ও রুদ্রপলাশ!
কেমন আছ তুমি! আজ তোমার থেকে আঠেরোশো কিলোমিটারেরও দূরে বসে তোমায় চিঠি লিখছি। এখন তোমার শাখায় শাখায় আগুন রঙের ফুলের ডালি। ফুলে ফুলে মধুলোভী ভ্রমর আর পাখিদের আনাগোনা। তোমার পায়ের কাছে ঝরে ঝরে পড়ে আছে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত ফুলের দল। পথচারী একবারও না তাকিয়ে পারে বুঝি? তারও পরে এবার মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখতেই হবে তোমার গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে আগুন আগুন রঙের ফুলের বাহার!
আমি তোমায় প্রথম দেখি আঁধার ভরা একটি দিনে, চার বছর আগে! ছাতের ওপর এসে দাঁড়ানোটাই যখন ছিল মুক্তির একমাত্র স্বাদ! সে রকম এক বিকেলে আমাদের ছাতের থেকে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে দেখি অস্তায়মান সূর্যের সাথে রঙ মিলিয়ে একরাশ সূর্যের টুকরোর মত ফুলের রাশি সবুজ আঁচলে বেঁধে তুমি দাঁড়িয়ে আছ।
তারপর থেকে সকাল বিকেলে তোমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আমি আঁধার পেরিয়ে যাবার মন্ত্র পেয়েছি। তোমার ফুল থেকে ফল তারও পরে হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে আসা তোমার ছোট্ট ছোট্ট বীজ, এমন করে প্রকৃতি মা গড়ে দিয়েছেন, হাল্কা ছোট্ট বীজ যেন সেলোফেন পেপারে মোড়া, ভেসে যেতে পারে দূর থেকে আরো দূরে, যেন ছড়িয়ে ছড়িয়ে যায় আরো সবুজ। পাতায় পাতায় সংশ্লেষ হয় আরো আরো প্রাণবায়ু আরো আরো খাদ্যের ভাণ্ডার।
চারটে বছর পার হয়েছে, আবার অন্ধকার কেটে গেছে আলোর ইশারায়। কত দূর কাছে এসেছে, কত কাছের জন হয়েছে দূর থেকে আরও দূরের।
তুমি আমায় আঁধার পেরিয়ে যাবার শক্তি দিয়েছিলে, তাই তো তুমি প্রিয়!
আমাদের তো শেষমেশ প্রকৃতির কাছে অঞ্জলি বেঁধে দাঁড়াতেই হয়। নতুন বছরে এই শুভেচ্ছা আমার, ফুলে পল্লবে ভরিয়ে দাও প্রকৃতি, শুদ্ধ বাতাসে ভরে যাক চারদিক.... তোমার ফুলের রঙে দূরে যাক মনের জড়তা।
আরো আরো অনেক গাছের ফুলে -ফলে, সুগন্ধে -স্বাদে পরিপূর্ণা হোন প্রকৃতি..... সুখে থাকুক অমৃতের সন্তান!
তোমারই অনুরাগিণী
শ্রাবণী সেন
No comments:
Post a Comment