Sunday, December 6, 2020


 





শীতসফরে ডুয়ার্সের চার্চে 

গৌতম চক্রবর্তী



             (সেন্ট মেরিস ক্যাথলিক চার্চ, সাতালি)



খানিক গড়িমসি করে হলেও ডুয়ার্সে শীত এসে পড়েছে। শীতের সকালের মিষ্টি রোদে চারিদিক ঝলমল করছে। শীত মানেই আসছে বড়দিন। শহরের মানুষ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বড়দিন পালন করে কেক খেয়ে। যদিও সবাই গির্জাতে যায় না। ডিসেম্বরের এই শীতের মরশুমে পবিত্র বড়দিন পালন করার প্রাকমুহূর্তে চারিদিকেই থাকে উৎসবের মেজাজ। নানা ভাষা, নানা বর্ণের বিচিত্র সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্যময় উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলা। বর্ণময় ভাষা এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলা একটা মিনি ভারতবর্ষও ছিল বটে। এখন জেলা বিভক্ত। বন-জঙ্গল এবং পাহাড়ি সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে অরণ্যের কোলে বিচরণ করে রয়েছে বিভিন্ন ভাষা সংস্কৃতির মানুষ যাদের মধ্যে অনেকেই খ্রীষ্টান ধর্ম সম্প্রদায়ভুক্ত। সবুজে ঘেরা ডুয়ার্সে কোথায় কোথায় চার্চগুলি রয়েছে এবং কিভাবে তারা কাজ করে তা সরেজমিনে নিজের চোখে দেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। দ্বিশতাধিক ছোট বড়ো চার্চ। তাদের বহুবিচিত্র কার্যাবলী। খ্রীষ্টধর্ম প্রচার মুখ্য উদ্দেশ্য হলেও মানবসেবার দিকটিকে উপেক্ষা করা যায় না। একটা বিষয় খোলসা করে নেওয়া প্রথমেই প্রয়োজন। সেটা হল আমার এই লেখার অবতারণা কিন্তু পর্যটনের নিরিখেই। ডুয়ার্সের কোথায় কোথায় চার্চ আছে, চার্চগুলি কি ধরণের কাজ করে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে চার্চগুলির ভূমিকা, মানবসেবার দিকটি এখানে মুখ্য উপজীব্য। কে ধর্মান্তরকরণ করছে এবং কিভাবে করছে তার ইতিহাস লেখার মানসিক তাগিদ থাকলেও এবং প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করলেও এই যাত্রায় আমার লক্ষ্য চার্চগুলি কোথায় কোথায় আছে এবং সেখানে কিভাবে মানুষ পৌঁছাতে পারবেন তার সুলুক সন্ধান দেওয়া। বেছে নিলাম নির্দিষ্ট কয়েকটি সার্কিট।


 


                      (ব্যাপটিস্ট চার্চ, জয়গাঁও)




 

পর্যটন সার্কিট আলিপুরদুয়ার


এসে পৌঁছালাম আলিপুরদুয়ার জংশনে। ডুয়ার্সের চার্চ পরিক্রমার সুহানা সফরে। আমার সঙ্গী শিবুনদা। আগে থেকেই বলা ব্যাবস্থা অনুযায়ী বাইক নিয়ে স্টেশনে উপস্থিত। দ্বিচক্রযানের শরণাপন্ন হলাম। কারণ দ্বিচক্রযান ছাড়া ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি, মাদারিহাট, মেন্দাবাড়ি, বীরপাড়া এবং জয়গাঁ পৌঁছাতেই পারব না। কারণ বেশিরভাগ চার্চ চা বাগান এবং জঙ্গলমহল অধ্যুষিত অঞ্চলের আদিবাসী এবং জনজাতি মহল্লায়। তাই গুগল ম্যাপ থেকে রুট প্ল্যানিং করে বেড়িয়ে পড়লাম সুহানা সফরে। বলে রাখি সময়াভাবে এবং সীমিত পরিসরে কেবলমাত্র আলিপুরদুয়ার এবং কালচিনি ব্লকের চার্চগুলির অবস্থান এবং স্বল্প পরিচয় প্রদান আমার এবারের লেখার বিষয়। বিস্তারিতভাবে পরবর্তীকালে ইস্যুভিত্তিক লিখব। জয়দূর্গা বলে বেড়িয়ে পড়লাম যন্ত্রদানবকে সাথী করে দুই সওয়ারী। কালজানি নদীর কোলে আলিপুরদুয়ার শহরটির টপোগ্রাফি অসাধারণ। ডুয়ার্স বেড়ানোর চাবিকাঠি হিসেবে ধরা যায় আলিপুরদুয়ারকে। কালজানি, নোনাই, ডিমা, গরম আরো কতো নদী জিলিপির প্যাঁচ এবং সরীসৃপের মতো জড়িয়ে পেঁচিয়ে আছে আলিপুরদুয়ারকে। আলিপুরদুয়ারে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত। ভোর থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত অটো সার্ভিসে রাজাভাতখাওয়া যাওয়া যায়। তবে দমনপুরের আরণ্যক চিত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না। মুঠোফোন, চ্যানেলে চ্যানেলে বিনোদন। দূর্গম বনভূমিতে ডিশ এন্টেনার সাহায্যে যাবতীয় আনন্দ উল্লাস হাতের মুঠোয়। শান্ত, নিস্তরঙ্গ জীবনপ্রবাহ আর নেই। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নতুন জেলা আলিপুরদুয়ার পাহাড়, অরণ্য, চা বাগান, নদী, কৃষি, বনবস্তি নিয়ে ডুয়ার্সের রানী হিসেবে পরিচিত।


 


            (মাদার মেরি ক্যাথলিক চার্চ, হাসিমারা)




 

আলিপুরদুয়ার চার্চ সার্কিট


আলিপুরদুয়ার শহরটি এখনো পুরোপুরি কংক্রিটের জঙ্গলে ঢাকা পড়েনি। আজও এই শহরে কোকিলের ডাক শোনা যায়, শোনা যায় স্তব্ধ দুপুরে ঘুঘু পাখির ডাক। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল, অমলতাস ফোটে, দেখা যায় চোখ জুড়ানো সবুজ মাঠ। আলিপুরদুয়ার থেকে দু পা বাড়ালেই সবুজের সমারোহ। কালজানি নদী পেরিয়ে গেলে গ্রাম্য জীবনে ধানের গন্ধ। ঘন সবুজ জঙ্গল, আদিবাসীদের ঘর গেরস্থালি। ছোটবড় খাল-বিল, বন জঙ্গল, পাহাড় সহ সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ আছে এখানে। আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে জংশন থেকে ভোলারডাবরি শিবমন্দিরের পাশ দিয়ে চলে এলাম নেতাজি বিদ্যাপীঠ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে। ১২ নম্বর রাজ্য সড়ক দিয়ে এগোতে এগোতে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইন্স্যুরেন্সের ডানদিকে বাঁক নিয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে পূর্ব মাঝেরডাবরি চা বাগানের অন্তর্গত মাঝেরডাবরি গির্জাতে পৌঁছে মন ভরে গেল। যেমন পরিবেশ, তেমন সুন্দর গির্জা। মাঝেরডাবরি গির্জা দিয়ে শুরু হল আমার এই পর্বের ডুয়ার্সের চার্চের সন্ধানে পথচলা। মাঝেরডাবরি গির্জা থেকে বেরিয়ে এবারে যাব আলিপুরদুয়ার ব্যাপ্টিস্ট চার্চে। সোজা চলে এলাম চেচাখাতা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার। এরপর রামকৃষ্ণ সারদা জুনিয়র স্কুলের পাশ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এগিয়ে এলাম। রেলওয়ে কমিউনিটি হলকে ডানদিকে রেখে লিচুতলা বাজার হয়ে নেতাজি বিদ্যাপীঠ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে পৌঁছে গেলাম আলিপুরদুয়ার ব্যাপ্টিস্ট চার্চ। মাঝেরডাবরি থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরত্ব। আলিপুরদুয়ার কোর্ট থেকে আলিপুরদুয়ার ব্যাপটিস্ট চার্চের দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। আলিপুরদুয়ারের পথে পথে রাস্তার দুপাশের গাছগুলি পথিকের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। দু’পাশের গাছগুলো অতীতের ইতিহাসকে তুলে ধরে আমাদের সামনে। কাঠের কৌলিন্যের বিচারে শহরের রাজপথে মেহগনি গাছ ছিল কম করে পাঁচ ছয়টি। আসাম গেট থেকে শুরু করে ভাঙ্গাপুল, নেতাজি রোড, এবং শামুকতলা রোড এর সলসলাবাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দুধারে ছিল শিরীষ বা রেইন ট্রি যা অর্ধশতকের বেশি প্রাচীন। হয়তো উন্নয়নের নিরিখে কাটা পড়ে গেছে। ভাঙাপুল থেকে নিউটাউন হয়ে কোর্টের দিকে এগিয়ে গেলে মাঘ ফাল্গুন এর আকাশটা কৃষ্ণচূড়াতে লালে লাল হয়ে থাকত যেরকমভাবে সেরকম আর চোখে পড়ে না। পি এইচ ই অফিস এবং জেলখানার মাঝবরাবর যে রাস্তা প্যারেড গ্রাউন্ডে পড়েছে তার দুধারে জারুল গাছ ছিল। জারুলকে ইংরেজিতে বলে কুইন অফ ফ্লাওয়ার। বর্ষাকালে নীলাভ ফুলে গাছগুলো ছেয়ে থাকত। আলিপুরদুয়ার ব্যাপটিস্ট চার্চ থেকে ১২(এ) নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে লিচুতলা বাজার হয়ে চলে এলাম আলিপুরদুয়ার ক্যালভারি চার্চে। চার্চটি চেচাখাতার আরপিএফ কলোনিতে অবস্থিত। ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ভোলারডাবরি রোড হয়ে পৌঁছে গেলাম ভোলারডাবরি মিশন কমপ্লেক্সে। একদম সাদামাঠা চার্চ। বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যায় না।


 



                          ( মাঝেরডাবরি চার্চ)



 

নোনাই এর তীরে কিছুক্ষণ


আমরা পৌঁছে গেলাম নোনাই নদীর কাছে। নীরবে নোনাই এর ক্যালিডোস্কোপ সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করলাম। সামনে সুবিস্তৃত সবুজ মাঠ এবং পিছনে আঁকাবাঁকা নোনাই নদী। গভীর জঙ্গলের ভিতর এঁকেবেঁকে নোনাই বয়ে চলেছে। চারপাশে ঘন হয়ে আছে জঙ্গল। নোনাই নদীর পাশেই গরম বনভূমি। অদূরে চারপাশ ভীষণ নির্জন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে হস্তী দর্শন হতেই পারে। হাতিরা দল বেঁধে আসা-যাওয়া করে আর দোকানঘর আর বনবস্তিগুলি ভাঙ্গে। নর্থ পয়েন্ট মাঝেরডাবরি চা বাগান পার হলেই দমনপুর। বসন্তের মাতাল সমীরণে এখানে এলে পাগলা হয়ে যেতে হয় জারুল ফুলের শোভায়। গাছ ভরে যায় বেগুনি রংয়ের জারুল ফুলে। সেই সঙ্গে কাঁচা হলুদ, ঝুমকো লতা, অমলতাস, শিমূল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া। নোনাইয়ের অদূরে সিকিয়াঝোরা এবং স্বর্গছেঁড়া। জায়গাটি পানিয়ালগুড়ি চেকো বিটের অধীনে। পূর্বে দমনপুর রেঞ্জ এবং পশ্চিমে বক্সা বাঘবনের অন্তর্ভুক্ত। সিকিয়াঝোরার দেখাশোনা, লাভ-লোকসান, উন্নতির বিষয়ে প্রখর দৃষ্টি দিচ্ছেন পানিয়ালগুড়ি গাঁয়ের মেয়েরা। পুরুষেরাও আছেন, তবে মহিলারাই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে। যেমন গাছ কাটা বন্ধ করা, প্লাস্টিক ব্যবহার না করা, পিকনিকের পরে জায়গাটিকে সাফসুতরো রাখা, ঝোরার জল যাতে দূষিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ৩১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে চলে এলাম বক্সা ফরেস্টের অন্তর্গত কালকূট বস্তির ব্যাপ্টিস্ট চার্চে। মাঝেরডাবরি চা বাগানের ফুটবল গ্রাউন্ড এর পাশেই এনইএলসি চার্চটি অবস্থিত। চলে এলাম চার্চে। এই চার্চ থেকে এবার আমরা এলাম খৃষ্ট দ্য কিং চার্চ পূর্ব মাঝেরডাবরি চা বাগানে। ৩১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে উত্তর পশ্চিম দিকে মুখ করে ৫০০ মিটার যাওয়ার পর বাঁদিকে বাঁক নিয়ে কিলোমিটার দেড়েক যাওয়ার পরেই এই চার্চটি।


 


                 ( তালেশ্বরগুড়ি প্রেসবিটারিয়ান চার্চ)




 

গরম বিটের নির্জনতায়


এক কিলোমিটার যাবার পর জঙ্গলপথ শুরু। বেশ ঘন জঙ্গল। পিঁপড়ের সারির মতো মেয়ে মরদ মাথায় শুকনো খড়ি চাপিয়ে জঙ্গল থেকে ফিরছে। হঠাৎ দেখি রাস্তা অবরোধ। যেখানে সেখানে হাতির নাদি ছড়ানো। মস্ত বড় গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। ঠেলেঠুলে গাছটির ডালপালা সরালাম। ডানদিকে জঙ্গলের গহন পথ। গুহার মত তৈরী লতা তন্তুজালে সমাচ্ছন্ন। গা ছমছম করছে। শরীর কাঁটা দিচ্ছে। জঙ্গলে কত রকমের গাছপালা যে জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে তার ঠিক ঠিকানা নেই। কারো সঙ্গে কারোর ঝগড়াঝাটি নাই। এক অদ্ভুত গন্ধ নাকে আসছে। মাঝেরডাবরি চা বাগান থেকে বেরিয়ে বক্সা অতিক্রম করে চলে এসেছি গরম বস্তিতে এনইএলসি চার্চে। মাঝেরডাবরি চা বাগান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব। গরম বস্তির চার্চ থেকে ৩১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সোজা চললাম নর্থ পোরো রাভা ব্যাপটিস্ট চার্চে। পোরোর এই চার্চটির দূরত্ব দমনপুরের গরম বস্তি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার।


 


                             ( মহাকালগুড়ি)




 

 পক্ষী পর্যটনের নতুন ঠিকানা ইষ্টিকুটুম       


এবারে সোজা চলে গেলাম নিমতি দোমোহনী। নিমতিঝোড়া চা বাগান। দুপাশে কত ছায়া গাছ। কৃষ্ণচূড়া, জ্যাকারান্ডা, হলুদ অমলতাস, ঝুমকো লতার মতো ভূমিতলে পতিত। চোখ ছুটে যায় সবুজের হাতছানিতে। নিমতি নামে ঝোড়া বয়ে গেছে চা বাগানের বুক চিরে। তাই নাম নিমতিঝোড়া। দুপাশে অজস্র ছায়াগাছ। পাখিদের কলকূজন। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার রূপ অভূতপূর্ব। বারেবারে আমার চোখ ছুটে যাচ্ছে সবুজের হাতছানিতে। চা ফ্যাক্টরির সামনে অবাক চোখে অচেনা মানুষগুলি তাকিয়ে আছে। গ্রাম্য সাদাসিধা মানুষ আর চা এর গন্ধ নিয়ে নিমতিঝোড়া। নিমতিঝোড়া থেকে পাটকাপাড়া টি গার্ডেন সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, দক্ষিণ বড়ঝাড় ফরেস্ট সাড়ে ছয় কিলোমিটার, ভাতখাওয়া চা বাগান সাড়ে আট কিলোমিটার, কালচিনি টি গার্ডেন সাড়ে ১১ কিলোমিটার, বক্সা ফরেস্ট ১৫ কিলোমিটার, মালঙ্গী চা বাগান ১৮ কিলোমিটার। নিমতি দোমোহনি থেকে ইষ্টিকুটুম অতিক্রম করে সোজা চলে আসতে থাকি পাটকাপাড়ার দিকে। তপসীখাতা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে বাঁদিকে বাঁক নিয়ে উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাংকের ডানদিক দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার আসার পর পৌঁছে গেলাম পাটকাপাড়া চা বাগানে অবস্থিত এনডব্লিউজিইএল চার্চে। পাশেই আরেকটি ছোট চার্চ। নাম পিজিটি চার্চ (বি এন)। পাটকাপাড়া চা বাগান এবং চা বাগান এর অন্তর্গত চার্চগুলি দেখে আজকের রাত্রি যাপন ইষ্টিকুটুমে।


                     (সাঁওতাল্লুর মিশন)


মেন্দাবারি জঙ্গলমহলের চার্চ


আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে চিলাপাতা রেঞ্জ অফিস। আমরা চললাম চিলাপাতা। উত্তরবঙ্গ সফরে কেউ যদি চিলাপাতার এই সার্কিটে আসেন তাহলে জঙ্গলের আউট লাইনের ধারে এইরকম নির্জন অঞ্চলে হোমস্টে অথবা বাংলোর বারান্দায় জমিয়ে বসলে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সময় কেটে যায়। নল রাজার গড়, কোদালবস্তির জঙ্গলে গাউরের অভিনব মহামিছিলের হাড় হিম করা রোমাঞ্চকর দৃশ্য, দূর্ধর্ষ ল্যান্ডস্কেপ, বানিয়া নদী, জঙ্গল, পাকা ধানক্ষেত আর দুপাশে সরু কাঁচা সড়ক, নীল দিগন্তে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ এই নিয়েই চিলাপাতার জঙ্গলে ঘেরা পর্যটন সুষমা। মেন্দাবাড়ি আর কোদালবস্তি এই অরণ্যের দুই অলংকার। সেখানকার দুটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে রোমাঞ্চকর বন এবং বন্যপ্রাণী দর্শন করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানকার জঙ্গলমহলের রাভা এবং মেচ জনজাতিদের আন্তরিকতাপূর্ণ সহজ সরল ব্যবহার, ভালোবাসা, অতিথিপরায়ণতা আর ডুয়ার্সের সোঁদা মাটির গন্ধ। ডুয়ার্সের সোঁদা মাটির গন্ধ পেতেই এসেছি বড়দিনের প্রাক্কালে মেন্দাবাড়ি এবং কোদাল বস্তির চার্চগুলিকে কেন্দ্র করে মানুষ কিভাবে বড়দিনের আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে তার সুলুক সন্ধান করতে। মেন্দাবাড়ি জঙ্গল ক্যাম্প থেকে কোদালবস্তির দূরত্ব খুবই সামান্য। ৩১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মেন্দাবাড়ি জঙ্গল ক্যাম্প কোদাল বস্তি মাত্র এক কিলোমিটার। একটু দূরেই মেন্দাবাড়ির জনজাতি অধ্যুষিত রাভা বস্তিতে লুথেরান চার্চটি যাকে রাভা বস্তি চার্চও বলা হয়। দক্ষিণ বড়ঝার ফরেস্টের অন্তর্গত বনবস্তি অঞ্চলের এই চার্চটি ছাড়াও মেন্দাবাড়ি জঙ্গল ক্যাম্পের আশেপাশেই তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে আছে দক্ষিণ মেন্দাবাড়ি চার্চ বা এন ই এল সি চার্চ অফ খ্রিস্ট। এছাড়াও আরেকটি জনপ্রিয় চার্চ মেন্দাবাড়ি বেথেলহেম প্রেয়ার হাউস।


 


              (বানিয়াপাড়া ব্যাপটিস্ট চার্চ)




 

আটিয়াবাড়ি থেকে চিনচুলা


নিমতি দোমোহনী থেকে খুব সকালেই বেরিয়ে পড়লাম কালচিনি এবং হ্যামিল্টনগঞ্জের চার্চগুলিতে। ১২-এ রাজ্য সড়ক ধরে আটিয়াবাড়ি নিমতি ডিপো রোড ধরে নিমতি রেঞ্জ অফিসের পাশ দিয়ে আরো তিন কিলোমিটার এগিয়ে বাঁ দিকে টার্ন নিয়ে প্রবেশ করলাম ভাতখাওয়া চা বাগানে। এখানেই যশপুর লাইন চার্চটি। নিমতি দোমোহনী থেকে চার্চটির দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। যশপুর লাইন চার্চ থেকে বেরিয়ে গারোপাড়া চা বাগান ছাড়িয়ে হেবরন স্কুলকে হাতের ডান দিকে রেখে চলতে লাগলাম মিনি ভারতবর্ষ কালচিনির দিকে। গারো, মেচ, রাভা, নেপালি, বিহারী, বাঙালির সহাবস্থান কালচিনিতে। এসে পড়লাম গাংগুটিয়া টি গার্ডেনে। বহু বছর আগে গাংগুটিয়াতে সনৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। আমি তখন দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় লেখালেখি করতাম। সনৎদার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম গাংগুটিয়া চা বাগানের পথে পথে। পরবর্তীকালে এই বাগানের নাম হয়েছিল চিনচুলা। সনৎদার কাছ থেকে শুনতাম সাদরি এবং নেপালি ভাষায় লোকসংগীত। কবিতা এবং সংগীত ছিল তাঁর সহজাত। আপন খেয়ালে সনৎদা গাইতেন। এখানে অবস্থিত রোম্যান ক্যাথলিক চার্চটি খুবই সুন্দর। যশপুর লাইন চার্চ থেকে গাংগুটিয়া চা বাগানের রোমান ক্যাথলিক চার্চটির দূরত্ব প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে গাংগুটিয়া চা বাগানের টি এস্টেট এর কাছে রয়েছে সেন্ট মেরিজ ক্যাথলিক চার্চ। পাশেই জে. ই. এল চার্চ। এই চার্চের কাছেই চিনচুলা টি এস্টেট মনাস্টারি। অনতিদূরে চিনচুলা পানরিয়া বাজার এবং খেলার মাঠ। দুটি চার্চের মধ্যে দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না চিনচুলা চা-বাগানে খ্রিষ্টধর্মের মানুষের সংখ্যা কম নয় এবং ক্ষেত্রসমীক্ষা করে জানতে পারলাম এদের বেশিরভাগই তামাং সম্প্রদায়ভুক্ত। চার্চ লাগোয়া একটা কমিউনিটি হলও আছে।



                 ( পি আই সি চার্চ, সাতালি)



কালচিনি এবং হ্যামিল্টনগঞ্জ


জে ই এল চার্চ থেকে বেরিয়ে চিনচুলা কমিউনিটি হল অতিক্রম করে বাঁদিকে চিনচুলা পানরিয়া বাজার এবং চিনচুলা চা বাগানের খেলার মাঠ অতিক্রম করে উত্তর লতাবারি দিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার এগোনোর পর কালচিনি হসপিটাল লাইন অতিক্রম করে এগিয়ে চললাম। কালচিনি এক নম্বর টি গার্ডেন প্রাইমারি স্কুলকে ডানদিকে রেখে চলে এলাম কালচিনি চৌপথিতে। কালচিনি চৌপথিকে বাঁ দিকে রেখে চলে এলাম ডিমা টি এস্টেট ক্যাথলিক চার্চের প্রান্তে। গাংগুটিয়ার জে ই এল চার্চ থেকে ডিমা টি এস্টেট ক্যাথলিক চার্চ এর দূরত্ব প্রায় দশ কিলোমিটার। কালচিনি চৌপথী থেকে অল্পদূরে কালচিনি স্টেশনের পাশেই ১২-এ রাজ্য সড়ক হয়ে পায়ে হাঁটা পথে কালচিনি ব্যাপ্টিস্ট চার্চ। কালচিনির পশ্চিমে হ্যামিল্টনগঞ্জ যা কালচিনির বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। কালচিনি ব্যাপটিস্ট চার্চ থেকে হ্যামিল্টনগঞ্জ বাইপাস অতিক্রম হয়ে শ্রীকৃষ্ণ প্রনামী মন্দির রোড দিয়ে ১২-এ জাতীয় সড়কে উঠে হামিল্টনগঞ্জ গুরুদ্বোয়ারা অতিক্রম করে উত্তর লতাবাড়ি হিন্দি হাইস্কুলের কাছে অবস্থিত সেন্ট এমব্রোজ চার্চে চলে এলাম। রওনা দিলাম এবার ডুয়ার্সের সবুজ সমুদ্রে। বাঁ দিকে কালচিনি রেলস্টেশন এবং ডানদিকে চা বাগান। কোন একসময় কাঠের তৈরি একটা আস্ত শহর ছিল হ্যামিল্টনগঞ্জ। ম্যাকলয়েড গ্রুপের চা বাগান মেচপাড়া এবং চুয়াপাড়া ছিল বিখ্যাত। এখনো এগুলি সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে। ভাটপাড়া চা বাগানে আগে একটা এরোড্রাম ছিল। সপ্তাহে একবার করে ডাকোটা এরোপ্লেন নামত এখানকার চা বাগানের চা এর নমুনা নিয়ে কলকাতায় টি অকশন হাউস এর অফিসে পৌঁছে দেবার জন্য। আজকের মত তখন শিলিগুড়িতে কোন নিলাম কেন্দ্র ছিল না বলে এই ব্যবস্থা। মেচপাড়া এবং ভাটপাড়া চা বাগানেও আছে চার্চ। সেন্ট অ্যামব্রোজ চার্চ থেকে সোজা চলে এলাম ভাটপাড়া চা বাগানের ভাটপাড়া নিউলাইন চার্চে। এটা একটা ব্যাপটিস্ট চার্চ। ভাটপাড়া নিউলাইন চার্চ থেকে ভাটপাড়া ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মাত্র এক কিলোমিটার। ভাটপাড়া চা বাগিচা হাসপাতালের পাশ দিয়ে এগিয়ে এসে প্রবেশ করলাম ভাটপাড়া ব্যাপটিস্ট চার্চটিতে। এখান থেকে মেচপাড়ার নিউ ইন্ডিয়া চার্চ অব গড এর দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। পাশেই ইয়াং চেন চোয়েলিং মনাস্ট্রি। চুয়াপাড়া হসপিটাল অতিক্রম করে মেচপাড়া শিবমন্দির এর পাশ দিয়ে চলে এলাম মেচপাড়া চার্চে। চুয়াপারা, মেচপাড়া, ভাটপাড়া চা বাগান অতিক্রম করে রাস্তা গিয়ে থেমেছে ভুটান পাহাড়ের পাদদেশে। সেখানকার শেষ চা বাগান টাটা কোম্পানির মালিকানাধীন রাঙ্গামাটি চা বাগান। মেচপাড়া চার্চ দেখে শেষ করলাম কালচিনি এবং হ্যামিলটনগঞ্জের চার্চ সফর। আজ থাকবো হ্যামিল্টনগঞ্জ। আগামীকাল শুরু হবে জয়গাঁও হয়ে হাসিমারা সার্কিটের চার্চ দর্শন।



                    ( কার্তিকা চা-বাগানের চার্চ)



জয়গাঁও সার্কিট


চার্চ সফর শুরু করলাম জয়গাঁও থেকে। বাসস্ট্যান্ড থেকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে এগিয়ে চললাম ইউনাইটেড পেন্টিকোস্টাল চার্চের দিকে। পাশেই মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মঙ্গলাবাড়ি বাজারে। ৩১৭(এ)নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে হোটেল গোদাবরীর বাঁ দিক দিয়ে পৌঁছে গেলাম মংলাবাড়ি বাজারের চার্চটিতে। মঙ্গলাবাড়ি বাজার থেকে আগাপে ইন্ডিপেন্ডেন্ট চার্চ ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। ব্যাপ্টিস্ট চার্চ থেকে ৩১৭(এ) নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সামান্য এগিয়ে গিয়ে ধর্মা ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস এর পাশ দিয়ে বাঁদিকে বাঁক নিতেই পৌঁছে গেলাম চার্চে। ফেরার পথে এবারে ধর্মা টুর এন্ড ট্রাভেলস এর বাঁদিকে বাঁক নিয়ে পৌঁছে গেলাম জয়গাঁ প্রেসবিটারিয়ান চার্চে। দুটি চার্চেরই দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। এবার আমরা যাব হিমালয়ান চার্চে। এটিও একদম পাশে। দূরত্ব এক কিলোমিটারও হবে না। মঙ্গলাবাড়ি বাজার থেকে ১২(এ) নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ডানদিক বাঁদিক করতে করতে মুহূর্তে পৌঁছে গেলাম হিমালয়ান চার্চে। বাসস্ট্যান্ড থেকে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক পার হয়ে দুর্গা হুন্ডাই অতিক্রম করে বন্ধন ব্যাংক এর পাশ দিয়ে বেঙ্গল টায়ারস এবং হীরা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এর বাঁদিকে অতিক্রম করে পৌঁছে গেলাম ইমানুয়েল পেন্টিকোস্টাল চার্চে। বাস স্ট্যান্ড থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার। এবার যাবো নবজ্যোতি চার্চে। আবার বেঙ্গল টায়ারস এবং হীরা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসকে ডান দিকে রেখে অঙ্কুশ হোটেল এর পাশ দিয়ে নীতেশ টেলিকম এর ডান দিক ধরে চলতে থাকলাম। ইন্দো ভুটান বর্ডার রোডে বাঁদিকে বাঁক নিয়ে ঝর্ণা বস্তির বাঁ দিক দিয়ে ইন্দো ভুটান বর্ডার রোড ধরে সোজা চলতে চলতে এলাম নবজ্যোতি চার্চে। ইমানুয়েল পেন্টিকোস্টাল চার্চ থেকে এই চার্চটির দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। নবজ্যোতি চার্চ থেকে বেড়িয়ে আমরা যাব সেন্ট মাইকেল চার্চে। দূরত্ব দুই কিলোমিটারের সামান্য কম। ইন্দো ভুটান বর্ডার রোডে দক্ষিণ পূর্ব দিকে মুখ করে এগিয়ে ঝরনা বস্তির পাশ দিয়ে চলতে চলতে আমরা পৌঁছালাম সেন্ট মাইকেল চার্চে। সেন্ট মাইকেল চার্চ থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে হিমালয়ান পেন্টিকোস্টাল চার্চ। দূরত্ব এক কিলোমিটারের মত। সরাসরি ইন্দো ভুটান বর্ডার রোড এবং ৩১৭(এ)নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে চলে এলাম হিমালয়ান পেন্টিকোস্টাল চার্চে। আরজু জেনারেল স্টোর্স এবং কসমেটিকসের ডানদিক ধরে সামান্য এগোলে জয়গাঁও ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসেম্বলি হল। ফিরতি পথে আরজু জেনারেল স্টোর এন্ড কসমেটিক এর পাশ দিয়ে জয়গাঁও দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পাশ দিয়ে এসে ড্রিম কনস্ট্রাকশন এর কাছে ডান দিকে বাঁক নিতেই ফিলাডেলফিয়া ফেলোশিপ চার্চ মিশন এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে। এই চার্চটির পাশেই এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে বেথলেহেম পেন্টিকোস্টাল চার্চ। এই চার্চ থেকে বেরিয়ে চলে এলাম এসডিএ চার্চে। দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়। একদম পাশে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে মুখ করে এগিয়ে গেলে লামা বিল্ডিংয়ে বাঁ দিকে ঘুরে প্রশংসা ক্যালভারি চার্চ। এই চার্জ থেকে ৩১৭(এ) নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে গেলাম মঙ্গলাবাড়ি প্রধান রোডে মামরে চার্চে। এই চার্চ থেকে ৩১৭(এ) নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পৌঁছে গেলাম গোপীমোহন গ্রাউন্ডে কৃপা চার্চে। দূরত্ব এক কিলোমিটার এরও কম। কৃপা চার্চ থেকে বের হয়ে গোপীমোহন চা বাগানের খেলার মাঠের পাশ দিয়ে আমরা চলে এলাম কৃপা মন্ডলী চার্চে। ফিরতি পথে খেলার মাঠের পাশ দিয়ে ড্রাইভ করে ৩১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের কাছে এসে মন্দিরকে ডানদিকে রেখে সোজা চলে এলাম খোকলা প্রেসবিটারিয়ান চার্চে। দুটি চার্চের মধ্যবর্তী দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার।



                          (জয়গাঁ চার্চ)




ডুয়ার্সের চার্চ হাসিমারা সার্কিট


যাব হাসিমারার নামকরা চার্চ মাদার মেরি ক্যাথলিক চার্চে। নীলপাড়া ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস হয়ে সুভাষিনী চা বাগানের পাশ দিয়ে সৌদামিনী চা বাগান অতিক্রম করে এয়ারফোর্স হসপিটালের সামনে দিয়ে পৌঁছালাম মাদার মেরি ক্যাথলিক চার্চে। অনতিদূরে বালাজী মন্দির এবং হাসিমারার অন্যতম দর্শনীয় গুরুদ্বারা। মাদার মেরি ক্যাথলিক চার্চ থেকে বেরিয়ে দর্শন করলাম বালাজী টেম্পল। এরপর হাসিমারা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় চিলড্রেনস পার্কের পাশ দিয়ে সোজা হনুমান মন্দির। ৩১৭(এ) নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বেশ কিছুটা এগিয়ে তারা সিং ধাবা অতিক্রম করে আরো প্রায় সোয়া কিলোমিটার যাবার পর বাঁদিকে বাঁক নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সেন্ট মেরিজ ক্যাথলিক চার্চ পশ্চিম সাতালিতে। সেন্ট মেরিজ ক্যাথলিক চার্চ থেকে বেরিয়ে ফিরতি পথে আধা কিলোমিটারের মতো এগিয়ে এসে সেন্ট অ্যালোইজ প্রাইমারি স্কুল বাঁদিকে রেখে প্রায় এক কিলোমিটার যাওয়ার পর পৌঁছে গেলাম সাতালি চার্চ অফ লর্ড জেসাস খ্রিস্টে। দেড় কিলোমিটার রাস্তা পৌঁছে গেলাম মাত্র দশ মিনিটে। চার্চ থেকে বেরিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে পশ্চিম সাতালিতে পিআইসি চার্চ পৌঁছে গেলাম দশ মিনিটে। পাশেই মিশন বানিয়াপাড়া এশিয়ান চার্চ দেখে চলে এলাম বানিয়াপাড়া ব্যাপটিস্ট চার্চ। এই চার্চটি হাসিমারার সবচেয়ে বড় চার্চ এবং লক্ষ্য করলাম সাতালি চা বাগানকে ঘিরেই বেশ অনেকগুলি চার্চ গড়ে উঠেছে এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মান্তরিতকরণ এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এই চার্চগুলিকে কেন্দ্র করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন যে ঘটেছে সেকথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সরকারের জনকল্যাণকর নীতিগুলির ফাঁকফোকর ধরে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে বিদেশের টাকাকে কাজে লাগিয়ে যদি খৃষ্টান মিশনারীরা সমাজকল্যাণকর কাজ করে থাকে এবং তার বিনিময়ে হতদরিদ্র চা বাগান শ্রমিকেরা তাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক মানের উন্নয়ন ঘটানোর নিরিখে যদি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েই থাকে তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যায় কি?

No comments:

Post a Comment