মুজনাই
অনলাইন বৈশাখ সংখ্যা ১৪৩১
ক্রোড়পত্র
"মা"--এই বিশ্বের এক পবিত্রতম উচ্চারণ
গৌতমেন্দু নন্দী
মা, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী--স্বর্গের থেকে সুন্দর, পবিত্র। মানবজীবনের অস্তিত্ব,তার বেড়ে ওঠার মূলে বৈজ্ঞানিক সত্য হল গর্ভধারিনীর মাতৃজঠরে শিশুর দীর্ঘ সময়ের সযত্ন লালনোত্তর ভূপৃষ্ঠের বুকে সেই নবজাতকের আলোকিত হওয়া।
সেই নবজাতকের অবচেতনে তার অস্ফুট উচ্চারণ "মা" এর মধ্য দিয়েই রচিত হয় মাতৃরূপী বটবৃক্ষের স্নেহছায়ায় মধুর,পবিত্রের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক--- এক নির্ভরতার সম্পর্ক। যে সম্পর্ক " জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায় ... বিশ্ব ভুবন মাঝে যাহার নেইকো তুলনা...." সেই মাতৃরূপের " ললাটের সিঁদুর নিয়ে ভোরের রবি ওঠে, আলতা পরা পায়ের ছোঁয়ায় রক্ত কমল ফোটে...…"
মাতৃ স্নেহ প্রদীপ হয়ে আমার শিয়রে বেশি দিন জেগে থাকতে পারে নি। কৈশোরেই বঞ্চিত হয়েছি
মাতৃ স্নেহ থেকে। অকাল মাতৃ বিয়োগ বিশ্বকবির জন্ম লগ্নেই। কৈশোরের সেই নিজস্ব অক্ষর উচ্চারণ প্রতিটি পঁচিশে বৈশাখেই এখনও আমার স্মৃতিচারণ--
" .....বিশ্ব মাঝে বিশ্ব কবির জনম শুভক্ষণ
আমার চোখে তখন শুধুই গভীর আঁধার ক্ষণ।
চলছে যখন কবিগুরুর নৃত্য-গীতে বরণ
বদ্ধ ঘরে আমি তখন করছি মা কে স্মরণ।
বাল্য, কৈশোর ,যৌবন--জীবনের প্রান্তে
জীবন-মৃত্যুর দুটি সুর "পঁচিশ"এই পাই শুনতে.."
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথাতেই--------
" যে মটিতে ভর দিয়ে আমি উঠে দাঁড়িয়েছি
আমার দুহাতের দশ আঙ্গুলে তাঁর স্মৃতি।
আমি যা কিছু স্পর্শ করি সেখানেই হে জননী তুমি
আমার হৃদয় বীনা তোমার হাতেই বাজে.....।."
জননী, জন্মভূমি আজ আক্রান্ত, অবহেলিত, অপমানিত। মূল্যবোধহীন, আত্মমগ্নতার কুশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজের বৃহৎ অংশ। কংক্রিট--নগরায়নের "ফ্ল্যাট কালচার"এ নির্বাসিত বয়স্ক, অসুস্থ, সঙ্গীহারা মাতৃ সমাজের বড় অংশ। দশ মাস দশ দিনের গর্ভধারিনী যেমন একাকীত্বের যন্ত্রণা, অবহেলার শিকার তেমনি জননীরূপী এই জন্মভূমির মাটিও আজ তার সন্তানদের লোভ, ক্ষমতা,দম্ভের কারণে কলুষিত, দূষিত এবং রক্তাক্ত।
তাই আজ এই বোধ জাগ্রত হোক এই সমাজ এই সভ্যতায়,এই দেশ এই বিশ্বে এবং উচ্চারণ করি সবাই আজ-------
"...জননী মোর জন্মভূমি তোমার পায়ে নোয়াই মাথা
স্বর্গাদপী গরীয়সী স্বদেশ আমার ভারত মাতা।
তোমার স্নেহ যায় বহে মা শত ধারায় নদীর স্রোতে ঘরে ঘরে সোনার ফসল ছড়িয়ে পড়ে আঁচল হোতে.."
No comments:
Post a Comment