মুজনাই
অনলাইন বৈশাখ সংখ্যা ১৪৩১
ক্রোড়পত্র
তাঁর জন্যই তো এইসব
সুদীপ দত্ত
একটি নদীর মৃত্যু
দৃশ্যটা এখনও মনে পড়ে খুব। একটি ক্ষীণকায়া নদী। তার পাশে বাঁধান চাতাল । মা শুয়ে আছে সেখানে। কে যেন ঝটপট খুলে নিল মায়ের শাড়িটা। চোখ বুজে ফেললাম। এরকমটাই নাকী নিয়ম। সঙ্গে যাবে না কিছুই। সব বাঁধন খুলতে হবে এখানেই।
একটু পরে বৈদ্যুতিক চুল্লীর মধ্যে শোয়ানো হল মা- কে। এরপর কয়েক হাজার ভোল্টের তড়িৎ প্রবাহ। বোধহয় তখনই মায়ের মুখে আগুন ছুঁইয়ে ছিলাম। অথবা আগে। মনে নেই ঠিক। আবারও চোখ বুজে ফেললাম।
অনেকক্ষণ পর কী যেন। কী যেন ভাসিয়ে ছিলাম সেই ক্ষীণকায়া জলধারায়। শেষ স্মৃতি, শারীরিক।
এই নদীকে নিয়েই কবিতা লেখা হয়! তুলনা করা হয় নারীর সঙ্গে! আমি তাকে অনন্তবার অভিশাপ দিই-- ফিরিয়ে দিয়ে যা সর্বগ্রাসী রাক্ষুসি। তুই মা- কে ফিরিয়ে দিয়ে যা।
অথবা, তোরও মৃত্যু হোক এক ফোঁটা জলের শীতল স্পর্শ ছাড়া।
ছবির মানুষ
বাবার কোনও ছবি ছিল না বলে,
আমি কখনও মায়ের চোখে প্রতিবিম্ব দেখিনি।
অথচ সূর্য মরে গিয়ে, চাঁদ মরে গিয়ে
রাত্রির নিশুত অন্ধকার, মায়ের সারা শরীরে
খেলা করেছে সীলমোহরের যৌনতার মতো।
অথচ আমি তখন স্তন্যপানের জন্যে
অথচ আমি তখন উষ্ণতা আহরণের জন্যে
মায়ের বুকে মুখ রেখে অমৃতের সন্ধান করেছি।
মা কখনও বলেনি যে
আমি কখনও শুনিনি যে
শূণ্য অমৃতকলস শুষ্ক নারীহীন
শূন্য অক্ষিগোলক রামধনু ছবিহীন, তবে
বাবার কোনও ছবি না থাকলেও
ছবিহীন বাবা কত অনায়াসে
ছবির মানুষ হয়ে ছু়ঁয়ে ফেলেছে
এপার ওপার মরে যাওয়া সমস্ত অবয়ব!
No comments:
Post a Comment