যেভাবে এখন আছি
চৈতালি ধরিত্রীকন্যা
একজন মৃত জীবিতের কাছে ঘোরে অথবা একজন জীবিত একজন মৃত মানুষের কাছে। আসলে দুই ভিন্ন মেরু নিয়ে যাদের একসাথে বাস করতে হয় তাদের জন্য রেখে যেতে চাই একটি তাঁতকল। দীর্ণ হতে হতে সবাইকে সুন্দর হতে হয়। তাই চাঁদকে নিয়ে যদি ৯০ ডিগ্রি কোন আঁকি সেসময় লম্বের দুপাশের তফাৎ বোঝা যায় না, তবু হিসেবে মেলাতে কম্পাসের কাছে যেতে হয়। দিকভ্রান্ত নয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে আমরা এগিয়ে চলি , তাই মৃত আর জীবিতের কোনো শেষ বিন্দু থাকে না। সমান্তরাল রেখা ঘিরে ঘিরে সূঁচাগ্র হতে থাকে।
মস্তিষ্কের জালিকা রসে কাঁটাঝোপ, কাঁটাতার। আমাদের আবরণী কলায় লেপ্টে থাকে কত পরগাছা, আমরা কখনো হারিয়ে ফেলি বিবেকের বিচারবোধ। এ সময় কোনো নিঃসঙ্গ পথিক দিতে পারে জলপূর্ণ একগ্লাস। বন্ধুত্ব নিয়ে আসে কোনো অচিন পাখির ঠোঁট ছুঁয়ে।
একই ছাদনার নীচে অক্ষমতা, অলসতা পুনরায় ঈর্ষা ডেকে আনে। কোনো ব্যক্তিবর্গের পরিমণ্ডলকে ত্রিকোণের ছাঁচে ফেলা যায় না বলে বোঝাপড়ায় হোঁচট খেতে হয় বারবার। ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবার আগে বাধ্যতা। পুনরায় হলুদ কার্ড দেখায়। স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের কাছে দাঁড়াই। খোলা ময়দানে দুই ভিন্ন মেরুবাসীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী মত্ততায় দোলনার লড়াই চলতে থাকে। একজনের ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাস গতিশীল করে তোলে অনেক বেশি। বোঝাপড়ার ভেতর দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়।
ব্যাসার্ধ নিয়ে যাদের এতো চিন্তা তারা কর্কটক্রান্তি অথবা মকরক্রান্তি রেখার মর্মকাহিনী ভালো জানে।
বিষুবরেখায় দাঁড়িয়ে গ্রিনেজ বুকে নাম তোলার প্রতিযোগিতায় যারা দৌঁড়োয় তাদের ব্যাসের বাইরেও সূচিপত্র তৈরী করতে হয় বলে একটি শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। এ শৃঙ্খলা আপনতার সাথে আপন বন্ধন। এখানে সময় অসময়কে ফেরে, অসময় সময়কে ডাকে। এর পর দেশে দেশে প্রীতিলতা থেকে বৃক্ষান্তরে একটি পরিধি রচিত হয়। আমরা তরীর সন্ধানে খেয়াঘাটে দাঁড়াই। সখ্যতা সোনার কাঠি রূপার কাঠি নিয়ে কন্যাকে জাগিয়ে রাখে। স্থানান্তরণ ঘটলেই সংবেদনশীলতা অবশ করে দেয় কাঠির টানাপোড়েন। একটি যুগান্তের গাছ।
দলিলের কোনো নির্দিষ্ট নিশানা দিয়ে বৃদ্ধ হতে যাচ্ছে। এখানে তার রস টেনে টেনে আরো কি খেতে চাও? কন্যার অনুপস্থিতিতে এ মানচিত্র মূল্যহীন। সমুদ্রের পেখমরঙা রং যে দেখে নি তার দৃষ্টিতে তার মেধায় নুলিয়ার পরিশ্রম চোখে পড়বে কিভাবে?নেলকাটার , নাপিত, ধোপার কাছে জিজ্ঞাসা না থাকলে স্নান সেরে নেওয়া যায় না, শুয়ে থাকার মধ্যে কখনো কোনোদিন বোধের যোগ্য মন্ত্রোচ্চারণ যারা করে না তারা আলজিভের মর্যাদা জানে না। এদের কাছে জোনাকিরা আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়, এক জোনাকি দামামা বাজিয়ে কি করে এগোয়! বোধিবৃক্ষে হতাশা আসে, সময়টা নিরালম্ব দাঁড়িয়ে আছে। তবু মন ছুঁতে চায়। মনের সাথে টেনে টেনে শরীরও ছোটে। চলমান হুল্লোড় ছাড়া কোনো নিয়মাবলী রচনা করা যায় না। ঝাঁপি থেকে যে মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে এমন সবুজ চোখে তার হাসি কড়াপূর্ণ রস থেকে উঠে আসে। আমরা যারা পাঁকের থেকে পা তুলে ছুটি দূর থেকে ক্রমশ এগিয়ে আসা ওভারব্রিজ দেখতে পাই।
প্রতিজ্ঞা নয় নিজের দূর্বলতায় এক থেকে শেষ হবো না এই আলিঙ্গনে ছোলা গুড়ে মন ভোলানোর দারুন তারিকা যারা সাজায়, তাদের অগোছালো স্মৃতিকথা থেকে জানি অলসতা পত্রবিন্যাসে সালোকসংশ্লেষের নামে উই পোকার বিস্তার ঘটে। উই পোকা কে চেনে? আমি শুধু দেখি উই পোকার পাখা।
পূবের আকাশে যখন রোদ ঝলমল করে তখনি দিনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় গভীর জলাশয়ে। এ সময় কি পবিত্র না পাপী? আমাদের বাহাদুরী উদ্বাস্তু হলে আমরা ফুটপাথে বসে রচনা করি। বিস্তারের কৌণিক দূরত্বে শিবিরে শিবিরে জ্বলতে থাকে কুপির আলো , মশাল। খেলা দেখি দুলকি চালে ভেল্কিবাজি। শীতল ভাবনা থেকে খেলা করে শঙ্খচূড়, গোখরোর দিনযাপনের অধিকার। বৃত্তের ভেতরে রঙের সিরিঞ্জ নিয়ে যারা রক্তপুঁজের খেলা করে তাদের দুঃখ স্রোতের মধ্য দিয়েই পুণর্জীবনের বীজ বপন করে কোনো প্রতিবেশীর গর্ভ। সূর্যের এক থলি উত্তাপ নিয়ে আমরা আপাততঃ পরাধীনতা স্বীকার করি। বড় বিপর্যয় না হলে কিশলয় জমবে কেন ? এসময় অন্তরঙ্গ পত্রপত্রিকা খুলে দেখে নিই বিশ্রামের দিন কবে?
নীলাকাশ, তুমি কি শুধুই কালো চাঁদোয়ায় মুখ ঢাকতে ভালোবাসো? যে ছোবলে তোমার অপরিসীম লজ্জা ও নিতান্ত পরাজয়, তার কান্না অসহনীয় যন্ত্রনায় কি করে সহ্য কারো! নীলাকাশ ভ্রু-যুগলের দুর্বার আহ্লাদ নিতে তোমার কি ইচ্ছে জাগে না? কোন অবচেতনে তোমার পিপাসার রোদ কেড়ে খায় তারা! তোমার কি ঘন্টা বাজাতে ইচ্ছে হয় না? "বুদ্ধং স্মরনং গচ্ছামি"র মন্ত্রে তুমি তাদের ক্ষমা কারো কোন অছিলায়?
আমাদের জারিজুরি উদ্বাস্তু হয়ে হেঁটে যায় অনন্ত দিক। মাটি ও বাতাসের স্বাদ নিতে গিয়ে বহুজনের ভিন্নতার রূপ দেখেছি। আমরা প্রতিনিয়ত পালিয়ে বেড়াই। পালিয়ে বেড়াই নিজস্ব কক্ষপথে। আমাদের পতাকার নকশা বোঝাবো কোথায়? তাই কিছুদিনের জন্য চুপ করে থাকা। চিত্রল বুকের অন্তঃস্থল থেকে একটা সবুজ বিস্তীর্ণ প্রান্তরের গর্ভবতী রূপ এঁকে যাই নীরবে থেকে।
ভয়াবহতার মধ্যে যে ভ্রুণ জন্ম নিল আজ তার মায়ের জন্য একটুকরো আঁচল ছাড়া কি দিতে পারি এসময়! এই মহাসময়ে?
দেয়াল জুড়ে স্লোগানের যে গান বেঁধেছে সেই কুঁড়ি নিয়ে রেখে দিই কোনো সংরক্ষিত পুষ্করিণীতে। আর ধনুর্বান হাতে শৈশব স্মৃতি উঠে আসে। অগ্নিবাণ হলে পুষ্পবান কেন হবে না, যেসব শিশুরা এসব ভাবে সেইসব শিশুদের কাছে আমি জাবর কাটার মতো কিছু নিমন্ত্রণ রেখে যেতে পারি মাত্র। জীবন বৃত্তান্ত নিংড়ে মেরু দেশে স্থায়ী ভাস্কর রেখে যাবার রসদ যোগানদার আমরা কেউ। ভাস্কর্য খচিত স্তম্ভে একদিন ছুঁয়ে যাবে আকাশ। নক্ষত্র ঘেরা আকাশে দেখবো আজকের অসহায় প্রতিবাদহীন কান্না চোখে আনন্দের বিচ্ছুরণ। তপস্যায় ক্লান্ত ঋষির উজ্জ্বল চোখের মতো। আমরা গভীর উন্মাদনায় আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গাইবো ভালোবাসার জয়গান। তুমুল হুল্লোড়ে আমাদের জিজ্ঞাসা চিহ্নগুলি আড়ালে থেকে মুক্তোমালা বাঁধবে। আর এরপরই মহাসমুদ্রের জলরাশির ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাবে চরাচর নরম বালুকারাশি।
No comments:
Post a Comment