মুজনাই সাহিত্য সংস্থা
লিটিল ম্যাগাজিন
Tuesday, July 22, 2025
Sunday, July 20, 2025
Wednesday, July 2, 2025
অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা ১৪৩২
সম্পাদকের কথা
সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনা আমাদের প্রত্যেককে ব্যথিত করেছে। জীবন যে অতি ক্ষণস্থায়ী সেটা বুঝেছি সকলেই। কিন্তু তবু এই এক জীবনে কত সংঘাত, কত মনোমালিন্য। যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে দুটি রাষ্ট্র নিজেদের মধ্যে প্রবল যুদ্ধে মেতে উঠল সেটিও একটি সংকেত। আরও দুই রাষ্ট্রের যুদ্ধ কবে থামবে কে জানে। আসলে যে এই রকম যে কোনও লড়াইয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষেরা। তারা যুদ্ধ চায় না। সেটি করেন রাষ্ট্রনায়কেরা। আমাদের মতো তুচ্ছ মানুষদের জীবনের বিনিময়ে।
নিজেদের রাজ্যে কিছুদিন আগে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সেটি দেখে আমরা প্রত্যেকেই হতবাক। এ কোথায় চলেছি আমরা। এইভাবে একের পর এক সমাজবিরোধী কাণ্ডকারখানার কেন্দ্র হয়ে উঠছে রাজ্যের নানা জায়গা। এর থেকে পরিত্রাণ কবে কেউ জানি না। কিন্তু এইটুকু বুঝতে পারছি যে, আগামী দিনগুলি বড্ড কঠিন হয়ে উঠছে ক্রমশ।
মুজনাই
অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা ১৪৩২
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
হসপিটাল রোড
কোচবিহার
৭৩৬১০১
ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com
প্রকাশক- রীনা সাহা
প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবি- ছিপছিপি, সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগান
সম্পাদনা, প্রচ্ছদ ছবি, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
এই সংখ্যায় আছেন যাঁরা
রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়, অভিজিৎ সেন, গৌতমেন্দু নন্দী, জয়তী ব্যানার্জী,
শ্রাবণী সেনগুপ্ত, মৌসুমী চৌধুরী, শুভেন্দু নন্দী, মাথুর দাস,
উৎপলেন্দু পাল, প্রাণেশ পাল, প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী,
কবিতা বণিক, রুদ্র, লীনা রায়, অর্ণব ঘোষ,
অশোক কুমার ঠাকুর, ঋতুপর্ণা ধর, দেবর্ষি সরকার,
চন্দন দাশগুপ্ত, রাণা চট্টোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম বন্দোপাধ্যায়, প্রাণজি বসাক,
দয়াময় পোদ্দার, উৎপলেন্দু পাল, প্রতিভা পাল, অমিতাভ কর,
দীপজয় সরকার, নিবেদিতা দে, মজনু মিয়া, মোঃ আব্দুল রহমান,
ছবি ধর, আকাশলীনা ঢোল, প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী, আ সি ফ আলতাফ,
মনোমিতা চক্রবর্তী, নাহিদ সরদার, সুজয় সরকার, অমিতাভ চক্রবর্ত্তী,
এরশাদ, মোহিত ব্যাপারী, মোঃ আব্দুল রহমান, প্রাণেশ পাল, নজর উল ইসলাম
শ্যামল বিশ্বাস লামশ্যা, রীতা মোদক, সুজল সূত্রধর
অনলাইন জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা ১৪৩২
উপনিষদের আলোকে বিবর্তনবাদ
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যে ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান
রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮–১৮৯৪) বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং আধুনিক বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের জনক হিসেবে খ্যাত। তাঁর সাহিত্যকর্ম শুধুমাত্র সাহিত্যিক পরিপক্বতা নয়, বরং জাতীয়তাবাদ, সমাজসংস্কার এবং স্বাধিকার চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। বাংলার সাহিত্য এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অবদান বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে ততদিন তাকে শ্রদ্ধার সহিত মনে রাখবে।
বাংলা সাহিত্যে অবদান:
১. বাংলা উপন্যাসের ভিত্তি নির্মাতা:
বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস ধারার সূচনা করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫) বাংলা সাহিত্যের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রোমান্টিক উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। এরপর কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, চন্দ্রশেখর, রজনী, আনন্দমঠ, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল প্রভৃতি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
২. ভাষার সরলীকরণ ও সৌন্দর্যবোধ:
তাঁর লেখনীতে খাঁটি বাংলা ভাষার স্বাদ মেলে। সংস্কৃতঘেঁষা ভাষার পরিবর্তে তিনি সাধু ভাষার রীতিতে সাহিত্য রচনা করেন, যা পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যে মান্যতা পায়। তাঁর গদ্যশৈলী ছিল সুসংহত, ছন্দোময় ও অলঙ্কারপূর্ণ, কিন্তু পাঠযোগ্যতায় সহজ ও সাবলীল।
৩. চরিত্রচিত্রণ ও বাস্তবধর্মিতা:
বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের চরিত্রগুলি জীবন্ত। নারীর আত্মমর্যাদা, প্রেম, সমাজে নারী-পুরুষ সম্পর্ক, জাতি, ধর্ম, সমাজ সংস্কার সবকিছু নিয়ে তিনি ভাবতেন এবং উপন্যাসে তা প্রতিফলিত হত। উদাহরণস্বরূপ, বিষবৃক্ষ-এ নারীর আত্মবোধ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার চিত্র চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
৪. সামাজিক ও ধর্মীয় চিন্তা:
তিনি কেবল সাহিত্য রচনাই করেননি, বরং সাহিত্যকে সমাজসংস্কারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সমাজে ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, বিধবা বিবাহ নিষেধ, জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র অবস্থান লক্ষ্য করা যায় । তাঁর বাঙালির আত্মপরিচয় গড়ে তোলার মধ্যে এই সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রবলভাবে প্রকাশ পায়।
স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান:
১. 'বন্দে মাতরম্' – জাতীয়তাবাদের রণহুঙ্কার:
বঙ্কিমচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ কীর্তি আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসে ‘বন্দে মাতরম্’ গানটি রচিত হয়। এই গানটি ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। এটি প্রথমে সাহিত্যে, পরে রাজনীতিতে এমনভাবে মিশে যায় যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এটি কার্যত এক "জাতীয় মন্ত্র"-তে রূপান্তরিত হয়। এই গানটি পরবর্তীতে ভারতের জাতীয় গানের মর্যাদা পায়।
২. 'আনন্দমঠ' উপন্যাসে বিপ্লবের চিন্তা:
আনন্দমঠ উপন্যাসে সন্ন্যাসীদের ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ একটি রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে দেশমাতৃকার পূজা, শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, জাতীয় ঐক্য – এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাস জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারাকে উসকে দেয় এবং বহু বিপ্লবী এই বই থেকে প্রেরণা পান।
৩. জাতীয় চেতনার জাগরণ:
বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর রচনার মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় আত্মচেতনা জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করেন। উপন্যাস ও প্রবন্ধে তিনি অতীতের গৌরবগাথা, সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদার ধারণা পুনর্জীবিত করেন। তিনি মনে করতেন, একমাত্র শিক্ষিত, আত্মসচেতন, আত্মবিশ্বাসী জাতিই নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারে।
৪. হিন্দু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন:
বঙ্কিমচন্দ্র চেয়েছিলেন ভারতীয়রা তাদের নিজস্ব ইতিহাস, ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি গর্ববোধ করুক। তিনি হিন্দুধর্মের আধ্যাত্মিক শক্তিকে সামাজিক জাগরণ এবং রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। যদিও তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি পরে সমালোচনার মুখেও পড়ে, তবে তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় চেতনাকে জাগ্রত করা।
উপসংহার:
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কেবল একজন সাহিত্যিক নন, তিনি জাতির শিক্ষক, সমাজ-সংস্কারক এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক পথপ্রদর্শক। তাঁর রচনায় সাহিত্য ও রাজনীতির যে অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটে, তা বাংলা সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিতও গড়ে তুলেছে। আজও তাঁর “বন্দে মাতরম্” ভারতবাসীর হৃদয়ে এক অমোঘ স্পন্দনের মতো ধ্বনিত হয়। তাই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শুধু সাহিত্য সম্রাট নন, বরং তিনি ছিলেন জাতীয় চেতনার মহান স্থপতি।
আধুনিক/অতি আধুনিক কবিতা এবং হোমিওপ্যাথি
গৌতমেন্দু নন্দী
সাহিত্য আর বিজ্ঞান ---আপাতভাবে দুই মেরুতে অবস্থান করলেও দুটোরই প্রকাশ মাধ্যম ভাষা। সেই ভাষা হোতে পারে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি --- যে কোন ভাষা।
বর্ষাযাপন
বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ি সন্ধ্যায় ভ্রমণ
কবিতা বণিক
বৃষ্টি! বৃষ্টি! বৃষ্টি! মেঘেরা জলের ধারা ঢালছে নানান ছন্দে। ঝিরঝির, ঝমঝম! নাচের তালের কত না শব্দ।
পথ, ঘাট সব ভেজা। যেদিকে তাকাই সবই রসময়। গাছেরাও হাওয়ায় দোল খেয়ে তাদের সমস্ত পাতার ফোঁটা ফোঁটা রসবিন্দু টুপটাপ ঝরিয়ে দেয়। সমতলের বৃষ্টিতে দেখি , মেঘ-হাওয়ার খেলা নানান ছন্দে হলেও মেঘেদের বড্ড অভিমান। তারা নীচে নামবে না কিছুতেই। আবার পাহাড়ে , মেঘেরা ওপরে-নীচে সর্বত্র আনন্দে ভেসে বেড়ায়। সেখানে চলমান মেঘেদের পাহাড়ের গায়ে গায়ে ভেসে বেড়ানোর যে স্বপ্নের পরীদের মত দেখায় তা দেখতেই গিয়েছিলাম এক বিকেলে পাহাড়ী পথের বাঁকে বাঁকে কার্সিয়াং, ডাউহিল, চিমনি ইত্যাদি নাম না জানা গ্রামের মধ্য দিয়ে। শুধুই বৃষ্টি উপভোগ করতে। এরই মধ্যে সন্ধ্যের আলোয় জঙ্গলের মধ্যে দুটো হরিণ দেখে মনে হল এই বৃষ্টিতে জঙ্গলের পশুরা নিজেদের কিভাবে রক্ষা করে? ঈশ্বর সবার জন্যই ব্যবস্হা করে রেখেছেন। পাহাড়ের গায়ে গায়ে গাছেরাও যেন ঘেঁসাঘেঁসি করে বেড়ে উঠতে চায়। ফার্ণ পাতাগুলোর লম্বা হাত যেন সবাইকে ছুঁতে চায়।এমন ঘন সবুজ বনের মধ্যে রাস্তাও নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আর মেঘেরা ঘন পাইনের বনে ঢুকে বৃষ্টি হয়ে ঝড়বার পথ খোঁজে।পাহাড়ীপথে এক এক বাঁকে এক এক সৌন্দর্য ধরা পড়ে। বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য , মেঘের মধ্যে দিয়ে হাঁটা যেখানে কিছুই দেখা যায় না এসব রোমাঞ্চকর অনুভূতি পাহাড়ে না এলে বোঝা যায় না। নীচের পাহাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে তো ওপরের পাহাড়ে বৃষ্টি নেই। নীচের পাহাড়ে মেঘ জমেছে , মনে হচ্ছে ইন্দ্রপুরীতে বিচরণ করছি। নারদ মুনির আশীর্বাদে ঝর্ণার ধারা , গানের দ্রুত লয়ের সুরের মুর্ছনায় যেন “ তরলিত চন্দ্রিকা চন্দন বর্ণা” রূপ ধারণ করেছে। সে যে পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা প্রেমদাত্রী! ঝর্ণার প্রেম প্লাবণেই না নদীগুলো পুষ্ট হয়! ধরণী শষ্যশ্যামলা হয়! তখন মানুষের ক্ষুধা মেটাও তুমিই ‘তাপসী অপর্ণা!’ স্বর্গের সুধাকে মর্ত্যে এনে দাও তুমিই ঝর্ণা! বর্ষায় পাহাড় ভয়ঙ্কর হয় আমরা দেখি। স্বর্গীয় সৌন্দর্য দেখা অনায়াস লভ্য হয় না এটাও যেমন সত্য। তেমনি দেখার পরের সৌন্দর্যানুভূতি অব্যক্তভাবে মনের গভীরে বর্ণময় হয়ে ধরা থাকে। বৃষ্টি কমতে আবার সদ্যস্নাতার মত দেখতে লাগছিল পাহাড়কে।জল হারিয়ে মেঘেরাও তাদের বৈঠকী আড্ডায় মেতেছে নীল আকাশে। এই সুযোগে সূর্যদেব অস্তাচলে যাওয়ার আগে তার লালিমা ছড়িয়ে দিলে আরও মোহময় করে তুলল সেদিনের সেই মনোরম সন্ধ্যা। পাহাড় জুড়েই কত আঁকাবাঁকা রাস্তা,ঘরবড়ি, একটু একটু করে পাহাড় জুড়ে আলো জ্বলতে শুরু করেছে। দীপাবলীর রাত্রি রোজ উপভোগ করতে হলে পাহাড়ের সন্ধ্যা রাণীর আগমনের প্রতীক্ষায় সময় দিতে হবে। একটু বেশি রাত না হতে, পাহাড়ের অনেক আলো নিভে যায়। সন্ধ্যারাণী বিদায় নিতেই দেখা গেল দূরে আলোকমালায় সজ্জিত যেন হীরের কুচি দিয়ে সাজানো শিলিগুড়ি শহর। এই সৌন্দর্য পাহাড় থেকেই দেখা যায়। নেমে আসলাম নীচে আমাদের ঠিকানায়।