Sunday, December 6, 2020


 






      ভিজে যাওয়া সেই চিঠিখানি ।।  

                      কুমকুম ঘোষ।।


নির্ঘুম নির্জনতায় তারাদের ডাকে:

অর্থহীন বিছানায় এলোমেলো

পরে থাকে : নিঃশব্দ হাহাকার ---

শিশির ভেজা পথে সুদূরের আহ্বান।


না-পাঠানো পুরনো চিঠি আবার ফেলা হয় লাল ডাকবাক্সে : ভাবা যাক্, ভাবা যাক্ -- সে চিঠি পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে...

অনন্ত-নক্ষত্ররাজি সাক্ষী হবে সেই পোস্টম্যানের প্রতি গতায়াতে।এ এক কষ্ট কল্পনার নীল আকাশে বৃথা ওড়াওড়ি;তবু ট্রামলাইনে কে হাঁটে একাকী?

শোনেনি সে ট্রামের ঘন্টি?-- ঘটাং ঘটাং।

তারপর , তারপর --পৃথিবী তখন ব্যস্ত থাকে সফলতা শক্তির ভেতরে। 

আর সে, আর সে -- কমলালেবুর মতো রোদ গায়ে মেখে, গাঢ়তর বেদনার রক্ত ক্লেদ মেখে পড়ে থাকে পুকুরের ধারে ; যেন "পরণ-কথা"র গন্ধ লেগে আছে তার নরম শরীরে ;; নদী নক্ষত্রের তলে সেদিনো স্বপ্ন দেখতে থাকে, সে, শম্ভুনাথ পন্ডিতের রঙ- চটা বেডে।

.....................................................................


নির্বাসিত মেঘেরা সে চিঠি ফিরিয়ে দিয়ে

এসে দাঁড়িয়েছে জলপ্রপাতের পাশে।

আহা! ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা রামধনু যেন; 

অমরত্ব কামনা করে ।

প্রেমিক প্রবর কায়ক্লেশে হাত দেয়

ছেঁড়া পকেটে। একটা অচল পয়সা ছুঁড়ে 

তাকায় নীল আকাশের দিকে।

আর ঠিক তখনই ম্যাজিকের মত

মাটি ফুঁড়ে আবির্ভূত আরো তিনজন

তারপর, তারপর : তারপর-- খালাসিটোলায়

মাটির ভাঁড় এবং সত্যবন্ধ অভিমান। অমরত্ব ত্যাগ করে কবিতার শরীরে অবগাহন।

 যৌবনের স্পর্ধা দশক দশক ধরে, 

দিকশূন্যপুর অথবা----

অকিঞ্চিৎকর ফুটপাত ; করে চলে দৃপ্ত শাসন।

..............................................................

একটানা জলের শব্দ। আহা! কি ঝরঝর ধারায় ভিজিয়ে দিল শব্দ আখর। ভিজে যাওয়া সেই চিঠির প্রতিটা শব্দ এখন পবিত্র ও সুন্দর হয়ে উঠেছে। সংসারে জলের বিকল্প আর কিছুই হতে পারেনা।স্নান করো , পান করো, দান করো। পথের ধারে একটা বাঁশির সুর শোনা যায়, অপর্ণা ছুটে তোরঙ্গ খোলে; ঐতো পরে আছে রাসের মেলা থেকে কেনা যুবক স্বামীর আড়বাঁশি টা!

কে সুর তোলে তবে? ছাদের আলসেতে আনমনে খুলে রাখে খোঁপার কাঁটা গুলো।

.....................................................................


রেললাইন ধরে হেঁটে চলে দুই বন্ধু: অপূর্ব আর নীললোহিত ; সংসারে সবাই ওদের অপু আর নীলু বলে ডাকে।খুব গভীর আলোচনা করতে করতে ওরা রেললাইনের কাঠের স্লিপারের ওপর পা ফেলে ফেলে এগিয়ে চলেছে।

 হেমন্তের এই সময়ে বিকেলগুলো ছোট আর বিষণ্ন হয়ে পড়ে বড়ো দ্রুতবেগে।সূর্য ডুবে গেলেই ঝুপঝুপ আঁধার নেমে আসে কুয়াশার ওড়না নিয়ে। খানিকটা গিয়েই লাইনটা বাঁক নিয়েছে নদীর দিকে।কলকাতায় নদী মানেই গঙ্গা।সেই গঙ্গার দিকেই এগিয়ে যায় ওরা । দুটো অবয়ব আবছা হতে হতে একসময় ফ্রিজ শট্ হয়ে যায়।



( রবীন্দ্রনাথ বলেছেন বর্ষা কবিদের ঋতু ; সময় বলে হেমন্ত বিচ্ছেদের ঋতু।

হেমন্তের বিভোর-বেদনায় কতকগুলো দিন তাই স্থায়ী হয়ে থাকলো।

জীবনানন্দ দাশ : মৃত্যু ২২শে অক্টোবর,১৯৫৪

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় : মৃত্যু ২৩ শে অক্টোবর,২০১২

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যু : ১৫ ই নভেম্বর,২০২০)












No comments:

Post a Comment