`ভাইয়ের সঙ্গে পথে....`
বাড়ি থেকে স্কুল
লীনা রায়
আমাদের বাড়ি ছিল ডাক বাংলোর পাশে।ভাই আর আমি পড়তে যেতাম আর আর প্রাইমারি স্কুলে।বাড়ি থেকে অনেকটা দূর। স্টিলের বাক্সে বই নিয়ে দু ভাই বোন সকাল সাড়ে ছটায় বাড়ি থেকে বের হতাম।স্কুলের সময় ছিল সকাল সাতটা থেকে দশটা।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমেই যেতাম সুভাষ পল্লী ক্লাবে। ক্লাবের এক পাশে সুরেশ কাকু মূর্তি বানাতেন। বিভিন্ন দেব দেবীর।খানিকক্ষন সেই মূর্তি দেখে তারপর স্কুলের দিকে।প্রতিদিন মূর্তি দেখতাম।ভাল লাগত খুব।
এরপর দর্জি দিদির বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে সোজা টাউন ক্লাবের মাঠে। মাঠের পাশে এস এস বি ক্যাম্প।মাঠের ধারে ক্যাম্পের কাঁটা তারের বেড়া।সেখানে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে মার্চ পাস্ট দেখা।তারপর ক্যাম্পের পাশ দিয়ে খানিকটা হেঁটে কসাই পট্টি।ওখানে রাস্তার ধারে একটা বড় ডেওয়া গাছ। হলুদ রঙের ফল, ভেতরটা অদ্ভুত গোলাপি রঙের।মাটিতে অনেক পড়ে থাকত।কয়েকটা কুড়িয়ে নিতাম।ফলটা ফাটিয়ে স্লেট মুছতাম।
এরপর ছিল কবরখানা। ডাইনে, বাঁয়ে কবর। মাঝে রাস্তা। সেটা পেরিয়ে সামনে বড় মাঠ।চারদিকে অনেক আমগাছ। আর মাঠ পেরিয়ে নদী– সাপটানা।সেই মাঠেই আমাদের স্কুল।
ছুটির পর ফেরার রাস্তা এক হলেও কর্ম কান্ড ছিল অন্য রকম। বন্ধুরা ঘুরে ঘুরে কবরখানা দেখতাম। প্রতিটি কবরের আলাদা গল্প। যদিও সেসব বন্ধুদের মুখে শোনা।এরপর ক্যাম্পের ধার ঘেঁষে যে রাস্তা সেটা ধরতাম।
ক্যাম্পের কাঁটা তারের বেড়ার পাশে টেলিফোনের পোল ছিল। সে সময় সিনেমার পর্দায় টেলিফোন দেখেছি। সচক্ষে দেখি নি।আমি আর ভাই পোলের গায়ে কান লাগিয়ে কথা শোনার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম।
একবার আমি পোলে কান লাগিয়ে কথা শোনার অপেক্ষায়। ভাই একটু দূরে দাঁড়িয়ে।হঠাৎ একটা গরু আমাকে গুঁতিয়ে ফেলে দেয়।পড়ে গিয়ে আমার কান্না শুরু।মনে আছে, ভাই আমাকে তুলে পঁচিশ পয়সা দিয়েছিল। আমাকে কাঁদতে মানা করেছিল। আজ ভাই নেই।ছোটবেলায় আমার কান্না সহ্য নি।কিন্তু বড় হয়ে সব ভুলে কাঁদিয়ে চলে গেল।
এরপর আবার টাউন ক্লাবের মাঠ। চোর কাঁটায় ভরে থাকত। আমি আর ভাই চোর কাঁটার মাঝে ফড়িং ধরতাম। রাজা ফড়িং,রানী ফড়িং, বাঘা ফড়িং – ফড়িংয়ের কত রকমফের।আমার অবশ্য লাল রঙের রানী ফড়িং খুব পছন্দের ছিল। সারা জামা ভর্তি চোর কাঁটা। এবার মাঠ পেরিয়ে সুভাষপল্লী। সুরেশ কাকুর মূর্তি বানানো দেখে বাড়ি ফেরা।
আজও চোখ বন্ধ করলে স্পষ্ট দেখতে পাই সেই রাস্তা, চোর কাঁটা আর ফড়িং ভর্তি মাঠ, ক্যাম্পে মার্চ পাস্ট। আমি আর ভাই হাত ধরে স্কুলে চলেছি – স্টিলের বাক্স হাতে।
No comments:
Post a Comment