পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম
পিতা
প্রীতিলতা চাকী নন্দী
"পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম , পিতাহি পরমং তপ:
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা"।।
একটা বিরাট তপোবনে বটবৃক্ষ যেখানে স্নেহ আবদারে মাখামাখি। আদর্শে লালিত যাপনে কড়া শাসনের গন্ডী কাটা আবার কখনো খেলার সঙ্গী হিসাবে আহ্লাদে আটখানা।যেই জায়গায় শ্রদ্ধায় অবনত থাকি সবসময় গোপনে তুলে রাখা অভিমানের রংমিশালী খুনসুটি আর মাথায় স্নেহের স্পর্শে অনেকটা জীবনী শক্তি বাড়িয়ে দেয়।সেখানে শুধু একটাই নাম---'আমার বাবা' (পিতা)।
বাবা এবং মা একে অন্যের পরিপূরক, বেড়ে উঠেছি বাবার সাহচর্যে। ঘুম থেকে উঠে রাতে একেবারে শোবার আগে পর্যন্ত যেন তাকেই অনুসরণ করে চলা। মায়ের সার্বিক অসুস্থতা, আমাকে লালন -পালন, নিজের কর্ম -জীবন, কর্তব্য, সামাজিকতা কী অসম্ভব ভারসাম্য রক্ষা ছোটো থেকে দেখে এসেছি।কোথাও এতটুকু ক্লান্তি দেখিনি।জীবনের প্রচুর ওঠা পড়ায় কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। আমায় শিখিয়েছেন,জীবনে যত কঠিন বিপদ আসুক না কেন ঠান্ডা মাথায় শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হয়।
বাবার জন্য কলম ধরলে তা থামার নয়। মাথা উচুঁতে রেখে চলতে শেখানোর অপর নাম বাবা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ,আর সুস্থ সুন্দর চেতনার পাঠদানকারী আমার বাবা। অপরের সুখে সুখী,আর অপরের দুঃখে দু:খী হবার বোধ জন্মানোর মূলে আমার বাবা। হিংসে হানাহানির ঊর্ধে থেকে জীবনের জয়গান গাইবার একমাত্র অনুপ্রেরণা যিনি, তিনি বাবা। নিজের দু:খ -জ্বালা-যন্ত্রণা অভাব অনটন মুখ বুজে সহ্য করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর কারিগর হলেন বাবা।
বাবা মানে এক বিশাল অবাক পৃথিবী। যার ছত্রছায়ায় নিশ্চিন্তে সুখ নিদ্রা সম্ভব। কিন্তু সন্তান বড় হলে,যোগ্য হলে বাবা মা কে যথাসম্ভব তাদের প্রাপ্য সম্মানটকু করা বাঞ্ছনীয়। এইটুকুর অন্যথা হয় বলেই অলিতে গলিতে আজ বৃদ্ধাশ্রম। সন্তান মানুষ করার পেছনে তাদের পুরো জীবনটাই উৎসর্গীকৃত----সন্তানেরা যেন দুধে ভাতে থাকে। সর্বোপরি বাবার তুলনা তিনি স্বয়ং।
অল্পেতেই খুশি হন যিনি, চাহিদাহীন সাদামাটা জীবন কাটাতে ব্যস্ত যিনি, সন্তানকে উজার করে দিতে দ্বিধা নেই যার .....তিনিই আমার 'বাবু 'ওরফে 'বাবা। 'বাবা` নামটি ধরে ডাক দিইনি বলে কোনোদিন মনে এতটুকু খেদ ছিলনা। উল্টোদিকে 'বাবু' বলে ডাকটিকেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। একটা সময় ছিল কোনো শক্ত কাজ তার সম্মতি ছাড়া এক পা এগোইনি। সময় বদলে স্থান বদল হয়েছে-----যার শক্তির উপর আমি ভর করেছি আজ তার নির্ভরযোগ্যতার জায়গা হয়তো হয়ে উঠেছি।
কিন্তু সেই অর্থে সফল সন্তান হয়তো হয়ে উঠতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা, আমি মাথা পেতে নিয়েছি। অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেগুলো স্বপ্নই থেকে গেল। এই তো সেদিন একজন পরিচিত লোকের কাছে বৃদ্ধ বয়সে এসেও শুনতে হল .....মাস্টারমশাই, মেয়ে দুটোর চাকরী বাকরি কিছুই তো আর হল না........আড়াল থেকে বাবার মুখখানি দেখেকষ্ট হল, বুকের ভেতর তীর নিক্ষেপ মতো যন্ত্রণা বিদ্ধ হলাম নিজের ওপর বড় রাগ হল।উত্তরে বাবা বললেন .......আমার সাধ্যমত লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করে যোগ্য মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছি, এর থেকে বেশী কিছু আমার হাতে নেই রে..........গোপন চাপা ব্যথা নজর এড়ায়নি। ভালো থাকুক সুখে থাকুক শুধু এইটুকু চাওয়া।
বাবা অর্থে এক পরম শক্তি আর শক্ত হাত। আমৃত্যু বাহুল্য ভরপুর। স্নেহের বাঁধনে জড়ানো সম্পর্ক যাপনে দৃঢ় আর সাবলীল হতে শেখা। ভুল চুকের মাঝেও আশীর্বাদের হাত মাথায় থাকে। শৈশব থেকে আমরণ এক অসামান্য শক্তির উৎস.....যার রসদ অফুরান...যার ঋণ অপরিশোধ্য.....তিনিই পরম পূজনীয় "বাবা।"
তোমাকে সহস্র নমস্কার
No comments:
Post a Comment