বিপন্ন অর্ধেক আকাশ
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
পৃথিবীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিপন্ন হচ্ছে অর্ধেক আকাশ। নারী ক্ষমতায়নের শ্লোগানে মুখরিত এই দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে নারী নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনা। অথচ বিজ্ঞানের পরিসংখ্যান বলছে পুরুষ অপেক্ষা নারী অধিক মেধা সম্পন্ন। সূচীশিল্প, গৃহকর্ম থেকে শুরু করে চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে বিমান চালানোর মতো কাজগুলোতেও নারীরা পুরুষ অপেক্ষা বেশি নিপুণতার সাক্ষ্য রেখেছে। অন্যান্য বিশদ পরিসংখ্যানে না গিয়েও কেবলমাত্র একটি তথ্যের দ্বারা বলা যায়, বিশ্বের প্রথম চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটির কর্ণধারই মহিলা বিষয়টি এতটাই একটা গুরুত্বপূর্ণ যে উল্লেখ না করে আর কোনো উপায়ন্তর নেই।
সারা পৃথিবীর চালচিত্র আজ আমাদের হাতের মুঠোর মুঠোফোনে বন্দী। মানুষ এখন মোবাইল ফোনের দাস। এই স্যাটেলাইট ইনভেশনের যুগে মোবাইল ফোনের হাজারো সুফল আমরা উপভোগ করলেও মাত্র কয়েকটি কারণে আমাদের সমাজে "মূল্যবোধ " নামক শব্দটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
মন এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে সব সময় না পাওয়া কে পেতে চায়। আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পেয়ে গেলে সে সাময়িক খুশি হলেও আরও একটি বস্তু প্রাপ্ত করার আশায় উঠে পড়ে লেগে যায়। সীমা হীন এই চাহিদাকে সামনে রেখে বলতে হয়, "স্কাই ইজ দ্যা লিমিট "। সেই সীমাহীন আকাশছোঁয়া চাহিদা নারী সমাজকে বিপথগামী করে তুলছে।
আজকের ভোগবাদী সমাজের প্রথম এবং প্রধান শত্রু পশ্চিমী সভ্যতার অনুকরণ। টেলিভিশন এর স্টাইলে জীবনযাপনে অভ্যস্ত আজকের নারীসমাজকে সামিল করেছে এক ভয়াবহ ইঁদুর দৌড়ের সামনে। যার ফলস্বরূপ সমাজের সামনে নেমে আসছে বিপন্ন দাম্পত্যের নানা ছবি।
সংসদীয় গনতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সরকার গঠিত হয়। দূর্নীতি এবং অপশাসনের ফলে মানুষের মনে ভোট প্রদানের অনীহা জন্ম নিচ্ছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে আমরা যাকে "ম্যান্ডেট" বলি সেটা ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ৩৩ টি মানুষ অর্থের প্রলোভনে এবং মাসলপাওয়ারের ভয়ে এমন এক সরকার উপহার দিচ্ছে, যাঁরা নারীর সুরক্ষা দিতে প্রতি পদে পদে ব্যার্থ হচ্ছে।
সাম্প্রতিক কালে এক মহিলা সাংবাদিক হত্যা, এক মহিলা কবির কোমরের হাড়ের চিকিৎসার পরিবর্তে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর "হিপ রিপ্লেসমেন্ট" এবং জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ার পার্সেন এর শ্লীলতাহানির ঘটনা এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
ছাত্রী অবস্থায় বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে অশ্লীল পোশাক আসাকের দরুন বেড়ে গেছে ধর্ষণের ঘটনা। মুখ থুবড়ে পড়ছে নারী সমাজের একটা অংশ। স্নেহে অন্ধ বাবা-মায়ের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পারিবারিক সমস্যা। ১৯৯৩ সালে কোলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে মহিলা শ্লীলতাহানির ঘটনার সংখ্যা ছিল একটি। এখন দিনে কতগুলি তা তথ্য ও পরিসংখ্যান ঘাটলে বোঝা যাবে।
সাম্প্রতিক কালে নারীর সমানাধিকার এবং ক্ষমতায়ন বেশ লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকসভা, বিধানসভা, পৌরসভা এবং পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থায় আসন সংরক্ষণের মাধ্যমে সেটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত ব্যাবস্থা ও পৌরসভা গুলিতে স্বামীরা তাদের নির্বাচিত স্ত্রী দের কাজে সহায়তা করতে এসে দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও স্বামী দের দূর্নীতির কারণে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যাকে শ্রীঘরবাস করতে হচ্ছে, যা আজকের সমাজে লজ্জার।
কিছু সংখ্যক মেয়েরা মদ্যপান, অশ্লীলতায় ডুবে গিয়ে গোটা নারী জাতির সামনে সংকট সৃষ্টি করছে, যা বন্ধ না হলে আগামী দিনগুলোতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, একথা বলবার অপেক্ষা রাখে না।
No comments:
Post a Comment