Friday, May 3, 2024


 

মুনা 

অনলাইন বৈশাখ সংখ্যা ১৪৩১

ক্রোড়পত্র 


চব্বিশ ঘন্টা এক ডায়েরির পাতা 

লীনা রায় 



সেপ্টেম্বর ৪

। দুপুর একটা। 

মায়ের দুপুরের খাবার সময়।  আজকাল মা ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেন না। শোবার ঘরেই খান।নিরামিষ– ডাল,ভাজা,একটা সবজি আর টক দই। ইদানিং আলু সেদ্ধ খুব পছন্দের। আজও সেই এক মেনু। দই দিয়ে ভাত খুব তৃপ্তি করে খান। আজ খাবার শেষে একটু লাউ ঘন্ট চেয়ে নিলেন।

। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা।   

মাকে চা দিলাম। সঙ্গে দুটো ক্রিম ক্র্যাকার। চা হাতে নিয়েই আমার ছেলের ছুটি কবে জিজ্ঞেস করলেন। আজকাল খুব বেশি কথা বলেন না। নির্দিষ্ট কিছু কথা বার বার বলেন।

। রাত সাড়ে আট। 

মাকে রাতের খাবার দিলাম। খুব সামান্য খাবার। সেটাও প্রতিদিন খেতে চান না। জোর করেই দিলাম। রাতে কিছুদিন আগেও রুটি খেতেন। আজকাল সহ্য হচ্ছে না। তাই ডাক্তারের পরামর্শে মুড়ি। আজও মুড়ি,আলু ঝাল ঝাল আলু চচ্চড়ি আর একটা রসগোল্লা। কিছুক্ষন পর মায়ের ঘরে গেলাম। আজ মা ভাল করে কিছুই খাননি। কারণ জিজ্ঞেস করায় বললেন, খিদে নেই। এসি চালিয়ে, লাইট অফ করে,দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে এলাম।

। রাত সাড়ে এগারোটা। 

আমাদের রাতের খাওয়া হয়েছে একটু আগে। সব সেরে মায়ের ঘরে এলাম। মা গভীর ঘুমে। হালকা নাক ডাকার শব্দ পাচ্ছি। এসি অফ করে ফ্যান চালিয়ে দিলাম।


সেপ্টেম্বর ৫


। সকাল সাড়ে-পাঁচটা। 

অভ্যাস মত ঘুম থেকে উঠেছি। রোজকার কিছু কাজ থাকে। সেগুলো করছি। মা আর আমার কর্তা ঘুমে। সাধারণত সাতটার সময় চায়ের জল চাপিয়ে ওদের ডাকি । 


। সকাল সাতটা চল্লিশ। 

আজও মাকে ডাকলাম। চায়ের জল ফুটছে। কিন্তু মা ওঠেননি। ভাবলাম শুনতে পাননি। দরজা খুলে ডাকলাম। মা সাড়া দিলেন না। ঘরে ঢুকে ডাকলাম। উত্তর নেই।  ভয় পেলাম। দৌড়ে ওকে ডেকে আনলাম।

ও এসে মাকে দেখে বলল, ‘মা নেই'।

মা ঘুমিয়ে আছেন। প্রশান্তির ছাপ মুখে। ধবধবে ফর্সা, এক মাথা সাদা চুল.....অপূর্ব সুন্দরী....  

মা নেই। মা চলে গেলেন। মা আছেন?? মা??? 

চলে গেলে মা?

আমাকে একদম একা করে চলে গেলে.....এভাবে!


। দুপুর একটা। 

মাত্র শ্মশানের সব কাজ মিটিয়ে বাড়ি এলাম। আত্মীয় স্বজনে বাড়ি ভর্তি। সবাই আছে

মা?  নেই।

এখন মায়ের দুপুরের খাবার  সময় …..

No comments:

Post a Comment