Sunday, July 12, 2020



বিছিন্নতা 
নির্মাল্য ঘোষ 

এভাবে নিজেকে বিছিন্ন করে 
একটা হতাশা আঁকা...
অথচ আমার প্রতিটি আত্মবিশ্বাসে তুমি আমি হয়ে ঘোরাফেরা কর...
আমার প্রতিটি বিচ্ছিন্নতায় নিজেকে টাঙিয়ে রাখি 
শুকিয়ে যায় আলগোছে...
অত তাড়াতাড়ি শরীর আসে না, বিরক্ত আসে...
তাওয়াতে আসতে আসতে রুটি সেঁকার মত মন সেঁকতে হয়...
তারপর দূরত্ব তৈরি...
এক গোছা শরীর বিছিন্ন মুক্তি চারপাশে উড়ে বেড়ায়...

Friday, July 10, 2020








আন্তর্জাতিক কবিতায় বাঁকবদল & বাংলা কবিতায় তার প্রভাব ও সমকালীন সময়ে রবীন্দ্রকাব্য 
-------------------------------------------------------------------
বিশ্বকবিতার শুরু ও সভ্যতার সাপেক্ষে তার মূল পর্যায় এবং কবিতার শুরুর দিনগুলি (পর্ব - ৫)
:
:
বিষয়টি শুরু করার আগে, বরং ১টা গল্প ছোটো করে বলা যাক।এক প্রকৃতি-প্রেমিক ভদ্রলোক পাহাড়ে উঠতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে গিয়ে, একটি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হলেন।প্লাস্টার করার পর, বেশ কিছুদিন পর থেকেই ওনার মনখারাপ।কারণ, কেবিনে উনি একা এবং একঘেয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া, কোনো কাজ নেই।তিনি ঠিকমতো ঘুমতে পারেন না, ব্যথায় কষ্ট পান।ফলে স্বাস্থ্যেরও উন্নতি আর এগোয় না।এরকমই এক অবস্থায়, আরেকটি রুগী তাঁর প্রতিবেশী হয়ে পাশের বেডে আসেন।কথাবার্তায় জানা যায়, রুগীটির মাথা ব্যথার অসুখ।দুজনেই এক ঘরে, সুতরাং গল্প হতেহতে  তাঁরা দুজনেই অল্প সময়েই বন্ধু হয়ে যান।দ্বিতীয় ভদ্রলোকের মাথার কাছে, একটা জানলা ছিলো।তিনি সেই জানলা দিয়ে মাঝেমাঝে চোখে দেখা দৃশ্যগুলি, প্রথম ভদ্রলোককে গল্পের মতোন করে বলেন।দূরে একটা গাছ / বিকেলে পাখিরা এসে বসেছে / গাছের তলায় একটা জলাশয় / সেখানে একজোড়া তরুন-তরুনী বসে আছে / তাদের পরস্পরের হাত পরস্পরের হাতে / ইত্যাদি।প্রকৃতি প্রেমিক ভদ্রলোক এসব শুনে আনন্দিত হন।দেখা যায়, তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন দ্রুত।এভাবে চলতে চলতে, একদিন রাতে দ্বিতীয় ভদ্রলোকের মাথায় অতিরিক্ত যন্ত্রণা হওয়ায়, তাঁকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।সকালে উঠে, প্রথম ভদ্রলোকটি তাঁকে দেখতে না পেয়ে খুব বিস্মিত হন।বেলায় ডাক্তার এলে, যখন উনি ডাক্তারকে দ্বিতীয় ভদ্রলোকের কথা জিজ্ঞেস করেন : জানতে পারেন, দ্বিতীয় ভদ্রলোকটি মাথায় রক্তক্ষরনের অসুখে ভুগছিলেন এবং তা এতোটাই মারাত্মক ছিলো যে বিগত ৩মাস ধরে তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।আগের দিন রাতে, তাঁর অপারেশন হয় এবং তিনি সেখানে মারা গেছেন।একথা শুনে প্রথম ভদ্রলোক আরো বিস্মিত হয়ে যান এবং ভাবতে থাকেন, একজন অন্ধ মানুষ জানলায় চোখ রেখে কিভাবে বানিয়ে বানিয়ে অতো দৃশ্যের গল্প বলতে পারেন।

ওপরের গল্পের মতো এরকম ঘটনাও আছে যে, এক জিনিয়াস ফিল্ম ডিরেক্টর অসুস্থ অবস্থায়, নাম করা নায়ককে পরবর্তী ছবির স্ক্রিপ্ট শুনিয়ে, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছেন।নায়কটি পরিচালককে হাসপাতালে ভর্তি করে, বাড়ি ফিরে আসেন এবং বিস্মিত হয়ে যান পরিচালকটির রেখে যাওয়া হাতের স্ক্রিপ্টটি দেখে, কারণ সেগুলো ছিলো কয়েকটি সাদা কাগজের পাতা।

আসলে, গল্পগুলো যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে তা হলো কল্পনাশক্তির প্রবণতা।কোভিড্ শুধু নয়, সভ্যতার শুরু থেকেই যেকোনো দুর্যোগে মানুষ বেঁচে আছে সৃজনশক্তির ওপর নির্ভর করে।যার নেপথ্যে রয়েছে কল্পনা প্রবণতা।সহজ কথায়, আজ যা হচ্ছে তা দেখাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এই দেখাটির নেপথ্যে থাকা চালিকাশক্তিকে অনুভব করে, তার সাপেক্ষে দেখা ভবিষ্যৎ দৃশ্যটির রূপকল্প গড়ে তোলা, অর্থাৎ কী ঘটতে পারে তার অনুমান।শিল্প কখনোই কোনো কিছু execute করতে পারে না।অতএব, শিল্পীর কোনোদিন executer হবার দায় নেই।আর কবিতা যেহেতু highest absurd form of the art, তার নির্মাণ প্রভাবটিও সর্বদা অদৃশ্য ও আত্মিক অভিমুখীন।তবে, যাঁরা executer তাঁরা যে চালিকাশক্তির হদিশ কবিতা থেকেই পেয়ে থাকেন, এর উদাহরণ পৃথিবীর প্রতিটি জিনিয়াসের জীবনপঞ্জিতে পাওয়া যায়।আমরা বলতেই পারি, কবিতা হলো এমন একটা কল্পনাপ্রবণতা যা, সেই অন্তর্মুখী চালিকাশক্তির প্রেরণা।তবে, একথাও ঠিক কেবলমাত্র কল্পনাশক্তি থাকলেই যে, সেই প্রেরণাটির তা প্রকাশিত চালক হতে পারবে, তার ঠিক নেই।এর জন্য চাই কল্পনাশক্তির নিরন্তর চর্চা, যাপনে এবং মননে।আর তা করার জন্য দরকার, ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঘটে চলাগুলোর ওপর প্রকৃত পর্যবেক্ষণ।যা একজন গবেষক পালন করে যান আজীবন।যে পথের নির্মিতি খোঁজেন সন্ন্যাসী।

গুহামানুষ যখোন সর্বপ্রথম 'লেখনী' ব্যবহার করলো, কেউ কি জানতো : একটি বিন্দু থেকেই চিত্র (painting) / অক্ষরমালা থেকে সাহিত্য (literature) / চলচ্চিত্র (cinema) / ইত্যাদি দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমগুলি বিকশিত হয়ে উঠবে, এমনকি স্বর থেকে বিকশিত হবে লয়/সুর, পরে সুর ও সাহিত্য মিলে সঙ্গীত।পরবর্তী পর্যায়ে ~ দখলদারি বিষয়টিকে আয়ত্তাধীন করার পর, অবশ্য যে অধিকারতন্ত্র / ইত্যাদির সৃষ্টি হয়, তা যদিও অস্বীকার্য নয়।তবুও, বিকাশের স্তরটির গতানুগতিক ধারাটিকে, কোনোরকমের বাহ্যিক প্রভাবমুক্ত হয়েও যুক্তিগ্রাহ্যরূপে ব্যাখ্যা / বিশ্লেষণ করার চেষ্টা যে একেবারেই করা যাবে না, এমনটাও নয়।
কবিতা বিকাশের বিভিন্ন স্তরগুলিকে মোটামুটিভাবে আমরা আপাততো পাঁচটি (৫টি) পর্যায়ে রাখতে পারি।তা অনেকটা এরকম : (১) আদি পর্ব (গুহাচিত্র থেকে রেঁনেসা যুগ), (২) মধ্য পর্ব (রেনেসাঁ পরবর্তী থেকে শিল্প বিপ্লব), (৩) উত্তর পর্ব (শিল্প বিপ্লব থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ), (৪) উত্তরোত্তর পর্ব (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্ব থেকে প্রাক তথ্যপ্রযুক্তি আবিষ্কার), (৫) তথ্যপ্রযুক্তি পর্ব।এবার আসুন, আরো একটু সুবিধার্থে বরং সালের নিরিখে বর্ণিত সময়গুলোকে সাজানো যাক।তা অনেকটা এরকম : (১) আদি পর্ব (শুরু থেকে আনুমানিক ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দ), (২) মধ্য পর্ব (১৬০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে আনুমানিক ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দ), (৩) উত্তর পর্ব (১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৯৫০ খ্রীষ্টাব্দ), (৪) উত্তরোত্তর পর্ব (১৯৫০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৯৮০ খ্রীষ্টাব্দ), (৫) তথ্যপ্রযুক্তি পর্ব (১৯৮০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে চলছে)।যদিও, এসব তথ্যতারিখ নিয়ে বহু বিতর্ক আছে, তা সত্ত্বেও একটা সুনির্দিষ্ট গ্রাফিকাল রূপ ছাড়া এগোনো কঠিন।

কবিতার আদিপর্ব সম্পর্কে আলোচনা করার আগে, উপরে বর্ণিত ক্রমপঞ্জিটি নিয়ে একটি বিশেষ ক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ~ আদি পর্ব বা মধ্য পর্বে কবিতার বিকাশ যতোটা সময় নিয়ে ঘটেছে, পরবর্তী দুই পর্যায়ে কিন্তু তার বিকাশহার অনেক বেশি।অর্থাৎ, শুরুর দিক থেকে যতো এগিয়েছে ~ কবিতার বিকাশ ঘটেছে, অতি দ্রুত হারে।শেষ পর্বটিতে (তথ্যপ্রযুক্তি পর্ব) যদিও, এই দ্রুততাহার কিছুটা কম মনে হচ্ছে : কথাটি কিন্তু একেবারেই আপেক্ষিক।কারণ, বেশ কিছু উপপর্বে বিভক্ত রয়েছে এই পর্বের সময়কাল।তবে সেগুলো এখনিই লিপিবদ্ধ করছি না।আদি পর্বের সাথে, আরো কিছু আলোচনা করা সমান্তরালভাবে আবশ্যিক, সেগুলি হলো : লিখন মাধ্যমের বিবর্তন এবং আদিযুগের কয়েকটি মহাসভ্যতা।আসলে, প্রযুক্তি যেভাবে সময়ের সাপেক্ষে যাপনকে প্রভাবিত করে, অতএব সেহেতু যাপন সংক্রান্ত যাবতীয় মাধ্যমগুলিরও স্বভাব পরিবর্তন সুনিশ্চিত।আর, কবিতা যেহেতু যাপন সম্পর্কিত একটি দৃশ্যশ্রাব্য প্রকাশভঙ্গী, সেহেতু এটি যে প্রত্যক্ষভাবে প্রযুক্তি ফ্যাক্টরটির ওপর নির্ভরশীল ~ তার কিছুটা সাময়িক প্রমাণ, বিকাশের দ্রুততাহার থেকেই যুক্তিযুক্তভাবে পাওয়া যাচ্ছে।তবে, এই বিষয়গুলির আরো বিশ্লেষণ নিয়ে সামনের পর্বে সরাসরি।শিরোনাম দিতেই পারি "কবিতার শুরু, পৃথিবীর প্রথম কবিতা ও কবি"


শব্দরূপ : রাহুল গাঙ্গুলী

Thursday, July 2, 2020


মুজনাই
অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা
(মুজনাই সাহিত্য সংস্থার প্রয়াস)


সম্পাদকের কথা

ঋতু পরিবর্তনও নতুন বার্তা নিয়ে এল না।
যে অন্ধকার নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে, ধুয়েমুছে গেল না তা বর্ষণস্নাত এই সময়েও।
অজানা এই পৃথিবীকে আমরা সত্যিই জানি না। তাই বোধহয় ভয় বেশি।
তবে এখন আমাদেরও পিঠ ঠেকেছে দেওয়ালে। তাই প্রস্তুত আমরা যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায়।

যান্ত্রিক সমস্যায় মুজনাইয়ের আষাঢ় সংখ্যা একটু আলাদাভাবে করা হল। আশা রাখি প্রতিবারের মতো এবারও পাঠক প্রিয় হবে লেখাগুলি। 


মুজনাই অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা
(মুজনাই সাহিত্য সংস্থার একটি প্রয়াস)
হসপিটাল রোড, কোচবিহার
ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা- শৌভিক রায়


ছবি- মাধুরী রায় বারুই



আষাঢ়
জয়ন্ত চক্রবর্ত্তী


আষাঢ় এলেই ভিজে যাই।
অস্পষ্ট শার্সি বেয়ে টিপ টিপ বৃষ্টি নামে
বিকেলের জানালায় স্থবির মেঘের মতো সময় থমকে দাঁড়ায়
কাঁধে হাত রেখে বলে - দাও , ডুব দাও , এইতো সময়--
আমি মাছরাঙার মতো ক্ষিপ্রতায় নেমে আসি বাদামি কাগজে।
আহা , নরম বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া সেই কবেকার ফুটবল ম্যাচ , হাঁটু জলে নৌকো ভাসানো !
অথবা সারাদিন রিমঝিম গীতবিতানের শব্দে উদাসীন জীবন যাপন !


আষাঢ় এলেই ভিজে যাই


রথ-মেলার সেই বিষণ্ণ বাঁশিটির সুর আজ‌ও বুকের ভেতর বান ডাকে!

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
অবশেষ
বিজয় বর্মন

জলভরা মেঘের,ওপারে নীল আকাশ,
তপ্ত দুপুরে নিঝুম ধরা,গোমরা বাতাস।
সবুজ দ্বীপে পাকা আমের,মিষ্টি সুবাস,
সরস মনে বিস্তার, আমোদের আভাস।

চাষে মত্ত চাষার বেটা,নব প্রাণের রচনা,
অবিরত হাল কোদাল, করিছে যোজনা।
ঋতু চক্রে আষাঢ় আকাশ,ঢাকিয়া কালো,
চাষার মুখে তৃপ্তির হাসি, চান্দের আলো।

গগনে গরজে মেঘ,জলের ধারা নামে,
মুক্তির স্বাদে জল তর্পন,চাতকের ধামে।
ভিজা মাটির গন্ধে,বাতাস ফিরে ছন্দে,
উলঙ্গ বৃক্ষরাজি,নাইছে ভালো মন্দে ।

সাদা বকের আল্পনা,আষাঢ় মেঘে ভাসে,
ঘুমের প্রহর কাটিয়ে ওঠে,ব্যাঙে'রা মধুমাসে।
গান গেয়ে যায় কোলা ব্যাঙ,সঙ্গী সাজ ঘরে,
ঘন বাদল সবুর ভাঙে,ঘরা উপচে পরে।

প্রকৃতির এই সৃষ্টি অপার,অবোধ মানুষ জন,
ছল চাতুরী ধ্বংস লীলায়,মজিয়া সারাক্ষণ।
হাঁপিয়ে যাওয়া বুকের কাঁপন,যা করেছ বেশ,


মুক্তির পথ একমাত্র, অনুতাপ অবশেষ।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
বাঁক
মৌপর্ণা মুখোপাধ্যায়

নদী বলেছিল
ওর প্রতি বাঁকে সৌন্দর্য।
তখনই কপাল জুড়ে
বেশ কয়েকটি
নদীর মতোই বাঁক দেখি।
 ওরা বলেছিল 
তোমার বয়স হয়ে গেছে,
নদী বলল তুমি আজ
অনেক পরিণত

বয়ে চল আপন পথে।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)


"দূরত্ব "
মানস রায় 

স্টেশন চত্বর টায় থিক থিক করছে লোকজন , ঘড়ির কাটা তখন প্রায় সকাল সাড়ে নটা ছুঁই ছুঁই | দশটার হাওড়া লোকাল ধরবার জন্য অপেক্ষায়মান অর্পণ | হঠাৎ খেয়াল পড়তেই সে লক্ষ্য করল মৃদুস্মিতার চোখের কোনে চিক চিক করছে জল | অন্যান্য দিনের তুলনায় পরিপাটি মৃদুস্মিতা আজ বেশ খানিকটা অগোছালো | দু বছর সময়টা আসলে খুব একটা কম নয় , ক্লাস রুমের নোটস আদান প্রদান থেকে শুরু করে ডুলুং ক্যান্টিনে চোখে চোখ রেখে কথা বলা, ছুটির বিকেলে কাঁসাই পাড়ের কত শত আড্ডারই না সাক্ষী তারা | সত্যিই, এত কিছু ভাবনা একবারে মাথায় আনার জন্য এই আধ ঘন্টা সময়টা একদমই স্বল্প তাঁদের কাছে | অর্পণ তবে বাস্তবের মুখোমুখি হবার জন্য  কয়েক দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল বেশ , আজ তাই সে অনেকখানি স্বাভাবিক | কাল আবার সূর্য উঠবে, স্টেশন চত্বরও ভরে উঠবে লোকজনে কিন্তু তাঁদের এত দিনের প্রিয় মুহূর্ত গুলো যেন সুখস্মৃতি হয়েই থেকে যাবে | অর্পনের নিজের ও অজানা আবার ও কবে সে উত্তর বঙ্গ থেকে এই মেদিনীপুর এ পা রাখবে | কাল দুপুর নাগাদ পুরুলিয়া মুখী ট্রেনে মৃদুস্মিতাও রওনা হবে বাড়ির উদ্যেশ্যে |
         ট্রেন এর শেষ সাইরেন বেজে উঠলো, ইউনিভার্সিটিতে প্রথম চোখে চোখ রাখার পর, আজ শেষবার দুজন দুজনার দিকে তাকাতেই, রেলগাড়িটা স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে কাঁসাই ব্রিজ ক্রস করল | মুহূর্তেই দূরত্ব যেন বিভাজিত করে দিল আস্ত দু দুটো স্বপ্ন পূর্ণ পৃথিবীকে। 


(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)

আষাঢ় ধারা নামে 
মজনু মিয়া

গগন কালো বজ্রপাতে 
মেঘ তুমুল নাচ আজ, 
ভয়ে হৃদয় কাঁপন ধরে 

কপালে তাই ভাঁজ।   

ছাতা হাতে কাগজ মাথে 
চলছে মানুষ দূর, 
ঘোমটা পড়া আকাশ দেখে 
হয়নি বুঝি ভোর!

ঝিরিঝিরি কিংবা দমকা 
ঘন ফোঁটার জল, 
ঝরে ঝরে নদী নালা 
ভরে ডুবা খাল। 

হাম্বা হাম্বা ডাকে গরু 
জেলে ফেলে জাল, 
ছোট মাছের হয় আনন্দ 
দেয় জলে যে ফাল। 

বছর ঘুরে আবার আসে 
আষাঢ়ের এই মাস, 
নৌকার মাঝি পাল তুলে দেয় 
লাঙ্গল জোয়াল চাষ।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
ছবি- সায়ন ব্রক্ষ্ম


আগমনে আষাঢ়
নন্দিতা কার্জী

গ্ৰীষ্মের দাবদাহ উত্তাপে
জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত,
কাঁপিছে উষ্ণতায় ধরা থরথর,
প্রান করে গেল গেল ।

কালবৈশাখীর ঝড় ঝড়িয়ে
জৈষ্ঠ্যের আগমনে উষ্ণতা উর্ধ্বমুখী !
চেয়ে রয় মেঘের পানে সকলে
বারিষ ধারার আগমনী ।

রসে বসে জৈষ্ঠ্যের গরমের স্বাদ্,
আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল কতো
প্রান তবুও করে হায় হায়
"হে মেঘরাজ ঝরাও বৃষ্টি ঝরঝর" ।

বিদায় গান গেয়ে জৈষ্ঠ্যের সমাপ্তি
হয়ে বর্ষার আগমন উত্তরে —
জানান দেয় বজ্র-বিদ্যুৎ আষাঢ়ের আগমন
রিমঝিম বৃষ্টি ধারা স্নিত করে বসুন্ধরাকে ।

শান্ত হয় ক্ষনিকেই উত্তপ্ত ধরা,
রিমঝিম ধ্বনিতে মুখরিত আষাঢ়
গেয়ে ওঠে বরষার গান ।
চাষা কয় "মাঠে যেতে হবে''
হও সব আগুয়ান , হও সব আগুয়ান ।

আর মন মোর গেয়ে ওঠে রবির মতন
"নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহি রে ।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে ।"

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
আগন্তুক আষাঢ়

মহন্ত বিশ্বাস মোহন 

আকাশ-উপচানো দীর্ঘ এক ছায়া 
শুষে নেয় জগতের শেষ আলোটুকু ;
তারপর ঘাট মাঠ উঠোন, জানালার গায়ে 
বিছিয়ে দেয় তার মখমলে 
                                    কুহক শরীর ।

স্থির জগৎ 
ঘুমঘুম ঝোপঝাড়, লতা-পাতা, বন 
শুধু দিঘির বুকে 
ধীর পায়ে পায়চারি করে বিশীর্ণ বাতাস; 
অন্তরে সবার 
কার যেন অপেক্ষার নীরব বাদ্য বাজে ।

নুয়ে পড়া বাঁশ, ঝুঁকে পড়া হিজল 
আত্মমগ্ন সবুজ শ্যামল ঘাস 
                                        ফিসফিস করে; 
খিল তুলে বাসায় 
শিষ তোলে চাপা চাপা আড়ালের পাখি ।

শেষ প্রস্তুতি সেরে নেয় কৃষাণ কৃষানী 
চালার ফাঁকে গুঁজে দেয় মায়াময় খড় 

বাইরে তখন উদ্বেল 
বাঁধন- হারা উচ্ছাস 
রিমঝিম, রিমঝিম, বিরামবিহীন ঝরোঝর ।

 (মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)




আষাঢ়ে
মাথুর দাস

আষাঢ়ে আশ্ আড়ে  আছে মনে বৈকি,
এ জীবনে ভিজি মনে গৃহকোণে রই কি !
ঝমঝম বৃষ্টিতে
রম রম দৃষ্টিতে
চল ভিজি  আনমনে, বাঁধ্ মনে  সই কি !

বাজ পড়ে  আজ যেন রাজ করে দত্যি,
কাজ ফেলে   সাজ করি বর্ষার,  সত্যি !
রামধনু  ওই ভাসে
ফুল ফোটে উদ্ভাসে
আষাঢ়ে  আসার আনে  প্রেম এক রত্তি।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)

























অমৃতস্য পুত্রাঃ
বুদ্ধদেব চক্রবর্ত্তী



আজ সকাল থেকে নন্দীর শরীর খানা ভালো নেই। তার উপর হাল্কা গলা ব্যাথা ও কাশি। গায়ের তাপমাত্রা সেরকম বাড়াবাড়ি  কিছু না হলেও সাবধানের মার নেই তাই দেবাদিদেব মহাদেবের আদেশে নন্দীকে কৈলাস পর্বতের একধারে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এমনিতেই কৈলাসে ঠাণ্ডা তার উপর মর্তে যা চলছে, এক্কেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। এবার স্বর্গে এই অবস্থা হলে তো বেজায় মুস্কিল।
মর্ত্যের মানুষ পটল তুল্ললে স্বর্গে আসে কিন্তু স্বর্গের বাসিন্দাদের কিছু একটা ভালো মন্দ হয়ে গেলে তারা কোথায় যাবেন।আর তাছাড়া স্বর্গের বাসিন্দাদের সংখ্যাতো আর কম নয়,তেত্রিশ কোটি।
আর হেলথ স্টাফ কজন, মাত্র দু জন। দুজন
অশ্বিনীকুমার। তাদের দুজনেরি বয়স হয়েছে আর দীর্ঘকাল ওই পোষ্টে নতুন কোন নিয়োগ নেই। 
তারা আর কত দেবতার চিকিৎসা  করবেন।তাছাড়া চিকিৎসা পদ্ধতির তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি অথচ ব্যধি তো আর থেমে নেই।

তাই শেষ পর্যন্ত মর্ত্যের দেব মন্দিরের দরজা বন্ধ হতেই স্বর্গেও লক ডাউন ঘোষনা করলেন দেব রাজ ইন্দ্র। 
এখন দেবতারা সব কর্ম হারিয়ে বেকার, হাতে এখন বিশেষ কাজ কর্ম নেই।
মর্ত্যের মানুষ তাদের এই দুর্দিনে  নিজেদেরই বাঁচাতে ব্যাস্ত, দেব ভক্তি তো দূরস্থ।
তাই এই অবস্থায় দেবতাদের চুপটি করে ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর উপায় নেই।

অমরাবতীতে ইন্দ্রের সভা পর্যন্ত বাতিল হয়েছে। 
সোমরস এর যোগান অপ্রতুল।যেটুকু স্টক ছিলো তা ক্রমে নিঃশেষ এর দিকে। ভক্তের দল নৈবিদ্য, উপাচার, আহুতি বন্ধ করায় দেবধামে ঘরে ঘরে আর্থিক অনটন।
ইন্দ্রের দেওয়া  ত্রানে কোন রকমে দিনপাত করছেন তারা। তাকিয়ে আছেন  কবে আবার কাজ ফিরে যাবেন।
এ মত অবস্থা আমোদ প্রমোদ শোভা পায় না। তাই গন্ধর্ব দের গান এবং অপ্সরা দের নাচ ছাড়া স্বর্গের চারদিক যেন শ্মশানের নিঃস্তব্ধতা।

এদিকে রম্ভা,মেনকা প্রভৃতি অপ্সরাদের বিনা ডায়েটিং এ ওয়েট বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
তাদের আর সেই তন্বী চেহারা নেই। 
ঘরে বসে তারা স্বর্গের টিকটকে নৃত্য রস পরিবেশন করলেও ঘর থেকে নট নড়নচড়ন।

পুরন্দরের রাজ্যে সবাই লক ডাউন ঠিক মতো মেনে চলছেন কিনা তার জন্য বায়ুর দেবতা পবন কে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন দেবরাজ।
কারন তিনিই তো একমাত্র সর্বত্রগামী।
তবে ইন্দ্রের নির্দেশ সবাই যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন এমনটাও নয়। দু এক জন ফাঁক গলে ঠিক বেরিয়ে পড়ছেন নানা অছিলায়।
যেমন দেবর্ষি নারদ। দু এক দিন তিনি বেশ গম্ভীর মুখে বাড়িতেই হরিনাম করে কাটিয়ে দিলেন কিন্তু দিন তিনেক যেতে না যেতে তাঁর উশখুশ শুরু হলো। 
 ওই যে কথায় বলে না, পায়ের তলায় সর্ষে।

ঘরেতে কি তার মন টেকে।  সারাক্ষণ এ ঘরে ওর ঘরে উঁকি মারা যার অভ্যেস তার কি ঘরের ভিতর থাকতে ভালো লাগে। 
শেষে যখন বাইরে বেরোতে না পরে যখন বুক পেট আইঢাই করে গেলো গেলো অবস্থা তখন আর থাকতে পারলেন না ব্রহ্মার মানস পুত্র।

ব্যাস অমনি ঢেঁকি বাগিয়ে  চলে গেলেন মর্ত্যে আড্ডা দিতে। আর যাবিতো যাবি সোজা গিয়ে পৌঁছালেন  নয়াদিল্লীর রেড জোনের একটা বিষ্ণু মন্দিরে। চত্বরের দিকে ঢুঁ মারতেই তার উপর হানা দিলো অদৃশ্য বীজাণু। সেটি নিজের শরীরে বহন করে সোজা হাজির হলেন বিষ্ণুলোক ঘুরে কৈলাসে।
বেচারা নন্দী তখন বিশাল খলে বসে বাবার সিদ্ধি কুটছিলো। সামনে সিদ্ধির পুখুর ভরে আছে। 
মুখে অবশ্য মাস্ক ছিলো নন্দীর তবুও নারদমহাপ্রভুর তা ছিলো না। তার নাকি মাস্ক পরতে ভীষণ আপত্তি। মুখে মাস্ক চড়ালে  হরিনাম জপে কষ্ট হয়। 
তিনি এসেছিলেন শিব দর্শনে কিন্তু যবে থেকে মর্ত্যে করোনার দাপট বেড়েছে এবং মন্দিরের দরজা সব বন্ধ, ভোলে বাবা বাইরের কারোর সাথে বিশেষ দেখা করেন না।

যাই হোক দু চার কথা নন্দীর সাথে বলে নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময়ের পর বিদায় নিলেন নারদ মুনি। তার ঠিক দিন দুয়েক পরে নারদের করোনা সংক্রমণ ধরা দিলো।
স্বর্গের প্রথম কোভিড পজেটিভ বলে সনাক্ত হলেন দেবর্ষি।
আর তার পর থেকেই সমগ্র স্বর্গ জুড়ে স্বর্গবাসী দের মধ্যে সর্বক্ষণের একটা আতঙ্ক।
সকলের শরীর কেমন যেন শুধুতেই জ্বর জ্বর ভাব হতে শুরু করলো। একটু হাঁচি হলেও পাশের দেবতারা  দশ হাত দূরে পালায়।
বার বার ফালতু পেশেন্ট দেখে অশ্বিনীকুমাররা যত না ক্লান্ত তার থেকে বেশি বিরক্ত, অথচ দেব কর্মচারী রূপে ডিউটিতে না এসেও উপায় নেই। দেবরাজ একশ শতাংশ হাজিরার ফরমান জারি করেছেন।

আবার বিষ্ণুলোকে বিষ্ণু সোশাল ডিস্টেন্সিং এর জেরে তক্ষক নাগের নীচে যোগনিদ্রায় যেতেই পারছেন না। তার কোমর, সারা শরীর জুড়ে টন টনানি ভাব। কিছুতেই অন্য কোথাও শুয়ে সেই আরাম পাচ্ছে না।
ক্ষনে ক্ষনে ডাক পড়ছে লক্ষ্মীর, কিন্তু তিনিও আর বাতের ব্যাথার মালিশে নারাজ। বাজারে মন্দা তাই তার মান্থলি ইনকামে টান পড়েছে।
তবে স্বর্গের চেয়ে মর্ত্যের শ্রীক্ষেত্রে থাকা জগন্নাথ প্রভুর অবস্থা কিছুটা মন্দের ভালো।

যেহেতু  তার হাত এবং পা নেই তাই সেগুলি বার বার সাবান দিয়ে ধোয়ার ঝামেলাও নেই। তবে ভক্ত বিনে তিনি যে খুব একটা সুখে আছেন তা বলা যায় না।এদিকে রত্রযাত্রাও অনিশ্চিত। 
তবে এই মরসুমে যার কাজের পরিমান বহুগুন বেড়ে গেছে, তিনি হলেন স্বয়ং যম।
তার আর নাওয়া খাওয়ার সময় নেই, মহাচন্দ্র আর কালপুরুষ মানুষ ধরে ধরে আনছে তো আনছেই, যেন তার শেষ নেই।
এবং এনেই কি আর শান্তি আছে।
যম লোকে আসা নতুন আত্মা, মানুষ্যকুল থেকে যম লোকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা প্রবল।
আগত আত্মাদের থার্মাল স্ক্রিনিং করে, চৌদ্দ দিন আইসোলেশনে রেখে তবেই তাদের বিচারের খাতা খুলতে হচ্ছে। ফলে দেরি হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়াতে অন্যদিকে নশ্বর আত্মাদের এই কটা দিন যে জামাই খাতির করতে হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কারণ কে যে পুণ্যবান আর কে যে পাপী তা চিত্রগুপ্তের খাতা না উলটানো অবধি বোঝার উপায় নেই। তাই যমের ফান্ড থেকে বিস্তর টাকা খরচা হচ্ছে। তিনিও তিতিবিরক্ত
এদিকে কৈলাশের অবস্থা যে খুব একটা ভালো তা বলা যায় না। নন্দী হোম কোয়ারেন্টিনে যাবার পর , ভৃঙ্গী লক ডাউনের জেরে কাজে আসছে না। তাই মা দুর্গার মাথা পাগল হবার জোগাড়।
তার উপর আবার তার দশ হাত । হাত ধুতে ধুতে তার প্রায় সারাটা দিন কেটে যাচ্ছে। ওদিকে কার্তিক-গণেশের স্কুলে তালা। তারা সারা দিন তারা কৈলাস মাথায় তুলে রেখেছে।এদিকে আবার শুটিং বন্ধ থাকায় স্বর্গের টিভি সিরিয়ালে নতুন কোন প্রোগ্রাম নেই। 
ওদিকে আবার স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় স্বরস্বতীরাও মুখ ভার।তার  বাহন হাঁস টাকেও কাছে এনে যে একটু আদর করবেন তার উপায় নেই।

তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেবাদিদেব কে নিয়ে। তিনি আবার শ্মশানের বাসিন্দা। স্যানিটাইজেশনের নাম গন্ধ নেই।
তবে যবে থেকে  করোনার লাশ শ্মশানে পুড়তে শুরু করেছে তিনি সেখানেও যেতে পারচ্ছেন না, পাছে তিনি তার থেকে সংক্রমিত হন।
আবার বাড়িতে থাকলেও মহা জ্বালা। সারাক্ষণ হর-পার্বতির খিটিরমিটির লেগেই আছে।
শেষে কিনা মহারূদ্র কে ঘর সাফাইয়ের কাছে মহামায়া লাগিয়ে দেন সেই ভয়ে তিনি অস্থির।
নন্দী ছাড়া তার গাঁজা-কল্কে কে আর তোয়াজ করে দেবে। সেই রকম এই লক ডাউনে তার গিন্নীর তিতীক্ষ মেজাজ যেন সব সময় সপ্তমে চড়ে আছে ।
এমন টা নয় যে ভোলা মহেশ্বর কাজে ফাঁকি দেন, কিন্তু যেহেতু তিনি ভোলে বাবা তাই কাজ গুলো বেশির ভাগই ভুলে ভরা।
যেমন সেদিন কৈলাশ চত্বরের সাফাই করতে গিয়ে মুছো খুঁজে না পেয়ে ভুলে নিজের ব্রাঘ্যাসন টি দিয়ে মুছে ফেল্ললেন চারিদিক।
আবার সংক্রমণের ভয়ে কোথায় যে তার মাথার  চাঁদ খানা খুলে রেখেছিলেন বেমালুম ভুলে গেলেন।
সেটি খুঁজে পেতে বিস্তর কাঠ-খড় পোড়াতে হল তাকে।
ওদিকে গাঁজা-সিদ্ধির তেষ্টায় তার প্রাণ ওষ্ঠাগত । অথচ ছেলে মেয়েদের সামনে নেশাভাঙ করা যায় না।

এই সব নিয়ে স্বর্গের এক্কেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা।
এ অবস্থা চিরকাল চল্ললে পিথিবির পাশাপাশি দেবতাদের সগগো লোক রসাতলে যাবে।
অতএব দেবতারা স্বয়ং বিষ্ণুর অভিভাবকত্বে প্রজাপ্রতি ব্রহ্মার স্মরনাপন্ন হলেন। কারন যদি এর কোন প্রতিকার থাকে তবে কেবল ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্ম টি।
কিন্ত ব্রহ্মার অবস্থা তখন তথৈবচ।
চার মুখ নিয়ে তিনি বেশ সমস্যায় পড়েছেন। তার চতুর্মুখে মাস্ক পরতে গিয়ে তার একেবারে নাজেহাল অবস্থা। কেনার খরচা টাও খুব একটা কম নয়। সাবান স্যানিটাইজারের খরচ টা না হয় ছেড়েই দেওয়া গেল।
অতএব দেবগণের  আলোচনা শেষে সকলের কাছে কোন উপায় না দেখে দেবতারা মহামায়ার স্মরনাপন্ন হলেন।
আবির্ভূতা হলেন দেবী।
প্রথমে এসেই তিনি সকলের চারিদিকে লক্ষন গণ্ডি নিজে হাতে টেনে, এই মর্মে ঢ্যাঁড়া দেওয়ার বন্দোবস্ত করলেন যে,যদি কেউ এই সমস্যার সমাধান করতে পারে তাকে অমৃতের ভাগ দেওয়া হবে।
দলে দলে অসুর,তপস্বী,ভুত,প্রেত,গান্ধর্ব,দেবতা  সকলে ঢ্যাঁরা শুনে এসে হাজির হলেন কৈলাশে।
কৈলাশে কারন সেখানেই ঠান্ডা বেশি।
ত্রি-দেব মাস্ক আর পিপিই পরে বসে গেলেন ইন্টার্ভিউ নিতে। কত রকমের টোটকা,তন্ত্র,মন্ত্র,কালোজাদু,জড়িবুটি নিয়ে তার হাজির হলেন কিন্তু সমস্যা যেই কে সেই।
শেষ এক বৃদ্ধ এসে হাজির হলেন দেব বৃন্দের সামনে। সকলে তখন নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।
দেবরাজ ইন্দ্র তো বলেই ফেল্ললেন
-এত বড় রথী মহারথী, এমনকি দেব শক্তি পর্যন্ত হার মানলো, তুমি কে হে বাপু? যে এ রোগের নিরাময় তোমার হাতে?
বৃদ্ধ তখন সকলকে নমস্কার জানিয়ে অল্প মৃদ্যু হেসে উত্তর দিলেন
- আমি বিজ্ঞান এর সাধক প্রভু,আমি সেই মনুষ্য জাতির প্রতিনিধি, যারা যুগ যুগান্ত ধরে সমস্ত প্রতিকূলতা যে হারিয়ে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে।
আমি জাতির প্রতিনিধি যারা অন্ধকারে জ্ঞানের  আলোক জ্বেলে আঁধার কাটিয়ে তোলে।

এর পর মানুষ আর বিজ্ঞানের অক্লান্ত পরিশ্রমে আবিষ্কৃত হলো করোনার বধের অস্ত্র। হার মানলো অপরাজেয় ব্যাধি।
স্বস্তি ফিরে এলো দেবলোকে। চেনা ছন্দ ফিরে এলো তাদের সাধের মর্ত্যে।

মন্দিরের দরজা উন্মুক্ত হলো সকলের জন্য।
আবার কাজ ফিরে পেলেন দেবতারা

মর্ত্যের মানুষ সুস্থ হয়ে দেব মন্দিরে ছুটলেন দেবতাদের মাহাত্ম্য এর গুণকীর্তন করতে। আবার তার মেতে উঠলেন দেবতাদের উৎসব নিয়ে।
বিজ্ঞান তখনো নির্বিকার। সে তখন পুরস্কারের অর্থসরূপ অমৃত্যের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন।
আর দেবতারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেল্ললেন, মনে মনে ভাবলেন ভ্যাগিস অমৃতের কথা মনে নেই
"অমৃতস্য পুত্রাঃ" দের।। 


(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
আষাঢ় শ্রাবণে
সার্বজনীন মাটি  

ঝম ঝম ঝর ঝর
অঝরে বৃষ্টি ঝরে,
কাজলের কালো ঐ
ছল ছল জলধরে!
ঢেউখেলা কতজল টলমল 
বিল ঝিল নদীতে আসিয়াছে বন্যায়,
লাবণ্যময়ী শাপলা কলমিরা
আনন্দে দুলিতাছে হিমেল হাওয়ায়!
হলদে ব্যাঙগুলো প্রেমগীতে মুখর
রাত্তিরে ঝোপঝাড়ে ঝিঁঝিঁপোকা ডাকে,
বাতায়নে কভু হেরি - মরাল মরালি
আপন মনে হারায় নদীর বাকে!
বিলের ধারে ঝোপের আড়ে
এমনি রিমঝিম বারিঝরা বরষায়,
জোড়াহিন ডাহুকটি আজ
প্রতীক্ষার দিন গুণে কাহারো ভরসায়!
পত্রপল্লব আর তরুশাখা বেয়ে
ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে যে শান্তির জল,
ক্ষণিকের তরে হৈলেও নিভিয়া যায়
এমনি কালে মোর হৃদি ক্ষোভানল!
আ..হা! আষাঢ় শ্রাবণের এমনি দিনে
কেয়া আর কদম্ব কলিরা আরও অনেকেরে-
সাথে লয়ে বারির অবগাহনের পরে-
সিক্ত বসনে মৌন হাসিতে হাসে প্রাণ ভরে!
দিবারাত্রে ব্রহ্মপুত্রে স্রোতের ধার
বইতে থাকে ঐ যতক্ষণ,
বহু দূরে হৈতে যেন কর্ণে আমার
মধু গান শ্রবি ততক্ষণ!
আবার সহসাই দেখি বাংলা মা
কাঁদিয়া উঠে ত্রাসে,
গ্রাম আর শহর পড়িয়া যায়
বন্যার নিষ্ঠুর গ্রাসে!
বহু বারের বন্যার এই কৃতিকান্ডকে
বাংলার মানুষ চাহিয়া দেখিয়াছে,
কত যে জীবন ও সাজানো সংসার,
সোঁও সোঁও খরস্রোতে ভাসিয়া গিয়াছে।
আবার মেঘহীন অন্তরীক্ষে
হেরি আমি উজ্জ্বল এক পরি,
এবার বুঝি বর্ষার মাতম
থামাইবেন দয়াময় হরি!

শাওন রজনীতে শুধাংশু দেখি
আমি নীল আকাশে,
ঊষায় দেখি নাহিত এ বাংলা মা
আরেক রূপে হাসে!

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
               ছুটি
               
     শ্যামল কুমার রায়

রোজ রোজ রোববার হলে
কত ভালো হতো!
পড়ার ছুটি, অফিসের ছুটি
ছুটি একঘেঁয়েমি থেকেও।

আর আজ?
'মাগো আমায় ছুটি দিতে বল"
এক আস্ত বিড়ম্বনা!
রোজকার জীবন, রোজকার উঠা পড়া
 এটাই তো মধুমাখা।

অথচ সময় থাকতে বোঝা গেল না।
কাজ, কাজের ফিরিস্তি, কাজের ডিপ্রেশন।
ঘরে ফেরার তাড়া, ঘরে সময় কাটানো
না হলেই জ্বালা।
পরিমিতই অমৃত- বোঝে না মন।

ঘর, ঘরনী- সব অসহ্য আজ
মুক্তি চায় মন, মুক্তি করোনা ভয় থেকে।
 উড়তে চায় খোলা আকাশে
শ্বাস নিতে চায় বুক ভরে।

জড়িয়ে ধরতে চায়
উষ্ণ আলিঙ্গনে ঈদে, বিজয়ায়।
পাবজি ছেড়ে চায় পায়ে বল 
ছুটি চায় ছুটি থেকে।
 
(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
আষাঢ়ের সেই রাত...
নবনীতা সরকার

আষাঢ় এলেই মনের ভেতরটা হু হু করে ওঠে বীথির৷আজ এতগুলো বছর পরেও সেই দিনটা একভাবেই কাঁদায় তাকে ৷অনেক চেষ্টা করেছে ,কিন্তু আষাঢ়ের একটানা বৃষ্টির রাতগুলো তাকে ভুলতে দেয় না কিছু ৷ চোখের সামনে সব কালকে ঘটে যাওয়া  ঘটনার মতো পরিষ্কার ভেসে ওঠে...৷
সেবার টানা বৃষ্টি হচ্ছিল ক'দিন ধরে  ৷ চারিদিকে জল ,কাদা ৷ বীথি বরাবর ভীষণ আতুকী ৷জল কাদা দেখলে বিছানা ছেড়ে নামত না সহজে ৷ তাকে প্রচ্ছন্ন মদত দিত তার দাদা ৷ ছোটো থেকে বাবাকে হারিয়ে দাদাই ছিল ওদের সংসারের সব ৷ সেদিন লোডশেডিং ছিল ৷ তার মা সন্ধ্যের জলখাবার করতে বসে, একটু কেরোসিন তেল ভাঁড়ার ঘর থেকে আনতে বলেছিল বিথীকে ৷ ভাঁড়ার ঘরে যেতে হলে উঠোন পেরিয়ে যেতে হত,তাই যথারীতি গরিমসী করছিল বীথি ৷ মায়ের কথা না শোনার ভান করে চুপচাপ ছিল সে৷ বোন যাতে বকুনি না খায় তাই কেরোসিন তেল এনে দিয়েছিল দাদা ৷এভাবে কতবার জীবনে দাদা যে তাকে মায়ের বকুনি আর মারের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল....!
তেল এনে চা খেয়েছিল দাদা ৷ তারপর হঠাৎই শুয়ে পড়েছিল ৷শরীর খুব খারাপ লাগছে বলছিল ৷ তারা  ,মা-মেয়ে, দুজনেই অবাক ৷হঠাৎ এমন কি হল ...! বীথির প্রথম মনে হয়েছিল যেন, দাদার মুখটা কেমন নীল হয়ে আসছে ৷ কথা জড়িয়ে যাচ্ছে ৷ ঝড় জলের রাত উপেক্ষা করে ,পাড়ার কবিরাজ কাকুকে ডেকে এনেছিল সে ৷ কাকু এসে দেখেই ,চমকে উঠেছিল..
-আরে এতো বিষধর সাপে কামড়েছে বিশ্বকে ! বুঝিসনি তোরা ?সর্বনাশ ! 

এ কথা শুনে বীথি আর তার মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল ৷ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল দুজনেই ৷ কবিরাজ কাকু না জানি কোথা থেকে একটা ঠেলা গাড়ি জোগাড় করে  এনে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল দাদাকে ৷ বীথি গিয়েছিল পেছন পেছন ৷  বিথীর মা বিছানায় বসেছিল পাথরের মতো ৷ হসপিটালের ডাক্তার বলেছিল আর কিছু করার নেই ৷ দেরি হয়ে গেছে অনেক ৷ সেদিন রাতটা বীথির জীবনের অভিশপ্ত রাত...  ৷আজ আবার তেমন আষাঢ় এসেছে আকাশ ছেয়ে ৷ মন খারাপ করা বৃষ্টিতে নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয় বীথির ৷  দাদার মৃত্যুর জন্য নিজেকে আজও দায়ী ভাবে সে ৷ কেন যে সেদিন তেলটা আনতে ভাঁড়ারে গেল না সে !!

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)

আশায় আষাঢ়

   রীনা মজুমদার

 আষাঢ় মানে,
মেদিনীর বুকে চারা রোপণ
   যেন,
 ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ধারায় মাতৃস্তন্যে যাপন,
 সময়ের এ কোন আষাঢ়?
 চোখের জলে জীবন ভাসে !

 তবুও আশায় আষাঢ় আসে
 কারও সম্মতির অপেক্ষা না করে-
 আষাঢ়ের জলে নিশীথ রাতে
 ছায়াপথ ধরে জীবনের যতিচিহ্ন খুঁজে চলি..

 প্রভাতী সূর্যের আলো দিয়ে 
  যায় দিগন্তে শান্তির পরশ
 ভোরের কুশল বিনিময়ের পর, তবুও
 অনাগত সময়কে বলতে পারি না 
       নিশ্চিন্তে,
            আমি আছি ...

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
ভক্তের ভগবান
সুস্মিতা পাল কুন্ডু

আষাঢ় মাস শ্রীপতি-নয়নার সংযমের মাস ৷ সারাটা মাস পুজো আর্চা ও নিরামিশ আহারে মাস কাটে ৷  বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ় ৷ আকাশে ঘনকালো মেঘের দলের আনাগোণা ...আর টুপটাপ  ঝরে পড়া বৃষ্টির গানে সবুজ হয়ে ওঠা পরিবেশ .... মনে ভরসা জোগায় ৷ হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই মাসে ধরিত্রী রজঃস্বলা হয় ৷ অম্বুবাচী শেষে  নতুন করে হলকর্ষণ করার পর আমনধানের বীজ বপন করা হয় ৷ কৃষক পরিবারের মেয়ে নয়না ছোট্ট থেকে এইদেখেই বড়ো হয়েছে ...আর শ্রীপতির তো বড়ো হওয়া ভগবানের লীলাখেলার দেশে ৷ আজ রথযাত্রা ... শ্রীপতি-র ঘুম ভেঙ্গে গেল খুব সকালে ৷ নয়নাকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে সেও উঠে পড়ল ৷ ভাবল হয়তো বা বাগানে আছে  ৷ ধর্মশালার সামনে সুন্দর বাগানটি তীর্থযাত্রীদের অবসরে সময় কাটানোর একটা ভালো জায়গা ৷ একসময় শ্রীপতি নিয়মিত পরিচর্যা করত বাগানটির ৷ পায়ে পায়ে সারা বাগান ঘুরেও নয়নাকে কোথাও দেখতে পেল না ৷ আশেপাশে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ঘরে ফিরে এসে ঘুমন্ত ছেলের পাশটিতে বসে থাকল চুপ করে কিছুক্ষণ ৷ টুকুন শ্রীপতি আর নয়নার বেশি বয়সের সন্তান ৷ ত্রিশ বছর বয়সে শ্রীপতি নয়নাকে বিয়ে করে ..তখন নয়নার আটাশ ৷ আগে থেকে কোনো ঠিক ছিল না , হঠাৎ করেই  বিয়েটা হয় ৷ নয়না-র মা এসেছিল পুরীতে বাসে চেপে অন্য অনেকের সাথে মেদিনীপুর থেকে ৷  শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মন্দিরে সবার সাথে পুজো দিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে ছিলেন এদিক সেদিক ৷  তারপর ফেরার সময় হঠাৎ করে ধেয়ে আসা সুপার সাইক্লোনের মধ্যে পড়ে যায় ৷ কয়েকদিন আটকে ছিল সবাই ধর্মশালায় ৷ সেখানেই কাজ করত শ্রীপতি ৷ হঠাৎ নয়না-র মা অসুস্থ হয়ে পড়ে ....শেষপর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় ৷ এর মধ্যে তীর্থযাত্রীদের নিয়ে বাস ফিরতে চাওয়ায় সমস্ত দায়িত্ব শ্রীপতি-র ঘাড়ে এসে পড়ে ৷ 
                     অবশ্য ঘাড়ে পড়েছে বললে ভুল বলা হবে ...স্নেহপরায়ণা বিধবা মহিলাটির প্রতি শ্রীপতি কেমন যেন মায়ার জড়িয়ে যাওয়ায় কিছুটা নিজে যেচেই দায়িত্ব নিয়ে নেয় ৷ কয়েকদিন পরে একটু সুস্থ হওয়ায় তাকে মেদিনীপুরের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য সঙ্গে করে রওনা দেয় শ্রীপতি ৷ কিন্তু কোনোরকমে  বাড়ি পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ মৃত্যুর আগের দিন নয়নার মা নিজের একমাত্র মেয়েকে শ্রীপতির হাতে তুলে দিয়ে যান ৷ একান্নবর্তী পরিবারে কষ্টেসৃষ্টে বেড়ে ওঠা নয়না , বিধবা মায়ের শেষ ইচ্ছেটুকুকে সম্মান জানিয়ে শ্রীপতির হাত ধরে ...আর শ্রীপতি এত শান্ত - লক্ষীমন্ত একজনকে যে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাশে পাবে তা কখনো ভাবে নি ৷  মায়ের মৃত্যুর পর কাকারা নয়নার বাবার জমির ভাগটুকু  নয়নার নামে করে দেয় ৷ একফালি জমিতে নতুন করে ঘর তৈরি করে গড়ে ওঠে নয়না-শ্রীপতির সংসার ৷ আইসিডিএস কর্মী নয়নার চাকরিটা তখন সবেই পাকা হয়েছে ...তাই বউকে নিয়ে শ্রীপতির ফেরা আর হয়নি পুরীতে ৷ নিজেই এখানকার এক কাপড়ের দোকানে কাজ জুটিয়ে নেয় ৷ অবশ্য শ্রীপতির নিজের কোনো পিছুটান ছিল না ....কোনো এক সময়ে মা-বাপ মরা কিশোর শ্রীপতি উড়িষ্যার কোনো এক অখ্যাত গ্রাম থেকে মামার সঙ্গে পুরী এসেছিল ৷ মামা তাকে কাজে ঢুকিয়ে  সেই যে গেছে ...আর এমুখো হয়নি ৷ ধর্মশালায় চাকুরিরত সবাইকে নিয়েই বেশ কাটছিলো শ্রীপতির...কেটেও যেত দিন , এর মধ্যেই এই ঘটনা ৷ শ্রীপতি ভাবে সবই জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদ ৷
       বিয়ের পর কয়েকবার নয়নাকে নিয়ে পুরী ঘুরে গিয়েছে শ্রীপতি ৷ এখানে  নিজের জায়গায় এসে ওঠে  ৷ সবাই নয়নাকে দেখে আর ওর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছে ৷ কিন্তু যখন অনেকদিন সন্তান হলো না ...তখন  যেন নয়না কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকতে শুরু করে ৷ শ্রীপতি নয়নাকে অভয় দিয়েছে ....আর নয়না জগন্নাথদেবের কাছে বারবার মাথা কুটেছে ৷ অনেক ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করে হাল ছেড়ে দেওয়ার পর...বিয়ের দশবছর বাদে টুকুন এসেছে ৷ নয়না-র বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে জগন্নাথদেবের আশীষ না পেলে হত না ৷ তাই প্রতিবার রথের সময় পুরীতে জগন্নাথদেবের কাছে ছুটে আসে তারা ৷ কিন্তু এবছর পরিস্থিতি অন্যরকম ...করোনা আবহাওয়ায় দেশে লকডাউন চলছে ৷ আনলক ১ এ , কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৷ রথযাত্রা শেষ পর্যন্ত হবে কিনা এই নিয়ে দোলাচলে ভুগেছে ওরা ৷ কিন্তু যেই খবর পেয়েছে হবে ....তক্ষণাৎ মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছ থেকে অনুমতি আদায় করে ছুটে এসেছে সন্তান নিয়ে দু'জনে ৷ জানে রথের দড়ি ছোঁয়ার অধিকার এবার একমাত্র সেবাইত দের ৷ তবুও মন মানে নি ....
       অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও নয়না না ফেরায় শ্রীপতি অস্থির হয়ে ওঠে ৷ ছেলেকে স্নান করিয়ে ...খাইয়ে ,নিজেও স্নান করে  ছেলে কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে ধর্মশালা ছেড়ে এগিয়ে চলে মন্দিরের দিকে ৷ কিন্তু একসময় পুলিশের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে আর এগোনো সম্ভব হয় না ৷ দূর থেকে দেখে পুরীর মহারাজা সোনার ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন ৷ কিছু উৎসাহী তীর্থযাত্রীদের ভিড়ে নয়নাকে কোথাও দেখতে পায় না ৷  বেলা বাড়ছে  ..রথযাত্রা শুরু হয় ...প্রথমে বলরামদেবের রথ তালধব্জ ,সুভদ্রাদেবীর রথ দলদর্পণ সবশেষে জগন্নাথদেবের রথ নন্দীঘোষ মাসীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ৷ নয়নার খোঁজে চোখ ....ভেতরে ভেতরে অস্থির শ্রীপতি ...একমনে ভগবানকে ডেকে চলে  ৷ সন্ধ্যা নেমে আসায় ধীরে ধীরে তীর্থযাত্রীদের ভিড় হালকা হতে থাকে ...আর তখনই চোখে পড়ে নয়নাকে ...নয়নাও দেখতে পায় শ্রীপতিকে ৷ লাল গরদের শাড়ি পড়া  নয়নার চোখেমুখে যেন যুদ্ধজয়ের হাসি ...ফুল প্রসাদের ডালাটা দু'হাতে চেপে এগিয়ে আসে ধীরে ধীরে শ্রীপতির দিকে ৷ শ্রীপতি তখন তার লক্ষীকে দেখতে পাওয়ার আনন্দে সজোরে চিৎকার করে বলে ওঠে , ' জয় জগন্নাথ ,জয় বলরাম ,জয় সুভদ্রা ' ....



বি.দ্র : সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক ৷

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)




এমন মিষ্টি বৃষ্টি মাখা দিনে
                  নরেশ রায়


যেন মেঘ বাজাচ্ছে টোরি বিলাসখানি
মৌসুমী বাতাসের মিষ্টি মধু ঝুনঝুনি
হৃদয় বীণায় সুরে বাঁধা তার
মেঘমল্লারে মাতায় ওঠায় ঝঙ্কার ।
সবুজ ঘাসের নতুন গালিচায়
নাচে গায় হাসে রঙিন প্রজাপতি
নাচায় আমার পাগলা মনটাকেও
রূপের বাহার বেড়েছে তিস্তা তোর্ষার ।
মন হারিয়ে যায় শুনে তানসেনের তান
আমি নিজেরে হারিয়ে খুঁজি বারেবার
তোমাকে খুঁজি দুনিয়া করি তোলপার ।
রিমঝিম ঝমঝম টিপটিপ টুপটাপ
পাগলা মাতাল হাওয়ার উদ্দাম রক
তোমাকে পাবার জন্যে মনের তীব্রতা
সভ্যতার আদি থেকে চলে আসছে
তিন লোক জুড়ে তুমি শুধু তুমি---
এমন দিনে তোমার পাবতো দেখা ?

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)



         আশার আষাঢ়

            রুপক রায়

সব বন্ধ, তবু জানালা খুলে রাখি
একটু আলো-আষাঢ়ের আশায়
ঝিমঝিম বৃষ্টি সারাদিন...
ওরা ছাতা মাথায়
     মারে মাছ এই ঘোর বর্ষায়
ওরা জীবন খুঁজে বেড়ায়
ওরা জীবন খুঁজে পায় 
ভেজা মাটির গন্ধে
ওরা সোনার ফসল ফলায়।
মেঘেরা ছুটে চলে মেঘলা মনে 
আদি হতে অন্তে দিগ-দিগন্তে

                           রঙীন স্বপ্নে,...

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)

শ্রাবণ দিনে

সুবীর সিনহা রায়



হে বনস্পতি ,
তোমারই মোহিনি ছায়াজালে
ঘিরেছে আজ সমস্ত আকাশ কী জানি !
শ্রাবনমেঘে মাদলের বোল দ্রিমিকি দ্রিমিকি                         বুকের মধ্যে হুম হুম করে
কোন্ পুরাতন টেনে নিয়ে যায় কারে
বিরহী নীল নির্জন ছায়া ছায়া তলে
অনাগত সুখ স্বপ্ন ঘেরে মোহে
মেঘমল্লার আজ ব্যাকুল অরণ্য মনে
ভেসে যায় দূর, বহুদূরে বনান্তরে ....

হে বনস্পতি ,
তোমারই মোহিনি ছায়াজালে
ঘিরেছে আজ সমস্ত আকাশ কী জানি !
শ্রাবনমেঘে মাদলের বোল দ্রিমিকি দ্রিমিকি                         বুকের মধ্যে হুম হুম করে
কোন্ পুরাতন টেনে নিয়ে যায় কারে
বিরহী নীল নির্জন ছায়া ছায়া তলে
অনাগত সুখ স্বপ্ন ঘেরে মোহে
মেঘমল্লার আজ ব্যাকুল অরণ্য মনে
ভেসে যায় দূর, বহুদূরে বনান্তরে ....

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
বৃষ্টি পেয়ে
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ

বৃষ্টি সারাদিন
জীবনটা রঙিন
কামিনী আর কদমফুলে পাতছে যেন সই
তাইনা দেখে ফুলের বনে পাখিদের হইচই।

কুমড়োফুলে জল
মাছগুলো খলবল
আকাশজুড়ে মেঘেরখেলা বৃষ্টি করে ভিড়
কলাবতী দোলনচাঁপাও নইকো তারা স্থির।

কলমি কচু জুঁই
শাপলা কেয়া পুঁই
পুকুর ডোবায় ব্যাঙেরা সব করছে কলরব
বৃষ্টি পেয়ে আষাঢ় মাসে দল বেঁধেছে সব।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
                       অবশেষে থাকে কিছু
                                    কুমকুম ঘোষ

পিছলে যাওয়া ভোরের আলো
নারকেলের মাথা ছুঁয়ে
সটান নেমে এলো রূপসী ওষ্ঠে;
 সোনালী  একটা মাছির মত।
তর্জনী উঁচিয়ে শাসনের ভঙ্গী
উপমা সম স্থির চিত্র।

স্বল্প-বৃত্তে ঘুরে চলা যাপনের চাকা;
চিত্র বদল হয়।
মাছিটা এখন ঘুর ঘুর করছে শুকনো ঠোঁটের
মাঝখানে; 
ছবিতে এখন  কিছু ফেলা-ছড়া কথা আর  চিতাভস্ম পরে আছে।

( উত্তর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে জলধারা
পুষ্পে পত্রে সবুজ হয়ে ওঠে অরণ্য ; 
সঙ্গমরত প্রণয় প্রণয়ীরা দলছুট প্রজাপতির 
মত ছন্দবদ্ধ এবং বন্য।
বিকেলের স্মিত আলোয় গা ভিজিয়ে নদী, বৃক্ষ এবং পশুপাখির দল সমবেত   গল্প - আসর জমিয়ে তোলে ; আকাশে তখন দু একটা নক্ষত্রের কানাকানি  শোনা যায়।
   অপূর্ব অস্তরাগে আক্রান্ত বুড়ো বটগাছ মৃদু বাতাসে হেলে দুলে উপাচার সাজিয়ে রাখে আসন্ন শর্বরীর জন্য। মাধুকরী সাঙ্গ করে ক্লান্ত বাউলটা তাকে সঙ্গ দেয়, খানিক  জিরিয়েও নেয়;  দু- হাত আকাশের দিকে তুলে ধরে, দ্রবীভূত আত্মমগ্নতায়।
অবশেষে, অবশেষে বৃষ্টিরা ধারাপাত হয়ে ঝরে পড়ে ; কিছুটা সবুজ পাতায় কিছুটা দগ্ধ হৃদয়ের খোলা খাতায়।)

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
এক পশলা বৃষ্টি
রুদ্র সান্যাল

অনেক ধ্বংস নিজেকে করেছি বারবার।
নিজের আগুনে করেছি নিজেকে ক্ষত।
তবুও মেটেনা সব হারাবার স্পৃহা!

বয়েস এগিয়ে চলে নীরব হাসি দিয়ে।
মুখেতে বাড়তে থাকে অনেক কাটাকুটি।
চারদিকে শুধু বিষন্নতার বিষ!

ম্লান মুখে চেয়ে থাকে শুধু, 
আমার একলা আকাশ।
পৃথিবীটা আজ মস্ত পাগলাগারদ!

কতবার আমি নীলকন্ঠ হবো? 
কিছুই চাই না আজ,
শুধু একপশলা বৃষ্টি আসুক জোরে।

অন্তত একবার....

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)



বৃষ্টি ধুয়ে

অর্পিতা গুহ মজুমদার
                                  
সংসারের সমস্ত কাজ সেরে সবে দুপুরে খবরের কাগজটা হাতে নিয়েছে  রিনি, এমন সময় বৃষ্টির আওয়াজ। " এই যা! ছাদের সব শুকনো কাপড়গুলো ভিজে যাবে যে..." স্বগোক্তি রিনির।আর বলেই দে ছুট ছাদের উদ্দেশ্যে। তড়িঘড়ি করে শুকনো কাপড়জামাগুলো তুলেই ঘরের দিকে ছুঁড়ে দিল রিনি। বৃষ্টি  খুব  তোড়ে এখনও নামেনি।আকাশের  গায়ের রং ঘন কালো। আকাশের দিকে চোখ পড়তেই  রিনি মনে মনে ভাবলো একেই  যেন কাব্যে বলে, "আষাঢ়াস্য প্রথম দিবস..."। না, এখন আর নীচে নামবে না রিনি। ছাদে উঠে আসার রিনি দেখেছে স্বামী এবং কন্যা দুজনেই  ভাতঘুমে মগ্ন।
আজ রিনি ভিজবে ইচ্ছেমত ভিজবে। ভাবতেই রিনি সরে এসে দাঁড়ালো ছাদে ওর প্রিয় নিভৃত কোণটাতে, যেখান থেকে দেখা যায় মাদার,বাবলা, গামারি আর বাঁশের ঝোপ ঘেরা পুকুরটাকে। অঝোরে শুরু হয়ে গেল আষাঢ়ের নববর্ষা। ভিজছে, প্রাণমন ভরে ভিজে চলেছে রিনি।গাছের পাতার ফাঁকে আশ্রয় নেওয়া রিনির বন্ধু পাখিগুলো কেবল যেন রিনির দিকে থেকে থেকে তাকাচ্ছে। পুকুরের বুকে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা গুলো দেখতে দেখতে রিনি মনে মনে আওড়াতে থাকে --"এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়.... "।
রবি ঠাকুরের উচ্চারিত কবিতার সাথে, দীর্ঘ সতেরো বছর অতিক্রান্ত হওয়া বিবাহিত জীবনের গোপন গহনে জমে থাকা অভিমানগুলো বুদবুদের
মতো ওঠানামা করতে থাকে রিনির মনে। মেঘের 
ডাকের মৃদু আওয়াজের সাথে রিনির কানে ভেসে আসে বহুদিন আগে বলে যাওয়া বাবার কথাগুলো, " অভিমান পুষে রাখতে নেই রে,জীবন স্রোতে ভাসিয়ে দিতে হয় "। রিনি অভিমানগুলোকে যেন বৃষ্টির জল আর বাঁধ না মানা চোখের জলের সাথে 
ধুয়ে ভাসিয়ে দিতে চেষ্টা করে। হঠাৎ কাঁধে শীতল হাতের স্পর্শে চমকে ওঠে রিনি।দেখে স্বামী নীলাদ্রি  ছাতা মাথায় কখন যেন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাঁধভাঙা রিনি নীলাদ্রির কাঁধে মাথা রেখে গুনগুন করে গেয়ে ওঠে -----" আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়....."।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)

               
ছবি- কাকলি বিশ্বাস সরকার
বাসা
    সুজিত মুখোপাধ্যায়

মেঘের বাসায় ,মন খারাপ রোদ উঠলে,
পুরনো কথার ফ্ল্যাশ বাল্ব।
ঠিক পাখির চোখে খুঁজে পাওয়া ,
ফেলে আসা বাসাটির মতো.....

কত খড়কুটো মুখে , বুক তাপে 
ভরে ছিল বাসা খানি তার --
সে দিনের স্বপ্নের মেলে দেওয়া ডানা ,
আকাশের মেঘ রোদ ভিজে ,
রবারের বুক দিয়ে , 
 ঠোঁটে ঠোঁট রেখে খুঁটে নিই এ মাটির দানা 

বৃষ্টি ফোঁটার সাথে পাখিডানা প্রেম--
ভিজবে জেনে ও আকাশ ছোঁয়া ডানার উড়ান।
ভিজতে ভিজতে ফিরে দেখা ,
অগোছালো ফেলে আসা বাসা টির বুক।

গাছ গা বেয়ে বৃষ্টি সোহাগ, 
শুকনো মরসুমি শ্যাওলা ও ভেজে ---
চিরহরিত হতে চাওয়া একবার , 
হয়তো বা শেষবার----

গাছের শিরদাঁড়া শেষে ,
 মৃৎজীবী ফ্যাকাশে ব্যাঙের ছাতাটির নীচে --
ঘাস ফড়িং এর ডানা মুথা ঘাসের বুকে ।

মাটি আর মেঘ চিঠি  লেখে ,
বিজলি কালির কলম ,বাজপোড়া বুকের দোয়াত ।
ডাকবাক্সে গুম গুম মেঘ ডাকে ,
গুলে যাওয়া পলি আল্পনায় --
অভিসারী বর্ষা বাসর সাজায় ।
কালো শিরীষ এর ডালে ,
ঝিঁঝি ডাকা নহবতে একটানা মেঘমল্লার ---

অশরীরী প্রেমও শরীর খুঁজে পায়।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
        "খোঁজ"
       সাবিউল ইসলাম

প্রত্যেকটা মানবের চিত্তের অন্তরালে 
 যে সত্য নিহীত থাকে,
তা প্রকাশ পেলে
একটা স্বচ্ছ পৃথিবী পাওয়া যেত।
আমি শুভাকাঙ্ক্ষী সে পৃথিবীর খোঁজে...।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
আশার আষাঢ়
সুপর্ণা চৌধুরী 
              
                   
          "তপের তাপের বাঁধন" কাটিয়ে এল আষাঢ়। প্রকৃতির  রঙ্গমঞ্চে হল পালাবল। আগুন  ঢালা তেজস্বী  সূর্যকে ঢেকে দিল ঘন কালো  মেঘ। গম্ভীর গুরুগুরু ধ্বনিতে মুখরিত হল  চারিদিক। 
               যেন "বহুযুগের ওপার হতে আষাঢ় এল" আশার ঝুলি পূর্ণ  করতে। মানুষের  জীবনধারণ তথা মানুষের  মনোজগতের জাগরণ আষাঢ়ই যেন সম্ভব করে তুলবে এই অসুস্থ পৃথিবীর বুকে।... আষাঢ়! "তোমার  মন্ত্র বলে পাষাণ গলে ফসল ফলে"। হে আষাঢ়,  অসুখ-ক্লিষ্ট এ পৃথিবীতে তুমি "সবুজসুধার ধারায়  প্রাণ এনে দাও  তপ্ত ধরায়।"
          আষাঢ়ের সূচনায় আকাশে  নবমেঘের গম্ভীর রূপ দেখে প্রাচীন কালে  যক্ষ খুঁজে পেয়েছিল জীবনের  অবলম্বন। অভিশপ্ত, নির্বাসিত, ক্ষমতা বিলুপ্ত, প্রিয়াবিরহী যক্ষ তাই অচেতন মেঘকে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে অভ্যর্থনা  জানিয়ে দূত করে পাঠাতে চেয়েছিল দাক্ষিণাত্যের রামগিরি থেকে সুদূর  উত্তরে অলকায় তার প্রিয়ার কাছে। "আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে" যক্ষ যেমন আশার আলোয় উদ্ভাসিত  হয়েছিল, তেমনি আমরাও আশায় বুক বাঁধছি
আষাঢ় তার অযুত বৃষ্টিধারায় ধুয়ে শুদ্ধ করবে
ভাইরাস-আক্রান্ত আমাদের এই পৃথিবীকে।

                 "আষাঢ়ে নব আনন্দ, উৎসব নব", তাই নতুন  ধান রোপন করেন  কৃষকেরা। "শতেক যুগের কবিদল মিলি গেয়ে ওঠেন শতেক  যুগের  গীতিকা"। আষাঢ় আশা নিয়ে  নেমে আসুক শ্যামল সুন্দর ভঙ্গিতে এই দুঃখী পৃথিবীর বুকে।

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
কোন একদিন
 কাকলি ভদ্র

একদিন হঠাৎ...
টুংটাং আংরাভাসা
ঢেউ তুলে যায়   
মেঘ ব্যালেরিনা
ত্রিভঙ্গী অঙ্গে     
মধুবনী রঙ্গে
বর্ষা মৃদঙ্গে!

একদিন হঠাৎ ...   
সামসির বুনো ঠোঁট
সুকৃতীর মেঘ মলহার
ওম ওম সোহাগ 
'আহিস্তা আহিস্তা     
           চুপকে চুপকে'
ছুঁয়ে দেয় চামুর্চির   
        সবুজ কার্ডিগান!

কখনও থৈ থৈ জাখোই
আঁকিবুকি দু'চোখে
ভিজে যাওয়া দিগ্-হাঁসের
সহজিয়া স্বপ্ন।
কখনও চালসে অমলতাস
বৃষ্টি-নোঙরে পুরে নেয়   
এক মুঠো খুটিমারি অরণ্য!

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
অন্য আষাঢ় 
     মৌসুমী চৌধুরী 

তোমার আমার মাঝে
অবিরাম ঝরছে অযুত মুক্তোদানা , 
হাওয়াদের পাগল দাপাদাপি।
কুড়োয় ছলাৎ ছলাৎ নোনা ঢেউ, মায়াবতী নদী এক।

তোমার আর আমার মাঝে 
মৃত্যু-চিৎকার আর আরোগ্যের টাগ-অফ-ওয়ার চলে।
রঙ-বেরঙের মুখ আর মুখোশের সালতামামি
পেরিয়ে 
 চিবুকে মুখ নামিয়েছে গোমড়ামুখো আষাঢ় আকাশ। 

আমার কবিতাদের বয়কট করে 
অস্ফুটে কী যেন ফন্দী আঁটে চাঁদ-তারা- ফুলেরা! 
জুঁই,বেলি, কদমেরা চোখ ঠারাঠারি করে,
স্লেটরঙা আষাঢ় লেখে অন্য এক মেঘদূত! 

তোমার আর আমার মাঝে দাঁতাল হাতি নষ্ট করে পদ্মবন
আমি তারে প্রেম নাম দিই!

(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)