মুক্তিতীর্থের পুণ্যতীর্থে
বাবার জীবন আমার শিক্ষা
অলোক কুমার গুহ
বাবা....
দেখতে দেখতে ৪২ বছর হয়ে গেলো তুমি নেই...
ভুলতে পারলাম কই সারাজীবন সংগ্রাম করে আসা মানুষটাকে... ডাক্তার বাবার পুত্র হওয়ার সৌজন্যে যে ছেলেটার আদরে বড় হবার কথা সে কিনা বেছে নিলো দেশোদ্ধারের মতো কঠিন কাজ কে...
অধুনা বাংলাদেশের রংপুর জেলার মাহী গঞ্জে ১৯১৪ খৃষ্টাব্দের ১১ ই নভেম্বর তাঁর জন্ম। রাস পূর্ণিমার দিন জন্ম বলে বাবা মা নাম রাখলেন পূর্ণেন্দু, ডাকনাম ইন্দু। সেখানকার তাজহাট হাই স্কুলে পড়াকালীন জড়িয়ে পরলেন পরাধীন ভারতকে স্বাধীন করার কাজে। কতই বা বয়স হবে তখন ১২ বছর হবে, তখনই বুঝে গিয়েছিলেন আমার দেশে আমরা পরাধীন থাকবো না... পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকলো শৃঙ্খল মুক্ত দেশ গড়ার কাজ।
ঐ বয়সেই নজরে পরেছিলেন বৃটিশ প্রশাসনের । ডাক্তারবাবুর কাছে সমন আসে ছেলেকে নিয়ন্ত্রণে আনার, না হলে বৃটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। পিতা ডা.লাল বিহারী গুহ তখন বড় পুত্র ইন্দুকে পাঠিয়ে দিলেন আসামের ধুবড়ি শহরে। তখন সেখানকার সরকারি জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন পূর্ণেন্দুর জ্যাঠামশাই বঙ্ক বিহারী গুহ। ইন্দু ভর্তি হলেন ক্লাশ নাইনে ১৯৩১ সনে। ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি আবার ফিরে আসেন রংপুরে। ধুবড়িতে পড়াশোনা কালেও তিনি মূল লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। বিভিন্ন স্বদেশী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণে উজ্জীবিত থাকতেন, সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন পরবর্তীকালে হস্তি বিশারদ প্রমথেশ বরুয়া (লালজী) কে। ধুবড়ির প্রতিবেশী অন্নদাপ্রসন্ন গুপ্তর পরিবারে তিনি বড় খোকা বলে পরিচিত ছিলেন। আজ ৯৫ বছর পরেও গুপ্ত এবং গুহ পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন আছে । পরিচয় ছিলো জমিদার বিরাজ দত্ত পরিবারের সঙ্গে যা এখনও অক্ষুণ্ণ । শরীর চর্চা এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিয়মিত পুরস্কৃত হতেন যার কিছু কিছু স্মারক এখনও সে সব দিনের কথা মনে করায় আমাদের।
রংপুরে ফিরে তিনি ভর্তি হলেন কারমাইকেল মহাবিদ্যালয়ে, যে কলেজ কে বলা হতো এদিককার অক্সফোর্ড। পড়াশোনা, খেলাধুলার পাশাপাশি চলতে থাকলো শৃঙ্খল মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে অবিরাম অবিচল কাজ । যুক্ত হলেন সে সময়কার অনুশীলন সমিতির সঙ্গে । সে সময় এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্যে পুলিশের চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়ে ছিল স্বদেশী আন্দোলন অংশ নেওয়া তিনজন ছাত্রকে। পূর্ণেন্দু এবং তার এক সহযোদ্ধা সে প্রস্তাব গ্রহন করেননি বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। একজন অবশ্য সে প্রস্তাব গ্রহন করে পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। রংপুরে তখন ত্রিশ জন মতো যুবক শয়নে-স্বপনে- জাগরণে একই মন্ত্র উচ্চারণ করতেন যার নেতৃত্বে ছিলেন পূর্ণেন্দু শেখর। রংপুরে প্রতিবেশী ছিলেন মানময়ী গার্লস স্কুল খ্যাত প্রথিতযশা লেখক রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, লাল বিহারী গুহর বন্ধু। প্রতিবেশী ছিলেন মগবুল মিয়া, শিবেন মুখার্জি, নাথুলাল প্রমুখেরা।
কর্মকাণ্ড চলাকালীন কখন যে বৃটিশ পুলিশ পিছনে লেগে রয়েছেন সেটা কিশোর মন বুঝতে পারেনি। ফলে যখন কলকাতা থেকে রংপুরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাবার দায়িত্ব দেওয়া হলো, তা গ্রহন করতে একমুহূর্তে রাজী হয়ে কলকাতা চলে গিয়ে অস্ত্র সামগ্রী জোগাড় করেন দুই বন্ধু। ট্রেনে ফেরার পথে রংপুরে নামার আগেই বৃটিশ পুলিশের হাতে বামাল ধরা পরেন। গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। বছর খানেক কেস চলার পর রংপুর অস্ত্র ষড়যন্ত্র মামলায় সাড়ে এগারো বছর এবং ভারত রক্ষা আইনে একবছর, মোট সারে বারো বছর কারাদণ্ড হয়। চিকিৎসক পিতা হাইকোর্ট করেও পুত্রকে নির্দোষ প্রমান করা তো দুরের কথা মেয়াদ কমাতেও পারেন নি৷। ছেলের জেল হবার বছরেই পিতা মাত্র ৫৫ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । বড় পুত্র হয়েও তিনি বাবার পারলৌকিক কাজ করতে পারেননি পূর্ণেন্দু, বৃটিশ পুলিশ প্যারোলে মুক্তি দেয়নি কেননা তিনি জেল বন্দী হয়েও মুখ খোলেন নি। তখন পূর্ণেন্দুর বয়স মাত্র ১৯। রংপুর জেল থেকে ঢাকা জেল হয়ে তাকে আন্দামান সেলুলার জেলে পাঠানো হয়। কারণ তাকে দেওয়া হয়েছিলো দ্বীপান্তর বন্দীর সাজা ।
সেলুলার জেল বন্দী জীবনে শুরু হয় আর এক সংগ্রাম। জেলের ভেতর থেকেই দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করার কাজ। আন্দামানে তাঁর পরিচয় হয় সহবন্দীদের সঙ্গে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অভিযানের দুই অগ্রণী স্বাধীনতা সংগ্রামী গনেশ ঘোষ, অনন্ত সিং এবং অন্যান্যরা হলেন হরিপদ ভট্টাচার্য, দীনেশ বনিক, বঙ্গেশ্বর রায়, হরিবল চক্রবর্তী, হরেকৃষ্ণ কোঙ্গার প্রমুখ। ১৯৩৬ সালে প্রায় সকলেই কমিউনিস্ট কনসলিডেশন যোগদান করেছিলেন। তারপর ১৯৩৭ সালে একযোগে শুরু হলো আমরন অনশন। টানা ৩৬ দিন অনশন চলার পর বৃটিশ প্রশাসন হার মানতে বাধ্য হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় আর কোনও বন্দীকে আন্দামান সেলুলার জেলে আনা হবে না এবং সকল বন্দীদের ভারতের মূল ভূখন্ডে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। শুরু হয় প্রত্যাবর্তন। ১৯৩৮ সালে শেষ ১০৮ জন বন্দীকে নিয়ে যে জাহাজ পোর্ট ব্লেয়ার থেকে রওনা হয় সেখানে ছিলেন আমার বাবা। ফিরিয়ে আনলেও তাঁদের বন্দী জীবন ঘোচেনি, তাদের কে রাখা হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে, যা আজ আলিপুর সেন্ট্রাল জেল মিউজিয়াম হিসেবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আন্দামান সেলুলার জেলকে ১৯৭৯ সাল থেকে জাতীয় মিউজিয়াম হিসেবে ঘোষণা করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই।
আন্দোলন, অনশন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে বন্দী জীবনেও, বিভিন্ন সময়ে মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস প্রমুখরা সহমর্মিতার সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন, কখনও বা সেলুলার জেল আবার কখনো আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে- এভাবেই অতিক্রান্ত হয় ১২ বছরের বেশী সময়। উনিশ বছর বয়সে জেল জীবন শুরু করে ৩১ বছর বয়সে ১৯৪৫ সালের ৮ ই সেপ্টেম্বর বাবা মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু তখনও দেশ মুক্তি লাভ করেনি। মুক্তির সময় আলিপুর সেন্ট্রাল জেল গেটে তখন অপেক্ষামান বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা বিশ্বনাথ মুখার্জি, ছোটভাই সুখেন্দু শেখর গুহ, যাকে বাবা ভানু বলেই ডাকতেন। এরপর তিনি ফিরে আসেন রংপুর পৈতৃক ভিটায়। পিতার অবর্তমানে তখন সেখানে উপস্থিত মা শতদল বাসিনী গুহ, অন্যান্য ভাইবোনেরা। সেখানে শুরু হয় স্কুলে শিক্ষকতার কাজ। ১৯৪৬ সালে রংপুর মুলাটোলবাসী মহেন্দ্র লাল মজুমদার এবং নিতম্বিনী মজুমদারের কন্যা নীলিমা রানীর সঙ্গে পূর্ণেন্দুশেখর বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন।
তারপর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে অর্জিত হয় দেশের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীন হল বটে কিন্তু দু`টুকরো হয়ে গেলো ভারতবর্ষ। ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ি স্টেশন অন্তর্গত ভবদিয়া গ্রাম বাবার পূর্বপুরুষদের ভিটা, বাবা-মার জন্মস্থান রংপুর এক নিমিষে পরদেশ হয়ে গেলো, যা বাবা জীবদ্দশায় মেনে নেননি। ১৯৪৮ সালের কোনও এক রাতে এক কাপড়ে জন্মভিটা ছেড়ে চলে আসেন স্কুলজীবনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বছর কাটানো ধুবড়ি শহরে। ধুবড়িতে ছিলো সেই ম্যাচ কোম্পানি (AMCO) যেখানে বাবার সেজ ভাই অর্ধেন্দু শেখর গুহ, যার ডাক নাম নিধু, আগে থেকেই চাকুরীরত ছিলেন। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে বাবা যোগদান করেছিলেন সেই ম্যাচ কোম্পানিতে ১৯৪৮ সালে। শুরু হয় আর এক সংগ্রামী জীবন- ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন। ১৯৭০ সালে CITU গঠন হবার প্রথম দিন থেকেই তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। হয়েছিলেন আসাম রাজ্য কমিটির সদস্য।
অবসরপ্রাপ্ত হলেও সংগ্রামী জীবনে অবসর নেননি। ১৯৭১ এ বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতে আগত শরনার্থীদের সাহায্য হোক কিংবা ১৯৭৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের ভয়াবহ বন্যার সময় অক্লান্ত বাবাকে দেখেছি সাহায্য তুলতে এবং তা যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দিতে। খেলাধুলার সুবাদে তিনি পরিচিত ছিলেন কোচবিহারে রাজকর্মচারীদের সঙ্গে। তাদের কাছ থেকে খবর নিয়েই ১৯৫৫/৫৬ সালে বাবা কোচবিহার শহরে একটুকরো জমি কিনে বাড়ী বানানো শুরু করেন। আমাদের ভাই-বোনদের জন্ম ধুবড়ি শহরে। কিছুদিন আসামে থাকলেও, ১৯৬০ সনের ১২ আগস্ট থেকে মায়ের তত্ত্বাবধানে আমরা কোচবিহারে বসবাস করতে শুরু করি। বাবা কখনও তেজপুর, কখনও ডিব্রুগড়, কখনও ধুবড়ি থেকে বছরে দু-একবার আসতেন। এমন ভাবেই দিন এগোতে থাকে। আমরা ৬ ভাই বোন বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করছি। ১৯৭০ সালে বাবা আবার বদলি হয়ে এলেন ধুবড়িতে।
ধুবড়ি, কোচবিহার কাছাকাছি শহর হওয়াতে আমাদের সাথে বাবার দেখা হওয়াও আগের থেকে বাড়ল। এর আগে বাবা বিভিন্ন ছুটিছাটায় আমাদের ভাইবোনদের কখনও ডিব্রুগড়,কখনও তেজপুর, তিনশুকিয়ায় নিয়ে গেছেন। এলো দেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী বর্ষ... ১৯৭২... তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তাম্রপত্র প্রদান করে তাঁদের সম্মানিত করেন, বাবার তাম্রপত্র আজও আমাদের বাসায় শোভা বর্ধন করে চলেছে। এই সময় কালেই বাবাকে আমরা বেশী বেশী করে কাছে পেয়েছি। পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের খেলাধুলার খবর নিয়মিত রাখতেন। বাবা নিজে ফুটবল খেলতেন। ১৯৭৭ সালে ধুবড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থা (DSA) বাবাকে প্রাক্তন ক্রীড়াবিদের সম্মাননা জ্ঞাপন করেন।
১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাস বাবা চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন। এক দিদির বিয়ে হয়েছে, তিন ভাই হয় ছাত্র না হয় বেকার। এমতাবস্থায় এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। কিন্তু এখানেও বাবাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। এতটুকু ভেঙে না পরে বরং সৎপথে থেকে উপায় বের করার চেষ্টা করতেন,জীবন বীমার এজেন্সি নিয়ে ছিলেন, কিন্তু লড়াই যার মজ্জাগত, তাকে কে থামাবে ? সেখানেও তিনি এজেন্ট এসোসিয়েশন গঠন করে তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখেছি। সৎপথে ব্যবসা করতে গিয়ে লোকসানের সম্মুখীন হলেও, দৃঢ় ভাবে স্থির মস্তিষ্কে সংসার ধর্ম পালন করে চলেছিলেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলে অশোক যে হরো নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে, খেলছেন কোচবিহার জেলা দলের হয়েও, তার চাকরি হয় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থায়। শুরুতে ডেইলি ওয়েজে ১৯৮১ সাল নাগাদ। খেলেছেন সংস্থার হয়েও। বাবা বড় ছেলের চাকুরির খবরে যারপরনাই আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ চোখে পরেনি। ছন্দপতন ঘটল ১৯৮২ সালে। ছোট কন্যা যে সুনীতি একাডেমী এবং এ বি এন শীল কলেজে পড়াশোনা সদ্য শেষ করে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সে স্বল্প রোগ ভোগের পর ফেব্রুয়ারী মাসে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করল। না ভেঙে পরতে সেদিনও দেখিনি বাবাকে,বরং সবাই কে সামলেছেন,
কিন্তু সত্যিই কি তাই ? ভিতরে ভিতরে দুমড়ে মুচড়ে যাননি তিনি ? বুঝতে পারিনি আমরা কেউই... আগের মতোই স্বাভাবিক থেকে মাকে, আমাদেরকে ছন্দে ফিরিয়ে আনলেও বাবা নিজে আর পারেননি। সে বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখে বাবা সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তিনদিন যমে মানুষে টানাটানির পর ৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বাবা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
এবার বর্তমান প্রসঙ্গে কিছু কথা। বাবার জন্ম শতবর্ষ পূর্তি পালন করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ২০১৪ র ১১ নভেম্বর পর্যন্ত কোচবিহারের বিশিষ্ট জনেদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বর্ষ ব্যাপি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রক্তদান শিবির, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছিল। এই উপলক্ষে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপককে স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু শেখর গুহ মেমোরিয়াল স্বর্ণ পদক তুলে দেবার লক্ষ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে ১০০০০০/- (এক লক্ষ টাকা) অনুদান রাশি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেওয়া হয়। শতবর্ষের সাল ২০১৪ থেকে এই পদক কনভোকেশনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে সঙ্গে প্রশংসা পত্রও।
এখন তাঁর নাতি পিনাকী হরিয়ানায়, নাতনি পারিজাত পরিবার সহ ব্যাঙ্গালুরুতে, আর এক নাতনি অনামিকা স্বামী সহ জলপাইগুড়িতে রয়েছে। তারাও তাদের দাদু / ঠাকুর দাদার গর্বে গর্বিত হয়ে জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাবার জীবন কথা ছাপা হলেও, গত জুলাই ২০২৩ এককভাবে বাবার জীবনীগ্রন্থ সঙ্কলন "পূর্ণেন্দু শেখর গুহ -একটি অধ্যায়" প্রকাশিত হয়েছে। নীলাদ্রি দেব সুচারু রুপে এই কাজটি সম্পাদনা করেছেন। তাঁকে এ ব্যাপারে অনেকেই সাহায্য করলেও যাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন শৌভিক রায়, কল্যাণময় দাস, ড.সুরজিত ধর এবং দিব্যেন্দু ভৌমিক।
আজ প্রায় ৪২ বছর পর তাঁর মূল্যায়ন করা মুশকিল। ইতিমধ্যে মা প্রয়াত হয়েছেন। তারও আগে চলে গেছেন দাদা হরো....
একদিন সবাইকেই মাটি ছাড়তে হবে জানি, কিন্তু বাবা দৃঢ়ভাবে শিখিয়ে গেছেন কীভাবে কঠিন সময় অতিক্রম করতে হয় মাথা উঁচু করে.... সেটুকু পাথেয় করেই আগামী যে কটা দিন পাবো, তাঁর শিক্ষা নিয়েই চলবো...
No comments:
Post a Comment