`.....ঐ পথের ডাকে`
পথ
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
এ পথ গেছে কোন্ খানে গো কোন খানে...
কে জানে! নির্ভেজাল শৈশবের নদী বাঁধের রাস্তা ধরে ছোটা আর সকলের চেয়ে পিছিয়ে পড়া দৌড়ে সেই মেয়ে কখন যে নিজের এক রাস্তা খুঁজে পেয়েছিল, আর আদৌ সে পথ কি তার একার! একার কিছুই তো নয় এ পৃথিবীর। শুধু নির্জন রাতের সে প'ড়ে থাকা বিষন্ন সাদাটে পথটা আর দু:খ যা সব তার। মাঝে মধ্যে দু একটা কুকুর কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। এদিক ওদিক বিড়াল পেরিয়ে যায়। কখনো থমকে দাঁড়ায় পথের মাঝখানে। রেলিং বারান্দা থেকে কতগুলো সবুজ লতানে মানি প্ল্যান্ট বা সদ্য নতুন পাতায় মোড়া শেফালি গাছটাকে সঙ্গে নিয়ে সাক্ষী থাকে সেই মেয়ে। যে জীবনেও প্রাচীনা প্রবীণা এই পথগুলো বেছে নিতে চায়না।
পথ দিয়ে কে যায় গো চলে/ ডাক দিয়ে সে যায়... ঐ পথের ডাকেই তো তার ঘরে থাকা দায় হয়ে ওঠে। বাঁশির সুর বেজে ওঠে প্রাণে বুকের গভীরে স্তব্ধ রাতে। সবটুকু বেদনা আর যন্ত্রণায় যা রাতের আলোতেই স্পষ্ট। পূর্ণিমা এলে চাঁদ জ্যোৎস্নায় যেন সাগর থেকে ডাক আসে। পাহাড় সবুজ পেরিয়ে যায়, কখনো অজস্র লোহার চাকায় বাঁধা হয় পথ। ছোটে সে আপন মনে, কখনো মহানগরীর ভুলভুলাইয়ায় পথ চিনতে চিনতে দিন যায়, রাত যায়। কখনো উড়ানের দরজায় পাখি হতে পারে। কে চেনে আর! নিজের মনেই চোখ ছড়িয়ে দিয়ে কোন নির্দিষ্ট অকুল ভয়ঙ্করের কোন ভাবনা নয়। জীবনের অন্ধিপ সন্ধি তো টেনে নিয়ে যায় কখনো এলোমেলো লক্ষ্যহীন। কখনো বা নির্দিষ্ট লক্ষ্য আর গতির দিকে। আসা যাওয়ার পথের একধারে সেই বাড়িটা।
কেউ এপারে আসবে বলে হাত বাড়িয়ে দেয়। কেউ বা নিজেই নৌকোর চড়ে বসে। এপারের কথা অন্য পারে পৌঁছে দেয় সুর আর বাণীর মিশেলে। কখনো উদাস সে মেয়ে ভাবে এ পথ ছেড়ে, এ নির্দিষ্ট বাস অতিক্রম করে কোথায় যাবে!
জীবনের গতি কোথায় নিয়ে যাবে দু'আঙুলে আঙুল জুড়ে! কখনো গেয়ে ওঠে "আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ। " কাকে যেন ডেকে বলে, 'পান্থ তুমি, পান্থ জনের সখা হে... ''পথে চলায় তোমার যেমন আনন্দ আমারও তেমনি। ' এই যে স্বাধীন বেহিসেবি পথ নিজের করে খুঁজে নেওয়া, সে কোথায় চলেছে!
কখনো কালো অন্ধকার ময়, কখনো আলোয় ভরা পথে চলতে চলতে হাজার কাজের মাঝখানে মন গুন গুন করে। 'এ পথ গেছে কোনখানে গো কোনখানে/ তা কে জানে তা কে জানে! '
কোন দুর্ভেদ্য পাহাড়িয়া পথ, কখনো সাগর বেলায় বালি কাঁকরের রাস্তা। মনে মনে কোথাও পৌঁছনোর দুরাশা নেই। আসলে যে পথ দিয়ে শুরু, সে পথের শেষে কি আছে কে জানবে, কেমন করেই বা জানবে! সে পথের খোঁজ করলেই পাওয়া কি যায়!
অজস্র পাথর ছড়িয়ে আছে। কখনো ঝর্ণা কখনো বাঁশির সুর। পথ চলতে চলতে নতুন হাওয়ার গন্ধ এসে লাগে, মনে হয়, 'তুমি হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা ধন... ' গোপন পথে নিজের মত বেরিয়ে পড়া। কোন গন্ধে যে বাতাস মেতে ওঠে কে জানে! যে মেয়ে পথ হারিয়েছে, তাকেও সচেতন করে তোলে ঐ বাতাসিয়া পথ। সে পথ রাঙা ধুলোর। কোন্ মালা থেকে যে পাপড়ি ঝরে পড়েছে! এমন করে নীরবে পথ বেয়ে এল যে, কোন সাড়া নেই তার, নিরুত্তর। পথ ই খবর পাঠালো, যেতে হবে। বেরিয়ে পড়। সেই জীবনের জীর্ণ পত্রগুচ্ছ কুড়িয়ে সেই তো হেঁটে চলা... আগামীর আলো অথবা অন্ধকার সে-ই তো দেখাবে....
No comments:
Post a Comment