Saturday, November 2, 2024


 

আদর্শ শিক্ষক 
শুভেন্দু নন্দী 

শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলেন অবিনাশবাবু। হাতে  ডাস্টার,চক ও একটা লিকলিকে বাঁশের লম্বা কঞ্চি। এ যুগের লোক হয়েও বিশ্বস করেন,"spare the rod, spoil the child"। বেশভূষার পারিপাট্যে  আভিজাত্যের মেজাজ। ছাত্র-দরদী । তবে প্রয়োজনে তিনি বেশ কঠোরও।  অংকের শিক্ষক।
ঘরে ঢুকেই তাঁর প্রশ্ন `কে জোরে গাইছিলো ? speak out, my child ?`
 এরপর টেবিলের ওপর  তাঁর ঘনঘন আঘাত। জনৈক ছাত্র আর একজনের ওপর আঙ্গুল নির্দেশ করে মজার ছলে বললো - ওই যে স্যার প্রদীপ! ওই গাইছিলো !
ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এলো প্রদীপ। 
- তুই গাইছিলি ?
-আর গাইবো না, স্যার ।
- কি বলছিস তুই ? আলবাত গাইবি। এত সুন্দর কন্ঠস্বর! তোরা থাকিস কোথায় ? বাবার নাম কি ?

নিম্ন স্বরে বলতে থাকলেন। সব তিনি জেনে নিলেন। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেলো এক মুহুর্তে। ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজলো। শিক্ষক মহাশয় ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন। শেষ পিরিয়ড। তাই ছুটি হয়ে গেলো। ওই ঘটনার পর থেকে প্রদীপ যেন রাতারাতি হিরো হয়ে গেলো। সবাই তাকে বিশেষ সমীহ করে কথা বলতে শুরু করলো। প্রদীপ গরীব ঘরের সন্তান।  তাই সে যেন হীনমন্যতায় ভুগতো। অন্যান্য সঙ্গীদের সাথে মেলামেশা বা কথা বলতে অকারণে অস্বস্তি বোধ করতো।

সন্ধ্যাবেলায় প্রদীপের বাড়ি এসে হাজির অবিনাশবাবু।
-কি সৌভাগ্য! মাস্টর মশাই, আপনি! আসুন ভেতরে।  বলে প্রদীপের বাবা সমরেশ হাত কচলাতে লাগলেন কিছুটা যেন সংকুচিত হয়ে। শীর্ণ,একহারা ক্ষয়াটে চেহারা। চোখে মুখে ক্লান্তির  ছাপ স্পষ্ট।  কিন্তু মুখের হাসিটি অমলিন। 
`প্রদীপ নিশ্চয়ই দুষ্টুমী করেছে`, বলে বাবা তার দিকে রোষ কষায়িত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।
-আরে ! সেসব কিছুই নয়। ওতো বেশ ভালো গায়।
অবিনাশবাবু বলে ওঠেন।
-তা ঠিক বলেছেন। তবে প্রথাগত কোনও শিক্ষা নেই। গানের স্কুলে ভর্তি করার মত আর্থিক সামর্থ্যও নেই। 
-আপনি কি করেন? 
-একটা অনামী ওষুধ কোম্পানীর medical representative. আমরা খুবই গরীব। এই তো সামান্য চাকরী। সম্বল বলতে এই ভদ্রাসনটুকুই।
অবনীশবাবু লক্ষ্য করলেন যে খড়ের ছাউনি আর টিনের চাল দেওয়া এই একতলা ঘর। মেঝেটা অবশ্য পাকা। তবে এবড়ো খেবড়ো। পুরনো আমলের সংক্ষিপ্ত কিছু আসবাবপত্র। একটা হাতল ভাঙ্গা চেয়ারে বসলেন মাস্টার মশাই। তারপর হঠাৎ তিনি বললেন," দেখুন।,গরীব হওয়াটা অপরাধ নয়। আপনি সাহিত্যিক বিভূতিভূষণের বই পড়েছেন কখনও?``
-হ্যাঁ হ্যাঁ। বিলক্ষণ। 
তিনি বলেছিলেন," দুঃখ জীবনের বড় সম্পদ।  দারিদ্র্য, ব্যর্থতা-বড় সম্পদ, মহান সম্পদ।  সুখে সম্পদে ভরা,শুধু যেখানে না চাইতে পাওয়া, পরিবারে প্রাচুর্য্যের , বিলাসের মেলা। ভয়ানক সে
জীবন। আমরা যেন সুখসম্পদ ভরা,ধন সম্পদভরা জীবনকে ভয় করতে শিখি। `` 

No comments:

Post a Comment