত্যেকেই সময়ের স্রোতে নায়ক,নায়িকা,ভিলেন,কমেডিয়ান ইত্যাদি নানান ভূমিকায় অবতীর্ণ।পেঁয়াজ ছাড়াতে থাকলে যেমন কোন অস্তিত্ব থাকে না,তেমনি আমরা এই ধরাতে অভিনয়ের উপর অভিনয় তার উপর অভিনয় তার উপরেও অভিনয় করেই চলেছি।

              শিশুর বিকাশ গত পরিবর্তন তার মধ্যে চাহিদার সৃষ্টি করে এবং সেই চাহিদাগুলির দরুন শিশুর মধ্যে আচরনের সৃষ্টি করে।শিশুর মানসিক বিকাশের সাথে সাথে বিভিন্ন চাহিদার পাশপাশি মানসিক চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে।এই সব চাহিদা গুলির তাড়নায় তারা বয়স্কদের সমকক্ষ ভাবতে থাকে।তারা অনুকরণ করতে থাকে তার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের।পুনরাবৃত্তির চাহিদাই শিশুর মধ্যে অনুকরণের চাহিদা সৃষ্টি করে।নিজের দেখা অন্যের কোন কাজকে বারবার অনুকরণের মধ্য দিয়ে এবং পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিখতে ও আনন্দ লাভ করতে চাই।

               ভান্ডারিয়া ছোট গ্রাম।গ্রামটি লতাপাতায় মোড়া।গ্রামের মাঝে কেয়া গাছের ভিড়।শোনা যায় ঐ কেয়া বনে গরু ডুকে গেলে বেরতে পারত না,খুঁজে পাওয়া যেত না,তারপর গরুটি খাবার জন্য শকুনির ঢল নামলে বুঝতে পারা যেত।গন্ধে কয়েকদিন নাভিশ্বাস।তবে আজ কেয়া গাছ অবলুপ্ত।গ্রামের মাঝে সরু খাল।পাশের তারাজুলি নদীতে মিলিত হয়েছে।খালের দুই তীরে বেড়া কলমির জামাটি আড্ডা।আম,জাম,তাল,বাঁশ বনে ঘেরা এই ছোট গ্রামটিকে ঈশ্বর যেন নিজের বৈঠক খানা বানিয়েছেন।

              খালের দুই তীরে দুই পাড়া,ঘোষ পাড়া ও ঘোষাল পাড়া।উভয় পাড়াতে আট দশ ঘর পরিবারের বাস।দুই পাড়ার ছেলেরা ঘোষাল পুকুরের পাড়ে এসে খেলা করে পশ্চিমে সূর্য হেলে পড়লে।কালু,রাজু,ঝন্টু,প্রশান্ত,শ্রীকান্ত,সমীরণ,ঝুমা,অসীমা,প্রদীপ,অরুণ,রান্টি,তাপস,মানস,ইলা,শিলা,লাল্টু,অজিত,মণি আরও পাঁচ থেকে পনের বছরের বালক-বালিকা,কিশোর-কিশোরী সমবেত হয়ে খেলা করে।

            একদিন হল বিয়ে বিয়ে খেলা। সমস্ত ছেলে দুই পরিবারে বিভক্ত হল।প্রতিটি পরিবারে দাদু,ঠাকুমা,বাবা,মা,কাকু,কাকিমা ,ভাই ,বোন,নাতি নাতনি ইত্যাদি বিভিন্ন সম্পর্কে আবদ্ধ হল।যারা সাজলো দাদু ঠাকুমা তারা মানান সই পোশাক পরলো,কোমর বাঁকিয়ে লাঠি ধরে গালে ভাঁজ ফেলে কথা বললে।দুই পরিবারের নাম হল ঘোষ পরিবার ও ঘোষাল পরিবার।পুকুরের উত্তর পাড়ের পশ্চিম কোণে ঘোষাল পরিবার,আর পূর্ব কোণে ঘোষ পরিবার।বাড়ি তৈরি হল কঞ্চির খুটি গেড়ে,উপরে চট দিয়ে।


                   ঘোষ পরিবারের কর্তা কালু।বড় নাতি শ্রীকান্ত।দাদু নাত বৌ দেখতে চায়।নাতির পাত্রী দেখা শুরু ।লাঠি হাতে করে মেয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে ।ঘোষাল পরিবারে হাজির।গিয়ে বলে এতটা রাস্তা আসতে বয়স্ক মানুষ অনেক কষ্ট পেলাম।ঘোষাল বাড়ির কর্তা প্রদীপ।প্রদীপ বলে আরে দাদা যে।গরীবের বাড়িতে এমন হেলানো বেলায় কি মনে করে?এসো দাদা।খড় কুটো দিয়ে বলে বসো দাদা।বাড়ির গিন্নিরা ঘোমটা টেনে পা ধোয়ার জল দিল। ডুমুর গাছের পাতাই প্লেট। প্লেটে করে কাদার সন্দেশ,রসগোল্লা ইঁট গুঁড়োর লাল মিষ্টি সুন্দর ভাবে সাজিয়ে অতিথি আপ্যায়ন।চাকুম চুকুম শব্দ করে কয়েকটা খেয়ে নিয়ে কালু বলে বয়স হয়েছে এত মিষ্টি খেতে পারবো না,বাচ্চাদের দিয়ে দে।কালু বলে আরে তোর বড় নাতনি মণি কোথায়?প্রদীপ বলে বাড়িতেই আছে,আরে মণি?মণি কোথা গেলিরে দিদি ভাই?মণি বলে দাদু ডাকছো আমায় ?প্রদীপ বলে হ্যাঁ দিদি ভাই,তোমাকে দেখতে চায় তোমার ঘোষ দাদু ভাই।মণি বেশ পরিপাটি করে সেজেছে।কালু দাদু কে প্রণাম করে তার কাছে গিয়ে বসে।কালু বলে বেশ ভদ্র,নম্র তোর নাতনি।যদি কিছু মনে না করিস,তাহলে একটা কথা বলি।প্রদীপ বলে কি যে বলেন দাদা!আপনি বলবেন আর আমি শুনব না?বলুন দাদা।আরে তোর নাতনিকে আমি নাত বৌ করতে চায়।প্রদীপ বলে এতো নরুনের বদলে নাক।তুমি অনুগ্রহ করলে দাদা.....।


            বিবাহ শুরু।শ্রীকান্তকে তাল পাতার আংটি,কলা পাতার টোপর,ঘাঁটু ফুলের থোকা নিয়ে কলা গাছের আঁশ দিয়ে গিঁটিয়ে মালা করে পরিয়ে বর সাজানো হল।গামছা কে গিঁট দিয়ে পঞ্জাবি করে পরানো হল,গামছা কে করা হল ধুতি।সকলে উল্লাস।বাজনা বাজছে।বাঁশ খোলকে কঞ্চি দিয়ে বাজানো চলছে,বাজছে তাল পাতার বাঁশি।পলি ব্যাগকে মুখে করে ফুলিয়ে চলছে বম ফাটানো।

                        এদিকে কনে সেজেছে মহাসমারোহে।ইঁট গুঁড়া করে টুক,পলি মাটিকে চন্দনের মত করে পরানো হয়েছে। লতানো নূপুর গাছকে সুন্দর ভাবে মানানসই করে হাতের,কানের,গলায় গহনা পরানো হয়েছে ।


         বর এসে পৌঁছেছে।উলফা মুঠিতে মুখ লাগিয়ে শঙ্খ ধ্বনি মেয়ের বাড়ির।শাশুড়ি মা জামাই কে মিষ্টি মুখ করালেন।শালীদের ঠকানোতে নেই কোন ঘাটতি।বরযাত্রীর দুষ্টুমি চলছে পুরোদমে।কনে কচু পাতায় মুখ ডেকে বরের চারপাশে ঘুরানো হল।মালা বদল হল।মাটি গুঁড়োর সিঁদুর পরানো হল।হাতের বেড়ি দিয়ে শালী শালারা বাসর ঘর আটকালে শ্রীকান্ত পকেট থেকে টাকা(গাছের পাতা )দিল।বরযাত্রী খেতে বসলো।কাদা চেপে নানান খাবার,ধুলো হল ভাত,ঘোসিম হল মাংস,নানান গাছের পাতা তরকারি সব মিলিয়ে দারুন আয়োজন।কোন ত্রুটিই রাখেনি কনের বাড়ি।

               এরপর কন্যা বিদায়।একটি মালাতে জল,দূর্বা,ফুল রাখা হল।বাড়ির বয়স্করা ফুল-দূর্বা সহযোগে জলের ছিটা দিয়ে হাতে টাকা(গাছের পাত),কেউ গহনা (লতা গাছ বা নরম মাটিতে তৈরি)আশীর্বাদ করলেন।কোণে কেঁদে চলেছে,বাড়ির মহিলারাও হাউ হাউ করে কাঁদছে।কনের বাবা ও মা জামাইয়ের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে বলে বাবা,আমার মেয়ে কে একটু দেখো,মেয়েকে বলে সব কিছু মানিয়ে নিস।

            দুই জনে হাতে হাত রেখে তৈরি হয় পালকি,পাশপাশি দুই জন করে চার জন হাতে হাত ধরে পালকি তে চাপিয়ে বর কনে কে বাড়িতে আনা হল,সঙ্গে বাজনা ও নাচ চলছে।বেয়ারা গান করছে পালকি চলে ....।

           অবশেষে বাড়িতে অসলো বৌমা।করা হল বরন,মিষ্টি ও জল খাইয়ে দেয়া হল,নাম পালানো হল।প্রীতিভোজে কনেযাত্রী কে খাওয়ানো হল বসিয়ে মহাসমারোহে।

           অবশেষে ফুলশয্যা।কঞ্চি পুঁতে ছাদে ত্রিপল দিয়ে তৈরি হয়েছে শয়ন কক্ষ,সাজানো হয়েছে নানান বুনো ফুল ও লতাপাতায়।থলির ভিতরে অল্প লতা পাতা রেখে মুখ আটকে করা হয়েছে গদি,খড়ের আঁটি শক্ত করে পাশ বালিশ ও মাথার বালিশ করা হয়েছে।বর-কনেকে বসিয়ে দেয়া হল,ঠাকুমা গাইলেন মন খুশ করা গান,বয়স্করা তখন দূরে।ঠাকুমা নাতির কোলে নাতবৌ কে বসিয়ে বললে সাবধানে........................।

"অগ্নিপিন্ড" _মিথিলেশ দাস। দগদগে মাংস থেকে ঝরে পরছে আগুন নতজানু হয়ে বসে আছে অন্ধকার, তীব্র বেগে এগিয়ে চলেছে অগ্নিপিন্ড দুই ধারে ছটফট করছে মুন্ডহীন দেহ, দূরে কোথাও থেকে ভেসে আসছে শঙ্খধ্বনি- সেখানে কি এখনও অন্ধকার! প্রতিটি অগ্নিপিন্ড যেন আজ উন্মাদ মুক্তির পথের স্রষ্টা! নিভে যাওয়া অগ্নিপিন্ডরা পরে থাকে রাস্তায় এগিয়ে যায় জ্বলন্তরা, আলোকিত করে মানুষের মন শিহরন জাগায় শরীরে পথ দেখায় সভ্যতাকে। জ্বলন্ত সেই অগ্নিপিন্ডদের জন্য রইল আমার শতকোটি প্রনাম যাদের আমরা কবিতা বলে জানি।।

Saturday, March 18, 2017

কমনীয়তার কাছে
উদয় সাহা

কমনীয়তার কাছে
             অজস্র কাঁটাগাছ , ঝোপঝাঁড়
ক্যাকটাস স্মৃতিরর স্পন্দনহীন মরুভূমি
            আর প্রতিবাদ রয়েছে
            লাল জবার মতো।
পর্ণমোচী  পাতার দৃপ্ত পদচারণায়
            কত যুগ মাথা নত করেছে
            পার্থিব  লোভ , লালসা।
           
            উচ্ছ্বল উদ্ভাসে নয়
            গৈরিক কল্পনা বিলাসেও নয়
            অক্ষরবিন্যাস , নতুন ইস্তেহার
                      রচিত হয়েছে মিটমিট প্রদীপ নয়
                      রাতের কালোতে মশাল হয়ে।
   ছোটো ইটের সৌধের গা থেকে
             অনুরণন উড়ে আসে
             রাজপ্রাসাদের ঘাসে ঘাসে।

Wednesday, March 15, 2017



আলাদিনের চিরাগ ফিরোজ আখতার




আলাদিনের সেই চিরাগটা যে কোথায় গেলো ? আচ্ছা, চিরাগের সেই জিনটা কি এখনো বেঁচে আছে ? বেঁচে আছে না জিজ্ঞাসা করে টিকে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করাই বোধহয় ভালো ছিল । আমরা তো এখন আর বেঁচে নেই... টিকে আছি । যদি পেতাম সেই চিরাগটিকে, বের করে আনতাম জিনটাকে...! আর চাইতাম... অবশ্য কিই বা চাইতাম ? কিই বা দিতে পারবে জিন্‌ আজকের পৃথিবীতে । আমার সেই স্বপ্নটাকে কি এনে দিতে পারবে যেটা হারিয়ে গেছে অনেকদিন আগেই ? আমাকে কি স্বপ্ন দেখাতে পারবে ঠিক আগের মতন... যেটা আমি দেখতে ভুলে গেছি ! আমার ধূসর স্বপ্নগুলিকে কি আবার আগের মতো বেনীয়াসহকলায় রাঙিয়ে দিতে পারবে যেটা আমি দেখতাম ছোটবেলায়... আমার জন্যও কি এক পৃথিবী স্বপ্ন নিয়ে আসতে পারবে ? এখন তো স্বপ্নগুলো সব হাটে বিক্রি হয় - একটু মাখন লাগিয়ে বললে বলতে হয় শপিং মলে বিক্রি হয় । কত ধরণের স্বপ্নের পসরা সাজিয়ে বসে আছে হাটুরেরা...থুরি, শপিং মলের মালিকরা ! শুধু স্বপ্নের রঙ্‌ গুলো যেন কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে গেছে... তার থেকে ঘুমিয়ে থাকুক সেই জিনটা...! সেও স্বপ্ন দেখুক...! নাকি সেও স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে আমাদের মতো...! কেউ যদি জানো তো জানিয়ো আমায়...।
অব্যক্ত কিছু কথা
আলামিন ইসলাম

আমি সূচের উপর পা দিয়ে হেঁটেছি অনেক সময়,
নোনাজলে কেটেছি সাঁতার ৷
এক-একটা আগুনের পিন্ড ধেঁয়ে এসেছে আমার গ্রহে ৷
আমি নতুনের পথযাত্রি.......
অন্ধকার অমাবস্যার জরায়ু ছিঁড়ে বেরোতে চেয়েছি প্রতিনিয়ত ,
আমার চারপাশে জমাট বেঁধেছে মেঘের শক্তপ্রাচীর !
হাত-পা অসাড় করেছে, বরফ কুচি ৷
দুঃখ  ও আমার সমান্তরালে  অবস্থান৷
অসহায়ত্বের চাদরে এই শরীর ঢেকে গেছে বহুবার ৷
কিন্তুু , বাঁধাদের কারাগার ডিঙিয়ে নির্দোষ পূর্ণিমা আমায় গান শুনিয়েছে ৷
পুষ্পরা ঘ্রাণে ছড়িয়েছে মিষ্টি সুবাস !
শব্দ,  অক্ষর  মগজের ট্যানেলে খঞ্জনার মতো , উম্মাদের বেশে করেছে নৃত্য৷
এ সময় আমার প্রিয় সঙ্গী হয়েছে কাগজের পাতা আর কলমের কালির স্রোত ৷
সভ্যতার মৃগয়া,  বুলেটের ঘায়ে  ক্ষত-বিক্ষত করতে পারেনি ৷
আমি  জয়ী সৈনিকের ছবি এঁকেছি  সারাক্ষণ ,
আমার কল্পনার উজ্জ্বল প্রতিবিম্বে !

Tuesday, March 14, 2017

পুস্তক পর্যালোচনা
পুস্তক- Goআ
লেখক- শৌভিক রায়
প্রকাশক- হাওয়াকল
মূল্য- 80 টাকা
আলোচক- শ্রীনারায়ণ দত্ত (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক)
শ্রীমান শৌভিক রায়ের লেখা "Goআ" ভ্রমণ পুস্তিকাটি হাতে পেয়ে প্রথমেই যেটা মনে হলো -এ ধরণের ভাবনা অর্থাৎ পুস্তিকাকৃতির ভ্রমণবৃত্তান্ত বেশ অভিনবত্বের দাবী রাখে।কারণ নানা সাপ্তাহিক ,পাক্ষিকও মাসিক পত্রিকায় এধরণের বর্ণনা চোখে পড়লেও ভ্রমণমূলক পুস্তিকা একেবারে নতুন।এ ধরণের পুস্তিকা ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিকে যেমন আকর্ষিত করবে তেমনি সংগ্রহ করার পক্ষেও সহজ বটে।পুস্তিকাটির বর্ণনার শুরুই বেশ আকর্ষক।বর্ণনায় লেখকের সাহিত্য রচনার কৌশল,উপলব্ধিবোধ এবংসহজ সাবলীলভাব যেন বেড়িয়ে পড়ার হাতছানি দিচ্ছে।আমার মতো লোকদের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে সাহায্য করে।ইতিহাস আর স্থাপত্যকীর্তির নানা তথ্য লেখকের গভীর অনুসন্ধিৎসার পরিচায়ক।নৈসর্গিক দৃশ্যের বর্ণনা যেন লেখকের উপভোগ্য মনন এবং শিল্পীসত্তার যুগলবন্দী।Goআ-র পার্বত্য পথের বর্ণনা আমার চাপা পড়া কৈশোরের তীর্থস্থান অনামী 'শিলচরের' বিপদসংকুল ইংরেজ আমলের ৩৭টি টানেল সমৃদ্ধ পার্বত্য পথের স্মৃতি উসকে দিয়েছে।সর্বশেষে সূর্যোদয়ের মণ্ত্রোচ্চারণ এক দারুণ সমাপ্তি যেন কোন এক নতুন আবির্ভাবে অপূর্ব ইঙ্গিত।
।।পুস্তক পর্যালোচনা।।
আলোচক- স্বরূপ গুপ্ত
কাব্যগ্রন্থ- অবরোহণ
কবি- বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্য
তেইশটি কবিতা নিয়ে"বইতরণী ট্রাস্ট" থেকে এই বছরের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে "প্রিয় পঞ্চবিংশতি" সিরিজের "অবরোহণ"। কবি শ্রীমতি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্য। "অবরোহণ" শব্দটি প্রচ্ছদে যুক্ত হওয়ায় মনে প্রশ্ন জাগে "আরোহণ" বলে কোন পর্ব আছে কি? উত্তর নিশ্চয়ই সময়ে পাওয়া যাবে। তবে প্রশান্ত সরকারের ছিমছাম প্রচ্ছদ এক ঝলকেই বইটিকে ভাল লাগায়।
বাংলা কবিতার বিবর্তনের ইতিহাস যদি অনুসরণ করা যায় তবে আমরা দেখবো কবিতা নিয়ে বহু কথা হয়েছে। কবিতা কি, কবিতা কেন, কবিতা কার জন্য ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের আলোচনা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছে। যে কোন লেখারই শ্রেষ্ঠ বিচারক, আমার মতে, কাল বা সময়। সময়ই বলবে আজ যা কবিতা বলছি তা আদৌ কবিতা ছিল কি না। ঠিক এই কথাটি মাথায় রেখেই ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে লেখা পাঠকের মনকে নাড়া দেয়, পাঠককে স্পর্শ করে, পাঠকের বোধ ও চেতনাকে জাগিয়ে তোলে, এক অদৃশ্য দর্পণের সামনে পাঠককে দাঁড় করিয়ে নিজের মানস-প্রতিবিম্ব দর্শন করায় তা-ই কবিতা, তা-ই সুলেখা। শ্রীমতি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যের কবিতা সেদিক থেকে একশো ভাগ সার্থক। তাঁর কবিতা রচনার সার্থকতা নিয়ে কোন প্রশ্নচিহ্নই তাই আসে না।
বইয়ের উপক্রমণিকায় "অবরোহণ থেমে যাবে একদিন..." দিয়ে যে কথাগুলি কবি বলেছেন তার থেকেই মূর্ত হয়ে ওঠে কবি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যের কবিতাগুলি কি হ'তে পারে। এই ভূমিকাটিকেও আমি কবিতা বলেই গণ্য করছি। ভূমিকাটিই বইটির গত বেঁধে দেয় যেন।
কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা "বাবা"। কবি বর্ণালী এখানে উত্তর খোঁজেন আপাতসহজ কিন্তু সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটির- "তবু বাবা ফিরে এলো কই?" উত্তর কি কেউ দিতে পারেন? না পারেন না। মানব জীবন যায় কেবল, ফিরে আসে না। ফেরে নি কেউ আজ অবধি। একটি ব্যক্তিগত অনুভূতিকে এভাবে সামগ্রিকতায় অনায়াসেই পৌঁছে দিয়েছেন কবি তাঁর এই কবিতাটিতে।
কবির সমাজসচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায় "... ইঁটের ভাটায়/ খুন হয়ে যাবে না তো- ধর্ষণের পরে/ একাকী কুমারী কোনও মেয়ে?" (সেদিনও কি), "বিন্দাস আছি আমি গতানুগতিকতায়" (এক নদী ঢেউ), "অমানুষিকতার ক্ষমাহীন লাজ" (ঘুমিও না) ইত্যাদি সাবলীল লাইন বা শব্দবন্ধে। "আদম তুমি এসো" কবিতাটিতে সঙ্গত প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন- "ওরা কারা ইতিহাস লেখে?/ ওরা কারা যাদুঘরে বন্ধ করেছে/ অস্তিত্বের অস্তিত্বহীনতা?" সত্যিই আজ যেন আদমের আবার ফিরে আসার সময় হয়েছে। নাগরিক যন্ত্রণার তরঙ্গাঘাতে আজ যখন ব্যক্তির অস্তিত্বই সংকটের মুখে তখন পুনর্সৃষ্টির কল্পনা কোন বিলাস না। আর আদম তো সবার মধ্যেই বিদ্যমান। আদি থেকেই শুরু হওয়া দরকার আমাদের যাবতীয় সবকিছুই!
"বৃষ্টি সংবাদ", "এক নদী ঢেউ", "তুমি", "দহন যখন" ইত্যাদি কবিতাগুলির লিরিক চরিত্র ভালো লাগে। ভালো লাগে "তখন ষোড়শী", "সেদিনও কি?" কবিতার নস্টালজিয়া। বস্তুতঃ প্রতিটি কবিতাই স্বতন্ত্রতায় আলাদাভাবেই উজ্জ্বল। কিছু মুদ্রণ প্রমাদ ঘটলেও কবিতার গুণে সেগুলিকে অনায়াসেই উপেক্ষা করা যায়।
মুদ্রণ, কাগজ এবং পেপারব্যাকের জন্য কম দাম (চল্লিশ টাকা) বইটির অপর বৈশিষ্ট্য।
সবশেষে, একটি ভাল বই উপহার দেবার জন্য বইতরণীকে ধন্যবাদ ও কবি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যকে অভিনন্দন। তাঁর কলমের আরোহণ ও উত্তোরণ কামনা করছি।
।।পুস্তক পর্যালোচনা।।
কাব্যগ্রন্থ- আমার রূপনগরের লাল ওড়না
কবি- সঞ্জয় সোম
প্রকাশক- কর্ণিয়া প্রকাশন
মূল্য- চল্লিশ টাকা
আলোচক- স্বরূপ গুপ্ত
কোচবিহার বইমেলা উপলক্ষে "কর্ণিয়া প্রকাশন" প্রকাশ করেছেন সঞ্জয় সোমের "আমার রূপনগরে লাল ওড়না"।
বহুদিন ধরেই কবিতার জগতে বিচরন কবি সঞ্জয় সোমের। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। পেপারব্যাক সংস্করণ এই কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছে শিরোনামহীন চব্বিশটি কবিতা। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে বইটি কবিতার একটি সিরিজ আর সেই সিরিজের নাম "আমার রূপনগরে লাল ওড়না"। সিরিজের নামই প্রমাণ করে কবির মানস জগতে বিচরণকারী কোন এক নারীর জন্যই কবির নিবেদন এই কবিতাগুলি।
সিরিজের শুরুতেই কবি "কিছু কথা"য় অকপট স্বীকারও করেন তা। কবির নিজের ভাষায় "গৃহস্থ কবির বিরহ, বিদ্রোহ ও বসন্ত পায়" আর তাঁর "বিভাবের" উৎসে থাকে নারীর মুখ যে মুখ দেখে তাঁর প্রেম আসে। এই সহজ কিন্তু অত্যন্ত কঠিন উচ্চারণকে অকপটে স্বীকার করার দুঃসাহস দেখিয়েই কবিতার সিরিজে তাঁর মুনসীয়ানা দেখান, খেলা করেন শব্দের সাথে এবং ছেঁকে আনেন তাঁর মানসজগতে থেকে যাওয়া প্রেমসঞ্জাত শব্দসমূহ এবং কল্পনার মিশেলে প্রেমের এক অদ্ভুত স্বীকারোক্তি। এই সাহস দেখানোটাই কবিকে নতুনভাবে তুলে ধরে পাঠককূলের কাছে।
প্রেমের কবিতা লেখা, ব্যক্তিগত ভাবে, অত্যন্ত কঠিন বলেই মনে করি। কবিতার বিষয় হিসেবে "প্রেম" সবচেয়ে পুরোন বিষয়। প্রেম নিয়ে লেখার সংখ্যাও অনেক। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর হ'ল, এই বিষয়ে লেখেন নি এরকম কবি খুঁজে পাওয়াও যাবে না হয়তো। তাই এই বহুল লিখিত একটি বিষয়কে নিয়ে লেখাটা নিঃসন্দেহে একটা চ্যালেঞ্জের মতোই। কেননা কবিতা এক অর্থে coinage বা শব্দচয়ন। একটু তলিয়ে ভাবলে নিজেরাই বুঝতে পারবো যে বিষয় হিসেবে নতুন কিছু আর লেখার জন্য বাকী নেই। সব বিষয়েই লেখা হয়ে গেছে। বিষয় বলতে অবশ্যই মানবজীবনের চিরন্তন শ্বাশত ব্যাপারগুলিকেই বোঝাতে চাইছি। কেননা মহৎ সৃষ্টি সবসময় শ্বাশত বিষয়কে নিয়েই হয়। তাই প্রেমের মতো একটি অত্যন্ত প্রাচীন একটি বিষয়কে নিয়ে লিখতে গেলে সাবধান থাকতেই হয়। শব্দচয়ন এক্ষেত্রে এমনভাবেই করা দরকার যাতে অনুসরণ বা অনুকরণের তকমা না লেগে যায়। সচেতন পাঠক ধরে ফেলেন সহজেই সেই অনুকৃতি। আবার প্রেম আবেগ সৃষ্ট বলেই অনেক সময়েই কবির অচেতনেই এমন শব্দ ব্যবহার এসে যায় যা পূর্ববর্তী কেউ করে গেছেন। সচেতনভাবে আর যাই হ'ক আবেগ প্রকাশ করা যায় না। সচেতনভাবে লেখা মানেই মস্তিষ্কের প্রয়োগ। তাই বারবার বলছি প্রেম বিষয় হিসেবে অত্যন্ত কঠিন। আবার আধুনিক কবিতায় আবেগের সাথে বৌদ্ধিকতার মেলবন্ধন না ঘটলে পাঠকের কাছে কবিতা কবিতা হয়ে ওঠে না। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে কবি সঞ্জয় সোমের "কাল ছিল চুড়িদার আজ পড়েছিস শাড়ি"( কবিতা সংখ্যা-দুই), "কোমর পর্যন্ত এক বিনুনি দুলিয়ে তুই হাঁটিস/ পাগল হয়ে হাঁটি তোর পেছন পেছন" (কবিতা সংখ্যা- তিন), "তোর মুখ দেখে/ চাঁদ লুটিয়েছে তোর উপর" (কবিতা সংখ্যা- পাঁচ), "তুই শুধু আমাদের জন্য সাজবি/ স্নায়ুতন্ত্রে গেঁথে নেব তোর মুখ" (কবিতা সংখ্যা- নয়), "তোর ডাকনাম দিলাম অন্তঃস্বর" (কবিতা সংখ্যা- আঠারো) ইত্যাদি লাইনগুলি আধুনিকতার সাথে সাথে চিরন্তন বিষয়টিকে অনায়াসে তুলে ধরে।
"প্রত্নপ্রেম", "মুখ গুঁজে থাকি তোর বুকে", "নীল ওড়নার কুমন্ত্র", "ঋতুবাঁক", "গোপন আবির", "শরীর যেমন থাকে", "তোর উষ্ণ উপত্যকা" ইত্যাদি শব্দবন্ধ যথেষ্ট বলিষ্ঠ এবং sensuous এবং কবির মানসিক বলিষ্ঠতার পরিচয় বহন করছে। ভালো লাগে "শাড়ির খোলে সময়ের হাওয়া আঠা হয়ে বসে", "রোহিনী তারা হয়ে ওঠা তোর দুটো চোখ", "প্রণয়পাতায় ফুরিয়ে যায় এক ঋতু", "প্রেম আমাদের শুদ্ধ করে" ইত্যাদি প্রকাশভঙ্গিমা। "বিষ বাতাস লাগছে গায়ে, জল হারিয়েছি গতি", "ভাল কাজ আমাদের বিশেষ নেই", "আমাদের শব্দে রতির গন্ধ যেমন আছে" ইত্যাদি শাণিত প্রকাশে কবি প্রকাশ করেন তাঁর সমাজমনস্কতা। তবে পরের দিকের কবিতাগুলি আমার ধারনায় আগেরগুলির তুলনায় খানিকটা অনুজ্জ্বল। হতে পারে একই বিষয়ে পড়তে পড়তে এবং একই প্রকাশভঙ্গীর পরিচয় নিতে নিতে একটু একঘেয়েমি আসে! তবে এরকম কবিতার সংখ্যা একদমই নগন্য। অন্য কবিতাগুলির তুল্যমূল্য বিচারে অবহেলা করা যায় সহজেই। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু কবিতায় শব্দের আকার ছোট হয়ে যাওয়াটা প্রকাশককে লক্ষ্য রাখতে হবে (সাত, এগারো, কুড়ি, বাইশ)। কোন বইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই ছোটখাটো বিষয়গুলি। প্রচ্ছদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলবো। পুরো পাতা জুড়ে না হ'ক আরও খানিকটা জায়গা ব্যবহার করা যেতে পারতো বলে মনে হচ্ছে। যদিও প্রচ্ছদ ছবিতে অভিনবত্ব আছে খানিকটা। তবে প্রকাশনার জগতে কাজ করতে করতেই অভিজ্ঞতা বাড়ে আর ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুবাদে বলতে পারি এতো কমবয়সে প্রকাশনার গুরু দায়িত্ব তুলে নেওয়াটাও প্রকাশকের সাহসকেই প্রকাশ করছে। বই ছাপলে খরচা হয়। প্রকাশককেই সেটা দিতে হয়। কবে বই বিক্রী হয়ে টাকা উঠবে সেটা ভগবানও জানেন না। বিশেষ ক'রে কবিতার বই। মূল্য মাত্র চল্লিশ টাকা হলেও আমরা বেশীরভাগই বই কিনি না। এটা মাথায় রেখেই প্রকাশনার কাজটা করতে হয়।
সবশেষে, কবি সঞ্জয় সোম লিখে যান আরও। তাঁর লেখায় প্রাণিত হ'ক আগামী প্রজন্ম। তবে আবেদন কেবলমাত্র আত্মরতিতেই যেন আটকে না থাকে তাঁর সৃষ্টি। তিনি নিজেই বলেছেন "ভনিতা ভন্ডামির কোন লেখা লিখি না।" আমরাও তাই চাই। এই কাব্যগ্রন্থের সাহসিকতা তাঁর আগামী লেখাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ুক। সমৃদ্ধ হ'ক সাহিত্য।

Monday, March 13, 2017

মেটেলির দিন
শ্যামলী সেনগুপ্ত 

বাঘপুল থেকে ডানদিক ঘুরলেই
মেটেলি-হাট চোখ মটকায়
হাট ঢুকে পড়তো আঙিনায়
ফি-বছর কৃষ্ণচূড়ার অজগরে পা গুটিয়ে
বিগত ও অনাগত-র
ককটেল বানাতো এলানো চুল
এখন অবাক চোখে
ফালাফালা তুলে আনছে
আম-সুপুরির রম্যগান
ছায়াবাড়ি   আর
বুড়ো-মাষ্টারের সারল্য

Saturday, March 11, 2017

আজকের দিনটি প্রশান্ত কুমার ঘোষ আরও একটা দিন পালিত হল।নারী দিবস। বেশ ঘটা করেই বিশ্বব্যপী পালন হল দিনটি।নাচ,গান,বক্তৃতা,মিটিং,ইটিং,ডেটিং আরও অনেক হাল ডিজাইনের ঢেউয়েই পালন হয়ে গেল।কিন্তু প্রশ্ন হল নারী দিবস পালন করলেই কি নারী মর্যাদা পাবে?নাকি প্রতিটি মুহূর্ত সচেতন হতে হবে নারীকে,আমাদের সমাজকে। না হলে এটি একটি প্রতীকী দিন হিসেবেই পালন করা হবে । ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁঁচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হন।সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। আন্দোলন করার অপরাধে তাদের অনেককে আটক করা হয়। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেক নারী শ্রমিক। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।১৯১০ সালের এদিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির রাজনীতিবিদ এবং জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম স্থপতি ক্লারা জেটকিন ও লুইস জিয়েটস ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।আন্তর্জাতিক নারী দিবস যার আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়, নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপন,মহিলাদের আর্থিক,রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমমর্যাদার স্বীকৃতি প্রদানের জন্য। বিভিন্ন দেশে নারীদের প্রতি যে বৈষম্য, নির্যাতন আর অবজ্ঞা-উপেক্ষা চোখে পড়ে তার বিরুদ্ধে গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদেরকে প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ করতে এই দিনটি নারী জাগরণের অভয়বাণী বহন করে আনে। তাই এর আবাহন নিয়ত ও আবেদন শাশ্বত। নারীর সমঅধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী পথ পরিক্রমণে আজ বিশ্বের সচেতন নারীরা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের দেশে একদিকে যেমন সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীদের গৌরবময় সাফল্য ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকতে দেখা যায়, অন্যদিকে তেমনই আবার নারীদের প্রতি বৈষম্য আর নির্যাতন, অবিচার-অত্যাচারের চিত্রও কম চোখে পড়ে না। আমরা শিক্ষা-দীক্ষায়, মেধা-যোগ্যতায়, এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও নারীদের যে অভাবিত সাফল্যজনক ভূমিকা পালন করতে দেখি, তা এক কথায় বিস্ময়কর। আবার যখন নারী নির্যাতন আর বৈষম্যের কালিমালিপ্ত চেহারাটি ফুটে উঠতে দেখি তখন নারীর এই অগ্রযাত্রা অনেকটাই নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। নারীকে যে সমাজে মানুষরূপে গণ্য করার চেতনা যতবেশি শক্তিশালী, সেই সমাজ তত বেশি সভ্য এবং উন্নত। আমাদের নারী সমাজের সামনে রানী দুর্গাবতী, প্রীতিলতা,সরোজিনী নাইডু,মাতঙ্গিনী হাজরা, মাদার টেরেসা,ইন্দিরা গান্ধি,প্রতিভা পাতিল,বেগম রোকেয়া আঙ্গেলা র্মেকেল,প্রমুখের ন্যায় প্রগতিশীল, আধুনিক, বিদূষী ও সত্সাহসী এক মহীয়সী নারী আদর্শরূপে জ্বলজ্বল করছেন। আমাদের সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য চেতনার সহিত সম্পৃক্ত পথ অতিক্রম করে অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমাদের নারী সমাজ। কবি নজরুল বলেছেন ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ এই কথার সারবত্তা আমরা সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে পলে পলে উপলব্ধি করি।নারীর কর্মনিষ্ঠা, সংস্কৃতি চেতনা আর অপত্য স্নেহ-মায়া-মমতা সুধায় জগত্ সংসারে এক অপার্থিব প্রেরণা সঞ্চারিত হয়। মানবজীবনে ও প্রকৃতিতে এই সুধারস সর্বত্রই প্রকটভাবে দৃশ্যমান। আর এই সারসত্যকে হূদয়ঙ্গম করতে কারও কষ্ট হয় না। এখন কর্মজীবনে নারী অনেক অনেক সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। নারীকে আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার দিন ফুরিয়ে এসেছে। অবশ্য নারীর উপর হিংসাশ্রয়ী ও পাশবিক নির্যাতন চালাবার মতো পরিস্থিতি যে এখনো সূর্যের মত উজ্জ্বল তা টিভির পর্দায় চোখ রাখলে বা খবরের পাতায় উল্টালেই বুঝা যায়।আজও সমাজের অভ্যন্তরে দগদগে ঘায়ের মতোই নারী নির্যাতন,খুন ইত্যাদি। এই অপশক্তিকে দমন করতে বিদ্রোহী কবি ‘জাগো নারী জাগো বহ্নি শিখা’ বলে তাদেরকে জেগে উঠার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
"বসন্ত এসে গেছে"
--- উদয় সাহা


আমাদের বাড়িতে মাছ দিয়ে যায় রফিকুল ভাই
সেদিন সকালে এসে বলল , "সকাল বেলা ঐ
পাখিটা ভারি মিষ্টি সুরে গায় গো দাদাবাবু ... মনটা উদাস হইয়া যায়!! ! "
আমি বলেছিলাম , "ও যে দূত , বসন্ত এসে গেছে , ভাই "
দুধ দিয়ে যায় যে কাকু
ওনার বাড়ির উঠোনে একটা মস্ত কৃষ্ণচূড়া গাছ
গতকাল আমার মা কে বলতে শুনেছিলাম ,
"দিদি , আপনি কৃষ্ণচূড়া ভালোবাসেন ... লাল কৃষ্ণচূড়া ?
আমার উঠোন জুড়ে এখন লাল ... "
আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে বলেছিলাম -
"বসন্ত গো কাকু , ও বসন্তের লাল"
পাতা ঝরা বৃষ্টির দলে দুপুরের ঘূর্ণির ছন্দ
নিঃসঙ্গ নীরবতা সুরেলা হঠাৎ 
কৃষ্ণচূড়ার ত্রাসে নেমে আসে বসন্ত  ...
কিন্তু
আজ বসন্ত এলে আমি জানালার পাশে
দেখি দুর থেকে--
বসন্ত যদি উৎসব হয় , সে উৎসবে তুই কোথায় ?
পলাশের গায়ে যেদিন তোর নাম লিখেছি
সেদিন বিকেলে আমার ঘরে বসন্ত এসেছিল।
আজ বসন্ত এলে , কঙ্কাল বৃক্ষ যখন প্রসারিত হয়
তখনও আমার মন ডুবে থাকে শোকে
হেঁটেছিলাম আমিও এক অজানা পথে-
ভুলতে পারিনি তোকে-
সেদিন হাসিতে আমার বসন্ত এসেছিল।
আজ বসন্ত এলে , পূর্ণিমার রাত
বাতাসের উষ্ণ সোহাগ , পথ ভরা ফুল
কিন্ত গান আসে না
তোর হাতে হাত রেখে যেদিন গেয়েছিলাম
'আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে ... '
সেদিন আমার কবিতাতেও বসন্ত এসেছিল।
এখন ,
চোখ জুড়ে হা-হুতাশ
তুই থাকলে শীতেও বসন্ত
অক্ষর বৃত্তে সঙ্গীত স্রোত
তুই থাকেলেই আসল আনন্দ।
তবু--
শিশুদের খেলা দীর্ঘায়িত , খেলার মাঠ দখল
মঞ্চে বসন্ত , ব্যাকস্টেজে শীতের অলংকার সকল।
তখনও
আমি জানালার পাশে--
এক অনুপ্রবেশকারী , ভীড়ের শরীরে
ছুটোছুটি পথচারী , শব্দদূষণ চারিধারে
'বসন্ত এসে গেছে '...

Thursday, March 2, 2017


প্রমার সাথে দ্বন্দ্ব

রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়
--------------------------------------

১ কয়েকটুকরো - মেগাটন্ কবিতা চাইলে অফবিটে তোমার ধারালো খবরের কাগজ। গোপন জাদুটোনা - পিসপিস সাইরেন। জাগলারিতে খেলছে মাদারির খেলা। নিঃসঙ্গ তরলের আবেদন...... দৈহিক খিদে ও ক্ষয়.....সব এলোমেলো। হারিকেনে গলে যায় হাওয়ার ছোবল। ২ গোপন বিউটি-স্পটে ১-আঙ্গুল আলতা ভেজাও। প্রিয় প্রমা - পরিচিতি ঢালো বুকে..... কয়েক আউন্স স্পিরিট। নিকোটিন ঠোঁট : পাচ্ছি না স্বাদের পরমাণু। বাতাবি পার্ফিউম : ফাঁকি মুছছে....... চেনা গাছে ঢলছে - মৌমাছির নিষিদ্ধ ঘুম।

Wednesday, March 1, 2017

সুখ-অসুখ ফিরোজ আখতার

আমরা প্রায়ই বলে থাকি সুখে থাকতে গেলে তোমার উপরে কারা আছে তাদের দেখো না, বরং তোমার নিচে যারা আছে তাদের দেখো ৷ তোমার থেকে সুখে কারা আছে তাদের দেখো না, বরং তোমার থেকে অসুখী কারা তাদের দেখো .... তাহলে তুমি সুখে থাকবে ৷ খুবই ভালো কথা | কিন্তু এর থেকে মানুষের একটি মৌল বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় | আমি নিজেও তার ব্যতিক্রম নই ৷ আমার থেকে সুখী যারা তাদের কথা যদি আমি ভাবি তাহলে আমার মন পর হিংসাতে পূর্ণ হবে... ৷ আমি সুখে থাকতে পারবো না ৷ অর্থাৎ, অন্যের সুখ এখানে আমার অসুখের কারণ হচ্ছে... ৷ অন্যের সুখ আমি সহ্য করতে পারছি না ...
আবার আমি যদি আমার নিচের দিকে তাকাই , তাহলে আমার থেকে অসুখী অনেককে পাবো ৷ সেটা আমার শান্তির কারণ হবে, কারণ আমার থেকেও অসুখে লোকে আছে এটা ভেবে আমি সুখে থাকার চেষ্টা করবো ... ৷ অর্থাৎ, অন্যর অসুখ আমার সুখের কারণ হচ্ছে ৷ অন্যরা আমার থেকে খারাপ আছে ভেবে আমি ভালো থাকার চেষ্টা করছি । অর্থাৎ, কোথায় যেন একটা সুর কেটে যাচ্ছে... তাই না ?
বাঁক
আলামিন ইসলাম

আমার সমুখ হতে চঞ্চল বাড়ি -ঘর সরে যায়,
চঞ্চল আমিও এগিয়ে চলি...
কোনো এক অভিপ্রায়ে,
দ্রুততালে !
আঁকা-বাঁকা পথ আর ধূলি -ধূসর মাঠ আমাকে ডাকে ৷
যেখানে বেঁচে আছে আমার মরে যাওয়া বারোটা বছর৷
অদূরেই চোখে পড়ে নদী বাঁক ,
এঁকে -বেঁকে চলা ভৈরব!
আমাদের জীবনও তবে এমনি ?
এভাবে বক্ররেখায় চলে....
এক বাঁক বুঝি আর এক বাঁকের সাথে মিশে যায়?
এসব জটিল মিশ্রাক্ষর !
কিংবা সাংকেতিক কোনো শিলালিপি ৷
পড়ার শেষেও ভুলের একটা জায়গা থাকে .....
এসব অস্পষ্ট কিংবা ছায়াময়...
গভীর শব্দের  বিশ্লেষীত কোনো এক প্রহসন !
ক্রূর আছে, হাসি আছে আরও আছে নকশীকাঁথা
শিবু

তোমার কাছে গল্প ছিল গাঁদাফুলের মতন
হৃদয়ের ভাষা নিয়ে হাজির হল এ জীবন

ক্রূর ছিল, হাসি ছিল, ছিল মেঘভাঙা কান্না
হেঁটে যাবার রাস্তা ছিল, তবু উপায় ছিল না।
অরণ্য-সপ্তাহ ধরেছিলবৃক্ষরোপণ
হাইফেন দেওয়া তোমার নাভিমূলে
খাদ ছিল,বন ছিল আর ছিল সুপ্তবাসনা।
সিক্ত সম্পর্ক আর রিক্তের মাঝে
তালপাতা হাওয়া আজ গোপনে কথা বলে।

শুকনো ‘ঘা’-এর মতন আজও জেগে আলো-ব্যাথা
ক্রূর আছে, হাসি আছে আর আছে নকশীকাঁথা


কবির ঘর
-উদয় সাহা
কবির ঘরে ঢুকো না--
যেদিন কবির ঘরে ঢুকবে , চার দেওয়ালে চোখ ফুঁটবে
ঘরের মেঝেরা নৃত্যের তালে গা দোলাবে
কবির ঘরে ঢুকো না , তুমি যাদুময় হয়ে যাবে
ঘরভর্তি টুকরো কাগজ
প্রতি কাগজে ঝলসানো মগজ
আসবাবপত্রের কোঠরে কোঠরে ঘুন পোকার গান ;
ছোট্ট একটা শোবার স্থান--
অগোছালো দুটো বালিশ

সাক্ষী কবির অবিন্যস্ত আস্ফালনের শ্বাস
কবির ঘরে ঢুকো না--
টেবিলে প্রেমিকের গল্প কোলাজ তৈরী করেছে
প্রিয় উপন্যাসের পাতায় পাতায় প্রেমের ভাঙাচোরা লাইন সেজেছে
কবিতার খাতায় একটি জীবাশ্মের অবস্থান ;
কবির ঘরে ঢুকো না--
দশক পুরোনো ইতিহাস নরম দুঃখে আল্পনা আঁকে
নিজস্ব জীবনী পেতে পারো অক্ষরের ফাঁকে ফাঁকে।