আধুনিকা
অমলকৃষ্ণ রায়
‘আর ভাল লাগে না। অনেক হয়েছে। এবার কোনওরকমে সংসার থেকে মুক্তি চাই।’ ছাদ থেকে শুকনো কাপড়গুলো তুলে নিতে নিতে তিথি আপনমনে কথাগুলো বলতে থাকে। ‘সৌরিণের আচার আচরণ আর কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’ ফাঁকা বাড়ির ছাদ থেকে কাপড় হাতে নামতে নামতে তিথি এসবই বিড়বিড় করছিল। অমনি বে-খেয়ালে সিঁড়ির ধাপে পা পিছলে পড়ে গেল। তাতে পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেল।
এই অবস্থায় বাড়িতে দ্বিতীয় কেউ নেই। সৌরিণ অফিসে। এসময়ে কেউ যদি ফ্রীজ থেকে এক টুকরো বরফ এনে দিত তো খুব ভাল হতো। কিন্তু দেবেটা কে? কুন্তুলা মাসী দুপুর গড়াবার আগেই হাতের কাজ সেরে বাড়ি চলে গেছে। তাছাড়া এ পাড়ায় তিথিরা নতুন এসেছে। গতমাসে সৌরিণ ভায়েদের থেকে আলাদা হয়ে নতুন বাড়িটাতে গৃহপ্রবেশ করেছে। পাড়ার লোকেদেরকে তাতে নেমন্তন্ন করা হয়েছিল। অনেকে এসেছিল। তারা খেয়েদেয়ে বাড়ির প্রশংসা করে চলে গেছে। তারপর থেকে কেউ আর আসেনি। তাই পাড়ার বউদের সঙ্গে সেভাবে পরিচয় হয়ে উঠেনি। এখন পায়ের ব্যথার জন্য পাশের বাড়ির দিদিকে চিল-চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করতে তিথির সংকোচ হচ্ছে।
এই বাড়ি করার পিছনে সমস্তরকম প্ররোচনা অবশ্য তিথিরই। এই সংসারে বউ হয়ে আসার আগেই একদিন ফোনে সৌরিণের কাছে দাবি করে বসেছিল,
‘শোন। বিয়ের পর আর যাই করো। আমার কিন্তু একটা নিউক্লিয়ার ফেমিলি চাই। তোমার ঐ চৌদ্দগুষ্টির ভিড়ভাট্টায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।’
‘আমায় তাহলে কী করতে হবে বলো? বাড়ির লোকজন সব তাড়িয়ে দিয়ে তোমায় নিয়ে থাকব। সেটাই বলতে চাইছ তো?’
‘এরকম একটা উদ্ভট দাবি কেন করতে যাব সৌরিণ?’
‘তাহলে?’
‘ইটস ভেরি সিম্পল। কোথাও একটা নতুন বাড়ি করে তুমি আমায় নিয়ে গিয়ে উঠবে। তাতে তোমার দাদা-বৌদিরাও ছেলেমেয়ে নিয়ে হাতপা ছড়িয়ে থাকতে পারবে। আমরাও আমাদেরও সন্তানকে সুবিধেমতো মানুষ করতে পারব।’
ব্যাপারটাতে সৌরিণ প্রথমে একটু গড়রাজি হয়ে গাইগুই করছিল। তিথি তখন হবুবরকে কথার প্যাঁচে ফেলে হারাতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বলেছিল. শোন, ওরকম কত দেখেছি। আমাদের পাড়ার মৈত্রীবাড়ি। একসময় সারা গাঁয়ের নামকরা যৌথপরিবার ছিল। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি, জায়ে-জায়ে মিল, ভায়ে-ভায়ে মিল। পাড়ায় কোনও বাড়িতে ঝগড়াঝাঁটি হলে উদাহরণ টেনে বলতো, মৈত্রীবাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে একঝলক দেখে এসোগে, যৌথ পরিবারে কী করে বাস করতে হয়। পাতের মাছের ঢেলাঢেলি, কার ছেলেমেয়েকে কে তেল মাখিয়ে, চান করিয়ে, খাইয়ে-দাইয়ে স্কুলে যাবার জন্য তৈরি করে দিচ্ছে, কে আগে ছুটে গিয়ে বাসি কাপড় ছেড়ে চান করে ঠাকুরঘরে ঢুকে পড়ছে, কে গিয়ে রান্নাঘরে সবার আগে ঢুকে রান্না বসিয়ে দিচ্ছে, তা নিয়ে রীতিমতো হুড়োহুড়ি চলে।
সেই বাড়ির জায়েরাও একদিন ক্লান্ত হয়ে পৃথক বাড়ি করে করে সরে গিয়েছিল। আমার চোখের সামনে চার ভাই উঁচু দেয়াল তুলে চারচারটে বাড়ি করল। জায়েদের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল। তাই ওসব আদিখ্যেতা করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক তৈরি হবার আগে বরং সরে গেলে নিজেদের মধ্যে আজীবন একটা সৌহার্দপূর্ণ ভাব বজায় থাকবে।
তিথির কথার অকাট্য যুক্তির তোড়ে সৌরিণ সেদিন নিমেষেই ভেসে গিয়েছিল। তাই তিথির দাবিটা মেনে নিয়ে বলেছিল, ‘ঠিক আছে মহারানি। আপনার আদেশ শিরোধার্য। কথা দিচ্ছি বিয়ের কয়েকবছরের মধ্যেই আমার সাধ্যমতো একটা রাজপ্রাসাদ বানিয়ে আমরা রাজরানি সেজে সংসার শুরু করব।’ তারই ফলশ্রুতি হলো তাদের এই নতুন বাড়ি। গৃহপ্রবেশের পরে তিথি একদিন সৌরিণকে বলেছিল, তুমি আমার কথাটা রেখেছ বলে এখন ফাঁকা বাড়িতে কেমন বুক ভরে শ্বাস নিতে পাচ্ছি।
স্ত্রীকে সুখী করে পেরে সৌরিণও খুশি। একজোড়া কপোত-কপোতীর সংসার বেশ হেসে খেলেই চলছে। তিথি এরইমধ্যে একদিন তার দ্বিতীয় ইচ্ছের কথা জানাল। দুটি বা তিনটি নয়, কেবলমাত্র একটি সন্তানের মা হতে চায় সে। সে মেয়ে হোক কিংবা ছেলে। তাতে তার কোনও আপত্তি নেই। সৌরিণ তাতেও সম্মতি জানিয়েছে। তাই এ নিয়ে তাদের মধ্যে পরিকল্পনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। একজন হেলদি বেবির মা হতে গেলে কীভাবে এগোতে হবে, সেসব ব্যাপারে তিথি বান্ধবীদের কাছ থেকে পরামর্শও নিতে শুরু করেছে। সৌরিনও তার অফিসের কলিগ দাদাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে।
এসবের পাশাপাশি তিথি আরেকটা কাজ করছে। সেটা হলো তার গেয়ো স্বামীকে আধুনিক করে তুলতে গিয়ে তার উপরে বেশকিছু শর্ত আরোপ করেছে— ইস্তিরি ছাড়া পোশাক কখনও পরবে না। কথায় গেয়ো টান একেবারেই নয়। শীগগীরই শহুরে সিলেবল আয়ত্ত করে ফেলতে হবে। অমুকের বরকে দেখেছ, কেমন মেপেঝেপে কথা বলে। কতটা স্মার্ট! নিজেকে শহুরে কালচারে মেশার উপযোগী করে তোল। কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে হ্যাবলার মতো আচরণ করবে না। এটিকেট, ভদ্রতা মেইনটেইন করতে শেখো। পার্টিতে গেলে কেউ যেন বলতে না পারে, ‘কীরে তিথি তোর বরটা অমন হাবার মতো থাকে কেন? কেমন যেন বোকাবোকা হাবভাব। ওকে কিছু শেখাতে তো পারিস।’
তিথিকে খুশি করতে গিয়ে সৌরিণ একজন ভাল ছাত্রের মতো অল্পদিনেই নিজের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন এনে ফেলেছে। তিথি তাকে এ ব্যাপারে পুরোপুরি ভাবে গাইড করছে। তাকে সে চলনেবলনে অনেকটাই পালটে ফেলেছে। ক’দিন আগে তার গ্রামের এক দাদার সঙ্গে শহরে দেখা হয়েছিল। তিনি তাকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, কীরে সৌরিণ, বিয়ের পিঁড়িতে বসার পর থেকে দেখছি, তুই একেবারে নিজেকে অনেকটা পালটে ফেললি। এখন তোকে দেখে কে বলবে, তুই হলি শ্মশানখোলা গ্রামের সৌরিণ? তোর মুখে একসময় অজস্র ব্রণ আর দাগে ভর্তি ছিল। নিশ্চয়ই তোর বউয়ের কল্যানে এটা সম্ভব হয়েছে। সৌরিণ মৃদু হেসে দাদাকে বলল, আপনি ঠিকই আন্দাজ করেছেন দাদা। বউ আমাকে ফেসিয়াল করে সব দাগ তুলে দিয়েছে। পোশাকাশাক ইস্তিরি, জুতো কালি করা সবইতো ও করে দেয়।
দু’জনের নতুন সংসার ভালোই জমে উঠেছিল। তারই মধ্যে আজ একটু তাল কেটে গেল। অবশ্য এই পা ফসকে পড়ে যাবার কারণ হলো তিথির অন্যমনস্কতা। আর সে অন্যমনস্কতা তার মধ্যে এসেছে সৌরিণকে নিয়ে উলটোপালটা ভাবতে গিয়ে। এরজন্য অবশ্য সৌরিণই দায়ী। যে তিথি তাকে পালটে দেবার জন্য এতকিছু করল, তাকে কিনা একদিন বলে বসল, তুমি ভীষণ ব্যাকডেটেট! তোমার দিনেদিনে জৌলুস কমে যাচ্ছে। আমাকে ফিটফাট রাখতে গিয়ে তুমি নিজের প্রতি আজকাল বেশ উদাসীন হয়ে পড়ছো।
শ্মশালখোলা গ্রামের সৌরিণের মুখ থেকে এহেন মন্তব্য শোনার জন্য তিথি মোটেই প্রস্তুত ছিল না। এক প্রান্তিক, অবহেলিত গ্রামের ছেলে সে। যে গ্রামে গুটিকয়েক মাত্র বাড়ির মধ্যে সৌরিণদের একটা বাড়ি। সারা গায়ের সব মরা তাদের বাড়ির কাছেই পোড়ানো হয়। বিয়ে হয়ে এসে সৌরিণের মুখ থেকে তিথি শ্মশানঘাটের মরা পোড়ানোর নানারকম স্মৃতিকথা ছাড়া আর কিচ্ছুটি শুনতে পায়নি। তাতে তিথির মনে হয়েছে এই মানুষটা সারাটা জীবন মানুষের লাশ দেখে দেখেই বড় হয়েছে। তার মুখে ভাল কোনও কথা নেই। শ্মশানকে নিয়েই যতসব কথাবার্তা। বিশেষ করে কমবয়সী ছেলেমেয়েদের রহস্য মৃত্যু কিংবা ফাঁসি মরার পোস্টপার্টাম করা সাদা কাপড়ে ঢাকা রক্তাক্ত দেহকে নিয়ে শববাহকদের কৌতূহল। সেই দেহের সাদা কাপড় সরিয়ে তাদের মধ্যে অ্যানাটমি বিষয়ক আলোচনা। সবই নাকি সৌরিণ ছোটবেলা থেকে শ্মশানের এককোণে দাঁড়িয়ে শুনত।
সেই সৌরিণকে তিথি নিজের হাতে পালটে দিয়েছে। তার জামা ইস্তিরি থেকে শুরু করে কবে কোন সেটটা পরে অফিসে যাবে সেটা পর্যন্ত তিথিই ঠিক করে দেয়। সংসার সামলে এসব করতে গিয়ে তিথি নিজের সম্পর্কে কিছুটা হয়তো উদাসীন হয়ে পড়েছে। তাবলে যার কাছে সে আধুনিকতার হাতেখড়ি পেল, তাকে সে কখনও বলতে পারে, আমাদের অফিসের অদিতি কত স্মার্ট। দারুণ সব কালারের শাড়ি পরে রোজ অফিসে আসে। ওর কালারের একটা শাড়ি তোমাকে কিনে দেব। তুমি পরে দেখো, তোমাকে কতটা স্মার্ট লাগবে। তার মানে সৌরিণের কথা থেকে কি এটা বোঝায় না যে, অফিসে গিয়ে কলম পিষতে পিষতে সারাক্ষণ সে ঐ অদিতির দিকে তাকিয়ে থাকে। তার শাড়ির প্রতিটি ভাঁজ, রঙ মোহিত হয়ে দেখে। এসবতো চরিত্রহীন পুরুষদের কাজ। তিথি অবশ্য সৌরিণকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে, খবরদার তুমি তোমার ঐ অদিতির পরা শাড়ির কালারের কোনও শাড়ির আমার জন্য কিনে আনবে না।
‘কেন বলোতো? অদিতি কালারটা পরেছে বলে কি আর কেউ সেটা পরতে পারবে না।’ এসব নিয়েই দু’জনের মধ্যে ক’দিন ধরে চাপানউতোর চলছিল। সেই রাগগোসার জেরেই তিথির আজ পা ফসকালো।
কাপড়গুলো সিঁড়িতে রেখে ব্যথায় কাতরাচ্ছে তিথি। তার হাতের কাছে কোনও মোবাইল ফোনও নেই যে সৌরিণকে ফোনে ব্যাপারটা জানাবে। এখন মোটে তিনটে মতো বাজে। সৌরিণ অফিস ছুটির পর বাড়ি আসতে এখনও প্রায় ঘণ্টাতিনেক বাকি। এতক্ষণ এভাবে পড়ে থাকা কি সম্ভব! ভাবতে ভাবতে তিথি শরীরটাকে নিয়ে কোনওরকমে টেনে হিঁচড়ে তুলে সিঁড়িতে বসল। তারপর বহুকষ্টে হাতের উপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে শরীরটাকে নিয়ে কোনওরকমে ঘরে এসে পৌঁছলো। এবার তাকে সেই কাপড়গুলো ইস্তিরি করে আলমারিতে তুলে রাখতে হবে— বিশেষ করে সৌরিণের শার্ট-প্যাণ্ট, রুমাল গেঞ্জি, যা পরে সে আগামীকাল অফিসে যাবে। ইস্তিরিটা হাতে নিয়ে রাগে-অভিমানে তিথির মধ্যে একটা প্রতিবাদী ভাব ফুটে উঠল। ঠিক করল, যে সৌরিণ তাকে এত বড় কথা বলতে পারে, তার জামাকাপড় আর কোনওদিন ইস্তিরি করবে না। সে কিভাবে অফিসে যাবে সেটা নিজেই ঠিক করে নিক। কথাটা ভেবেই তিথি কাপড়গুলো দলামোচড়া করে আলমারিতে ঢুকিয়ে দিয়ে ফ্রীজ থেকে একটুকরো বরফ বের করে কাপড় দিয়ে ব্যাথার জায়গাটা পেঁচিয়ে দিয়ে বিছানায় সটান শুয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল। একসময় ঘুমের ঘোরে শুনতে পেল কলিং বেল বাজছে। কাঁচা ঘুমে কোনওরকমে উঠে খুড়িয়ে খুড়িয়ে দরজাটা খুলে দিতেই দেখল, একটা প্যাকেট হাতে সৌরিণ দাঁড়িয়ে। তিথি কিছু বলার আগেই প্যাকেটটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, তোমার জন্য একটা শাড়ি কিনে এনেছি। অভিমানী গলায় তিথি বলল,
‘নিশ্চয়ই অদিতির পছন্দের রঙের শাড়ি।’
‘না না। তুমি এখনও সেই অদিতি নিয়েই পড়ে রয়েছে!’
‘সেদিনতো তুমিতো নিজে মুখে সেটাই বললে। আমার জন্য তোমার অফিসের অদিতির পরা শাড়ির মতো একটা শাড়ি কিনে আনবে।’ মুচকি হেসে সৌরিণ বলল,
‘ওটা একটা কাল্পনিক নাম ম্যাডাম। আসলে আমার অফিসে এ নামে কোনও মেয়েই নেই।’
‘সত্যি বলছ?’
‘সত্যি-সত্যি-সত্যি। বিশ্বাস না হয় তুমি আমাদের অফিসের মনোজদাকে ফোন করে জেনে নিও।’
‘সে না হয় জানলাম, তা হঠাৎ একটা মেয়ের নাম ধরে কল্পনার আশ্রয় নিতে গেলে কেন শুনি?’
‘আরে ব্যাপারটা হলো আমাদের অফিসে একটা পার্টি হবে। তাতে ঠিক হয়েছে সবার বউদের জয়েন করাটা মাস্ট। সেখানে একটা ফ্যাশান শোয়ে সব বউদেরকে শাড়ি পরে রাম্পে হাঁটতে হবে। তারজন্য প্রাইজ-টাইজও থাকবে। তুমি আবার বাইরে বেরলে শাড়ি পরাটা মোটেই পছন্দ করো না। তাই ভাবলাম, অদিতির নাম ধরে যদি শাড়ির প্রতি তোমার একটা ভাল লাগা তৈরি করা যায়।’
‘শাড়ি আমি খুব একটা পছন্দ করি না ঠিকই। তবে বড় হয়ে না শাড়ি খুব একটা না পরলেও মেয়েবেলায় অনেক পরেছি। তাবলে একটা ফ্যাশান শোয়ের ডিমাণ্ড অনুযায়ী কেন পরব না?’
‘তাই নাকি! তুমি শাড়ি পরবে! তাহলে তোমার ফার্ষ্ট প্রাইজটা কে ঠেকায়। আগাম বলে দিলাম, সব বউদের মধ্যে তুমিই প্রথম হবে।’ সৌরিণের ভবিষ্যৎ বাণীকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে তিথি প্যাকেট খুলে শাড়িটা মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল।
‘তোমার পায়ে ব্যাণ্ডেজ কেন? কী হয়েছে পায়ে!’ হঠাৎই তিথির পায়ের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল সৌরিণ। তিথি মুখে খুশির ভাবটা ধরে রেখে বলল,
‘ও কিছু না। ছাদ থেকে নামতে গিয়ে একটু ব্যথা পেয়েছি।’
‘কী করে ব্যথা পেলে সোটাতো বলো!’ তিথি নিরুত্তর। ততক্ষণে শাড়ির একটা অংশের ভাঁজ খুলে নিজের সঙ্গে লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সৌরিণ এদিকে ব্যথার জায়গাটা দেখতে তিথির পায়ের কাছে বসে পড়েছে। তিথির সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। কিছুক্ষণ পরে শাড়ি ছেড়ে কমমেটিকসগুলো নাড়িয়ে চাড়িয়ে বেশ আগ্রহভরে দেখতে লাগল।
আসলে ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশান ডিজাইনিংয়ের প্রতি তিথির ভীষণ একটা ঝোঁক ছিল। তার খুব মনে হতো সে যদি দূরদর্শনের পর্দায় দেখা সুন্দরী প্রতিযোগীতায় কোনওদিন অংশ গ্রহণ করতে পারত। সে ইচ্ছেটা তার কোনওদিনই পূরণ হয়নি। আজ সেটা কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে ভেবে তার ভিতরটায় একটা খুশির ঢেউ বইছে। তাতেই খানিক আগেকার তার ব্যথাতুর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। একটা ঘোরের মধ্যে ডুবে গিয়ে তিথির মনে হলো, সে সৌরিণের এই শাড়িটা পরে রাম্পে হাঁটছে। তাকে ঘিরে দর্শকাসনে বসে রয়েছে হাজার হাজার জনতা। তারা তার দিকে হাত নাড়িয়ে বলছে, হাই তিথি, ইউ লুক গর্জিয়াস!
No comments:
Post a Comment