Thursday, May 2, 2024


 

মুনা 

অনলাইন বৈশাখ সংখ্যা ১৪৩১




আশীষ- ওর প্রেম- ও একটা চিঠি
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী

আশীষের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ১৯৬৪ সন থেকে। নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বয়সে সবাই ওষুধ নির্ভর, আশীষও তাই। আশীষের একমাত্র ছেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। একদম কথা বলতে পারে না। চাকরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসে। বিবাহিত, দুটি মিষ্টি কন্যার পিতা। 
আশীষের স্ত্রী শিলিগুড়িতে ছেলের বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বছর চারেক আগে মারা যায়। আশীষ আর ওর স্ত্রীর খিটিমিটি লেগেই থাকত। আমি ওদের বাড়ি গেলেই পরস্পরের অভিযোগ শুনতে হতো। অথচ ওদের প্রেম পর্বে আমি 'নিরালা' রেস্তোরাঁয় বেশ কয়েক বার মোঘলাই পরোটা বা কবিরাজি কাটলেট ওদের সাথে সাঁটিয়েছি। পত্নী বিয়োগের পর ওর পায়ের ব্যাথা বেড়ে যায় বাড়ি থেকে বাইরে খুব কম যেত। প্রায়ই শিলিগুড়িতে ছেলের বাসায় থাকত। একদিন আশীষের ছেলে ফোনে অস্পষ্ট স্বরে  জানাল ওর বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। কিন্তু কোন হাসপাতালে ভর্তি, বলতে পারল না। একদিন জানাল ওর বাবা বাড়ি এসেছে। খুশি হয়ে বললাম' তুই বাবাকে দেখে রাখিস। আর একটু ভাল হলেই তোর বাবাকে নিয়ে জলপাইগুড়ি চলে আসিস'। 
আশীষের ছাত্র জীবন একটা প্রেমের সুবর্ণ উপত্যকা ' এক মালি আউর হাজারো কাঁটেকা ফুল'। প্রবল বর্ণময় আড্ডা ছিল আমাদের স্টেশনের কাছেই একবন্ধুর দোকানের বেঞ্চে। তখন একদল মেয়ে স্টেশন পেরিয়ে আমাদের সামনে দাপিয়ে স্কুলে যেতো। কোনদিন ওদের একজন ছোট্ট মুচকি হাসলে আমরা প্রায় লুটিয়ে পড়ি। হঠাৎ আশীষ বলেছিল 'গতকাল ডোরে আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছে'। ডোরে একটি সুন্দরী মেয়ে নামটিও আশীষের দেওয়া। আমার প্রচন্ড আপত্তি না মেনে আশীষ স্টেশনে চলল ডোরেকে প্রপোজ করতে, আমি পাশেই ছিলাম। আশীষ ডোরেকে বলেছিল ' তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে'। ডোরে অন্যদিকে তাকিয়ে বলেছিল' আপনার সঙ্গে কোন কথা নেই। আর কখনো বিরক্ত করবেন না'। পরে আশীষ চাকরি পেয়ে বাঁকুড়া জেলার খাতরাতে চলে যায়। আমি কলকাতা হয়ে চলে গিয়েছিলাম কাঁচড়াপাড়া। 
আশীষ চিঠি লিখতে ভালবাসতো। অনেক দিন পরে আমি জলপাইগুড়ি ফিরে আসি, আশীষ শিলিগুড়ি। ততদিনে ও একটা সলিড প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ও পরে বিয়ে। 
এমন কালারফুল বন্ধু অসুস্থ অথচ দেখতে  যেতে পারছিনা কোভিডের কারনে। আশীষের ছেলের হঠাৎ ফোন 'বাবা একটু আগে চলে গেল'। কাঁদতে থাকল। বললাম 'আশীষকে জলপাইগুড়ি নিয়ে আয়'। দেহটা এসেছিল সেই আশীষ আসে নাই। শেষ যাত্রায় শোকাহত মনে দাঁড়িয়ে রইলাম। অমন বন্ধু বৎসল বর্ণাঢ্য মানুষ অজানা দেশে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। 
কিছুদিন পর আশীষের লেখা একটা ইনল্যান্ড লেটার পেলাম। বাহুল্য বাদ দিয়ে চিঠিটা রাখলাম এখানে। চিঠিটা বাঁকুড়া  থেকে ১২.০১.১৯৭১ এ আমাকে লেখা। 

"তোকে কতবার বাঁকুড়ায় আসতে বলি তুই আসিস না। এবার দোলের সময় চার দিনের জন্য জলপাইগুড়ি যাব। তুই চলে আয়। আমি পরের বুধবার তোর জন্য শেয়ালদাতে অপেক্ষা করব। আসিস কিন্তু। সুনীলের চিঠিতে জেনেছি গত নভেম্বরে কালীপূজার পরে তুই যখন কাঁচড়াপাড়া ফিরছিলি তখন নাকি ডোরেদের সঙ্গে এক কামরায় ছিলি। ডোরে কি আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিল? 
এখন ডোরের থেকে সুন্দরী একটা মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। নামটা আদ্যিকালের- নয়নতারা। কলেজে পড়ে। একদিন সিনেমায় যাব বলেছিলাম রাজি হয় না। 
তোর কাঁচড়াপাড়া মেসে আসব একদিন। এবার জলপাইগুড়িতে ডোরের সঙ্গে দেখা করবই। 
শুনলাম এ সি কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নাকি ছাত্র পরিষদ দখল করবে। কি যে হবে? 
তুই পরের বুধবার শিয়ালদাতে অবশ্যই আসবি। ভালবাসা ও শুভেচ্ছা জানালাম। "

No comments:

Post a Comment