Sunday, December 6, 2020


 





আলু

স্বপন কুমার দত্ত


কদিন থেকেই গিন্নির খ্যাচ্খ্যাচানি,--- " কি গো

আলু কবে আনবে? আলু ছাড়া কি দিয়ে রান্না 

হবে?" আমি না শোনার ভান করে থাকি। গিন্নি

এবার সুর সপ্তমে তুলে বলে, " কি গো তুমি কি

বয়রা হয়ে গেছো? তখন থেকে বকে যাচ্ছি কানে

ঢোকেনা?"

          এবার উত্তর না দিলে বেঁধে যাবে ধুন্দুমার

কাণ্ড। তাই বলি," না, এখনো হইনি,তবে খুব শীঘ্রই

হয়ে যাব।সব ওই আলুর দোষ।"

           " বুঝলামনা, কি আবোল তাবোল 

বকছো। এখনতো দেখছি, শুধু কান টাই নয়,

মাথাটাও গেছে" -- বলে উঠলো গিন্নি।

            আসলে বাজারে যাওয়ার নাম শুনলেই

হয় পেট খারাপ,নয় কন খারাপ,নয় মাথা খারাপ

লেগেই আছে।এমনিতেই লাগামছাড়া দর সব

কিছুরই,তার উপর আবার আলুতো একেবারে

উঠে গেছে জাতে।৮ -- ১০ টাকা কেজি দরে র

জিনিষ এক্কেবারে হাফ সেঞ্চুরি। এ সি রুমে 

ঢুকেছে তো ঢুকেছেই।বার হতে চায়না।হিমঘরে

যে কি মজা,কে জানে? আরে বাপু, এখনতো

হালকা ঠান্ডা পড়ে গেছে,এখন কিভাবে লটকে

পড়ে গেছিস? 

            ব্যাপারটা হল অন্য জায়গায়।ও খুব 

ভালোভাবে জেনে গিয়েছে যে ওর কোন বিকল্প

নেই।আলুর বদলে চলবেনা কচু বা কাঁচা কলা।

তাই ও একমেবাদ্বিতিয়াম।যতই দেশে শতকরা

আশিভাগ লোক আক্রান্ত মধুমেহে ,কিন্তু আলু

মোহে আকৃষ্ট লোকের সংখ্যা কমছে কই?

              কি সে নেই আলু? ঝালে,

ঝোলে, অম্বলে,মাছে,মাংসে,ফুচকা,চিপসে,

আলুকাবলিতে খাবলাখাবলি করে সেই আলু।তাই 

আলু সর্বত্রগামী।আলুর মুখে লাগাম দেবে সাধ্য কার?

তাই দর বেঁধেও নেই কোন লাভ।সুফল বাংলা বা

এনফোর্সমেন্ট ই বলো,সব সোর্স ই আলুতে এসে

কুপোকাত।

            গিন্নিকে বোঝাই," দেখো আমার সুগার,

আলু খাওয়া বারণ,তাই আলু না হলে হয় না?"

গিন্নির সাফ জবাব,--- তোমার বারণ, আমারতো

নয়।আলু চাই ,চাই।"

           অনিচ্ছাসত্ত্বেও গিন্নির কাছ থেকে একটা

থলে নিয়ে রওনা দিই বাজারের দিকে নেহাৎ

ব্যাজার মুখে ই। যা আছে কপালে দেখা যাবে।

আজ আলু নেবই।প্রয়োজনে আমার জন্মসূত্রে

প্রাপ্ত আলু খুলে যাক,সেও ভি আচ্ছা আলু আজ

চাই!

              প্রথমে পুরো গ্যা ট গরচা দিয়ে নিলাম

দুই কেজি আলু,গেলো করকরে একটা একশোর

পাত্তি।এরপর পেঁয়াজ।সেও কম কীসে? ঝাঁজে

সেও অস্থির।সেটা অবশ্য এক কেজিতে দিলাম 

ক্ষান্ত করে।মনে মনে ভাবলাম, বাড়ি গিয়ে

গিন্নিকে বলতে হবে,দুখানা লাগলে চালাবে

আধখানা দিয়ে।পেঁয়াজের গন্ধ পেলেই চলবে।

আমার পাঁজর খুলে নিতে পারো,সেও ভি আচ্ছা,

আর পেঁয়াজের পরত খুলতে হবেনা।

             যাক বাজার থেকে আমার বাড়ি বেশি

দূরে নয়।মাত্র তো দুটো জিনিষ,থলেটা হাতে নিয়ে ছুটছি হনহন করে।কেউ ডাকলে শুধু বলছি, " দাদা কেটে যাচ্ছে,কিন্তু রক্ত বের হচ্ছে না।" যাহোক বাড়ি পৌঁছে গিন্নির হাতে থলেটা

বীর দর্পে তুলে দিয়ে বললাম," আবার পনেরো

দিন পর আলুর কথা বলো।তানাহলে নির্ঘাত

হবে হার্ট এ্যাটাক।এক কাপ চা দিও"।

            সবেমাত্র খবরের কাগজটা নিয়ে বসতেই 

রান্নাঘর থেকে গিন্নির চিল চিৎকার,

" আলু কই গো? মাত্রা দুখানা আলু! কী ব্যাপার,

দুজনাই একটা একটা করে খাবো না শুধু 

নাড়াচাড়া করবো?" আমারতো এবার অবাক

হবার পালা! আরে দু কেজি আলু,দু খানা হবে

কেন? গিন্নিকে বলি, " আরে ভালো করে খুঁজে

দেখো।থাকবে থলের মধ্যেই,যাবে কোথায়?"

গিন্নির উত্তর," সব মেঝেতেই ঢেলে দিয়েছি।নিজে দেখে যাও।আলু কোথায়?"

              আলু আলু করে একেবারে আলুথালু

অবস্থা।গিন্নির তর্জন গর্জনে শুধু আমার বাড়ি

নয়,সমস্ত পাড়া আলুরোষে আলোড়িত।

               অগত্যা আলুর অবস্থান পরিদর্শনে

যেতে হয় রান্নাঘরে।গিয়ে দেখি,সত্যিই মাত্র

দুখানা আলু! কী ব্যাপার,ভেল্কি নাকী? এবার

থলেটা খুলে দেখতে গিয়ে চোখ শুধু ছানাবড়া

নয় একেবারে তালের বড়া।থলের নীচে মস্ত 

বড় বড় দুখানা ছ্যাদা, নিশ্চয়ই গণপতি বাপ্পার 

বাহনের কাজ। হা হতোস্মি! এতো মহার্ঘ্য আলু

গড়িয়ে গেছে তল দিয়ে।

              উপায় কী? আর একখান অন্য ব্যাগ

নিয়ে পটল তুলতে নয়,আলু কুড়োতে বাজার

অভিমুখে দিলাম দৌড়।দেখি একদল লোক

সঙ্গে ভি ভি ও ক্যামেরা,বুম নিয়ে আমার বাড়ির

দিকেই আসছে।আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার

পাগল পাগল নানা ভঙ্গিমার ছবি হতে লাগলো

তোলা।আমারতো আলুর শোকে দিশেহারা

অবস্থা।মুখে কিছু পারছিনা বলতে।

বাম হাতে ধরা ভদ্রলোক বললেন, " দাদা আপনার 

এই আন্দোলন যে পুরোপুরি অহিংস ছিল, তা 

বোঝাই গেছে। আপনি এই মহার্ঘ্য আলু বাজার

থেকে কিনে এসেছেন ফেলতে ফেলতে।আমরা

এটা সবটাই করে রেখেছি ভি ভি ও।" আমি

যতই তাদের বোঝাতে চেষ্টা করছি, যে এটা

আমার কোন প্রতিবাদ নয়,এটা নেহাতই থলে

বিপর্যয়,কিন্তু কে শোনে কার কথা।ওনাদের

বক্তব্য," এটা টেলিভিশনে লাইভ টেলিকাস্ট

হচ্ছে এবার যদি নেতা,মন্ত্রীদের নিদ্রাভঙ্গ

হয়।সত্যিইতো আলু এখন আমজনতার 

নাগালের বাইরে। এবার আপনি কিছু বলুন"

          আমার তো তখন বিপর্যস্ত অবস্থা।

ঘটনার আকস্মিকতায় আমার কোঁচা খোলার

অবস্থা।আমি কথা বলার অবস্থায় নেই।মনে মনে

ভাবছি,গিন্নি যদি এসময় টিভিটা খুলে বসে থাকে 

তাহলে তো সাড়ে সর্বনাশ। এতদরে আলু

কিনে রাস্তায় ছড়িয়ে হচ্ছিল বিপ্লব করা।আমার

আলুই দিবে বার করে। এ ই বয়সে আলুর দোষ।

মনে গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো দিয়ে ছাড়বে।ভয়ে ভয়ে

বলি, " দাদা, আমার মানসিক অবস্থা এখন যা

তাতে আর বক্তব্য দেওয়ার ক্ষমতা নেই।আপনারা 

যা বোঝার বুঝে নিন,আমাকে ছেড়ে

দিন।" 

           অগত্যা কিছু লোক আমার অপারগতা

অনুধাবন করতে পেরে ভিড়ের মাঝে একটু রাস্তা

করে দেওয়ায় আমি ছুটলাম বাজারের দিকে,যদি এখনো দুচারটে আলু মানিক্য পাওয়া

যায়।

No comments:

Post a Comment