Wednesday, July 2, 2025


 


স্টেশনের আগের স্টেশন 

রুদ্র 

হীরকের চোখে ঘুম নেই আজ রাতেও। ফুটপাতে ত্রিপলের নীচে বৃষ্টি পড়ে টুপটাপ, সেই বৃষ্টির ছাঁটে তার খাতার কাগজগুলো কিছুটা ভিজে যাচ্ছে। তবু সে পড়ে—নিউটনের গতির সূত্র, মানুষের হৃৎপিণ্ডের গঠন, কিংবা আর্কিমিডিসের সূত্র—সব মুখস্থ। না, মুখস্থ নয়, সে বুঝে পড়ে।

তার মা বিড়ি বাঁধেন সকাল থেকে সন্ধে, চোখ জ্বলে, হাত ফেটে যায়। বাবা বিছানায় পড়ে আছেন বছর চারেক—বুকের মধ্যে যেন জমে আছে হাজারটা অসুখ। হীরক সব জানে, তবু কাউকে বলে না কিছু। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, যার সিঁথিতে ফুটো, তবু তাতে আছে অজস্র জেদ।

বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক শিবেন্দুবাবুই প্রথম বলেছিলেন, “তুই ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবি হীরক। শুধু থেমে যাস না।” সেই কথা যেন বুকে পাথরের মতো গেঁথে গেছে ছেলেটার। সন্ধেয় স্কুল ছুটির পর যখন বন্ধুরা গরম সিঙ্গাড়া আর ফুচকা খায়, হীরক রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান দেখে। না কিনে, না ছুঁয়ে, শুধু পড়ে।

একদিন শিক্ষক তাকে পুরোনো একটা সায়েন্স ম্যাগাজিন এনে দিলেন। ভেতরে ছিল একটা নিবন্ধ—“চাঁদে ভারতের যাত্রা। হীরকের চোখ চকচক করে উঠেছিল সেদিন।

দিন যায়, মাস যায়। হীরক শুধু এগোয়। মাধ্যমিক আসে, হীরক সারা জেলার মধ্যে প্রথম হয়। খবরের কাগজে ছাপা হয় তার ছবি—ত্রিপলের ঘরের ছেলে, যিনি বিজ্ঞান ভালোবাসেন।

সেদিন সন্ধ্যায়, রাস্তার পাশের দোকানে এক কাপ চা খেতে খেতে শিবেন্দুবাবু বলে ওঠেন,
“এই তো, স্টেশনের আগের স্টেশন পার হলি।”

হীরক হেসে বলে, “স্টেশন অনেক দূর স্যার, কিন্তু আমি তো জানি—এই ট্রেনটা থামে না।” 

No comments:

Post a Comment