মুজনাই
অনলাইন চৈত্র সংখ্যা ১৪৩০
বিপত্তি
রীনা মজুমদার
কর্তামশাই গিন্নিমাকে আড়াল করে, রাতে খাওয়ার সময় একটুকরো রুটি দিয়েছে আমাকে। সেই রুটি খেতে গিয়েই যত বিপত্তি মাঝরাতে!
গিন্নিমা সারাক্ষণ কর্তামশাইকে বলে চলে, "ওই নেংটি ইঁদুরকে বিষ দিয়ে তাড়াতে হবে। সারা ঘরময় এই দৌরাত্ম্য আর সহ্য করবো না। কর্তামশাইও ছাড়েন না বলতে, "গনেশ বাবার বাহন, বাবার দয়াতে ভাল মন্দ খাচ্ছ পরছো। সেটা মনে রেখো!"
কত্তামশাই আমাকে যারপরনাই আদর করেন। দিব্যি আছি।
একদিন কর্তামশাইকে না জানিয়ে গিন্নিমা এক বেড়ালছানাকে এনে হাজির। ব্যাস লেগে গেল কর্তামশাই ও গিন্নিমার সেই ধুন্ধুমার কান্ড!
গিন্নিমার যুক্তি-- মা ষষ্ঠীর বাহন। তোমার আদরের বাহন যদি থাকে, তবে মা ষষ্ঠীর বাহন কেন ঘরে থাকতে পারবে না? ছেলে মেয়ে দুটো বাইরে থাকে, ওদেরও ভালো মন্দ আছে!
কর্তামশাইও ছাড়ার পাত্র না, কত্তামশাইয়ের যুক্তি -- আমার নেংটি স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারবে না।
আমি বাবা গর্তে বসে কর্তামশায়ের যুক্তিতে হাততালি দিই মহা আনন্দে। যাক, দেখেশুনে চলাফেরা করে ভালোই চলছিল আমাদের চারজনে।
বিপত্তিটা ঘটলো মাঝরাতে! সেদিন সেই একটুকরো রুটি খেতে গিয়েই। কর্তামশাইয়ের দেওয়া রুটিটা যেই না একটু কামড় দিয়েছি, হঠাৎ কখন মেনিটা এসে লেজে দিয়েছে পা! টান মেরে পালাতে গিয়ে-- উঃ আঃ কী যে কোমড়ে লাগলো! ঘুম আসে না ব্যথায়। গিন্নিমারও হয় ব্যথা। মনে পড়ল, গিন্নিমাকে দেখতাম ড্রয়ার খুলে একটা মলম লাগাতে। তাই নিঃশব্দে গেলাম একটু মলম লাগাতে! যেই না টেনেছি ড্রয়ারটা -- ক্যাচ করে একটা বিকট শব্দ!
ব্যাস! মাঝরাত, গিন্নিমা ঘুমের ঘোরে চোর চোর করে এমন চিৎকার! কর্তামশাইও ঘোরের মধ্যে কে কে? ধর ধর বলে পাড়া মাথায় করে চিৎকার চেঁচামেচি। পাড়ার লোক জন চলে এল। এ বলে পুলিশে খবর দাও, কেউ বলে কোথা দিয়ে পালালো! ধরতে পারলে জ্যান্ত পিটিয়ে মারব।
কে কার কথা শোনে! রাত কেটে ভোর হয়ে গেল তবুও কর্তামশাই গিন্নিমা শান্ত হয় না! বিপত্তি বলে কথা!
এ তো মহা বিপদ। আমি কী আর করি! গর্তে ঢুকে বাবাকে ডাকি, শান্ত করো বাবা দুজনকে। বছর শেষের এই বিপত্তি আর না আসে। বছর শুরু হয় তো আমার বাবার পুজো দিয়েই!
সারারাত ঘুম হয়নি, জয় বাবা গনেশ।
No comments:
Post a Comment