প্রিয় তরী,
তোর কথা ভাবতেই মনের মধ্যে শান্তিরা তাবু ফেলে। অস্পষ্ট কুয়াশার দল জায়গা ছেড়ে দেয় না-পেরে। আমার অন্তর্জগৎটা সেজে ওঠে তোর বাগমুন্ডির অসামান্য জঙ্গল পাহাড়ের কুসুম করৌঞ্জ মহুয়া নিমফুলের রূপসী পবিত্রতায়। তপোবন! এত ভালো লাগে তোর গ্রামের নামটা মনে করতে, যেন এক পাতার ঝালরের নীচে এসে দাঁড়ালাম এই অহং-সর্বস্ব শহরের সোচ্চার গ্রীষ্মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। ঘুমপাড়ানী ভাবের বনজ গন্ধ-ভরা আশপাশ সম্মোহনী শক্তিতে মেধাবী খুব। একঘেয়েমির তীব্রতা কাটাতে তোর তপোবনে আসব আমি যখনই মন টানবে। কিন্তু তার আগে ফুল-ফলন্ত সুখ-ভরন্ত নববর্ষের নিরন্তর শুভেচ্ছাটুকু জানাব না তোকে তাও কি হয়! গ্রামের নাম যেখানে তপোবন সেখানে বিধাতার শ্রেষ্ঠতম আশীর্বাদ ঝরে পড়ে। যার অংশীদার তুই। এটা আমার কাছে সেরা অনুভূতি যা ছুঁয়ে থাকে তোকে। সেই সময়ে সকলের অমত সত্বেও যদি স্কুলের চাকরিটা তুই না নিতিস্ তাহলে এই পবিত্র উদার পলাশের উন্মাদনা আর প্রকৃতির অঢেল ভালোবাসা পাওয়া কি হোত! তোকে শুভেচ্ছা জানাব, অভিনন্দন জানাব তোর প্রকৃতির প্রতি নির্ভুল ভালোবাসার দুরন্তপনা দেখে। যা অগ্রাহ্য করতে পারে শত পিছুটান।
এই নববর্ষকে তোরা সবাই মিলে যে উপহার দিয়েছিস্ তাকে কি ভাষায় স্তুতি করি বুঝি না। বিস্তীর্ণ বিরান ভূমিকে শত শত গাছে ভরিয়ে তোলার সফল আয়োজন ঈশ্বর পূজা বলে মনে করি। তছনছ হয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক জীবনকে গুছিয়ে দেওয়ার সদিচ্ছা তোদের সকলকে প্রিয় করে তুলেছে প্রকৃতির কাছে ও বাকি পৃথিবীর কাছে। আমি কুর্নিশ করি সমস্ত মাটি প্রেমীদের যাঁরা প্রকৃতই শুভ কিছুর নেশায় মত্ত হয়ে নিজেদের শ্রমকে উৎসর্গ করলেন প্রকৃতি-সেবায়। একটি ন্যাড়া পাহাড়কে শ্যামলের মায়া দিতে দলে দলে মরীয়া মানুষ চারাগাছের সাথে সাথে আশাও রোপণ করলেন আগামীর জন্যে। সংবাদমাধ্যমে স্থানীয়দের মুখে জানলাম তাপের প্রখরতা থেকে তাঁদের বিপুল স্বস্তির কথা। গাছেরা যখন আরও বড় হবে, শীতলতা ছড়াবে প্রত্যাশা ছাড়িয়ে। সবুজে সুনীলে তাঁদের বিজয়ের কেতন আলো মেখে উড়বে প্রতি মুহুর্তে।
এমন মঙ্গল আয়োজনে শহরকে প্রমত্ত হতে দেখতে ইচ্ছে করে খুব। জানিনা এখানে মানুষ প্রকৃতির প্রতি নম্র হবে কবে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো নতুন বছরের। পুরুলিয়াবাসী ও আমার প্রিয় বন্ধুনীর জন্যে নববর্ষ উথলে ওঠে নিবিড় সহজিয়া সাধনায়!
ইতি
সই অলকানন্দা
কোলকাতা
২৮ শে চৈত্র, ১৪৩০
অলকানন্দা দে
No comments:
Post a Comment