Wednesday, January 11, 2017

মিলনের উষ্ণতা
____________
ফিরোজ আখতার


পিতলের বাটিটা বেশ জোরেই লাগলো নাটুর মাথায় ৷ সঙ্গে সঙ্গে মাগো বলে মাথার পিছনে হাত দিয়ে বারান্দায় বসে পড়লো নাটু I হাতটা মুখের সামনে এনে একবার দেখলো, রক্ত বেরোচ্ছে নাকি ! হাত রক্তশূণ্য দেখে যেন একটু স্বস্তি পেল সে ৷ কিন্তু যন্ত্রণা কমে নি একেবারেই ৷ মাথার পিছনটা ফুলে আলু হয়ে গেছে ৷ বিড়বিড় করে গাল পাড়লো সে- " শালী... হারামজাদী ! দাঁড়া, দেখাচ্ছি তোকে..." ৷ কিন্তু রান্না ঘরে গিয়ে মিঠুর জ্বলন্ত চোখ আর হাতে আঁশ বটিটা দেখে আবার বারান্দায় এসে বসে পড়লো সে | বেশি চিল্লামেল্লি করে লাভ নেই | আশেপাশের লোক জানতে পারলে তার ইজ্জত ধুলোয় মিশে যাবে ৷ বউয়ের হাতে মার খেয়েছে শুনলে লোকে যত না হাসবে তার থেকে তার গায়ে থুথু দেবে বেশি ! তার থেকে চেপে যাওয়াই ভালো ! পরে মাগীকে দেখে নেবে ৷ একদলা থুথু ফেললো সে |
ঘটনার সূত্রপাত অাজ বিকেল চারটেয় ৷ ভ্যান রিকসা চালিয়ে ঐ সময়েই ফেরে নাটু | সঙ্গে থাকে আগুনের মতো খিদে | তখন মনে হয় পারলে পুরো পৃথিবীটাই পেটে পুরে সে... | মিঠু বাবুদের বাড়ি থেকে কাজ সেরে ফেরে ঐ সময় | ওকে কতবার বলেছে একটু আগে ফিরে রান্না চাপাতে I কিন্ত কে শোনে কার কথা? আজ বাড়ি ফিরে যখন নাটু দেখলো মিঠু সবে ভাত চড়িয়েছে রক্ত চড়ে গেলো মাথায় ৷
_"কিরে , তোর বাবুর বাড়ি কোন আদিখ্যেতা করছিলি শুনি? "
-"পিরিত করছিলাম গো... পিরিত" |
আর স্থির থাকতে পারলো না নাটু I চুলের মুঠি ধরে পিঠে বসিয়ে দিলো এক রামকিল... !
-" দাঁড়া, তোর পিরিত করা বার কচ্ছি..." ৷ হাতের কাছে যে কটা হাঁড়ি বাসন ছিল তুলে নিলো সে লহমায় ৷
মিঠু জানতো এরপর কি হবে... থালাবাসনগুলো নাটু গিয়ে ফেলে দিয়ে আসবে পাশের এঁদো পুকুরে ৷ তারপর মিঠুকে গিয়ে তুলে আনতে হবে সেগুলো ৷ তাই আজ আর সে দেরি করলো না | বারান্দা থেকে নামার আগেই নিখুঁত টিপে ছুঁড়ে মারলো বাটিটা | আগে কতবার সে একটিপে আম পেড়েছে... | টিপ-টা তার আগের মতোই আছে দেখে মনে একটু খুশী জাগলো |
থালা বাসনগুলি বারান্দা থেকে তুলে নিয়ে এসে এবার রান্না বসিয়ে দিলো | বিশেষ কিছু না... পুঁই ডাঁটা দিয়ে মাছের মাথা আর বেগুন আলুর তরকারি | আড় চোখে একবার দেখে নিলো নাটুকে | এখনো একই জায়গায় বসে আছে আর বিড় বিড় করে গাল পাড়ছে | নিজের অজান্তেই ঠোঁটে একটা হালকা হাসি ফুটে উঠলো মিঠুর | এক বছর আগে বিয়ে হয়েছে ওদের I প্রেম করে বিয়ে | লোকটার একটা ভালো গুণ হলো মদ ছোঁয়না একেবারে | তবে রেগে গেলে মার দেয় খুব | আবার রাতে বিছানাতে মিঠুর সব ক্ষত সারিয়ে দেয় একেবারে | ভালবাসতেও পারে লোকটা !
একবাটি মুড়ি আর দুটো কাঁচালঙ্কা পেঁয়াজ নাটুর পাশে ঠকাস করে রেখে দিয়ে আসলো মিঠু | আজ পাল্টা মার খেয়ে মুখ একেবারে আমসি হয়ে গেছে ! ফিক করে হেসে ফেললো মিঠু |
বউয়ের দিকে একটা জ্বলন্ত দৃষ্টি হেনে কি করে এর শোধ নেওয়া যায় তাই ভাবতে লাগলো মুড়ি চিবাতে চিবাতে ...।
রাত দশটা ৷ খেয়েদেয়ে উঠলো দুজনে | এর মধ্যে মাথার ফোলাটা কমেছে নাটুর | ব্যাথাটাও | মিঠু এসে বরফ লাগিয়ে দিয়েছে একটু আগে ৷ একটা চুমুও দিয়েছে | তাই নাটুর মনটা একেবারে হাল্কা হয়ে এসেছে | মিঠু এখন বাসনগুলো মাজছে ৷ চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে দু টো মিঠা পান কিনে আনলো নাটু I
আলোটা কিছুক্ষণ হলো নিভিয়ে দিয়েছে মিঠু | ঘরে এখন শুধু দুটি শরীরের মিলনের উষ্ণতা | সঙ্গে মিঠা পানের আসমানী সুবাস...

No comments:

Post a Comment