`ভিন দেশের এক পথ....`
হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে
আকাশলীনা ঢোল
'পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি
আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী '
সত্যিই তো, জীবনে কত সময়ই আমরা চলতি হাওয়ার পন্থী হয়ে পেরিয়ে যাই কত ধরনের পথ, কত চড়াই -উৎড়াই, কত পাকদন্ডী, কত মসৃণ, কত দুর্গম পথ। জীবনের এই পথগুলি বড়ই বিচিত্র, নানা গল্পকথায় গাঁথা। কোনও কোনও পথ দৃষ্টিগ্রাহ্য, আবার কোনওটি নয়। তবে জীবনের গন্তব্যে পৌঁছানোর পথ নয়, আজ বলব বাস্তবের পাথর -মাটি-কংক্রিটের পথের কথাই। আজ অবধি অনেক ধরনের পথ অতিক্রম করেছি, তবে কিছু কিছু পথের স্মৃতি রয়ে যায় মনের মণিকোঠায়। বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে করে সেইসব রাস্তায়, ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে অমলিন স্মৃতিগুলিকে। তেমনই একটি পথ হল উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার দলগাঁও থেকে ভুটান বর্ডারে অবস্হিত মাকড়া পাড়া চা বাগান যাওয়ার রাস্তাটি। দলগাঁও থেকে যাত্রা শুরু করে লালপুল পেরোনোর পর থেকেই রাস্তার দুধারে দেখতে পাওয়া যায় চাবাগান। যত এগোনো যায় তত ঘন হতে থাকে জঙ্গল, তাপমাত্রাও যেন এক ধাক্কায় নেমে যায় অনেকটাই। আমরা কলকাতাবাসী, এই দৃশ্যগুলি আমাদের চোখকে প্রকৃতই আরাম দেয়। তবে জঙ্গলের রাস্তাটি কিন্তু ভারী মসৃণ, দ্রুত গাড়ি চলার জন্য উপযুক্ত। জঙ্গলের মধ্যেই কোথাও কোথাও জনবসতি, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সহজ -সরল অথচ কঠিন জীবন প্রেরণা যোগায়। আরো কিছুটা এগোলেই দেখা যায় ভুটান পাহাড়ের নীল নীলিমা। কখনও বা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে গভীর খাদ, তো কখনও আবার ধরা দিয়ে যায় শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টি। এ যেন বুকের গভীর ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মতো প্রশান্তি। তারপর, চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়, তার ঢাল বেয়ে নেমে আসা চায়ের গাছ, আর মধ্যিখানে সরু রাস্তা। রাস্তা গিয়ে মিশেছে পাহাড়ের বুকজুড়ে গড়ে ওঠা মাকড়াপাড়া কালী মন্দিরের সিঁড়িতে। তারপর? তারও পর পথের প্রবেশ ঘটেছে ভিন্ন দেশের মানচিত্রে। পাকদন্ডী সেই পথ ঘুরতে ঘুরতে গমতু গুম্ফার সীমানা ছাড়িয়ে পাড়ি দিয়েছে মহাপ্রস্হানের পথে। গানের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, 'এ যেন অজানা এক পথ/ কে জানে কোথায় হবে শেষ?' একদিন সেই পথের উপান্তে উপনীত হব, এমন আশা মনে পোষণ করেই বারবার ছুটে যাই সেই হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে।
No comments:
Post a Comment