ভারতবর্ষ: গণতন্ত্র ও সমন্বয়
অভিজিৎ সেন
পৃথিবীর অতি প্রাচীন সভ্যতা সমূহের মধ্যে মানব ইতিহাসের ধারাবাহিক কালক্রমে এখনো পর্যন্ত যে দুটি সভ্যতা নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বমহিমায় এগিয়ে চলেছে একটি হলো ভারতীয় সভ্যতা অপরটি চৈনিক সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতকের আগে যাযাবর আর্যগণের আগমন ঘটেছিল ভারতবর্ষে। আর্যদের সভ্যতা ছিল উন্নত সুগঠিত এবং সমৃদ্ধ । কিন্তু আর্যদের পূর্বেও সিন্ধু নদের তীরে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে আরেকটি সভ্যতার ভগ্নাবশেষ যখন আবিষ্কৃত হলো তখন ভারতের সভ্যতা আরো ৩০০০ বছর পিছিয়ে গেল। এই সভ্যতা নাম হলো সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা। সময়- কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ এবং ভারতের উত্তর-পশ্চিমসীমান্তে আরও একটি সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় তার নাম মেগলিথ সভ্যতা যার সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ বছর বা তারও বেশি। এগুলো সমসাময়িক সুমেরীয় এবং মিশরীয় সভ্যতার সমকালীন। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হয়েছে লিপিমালা। এই লিপিগুলো ডান দিক থেকে বামদিকে লিখা হতো। এই প্রতীক লিপি গুলো স্টেম্পসিল, মৃৎ পাত্র, ব্রোঞ্জ, তামার প্লেট, সরঞ্জাম ও অস্ত্রগুলিতে পাওয়া গেছে। বেশিরভাগই দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের। প্রতীকের সংখ্যা ৪০০ থেকে ৬০০ টি। সিন্ধুলিপি পাঠোদ্ধার আজও সম্ভব হয়নি। তবে ভারতের স্বাধীনতার পরের থেকে এই চেষ্টা চলছে। তবে বর্তমানে ঐতিহাসিক ইরাবথম মহাদেবন দ্রাবিড় ভাষা ও লোগো- গ্রাফিক লিপির সমন্বয়ে ২০১৭ সালে এর পাঠোদ্ধার করেছেন অনেকটাই। যদিও এখনো তা আলোচনা স্তরেই রয়েছে ঐতিহাসিক তাত্ত্বিকদের মহলে। তিনি বলেছিলেন সিন্ধু লিপির সঙ্গে ভারতবর্ষের দ্রাবিড় লিপির অনেক মিল আছে । এছাড়া যেহেতু সুমেরীয়দের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য হতো তাই সমসাময়িক সুমেরীয় সভ্যতার সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ পদ্ধতি তিনি গ্রহণ করেছিলেন । লিপিগুলির পাঠোদ্ধার যেদিন সঠিকভাবে হবে সেদিন ভারতের ইতিহাস ভিন্নভাবে আমাদের সামনে উঠে আসবে। তবে যতটুকু প্রমাণ আমাদের সামনে আছে তাতে বোঝা যায় একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা ছিল আর্যগণের আগমনের পূর্বে ভারতবর্ষে।
যখন ইরানীরা, গ্রীকেরা ভারতবর্ষে আক্রমণের বা লুন্ঠনের উদ্দেশ্যে এসেছিল তারা সিন্দুবাসীদের "হিন্দু" নামে অভিহিত করতেন । কারণ তাদের বর্ণমালায় "স" এর জায়গায় "হ" ছিল। পরবর্তী সময় এরা ভারতবর্ষে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এদিকে নানা কারণে সমৃদ্ধ সিন্ধু সভ্যতা
ধ্বংস হয়ে যায়। মানবের ইতিহাস বাঁক নেয়, ভারতবর্ষে আগমন ঘটে শক্তিশালী আর্যভাষাভাষী এক জনগোষ্ঠীর। পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষকে আর্যাবর্ত নামে অভিহিত করা হয়েছে বেদে, রামায়ণে, মহাভারতে নানাপুরাণে। আর্যরা জানতেন লোহার ব্যবহার, জানতো ঘোড়ার ব্যবহার, তারা মূলত ছিল যাযাবর কৃষিজীবী। তারা মুখে মুখে রচনা করেছেন বেদের অপূর্ব শ্লোক সমূহ বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় । কিন্তু এদের লিপি ছিল না। গুরু শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখেই শ্লোক সমূহের পাঠ, পাঠাভ্যাস চলত তপোবনে গুরুকূলে। এবং শুনে শুনে মনে রাখতে হতো বলেই এর নাম "শ্রুতি" । কিন্তু আর্যদের সভ্যতা সিন্ধুনদ কেন্দ্রিকই শুধু ছিল না। কোন কোন ঐতিহাসিক সরস্বতী নদী কেন্দ্রে সভ্যতার কথা বলেছেন । নানা প্রাকৃতিক কারণেই তাদেরকে ভারতের মধ্য ও পূর্ব দিকে এগিয়ে আসতে হলো। বিশাল সমৃদ্ধ গঙ্গা বিধৌত উর্বর পলি মাটিতে ধীরে ধীরে গড়ে উঠলো এক মহান সমৃদ্ধ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সভ্যতা। যার নাম আর্য সভ্যতা। আর্য কোন জাতির নাম নয়, ভাষার নাম । এভাবেই অনার্য আর্য মিলেমিশে গড়ে তুলছিল সেদিনের বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষ। বহু যুদ্ধ রক্তক্ষয় হয়েছিল নিশ্চয়ই তবুও শেষ পর্যন্ত এক বর্ণনাতীত আত্মীয়তার ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের অমোঘ টানেই একে অপরের রীতিনীতি গ্রহণ করি সমৃদ্ধ হয়, সমৃদ্ধ করে ভারত সভ্যতাকে।
ভারতের সভ্যতা সুপ্রাচীন এ বিষয়ে বিশ্বের তাত্ত্বিক পন্ডিত ও ঐতিহাসিকদের নিশ্চয়ই আর কোন সন্দেহ নেই। তবে পাশাপাশি এ বিষয়টি অত্যন্ত বেদনার যে ভারতবর্ষের দীর্ঘকালীন সভ্যতার ধারাবাহিক ইতিহাস নেই। আছে শুধু ঐতিহাসিক নিদর্শন মাত্র। এসব টুকরো টুকরো প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের সাহায্যে ধারাবাহিক নিরবচ্ছিন্ন ইতিহাস রচনা অসম্ভব। না আমরা জানতে পারি সিন্ধুবাসীরা কোন ভাষায় কথা বলতেন। তাদের সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক জীবনের টুকরো টুকরো চিত্র পেলেও পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভব হয়নি। যদি লিপিগুলোর অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হতো তাহলে কিছুটা সম্ভব হতো। আবার পরবর্তী সমৃদ্ধশালী আর্য সভ্যতা যার ধারাবাহিক ঘটনাবলীর ইতিহাস পাওয়া যায় না। আর্যদের আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় গ্রন্থ বেদ। এখানে দেব-দেবীর রূপকে বহু ঘটনা উঠে এসেছে। আদি ঋকের শ্লোক সমূহে কোথায় কোথায় তৎকালীন নারীদের অবস্থান সামাজিক অবস্থান উঠে এসেছে । উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত এবং পরবর্তীকালে বা সমসাময়িক সময়ে রচিত অষ্টাদশ পুরাণ কাব্য সবই আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় রচনা। এরমধ্যে তৎকালীন ভারতবর্ষের ইতিহাসের নানা টুকরো টুকরো ছবি আছে ঠিকই। কিন্তু এগুলোকে ইতিহাস বলা যাবে না। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতকে ভারতবর্ষের ধারাবাহিক ইতিহাস আমাদের কাছে অজানা আজও।
বহু পরে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতবর্ষে ষোড়শ মহাজনদের কথা আমরা জানতে পালি সাহিত্যে জাতকের গল্পে--- বলা যায় এ সময় থেকেই ভারতবর্ষের ধারাবাহিক ইতিহাস আমরা জানতে পারি। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫ শতকে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার ভারতবর্ষে সিন্ধু অতিক্রম করেন বহু রাজাকে পরাজিত করে। পরবর্তী সময়ে যদিও আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলুকাস উত্তর পশ্চিম ভারত দখল করলেও মৌর্য শাসক চন্দ্রগুপ্তের কাছে পরাজিত হয়। মৌর্য শাসকরাই ভারতবর্ষে প্রথম সার্বভৌম এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় এসেছিলেন গ্রিক পর্যটক মেগাস্থিনিস। তিনি তাঁর "ইন্ডিকা" নামক গ্রন্থে তৎকালীন ভারতবর্ষের সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক জীবন যাপন প্রণালী, ধর্মীয় বিশ্বাস,নারীদের অবস্থান সমাজের শ্রেণীবিভাগ, শাসকদের কার্যাবলী পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলে ধরেন। চাণক্য বা কৌটিল্যের "অর্থশাস্ত্র" থেকেও তৎকালীন ভারতবর্ষের কথা। ভারতের ধারাবাহিক লিখিত ইতিহাসের সূচনা এখান থেকেই। এরপর গুপ্ত শাসকেরা ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠা করেছিল এককেন্দ্রিক সার্বভৌম শাসন ব্যবস্থা। এরপরে যদিও ভারতের ইতিহাসে কোন শক্তি খ্রিস্টীয় হাজার শতকের মধ্যে সার্বভৌম এককেন্দ্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কখনো দাক্ষিণাত্যে চোল, চালুক্যরা, সাতকর্ণীরা কখনো কৌনজকে কেন্দ্র করে পূর্ব ভারতে পুষ্যভূতি বংশের হর্ষবর্ধন পরবর্তীকালে বাংলার গৌরকে কেন্দ্র করে (বর্তমানে মালদাহ) পাল ও সেন রাজারা ছিলেন আঞ্চলিক শক্তি। কেন্দ্রীয় শক্তি নয়। এদের পূর্বে বাংলার কর্ণসুবর্ণের শাসক শশাঙ্ক আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারপরে নেমে আসে বাংলায় মাৎসান্যয়। বাংলার জনগণ সামন্ত গোপালপালকে গৌড়ের রাজা হিসেবে নির্বাচিত করে।
ভারতে পরবর্তীকালে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় একাদশ শতক থেকে পরবর্তী ১৭৫৬ সালের আগে পর্যন্ত পাঠান এবং মোগলেরা শক্তিশালী এককেন্দ্রিক সার্বভৌম শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল । এরপর আসে ইংল্যান্ডের বণিক গোষ্ঠী ইংরেজরা। জ্ঞান বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান, আধুনিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ ইংরেজির কাছে পরাজিত হতে হয় তৎকালীন ভারতের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক শাসকদের । এরপর প্রায় ২০০ বছরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়, একটি গণপ্রজাতন্ত্রী সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হয় । ভারত পরিচালিত হয় ভারতের নবনির্মিত সংবিধানের দ্বারা। যেখানে বিশেষ কোন জাতি নয়, বিশেষ কোনো ধর্মের পরিচয় নয়, যেখানে একটি পরিচয় আমরা ভারতীয়, আমরা ভারতবাসী যেখানে আছে সকলের সমান অধিকার।
আল বিরুনী, ফাহিয়েন, হিউএন সাং এর বিবরণে, পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী ঐতিহাসিকদের, প্রত্নতাত্ত্বিকদের বিবরণে ভারতবর্ষের ইতিহাস গঠন সম্পন্ন হয়েছে । সুপ্রাচীন মেযগলিথ সভ্যতা,সিন্ধু সভ্যতা, আর্য সভ্যতা, পরবর্ইতীকালে ইসলামীয় শাসন, ইংরেজদের জ্ঞান- বিজ্ঞান ও বস্তুগত দর্শন ভারতবর্ষের মননকে ভারতবাসীর ইতিহাসের বিবর্তনের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আজও এগিয়ে নিয়ে চলেছে......
ভারতবর্ষের সভ্যতার স্থায়িত্বের অন্যতম কারণ যদি বিশ্লেষণ করা যায় দেখা যায় তার মূল চাবি হল সহিষ্ণুতা বোধ। পারস্পরিক সমন্বয়ের বাঁধনে আমরা একে অপরে বেঁধে থাকি। পরস্পর পরস্পরের সাংস্কৃতিকে গ্রহণ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করি। একে অপরকে শ্রদ্ধা করি। এ কথা ঠিক যখনই কোন বিদেশী জাতি লুণ্ঠন করবার উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশে এসেছিল, কিছুদিন তারা এদেশের মানুষকে উৎপীড়ন করলেও শেষ পর্যন্ত বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষের পরিবেশ, এখানকার মানুষের জীবন যাপন প্রণালী তাদেরকে আকর্ষণ করেছে তারাও এ দেশের মানুষের প্রতিবেশী হয়ে থেকে গেছে। রবীন্দ্রনাথ তাই বলেন,"শক হুন পাঠান মোগল এক দেহে হল লীন"। উগ্র জাতিদের মন থেকে ধীরে ধীরে হিংসা দ্বেষ দূর হয়ে তারা হয়ে ওঠে বৃহৎ ভারতবাসী।
সমন্বয় এবং সহিষ্ণুতা, গ্রহণ এবং অভিযোজন ভারতীয় সভ্যতার মূল ভিত্তি । এর উপরে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সভ্যতা। ভারতবর্ষ সুবৃহৎ এক গণতান্ত্রিক দেশ। মানব সভ্যতাকে গণতন্ত্রের পাঠ পরিয়েছিল গ্রিক সভ্যতা। অজস্র দ্বীপ রাজ্য নিয়ে গঠিত এক সময়ের ক্রিট সভ্যতা যা পরবর্তীতে গ্রিক সভ্যতা নামে পরিচিত। ছোট ছোট রাজ্যগুলি যা "পলিশ" গণরাজ্য বলে পরিচিত ছিল। শাসিত হতো জনগণের দ্বারা। এথেন্স তেমনি একটি "পলিশ"। এখানেই আমরা পেয়েছি দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেতো এবং অ্যারিস্টটলকে। তাঁদের দর্শন মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে দিয়েছে গুরুত্ব । সিন্ধু সভ্যতায় রাজতন্ত্র ছিল। পরবর্তী আর্যদের সময়ে রাজতন্ত্রের প্রধান হলেও ছিল নারীর স্বাধীনতা এবং সভা ও সমিতি নামে দুটো প্রশাসনিক অংশ ছিল। যেখানে জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনায় পরামর্শ দিয়ে থাকতেন। যথাযথ গণতন্ত্রের চিত্র আমরা পেয়েছি এথেন্সে। এছাড়া ষোড়শ মহাজনদের অন্তর্গত বজ্জি ও ও মল্ল নামক দুটি গণরাজ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেখানে রাজতন্ত্র নয় জনগণের দ্বারাই দেশ পরিচালিত হত। বিভিন্ন গোষ্ঠী প্রধানরা একত্রিত হয়ে দেশ পরিচালিত করতে। বৈশালীতে তার পরিচয় পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরা ভারতবর্ষ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরা ভারতবর্ষ, নানা ভাষার আবহে কল্লোলিত ভারতবর্ষ, বিভিন্ন ধর্মের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতবর্ষ--সেই ভারতবাসী বিশ্বাস করে বহু মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতায়, সহমর্মিতায় ও সহাবস্থানে। বিশ্বাস করে একতায়, সংহতিতে, সম্প্রীতিতে, সহিষ্ণুতায়, অহিংসায়। যে দেশে ধর্মীয় পরিচয় শেষ কথা নয়, আসমুদ্র হিমাচল গেয়ে উঠে সমন্বয়ের সংগীতের সুরে, পরস্পর পরস্পরের সাংস্কৃতিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিজেদের করে শরিক । আবার স্বাধীনতা পরবর্তী (১৯৪৭) ভারত ভূখণ্ড আক্রান্ত হয়েছে কোন বৈদেশিক শত্রুর দ্বারা সমগ্র ভারতবাসী জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাতে হাত বেঁধে রুখে দাঁড়িয়েছে । গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের একতা,দৃঢ়তা, সাহসিকতার, যথার্থ সিদ্ধান্নতের কাছে নত হয়েছে অশুভ শক্তি । বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই ভারতের বল। এখানেই ভারতবাসীর প্রকৃত প্রাণভোমরা লুকিয়ে আছে। কোন অবস্থাতেই ভারতবাসীর স্বাধীনতা বোধ, জাতীয়তাবোধ পারস্পরিক আত্মীয়তা বোধকে কোন অশুভ শক্তি ধ্বংস করতে পারবে না, ভবিষ্যতেও পারবে না। একুশ শতকের ভারতবর্ষ জ্ঞানে বিজ্ঞানে দর্শনে সামরিক শক্তিতে কূটনৈতিক স্তরে অর্থনীতিতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিতে পরিণত হয়েছে আজ । গৌতম বুদ্ধ যে মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, যেখানে মহাত্মা গান্ধীর মত মানুষের আবির্ভাব হয়েছে, যে দেশ স্বামী বিবেকানন্দের মত মহামানবের ছোঁয়া পেয়েছে-- সেই দেশবাসী মানবতার পথেই হাঁটবে, এবং বিশ্ববাসীকেও সে পথই দেখাবে সকল সমস্যার সমাধান হিসাবে এটাই তো স্বাভাবিক। ভারতবর্ষ যে সুপ্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্য কয়েক হাজার বছর ধরে বহন করে চলেছে তা যুদ্ধ নয় শান্তির কথা বলে, হিংসা নয় মানবতার কথা বলে, দূরত্ব নয় পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলে-- আগামী দিনেও উত্তরের সুদৃঢ হিমালয়,দক্ষিণের বিন্ধ্যাচল,সিন্ধু,গঙ্গা,ব্রহ্মপুত্র,কাবেরী গোদাবরী যেন তার সাক্ষী দিয়ে চলবে...... এটাই আমাদের ভারতবর্ষ...... আমাদের গর্ব..... বিশ্ববাসীর কাছে যথার্থ সভ্যতা একমাত্র পরাকাষ্ঠা। শিবদাস বন্দোপাধ্যায়ের লেখা "ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো" প্রকৃত অর্থে আমরা ভারতবাসীরা এমন ভারতবর্ষেই স্বপ্নের আবহে সকলে মিলে বাস করি। এমন ভারতবর্ষেই আমাদের ভোর হয়, আমাদের সূর্যাস্ত হয় এবং এই বৃত্তেই আমাদের জীবন আবর্তিত হয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে ।