Tuesday, March 4, 2025


 

মুনা 

অনলাইন ফাল্গুন  সংখ্যা ১৪৩১


সম্পাদকের কথা 

কবি বলেছিলেন, If winter comes can Spring be far behind? যেহেতু প্রশ্নটি হ্যাঁ-বাচক, উত্তরটি `না` হয়। অর্থাৎ বসন্ত দূরে থাকতে পারে না। কবির দুর্ভাগ্য, তাঁর জীবনকালে কাঙ্খিত বসন্ত আসেনি। আসলে, আমাদের কারও জীবনেই বসন্ত বোধহয় আসে না! আসে না বলেই এই দেশে পিষ্ট হয় সাধারণ মানুষ, তা সে অন্যের পায়ের তলায় পড়েই হোক কিংবা গাড়ির চাকায়! অথচ একটু শান্তির আশায়, ভাল থাকবার আশায় হাজার মাইল পাড়ি দিয়েও আমজনতা খোঁজে অধরা অমৃত। তবু বসন্ত আসে না। এক এক সময় মনে হয় কবিরা কি আদৌ সত্য দেখেন? সেই কবে উপনিষেদের কবি বলেছেন, `দুখানি চ, সুখানি চ চক্রবৎ পরিবর্তনে`।  আরও কয়েক হাজার বছর পেরিয়ে বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিও বলেছেন, `মেঘ দেখে কেউ করিস না ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে`। কিন্তু কোথায় আসে সুখ? কোথায় হাসে সূর্য? যত দিন যায়, যন্ত্রণাবিদ্ধ হয় মানুষ। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি আজ এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে যে বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে সব কিছু থেকেই যেন! তাই ঋতু পরিবর্তনে বসন্ত দেখা দিলেও, বসন্ত  আসে না.......


মুনা 

অনলাইন ফাল্গুন  সংখ্যা ১৪৩১



রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020

হসপিটাল রোড 

কোচবিহার 

৭৩৬১০১

ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com 

প্রকাশক- রীনা সাহা  

সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়


এই সংখ্যায় আছেন যাঁরা


   পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিতা নাগ, বটু কৃষ্ণ হালদার,

শুভেন্দু নন্দী, মিষ্টু সরকার,  মাথুর দাস, 

 নির্মাল্য ঘোষ, চিত্র পাল, অমিতাভ চক্রবর্তী, 

তন্ময় ধরে, অভিজিৎ সেন, প্রাণেশ পাল, 

মহঃ সানোয়ার, আশুতোষ বর্মন, প্রতিভা পাল, 

আকাশলীনা ঢোল, অর্পিতা রায় আসোয়ার,  জয়তী ব্যানার্জী,  

 অর্পিতা মুখার্জী, নূপুর রায়, মজনু মিয়া,

মহসিন আলম মুহিন, চিত্রাক্ষী রায়


মুজনাই অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪৩১


        


 

ও আমার মাতৃভাষা, সোনা রোদের গান

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

 কবি  লিখেছেন  মায়ের ভাষা  সোনা  রোদের মতোই  উপভোগ্য  একটি  বিষয়।  একটি শিশু জন্মানোর পর " মা " একটা শব্দ আপনা আপনি শিখে যায়। ধীরে ধীরে  সে সব কথা  শিখে যায়, যার  বেশিটাই অনুকরণে এবং মা-বাবা, আত্মীয় -পরিজনের  প্রচেষ্টায়।  কবিগুরু  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, " শিক্ষায় মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান "।

জলপাইগুড়ি  জেলায় ৩৮  টি জনজাতির  মানুষ বসবাস  করেন।    এই ৩৮ টি  জনগোষ্ঠীর ভাষা বা ডায়ালেক্ট  ও আলাদা আলাদা,  আবার একটি মাতৃভাষার  কথ্য  রূপও  (Dialect)   এলাকা বিশেষে  আলাদা।  বোড়ো এবং  রাজবংশী ভাষায় ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি খুব বেশী করে  প্রত্যক্ষ করি।  চা  বলয়ে  বিপুল  সংখ্যক  মানুষ সাদরি ভাষায় কথা বলেন।

বাংলা এবং বাঙালির জয়যাত্রা সমানেই অব্যাহত আছে।  একটা ছোট বিষয়ের ওপর আলোকপাত করলে বিষয়টা  কিছুটা হলেও পরিস্কার হবে। পশ্চিমবঙ্গে CBSC স্কুলের সংখ্যা ২৬০, হিন্দি মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা ৯৯৮ টি, ICSC স্কুলের সংখ্যা যেখানে ৩৫৩১ টি, সেখানে বাংলা মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা  ৬১২৯ টি। 
যে সকল ছাত্রছাত্রী ইংরেজি বা হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা করে তারা বাংলা ভাষাকে পছন্দ করে না, বাংলা ভাষায় কথা বলে না বা রবীন্দ্র সংগীত গায় না, শোনে না বা পছন্দ করে না, এমনটা একেবারেই  নয়। তবে আশংকা এবং উদবেগের বিষয় যেটা, তা হ'ল বাংলা ভাষার ভুল বানান লেখা, ভুল উচ্চারণ এবং বিকৃত ভাবে পরিবেশন করা।  অপশব্দের ক্রমাগত বাড়বাড়ন্ত এবং প্রয়োগ। 
বাংলা ভাষার ধ্রুপদী সম্মানের জন্য বর্তমানে সারা দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে।  আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সমিতির এদেশ, বাংলাদেশ এবং বিদেশের সব শাখাগুলো এই দাবীতে সোচ্চার হয়েছেন। বর্তমানে সংস্কৃত, তামিল, তেলেগু, কান্নাড়ি মালায়ালাম ও ওড়িশি ভাষা এই ধ্রুপদী ভাষার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। বাংলা ভাষাকে প্রমাণ করতে হবে যে সে দেড় হাজার বছরের পুরনো ভাষা।
সর্বশেষ সংযোজিত ভাষা ওড়িশি ভাষা ও  বাংলা ভাষার মতো মূল প্রাকৃত ভাষা থেকেই জন্ম নিয়েছে।
বাংলা ভাষা ধ্রুপদী সম্মান পেলে  এই মিষ্টি  ভাষাটি ভারতীয় সব বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে বাংলা ভাষার বিভাগ সৃষ্টি হবে। আমরা বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হব।

বাংলা ভাষাকে আরও জনপ্রিয় করতে আমাদের সকলকে আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে। কথায় বলে,  " পরিবর্তন ঘর থেকেই শুরু হয়।" আমরা প্রত্যেকে যদি নিজেদের বাড়ীর নাম,  নামের ফলক, গাড়ীর নম্বর ফলক, চিঠির বাক্সের ওপর লেখা ঠিকানা, দোকানের সাইনবোর্ডে,  বাংলায় লিখি তা হলে গোটা রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরেও বাংলা ভাষার প্রসার ঘটবে।

সাম্প্রতিক  কালে UNESCO  বাংলা ভাষা কে বিশ্বের  মধুরতম  ভাষা  হিসেবে  আখ্যায়িত করেছেন।   এক কথায়  আমরা  খুশি কিন্তু কোনো  একটি  জনগোষ্ঠীর  মানুষের  সাথে দীর্ঘদিন বসবাস করলে এ কথা বোঝা যায়  তাদের মাতৃভাষাও খুবই মিষ্টি।  সাদরি এবং রাজবংশী মানুষের সাথে দীর্ঘদিন থাকবার পর  আমি  নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে এই দুটি ভাষাকে হিন্দি, পাঞ্জাবি, অসমীয়া ভাষার মতোই বলবার চেষ্টা  করি,শুধুমাত্র সেই  ভাষার মিষ্টতার কারণে। 

 SSK এবং MSK এর শিক্ষক শিক্ষিকারা সেই জনগোষ্ঠীভুক্ত হলে বা একই ভাষাভাষীর মানুষ হলে প্রাথমিক এবং প্রাক প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা ব্যবস্থার আরও প্রসারিত হবে।

ত্রিপুরা সরকার ৯০ হাজার জনগণের ভাষা " বিষ্ণুপুরী মনিপুরী " ভাষার মাধ্যমে  সেই রাজ্যের প্রাথমিক স্তরে পঠন পাঠনের ব্যাবস্থা করলেও,  আমাদের রাজ্যের দীর্ঘ দিনের  দাবি  রাজবংশী ভাষাকে অষ্টম তপশিলে স্থান দেন নি।  তবে এটা আশার বিষয় সরকারি বদান্যতা ছাড়াও মিষ্টি রাজবংশী ভাষায় অসংখ্য কবিতা প্রবন্ধ এবং উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। আগামী দিন গুলোতে কুরুক, সাদরি, বোড়ো, টোটো, মেচ, রাভা প্রতিটি ভাষায় গান কবিতা সরকারি মান্যতার সাথে সাথে জনপ্রিয়তা লাভ করবে আশাকরি।

এছাড়াও বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্তরে উন্নতিকরন নিয়ে আবেদন নিবেদনে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সাড়া দিয়েছেন, যেটা আজকের দিনে অত্যান্ত আনন্দের বিষয়। সাম্প্রতিক কালে ইংল্যান্ড এ বাংলা ভাষা কে সেই দেশের দ্বিতীয় ভাষার স্থান দিয়েছেন, এটা খুবই ভালো লাগা একটা বিষয়।


 

রঙ লাগালে বনে বনে

অনিতা নাগ 



দুপুর বেলার দুটো ঘন্টা একেবারে নিজের মতো করে কাটায় অনামিকা। হেরফের হয়না তা নয়। সে’দিন একটা প্রজাপতি বারবার জানলায় এসে বসছে। কি সুন্দর রঙীন তার পাখা। কি যেনো বলছে কানে, কানে! এই মেয়ে বেড়াতে যাবি তোর ছোটবেলায়? চল না চল। সেখানে মনের পাখনা মেলে যতো ইচ্ছে ঘুরে বেড়াস। এমন সুযোগ কি ছাড়া যায়! গাছের পাতায় তখন বিষন্ন রোদের মাখামাখি। অনামিকা প্রজাপতির পাখায় ভর করে মনকে নিয়ে ছুট লাগালো ছোটবেলায়। ঐ যেখানে দুপুরে ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে সন্তর্পনে বারান্দায় বেড়িয়ে আসতো, সেইখানে। পাড়ার দাদারা এ'খান ওখান থেকে ডালপালা, শুকনো কাঠ সব এনে জড়ো করে রেখেছে। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে সকলে মিলে ন্যাড়াপোড়া বানাবে।কোন পাড়ার ন্যাড়াপোড়ার আগুন বেশী দূর যাবে তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলে। সেসব দিয়ে একটা বড় কিছু বানিয়ে মাটির হাঁড়িতে মুখ চোখ এঁকে একটা বিশালাকায় কিছু বানানো হতো। রাতে, পাড়ার সকলের কাজকর্ম সারা হলে,ন্যাড়াপোড়ায় আগুন দেওয়া হতো। আকাশে তখন চাঁদের আলোর লুটোপুটি। আর সকলে মিলে গেয়ে উঠতো ‘আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া, কাল আমাদের দোল,পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বলো হরিবোল’। কি আনন্দ, কি আনন্দ। তখন হোলিকা দহনের গল্প জানা ছিলো না। মা বলতেন চারদিকের শুকনো গাছের ডালপালা যেমন পরিস্কার হতো, তেমনি এই তাপে মশা, পোকা সব কমে যেতো। হয়তো তাই হতো। পরের দিন দোল। অনামিকাও রঙ খেলতো সকলের সাথে। সবার আগে ঠাকুরের পায়ে আবির দেওয়া, তারপর বাড়ীর সকলের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করা। তারপর পেতলের পিচকারিতে রঙ ভরে দাঁড়িয়ে থাকতো। নিজেরাই ভিজে একশা হতো। দাদাদের তো চিনতেই পারতো না। বাঁদরে রঙ মেখে ভূত সেজে ঘুরতো সব। মন উড়ে চলে, এ'ঘর, ও'ঘর, স্মৃতির অলিন্দে।

দোল বললেই উজ্জ্বল সব রঙ, রাশি রাশি আনন্দ। মালপো, প্যারাকি, নানান মিষ্টি। গোপাল, কৃষ্ণ ঠাকুর, দাদু ঠাকুমা, বাবা, মা, বন্ধু, নানান টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ কেমন আনমনা করে। উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় ঠাকুর ঘর থেকে ভেসে আসে পাঁচালির সুর ‘দোল পূর্ণিমার নিশি, নির্মল আকাশ, মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় বাতাস’। পূজো শেষ হলে প্রসাদ। তখন ক'দিন প্রসাদে মঠ, ফুটকড়াই, মুড়কি। কি যে প্রিয় ছিলো! সক্কলে খেতো। এতো স্বাস্থ্য সচেতনতার বালাই ছিলো না। দোলের ক'দিন আগে থেকেই তো হৈহৈ। দোলের সন্ধ্যেবেলায় পাড়ার এক সাহিত্যচর্চার আসরে দাদা নিয়ে যেতো। কতো নাচ, গান, আবৃত্তি। তারপর রাতের খাওয়ায় গোটা একটা ডিম থাকতো। পাতে গোটা একটা ডিম পাওয়ার কি যে আনন্দ ছিলো! অনামিকা চোখ বন্ধ করে প্রজাপতির পাখায় ঘুরে বেড়ায়। এঘর, ওঘর, অলিন্দ পেরিয়ে উঠোন, ছাদ। ঐ যে পুরোনো জামা বার করে কেচে দিয়েছেন মা। দোলের দিন ঐ জামা পড়ে রঙ খেলবে। তখন পলাশ, শিমুল ছবিতেই দেখেছে। ঐ নিয়ে মাথাব্যথা ছিলো না। স্কুল পেরিয়ে কলেজ। কলেজে বসন্ত উৎসবে বড় আনন্দ হতো। সবাই মিলে সে’এক অপূর্ব উদযাপন! হঠাৎ মুঠোফোনের টুংটাং শব্দে রঙিন প্রজাপতিটা কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো! মনের দরজা পেরিয়ে আনমনা অনামিকা বাস্তবে ফেরে। চোখ আটকে যায় ক্যালেনডারের পাতায়। আর ক’দিন পরই দোল। এখন দোল যতো না পালিত হয়, হোলির রমরমা তার থেকে বেশী। বিভিন্ন প্যাকেজে আজকাল দোলের উৎসব হয়। কতো চাকচিক্য, কতো কালার কোড, ড্রেস কোড। কতো রঙের বাহার। হার্বাল রঙ, হার্বাল আবির। তখন সে’সবের বালাই ছিলো না।




বসন্তে প্রকৃতিও আপন রঙে সেজে উঠে। শিমুল, পলাশ, অশোকে, কিংশুকে কতো রঙ আর রূপের বাহার। ব্যাস্ত তিলোত্তমার আনাচে কানাচে মুঠো মুঠো লাল, হলুূূদ,কমলা রঙ কেমন যেনো নেশা ধরায়। অনামিকার বাস যেখানে সেই আবাসনে শিমুল আর রুদ্রপলাশের রঙের কতো বাহার। গাছের তলায় লাল রঙের লুটোপুটি। আপন নিয়মে সে ফোটে আবার ঝরে যায়। রঙের নেশায় মন হারিয়ে যায়। দূর থেকে একটা সুর ভেসে আসে ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও, যাও, যাও গো এবার যাবার আগে’। সারাজীবন ঐ রঙ টুকুই তো আগলে রাখার চেষ্টা। শ্রীকৃষ্ণ দোল পূর্ণিমায় শ্রীরাধিকাকে প্রথম রঙ দিয়েছিলেন। তারপর সখী সহ কৃষ্ণ-রাধার রঙ খেলা। এ'রঙ প্রেমের রঙ, সমর্পণের রঙ। সেই প্রেম, সেই সমর্পন আজো বৃন্দাবনে গুঞ্জরিত হয়। দোল উৎসবে মেতে উঠেন আপামর বৃন্দাবনবাসী। দোল ফাগুনের এই রঙ তো শুধু রঙ নয়। এই রঙ ভালোবাসার, বিশ্বাসের, সৌহার্দ্যের। অনামিকাদের আবাসনেও হোলিকা দহন হয়। আধুনিকতার বেড়াজালে সাজানো একটা স্ট্রাকচর, নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে। চাঁদের আলোয় হোলিকা দহন হয়। অশুভের বিনাস হোক, এই প্রার্থণা। যুগ পাল্টায়। যুগের সাথে পাল্টে যায় জীবন বোধ, তার উপস্থাপনা। অনামিকা ভাবে তবু বেঁচে থাকুক আমাদের সংস্কৃতি। এই নবীনদের হাতেই তো আগামী দিন এগিয়ে চলবে। তাদের দিন তো ফুরিয়ে এলো। খেলা ভাঙার খেলা চলছে। কবে হঠাৎ সুখের বাসা ফেলে যাওয়ার ডাক আসবে জানা নেই। তার আগে নিত্য নিজেকে ভরিয়ে নেওয়া। রঙ ছড়িয়ে আছে জীবনের প্রতিটি পাতায়। রোজকার যাপনে না পাওয়ার পাল্লাকে ছাপিয়ে উঠুক পাওয়ার আনন্দ। তখন আর চারপাশটা কালো লাগবে না। সেই আলোয় নিত্য পূর্ণ হয়ে উঠা। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায়, চুলে যখন রূপোলী ঝিলিক, অনামিকা তখনও নিত্য রঙ খুঁজে বেড়ায়। পথে ঘাটে, গাছের পাতায়, টবের ফুলে, নিত্য যাপনে। সব রঙ মিলে-মিশে কেমন এক আশ্চর্য্য মায়াময়তা। নিজের মনেই গুনগুন করে অনামিকা ‘রঙ যেনো মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে,সন্ধ্যাদীপের আগায় লাগে, গভীর রাতের জাগায় লাগে’। এখন তো আপনি আর কোপনি। চিরাচরিত প্রথায় ঠাকুরের চরণে রঙের অর্ঘ্য দেওয়া। তারপর প্রিয়জনদের ছবিতে প্রণাম। সকলের আজ সুদূরে বাস। নাগাল পাওয়ার জো নেই। ছেলে, মেয়ে জামাই, নাতি সব প্রবাসে। ভিডিও কলে উৎসব যাপন। বুড়োবুড়ি নিজেরাই নিজেদের রাঙিয়ে নেয়। সে'দিন পূজোর নৈবেদ্যে ফুটকড়াই, মুড়কি,মঠ। অনামিকা আগলে রাখে পরম্পরাকে, তার ভালোলাগাকে, জীবনের রঙকে সামলে রাখে পরম আদরে আর সোহাগে। মনে মনে গুনগুন করে  
‘ কে, রঙ লাগালে বনে বনে,ঢেউ জাগালে সমীরণে।
   আজ ভূবনের দুয়ার খোলা দোল দিয়েছে বনের দোলা
            দে দোল! দে দোল! দে দোল!’।

ছবি- লেখক 


 

শিমুল পলাশের আগুন ঝরানো বাহার দেখিয়ে হৃদয় নেচে ওঠে
বটু কৃষ্ণ হালদার

আমাদের ভারত বর্ষ এক ঋতু বৈচিত্র্যময় দেশ। ৬ টি ঋতুর সমাহারে ভারতবর্ষকে বিশ্বের দরবারে শস্য-শ্যামলা করে তুলেছে। ভারত বর্ষ শুধু ঋতু সমাহার দেশ নয়, ভিন্ন ভাষা সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র বটে। তাই ভারতবর্ষে প্রতিনিয়ত কোন না কোন সংস্কৃতি উৎসব লেগেই থাকে।তেমনি এই ভারতের এক অন্যতম জনপ্রিয় লোকো উৎসব হলো দোল।বিভিন্ন রাজ্যে এই জনপ্রিয় লোক উৎসব ভিন্ন নামে পালিত হয়।তবে বাংলায় এই উৎসব হোলি উৎসব নামে পালিত হয়।যাকে পাতি বাংলা ভাষায় বলা হয় বসন্ত উৎসব।এই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে গ্রাম বাংলার মানুষদের নাড়ির সম্পর্ক।বসন্ত উৎসব হলো বাঙ্গালীদের প্রাণের উৎসব। এ সময় বনময় নতুন বৃন্তে আচ্ছাদিত হয়ে সবুজ সতেজ হয়ে উঠে। কোকিলের মন মাতানো কুহু কন্ঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ।বসন্তের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে উৎসব মুখরিত বাঙালির হৃদয়।বসন্ত মানেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন। নতুন বর্ণে সেজে ওঠে শান্তিনিকেতন। তাই হোলি বা বসন্ত উৎসব শুধু পশ্চিমবাংলা বা ভারতবর্ষ নয় বিশ্বের বহু মানুষ এই উৎসবের টানে ভারতবর্ষের মাটিতে পা রাখেন যা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ কখন রঙের খেলা চালু করেছিলেন, তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু শান্তিনিকেতনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ যে বসন্তোৎসব চালু করেছিলেন, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। ১৯২৫ সালে প্রথম পথ চলা শুরু হয় এই বসন্ত উৎসবের। উৎসবের মূল সুর যেন তখন থেকেই বেঁধে দেওয়া হয়ে গিয়েছিল।
বসন্ত উৎসবের একদম প্রাচীনতম রুপ প্রোথিত আছে দোলযাত্রার মাঝে। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় দোলযাত্রা।এর প্রাণকেন্দ্রে থাকেন রাধা-কৃষ্ণ। তাদেরকে দোলায় বসিয়ে পূজা করা হয়। উত্তর ভারতে যেটিকে বলা হয় হোলি, বাংলায় সেটিই পরিচিত দোল হিসেবে।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন আর্য জাতির হাত ধরে এই উৎসবের জন্ম। খ্রিস্টের জন্মেরও বেশ কয়েকশো বছর আগে থেকে উদযাপিত হয়ে আসছে এই উৎসবটি। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাথরের উপর খোদাই করা এক পাথরে পাওয়া গেছে এই উৎসবের নমুনা। এছাড়া হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ বেদ ও পুরাণেও রয়েছে এই উৎসবের উল্লেখ।
এছাড়াও এই উৎসবের ফিরিস্তি রয়েছে আরো বহু জায়গায়। তৃতীয়-চতুর্থ শতকে বাৎস্যায়ন রচনা করেছিলেন তার জগদ্বিখ্যাত 'কামসূত্র'। সেখানে দেখা যায় দোলায় বসে নর-নারীর আমোদ-প্রমোদের বিবরণ। সপ্তম শতকের দিকে রাজা হর্ষবর্ধনের শাসনামলে সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছিল একটি প্রেমের নাটিকা, সেখানেও ছিল হোলির বর্ণনা। সপ্তম শতকে রচিত শ্রীকৃষ্ণের 'রত্নাবলী' এবং অষ্টম শতকের 'মালতী-মাধব' - এই দুই নাটকেও দেখা মেলে এই উৎসবের। তালিকা থেকে বাদ দেয়া যাবে না জীমূতবাহনের 'কালবিবেক' ও ষোড়শ শতকের 'রঘুনন্দন' গ্রন্থের কথাও। পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষজুড়ে অনেক মন্দিরের গায়েও হোলি খেলার নমুনা বিভিন্নভাবে ফুটে উঠতে দেখা যায়।প্রথমদিকে ভারতবর্ষে এসে ইংরেজরা এই উৎসবকে রোমান উৎসব 'ল্যুপেরক্যালিয়া'র সাথে গুলিয়ে ফেলেছিল। অনেকেই আবার একে গ্রিকদের উৎসব 'ব্যাকানালিয়া'র সাথেও তুলনা করত।
কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।পহেলা বৈশাখের পর অন্যতম জনপ্রিয় লোক উৎসব হলো দোল উৎসব। নীল সাদা মেঘের ভেলা ও দখিনা বাতাসের তালে তালে কাশফুলের মাথা দোলালো যেমন জানান দেয় ঘরের মেয়ে উমার আগমন ঘটতে চলেছে। ঠিক তেমনই ,পলাশ,শিমুল, কৃষ্ণচূড়া কেশর উঁচিয়ে জানান দেয় বসন্ত এসে গেছে। এই বসন্তের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। পরিবেশ যেমন রঙিন হয়ে ওঠে তেমনি রঙিন হয়ে ওঠে প্রেমিক-প্রেমিকাদের হৃদয়। তাই বসন্ত কাল হলো ভালবাসার মাস।
এ সময় বহু প্রেমিক-প্রেমিকাদের হৃদয়ে আকুতির দুয়ার খুলে যায়। প্রেমিকের বুকে প্রেমিকা মাথা রেখে স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে থাকে।
এসময় তরতাজা হয়ে ওঠে আমাদের শৈশব। আমাদের শৈশবে দোল খেলা ছিল একটু অন্যরকম।কারণ আমার শৈশব কেটেছে সুন্দর বনের এক প্রত্যন্ত গ্রামে।গ্রামের নাম গোসাবা ব্লকের পাঠান খালি নামক জায়গার কামার পাড়া গ্রামে। গ্রামের মানুষ জন মাটির সাথে মিশে গিয়ে উৎসব পালন করেন।তখন আমাদের কাছে টাকা পয়সা ছিল না কিন্তু অনাবিল সুখের ঢেউ উপছে পড়ত সহজ সরল জীবনে। দোল উৎসবের আগের দিন গ্রামে ন্যাড়াপোড়া চালু আছে। যুগ যুগ ধরে বাংলার মানুষ এই সংস্কৃতিকে বহন করে চলেছে।অশুভকে বিনাশ করে শুভ শক্তির জয় উদযাপনই হোলি উৎসব। রঙের পাশাপাশি তাই ন্যাড়া পোড়াকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। যা নিয়ে বাংলায় মজার ছড়াও প্রচলিত:_"'আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল হরি বোল।" হোলির একদিন আগে অনুষ্ঠিত হয় হলিকা দহন। তার জন্য আগে থেকে শুকনো ডাল, কাঠ এবং শুকনো পাতা জোগাড় করা হত।বিশেষ করে মাঠে গিয়ে নাড়া জোগাড় করা হতো ( কাস্তে দিয়ে মাঠে ধান কাটার পর যে অবশিষ্ট অংশ মাটির উপরে থাকত তাকে নাড়া বলা হয়)।
তারপরে ফাগুন পূর্ণিমার সন্ধ্যায় গাছের শুকনো পাতার ডাল নাড়া সহ এক জায়গায় জড়ো করে পোড়ানো হত ।সেই আগুনে গ্রামের বিভিন্ন বাগান থেকে চুরি করে আনা আলু,বেগুন,টমেটো,মিষ্টি আলু,খাম আলুর ফল ইত্যাদি ইত্যাদি  পোড়ানো হতো। আগুন নিভে যাওয়ার পর সেগুলোকে বের করে মহা উল্লাসে খাওয়া হত। হাত দিয়ে সেই ফল বের করতে গিয়ে অনেকের হাত পুড়ে যেত। তবুও সেগুলোর মধ্যে ছিল মহা আনন্দের ঢেউ।
এই দহন অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক।
তখন কার সময়ে গ্রাম বাংলার জনগণ বাজার দিয়ে কেনা পিচকারি আনা হতো না।দোল উৎসব এর কয়েক দিন আগে পিচকারীর বানানোর জন্য বাড়ির গুরুজন রা বাঁশ কেটে জলে ফেলে রাখতেন।তার পর দোলের দিন সেই বাঁশ জল থেকে তুলে সুন্দর করে পিচকারি বানিয়ে দিতেন।রং বলতে বাজার দিয়ে ১/২ টাকা দিয়ে আবির কেনা হতো।সেই রং বালতি করে গুলে তার সাথে জবা ফুল বেটে মিশিয়ে নেওয়া হতো।রং ফুরিয়ে গেলে কাদা জল গুলে দোল উৎসব পালন করা হতো। রঙ ও কাদা জল মেখে এমন অবস্থা হতো কেউ কাউকে চিনতে পারতো না। রং খেলার পরে শুরু হতো জল স্নান।পুকুরে নেমে সাবান দিয়ে রং তুলতে তুলতে নাজেহাল হয়ে যেতাম। অনেকের সেই রঙের দাগ চোখে মুখের সাথেই হৃদয়ে লেগে যেত।তার পর চলত বাঙালির খাওয়া দাওয়া।আমরা সবাই জানি বাঙালি খাদ্য রসিক।নানান বাঙালি পদ রান্নার সুগন্ধে পরিবেশ ভরে যেত।গ্রামের মানুষ গ্রামে ফিরে আসেন।আবার কারো বাড়িতে আসেন অতিথি,আত্মীয়।সারাদিন সারারাত হৈ-হুল্লোড় গল্প আড্ডায় মজায় দিন কাটতো।
বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতার পাল্লা বেড়ে চলেছে। সময় কাঁধের উপর ফেলছে দীর্ঘশ্বাস। একে অন্যের কাঁধে পা রেখে আকাশ ছুঁয়ে ফেলার প্রয়াস। প্রতিযোগিতার ভারে ঝুঁকে গেছে বিবর্ণ মুখ। বাংলার কর্মচ্যুত,শিক্ষিত,বেকার,যুবকরা হয়ে পড়ছে পরিযায়ী শ্রমিক। তাই এই সময়কে লাগাম দিতে গিয়ে মানুষ ভুলে যাচ্ছে উৎসব আনন্দের কথা। বর্তমানে এই দোল উৎসবের সাথে সাথে বহু লোকসংস্কৃতি বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো এমন ভাবে চলতে থাকলে এই বসন্ত উৎসব একদিন অতীতের স্মৃতিতে পরিণত হবে।


 

মহৎ হৃদয়

শুভেন্দু নন্দী 

"-কি সুন্দর ঝকঝকে বিকেল। নীল আকাশে এক ঝাঁক সাদা বক ডানা মেলে উড়ছে। সামনে খরস্রোতা নদী। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। শেষ রশ্মি রক্তিম বর্ণ ধারণ করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিত্যক্ত এক বাগানবাড়ি। ভেতরে প্রচুর পুরনো গাছ- জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে প্রাচীর। মাঝে মাঝে ভেঙে পড়েছে দেওয়ালের আস্তরন। হঠাৎ চারিদিকে প্রবল অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। গাছগুলো যেন দৈত্যাকারে সামনের দিকে জঙ্গল ভেদ করে ধেয়ে এলো। পৈশাচিক সুরে কে যেন অট্ট হাস্য করে বলে উঠলো,
- সমরেশ! তোকে কিছুতেই ছাড়বোনা। আমার দিকে লক্ষ্য করে তুইই-তো গুলি ছুঁড়েছিলি। অবশ্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিলো। কিন্ত তাতে কি ? Attempt to murder-তো খুনেরই সামিল"
 আরে! এতো জগাই ! সবাই তো ওকে যমের মত ভয় করে ওর সমাজবিরোধী কার্যকলাপের জন্য।
- কিন্ত আমি তো গুলিটা করিনি। সত্যি বলছিরে। করিনি 
- কি রে দাদা! বলছিস কীরে তুই? কাকে এই ভর সন্ধ্যায় খুন করার কথা বলছিস ? আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না রে....

সমরেশ ভাবলেশহীন হয়ে চারিদিক তাকালো। এখন তো সত্যিই বিকেল! তা হোলে এই সুন্দর দৃশ্য, জঙ্গল, জগাই-এর তেড়ে-ফুঁড়ে আসা- সবটাই কী স্বপ্ন? ভাই-এর কথায় সম্বিত ফিরে এলো। সে তার দেখা  স্বপ্নের পুনরাবৃত্তি করে বলতে লাগলো,
- বুঝলি ভাই, দশ বছর পূর্বে ঘটা একটা ঘটনা কিছুতেই  ভুলতে পারছিনা। স্বপ্নে সব সময়েই সে হাজির হয় বিশ্রীভাবে। 
-  তা না হয় বুঝলাম। কিন্ত তোর হাতে বন্দুক কি করে এলো ? ভালো করে ভেবে বলবি।
- সে সময় ছোট্ট ছিলি রে তুই ! বাবার সাথে মাঝে মাঝেই যেতাম বনে,জঙ্গলে,নদীর চরে। বাবা শিকার করতে ভালোবাসতেন তো ! তাই সঙ্গে সবসময়ই বন্দুক থাকতো। আর তাতে গুলি ভরা। নিরাপত্তার কারনে বাড়িতে এই বন্দুক রাখা,আর ঘোরাঘুরির সময় কাছে রাখা। তোআমি তা চালানো শিখেও নিয়েছিলাম....
- তাহলে বন্দুক নিয়ে একাই ছিলি, জঙ্গলে শিকার করার অভিপ্রায়ে?"
-হ্যঁরে! সেটাই হোলো আমার "কাল" বুঝলি ? তমোনাশের সাথে হঠাৎ দেখা হোয়ে গেলো। আমার বন্ধু, তুই তো জানিস। সে বললো, তোর হাতে তো দারুন টীপ। ঐ দেখ। জগাই আসছে - ওর ওপর প্রয়োগ করে দেখা দিকি একবার?
-কি সাংঘাতিক কথা বলছিস,তুই এক্কেবারে ছেলেমানুষের মতো?
- ঠিক আছে। আমাকে একটু বন্দুক চালানো শিখিয়ে দিবি ভাই?
 -অন্যমনস্কভাবে এ ব্যাপারটায় ট্রিগার টিপে ওকে শেখানোর ফাঁকে আচমকাই বন্দুক থেকে গুলি বেরিয়ে গেলো। আর হোলো প্রচন্ড শব্দ।  ঘটনার আকস্মিকতায় তমোনাশ পালিয়ে গেলো জঙ্গলের মধ্যে। আর আমার হাতে বন্দুক দেখে আমাকেই জগাই culprit বলে ধরে নিলো। আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম। আমি ওকে কিছুতেই convince করাতে পারলামনা যে একাজ আমার নয়....
-তারপর?
-জগাই এগিয়ে আসার উপক্রম করলো সবেগে। ইতিমধ্যে ধূলিধূসরিত ঝড়ের তান্ডব হোলো শুরু। তখন তো সন্ধ্যাবেলা ছিলো। অন্ধকার আরও ঘন হোলো। সেই সঙ্গে মেঘের প্রচন্ড গর্জন। আকাশ ভেঙে নামলো মুষলধারে বৃষ্টি। হাওয়ায় গাছপালা যেন দুলতে লাগলো। ওকে আর দেখা গেলোনা ঐ ঘনঘোর অন্ধকারে। এক সময়ে জঙ্গলে সে হারিয়ে গেলো। আমিও দূর্গানাম জপ করতে করতে   সিক্তবস্ত্রে অবশেষে বাড়ি ফিরলাম।
-তবে গল্পটা এখানেই শেষ হোলে  ভালো হোতো, বুঝলি ভাই?
- মানে? জগাইদা কী থানায় F.I.R. করেছিলো? তমোনাশদারই বা কি খবর ? জগাইদা কী বরাবরই এরকম ?
- নারে। একদম না। আসলে সৃষ্টিকর্তা রূপের বিতরণ করার সময় ভালোরকম কার্পণ্যতা করেছিলেন - যার জন্য চেহারায় এক অদ্ভূত রকমের অস্বাভাবিকতা ছিলো। তার ওপর ছোটবেলায় "বসন্তে" মুখে ভয়ানকভাবে  ক্ষতের বিশ্রী দাগ দুঃর্গ্রহের মতো বয়ে বেরাতে হোতো সবসময়ে দারুণভাবে। ক্লাশে সবাই তাকে দারুণভাবে ঠাট্টা, বিদ্রুপ করতো। ভীষণ হীনমন্যতায় ভুগতে সে। অথচ জ্ঞান, বুদ্ধিতে ঈশ্বর তাকে উজাড় করে ঢেলে দিয়েছিলেন। কিন্ত ক্লাশ টেন পর্যন্ত পড়ে পড়াশোনায় তার ইতি হয়েছিলো। যেটা বলতে যাচ্ছিলাম। কিছু করেনি আমার against-এ থানায়। হঠাৎ সেদিন দেখা হয়েছিলো তমোনাশের সাথে সুদীর্ঘ প্রায় দশ বছর পরে। তার কাছে শুনেছিলাম সব কিছু। সে এক করুন কাহিনী।
- কি হয়েছিলো ?

একটু বিরতির পর সমরেশ শুরু করলো।

-তমোনাশ বলেছিলো- আমি জগাইদের পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম যে ও এখন অনেক শান্ত।  আসলে বাড়িতে পরিবেশ ছিলো অশান্ত।  বাবা বেহেড মাতাল। আকন্ঠ মদ পান করে করে লিভার পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিলো। চিকিৎসার বাইরে একদম চলে গিয়েছিলো। আর মা ক্ষোভে,দুঃখে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলো। দুটো এই দুর্ঘটনার পরে আনমনা হয়ে চলতে চলতে একদিন লক্ষ্য করলো একটা বাচ্চা ছেলে ব্যাগ নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে, আর সেই সময় উল্টো দিকে একটা চলমান বাস
আস্তে দেখে তাকে ছিটকে রাস্তার ওপারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো জগাই।  ছেলেটি রক্ষা পেলো কিন্ত গাড়িটি তার ওপর সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে চলে গেলো।
- তারপর দাদা, কি হোলো? 
- তমোনাশের কথামতন গতকাল গিয়েছিলাম হাসপাতালে। দেখলাম আপাদমস্তক ব্যান্ডেজ বাঁধা। শুধু চোখ দুটো খোলা। যমে মানুষে টানাটানি চলছে। তমোনাশকে দেখে কেঁদে ফেললো আর আমাকে বললো, " সেদিনের ঘটনার জন্য আমাকে ক্ষমা করিস।" এই ছিলো তার শেষ কথা। অবশেষে সমস্ত চিকিৎসা বিফল করে চলে গেলো সে চিরতরে না ফেরার দেশে।


 

ফাগুনের ঘ্রাণ 
মিষ্টু সরকার 


আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, তাই সকাল সকাল অনুষ্ঠানে যাবার তাড়া ,তৈরী হয়ে খেয়ে তবেই বেরোবো, নইলে সারাদিন কাজ থেকে আর ফুরসৎ নেই । 

ওপারের  ইলিশ চড়া দামে নিয়ে এসেছে বাবা ।  
বললো, আজ সারাদিনমানে আর সময় হবে না মামনি, তোদের জন্য এত  কষ্ট  করে  পায়ে  ব্যথা  নিয়ে দিনবাজারে গেলাম , একটু তো খেয়ে যা । ইলিশ এত ভালবাসিস ; তোরা না খেলে আমরা কি খেতে পারি বল !! 

এদিকে ভাই ও স্কুলে যাবে। তাই খাবার টেবিলে একসাথে সবাই । 

স্কুলে গেলেই কতো কাজে হাত লাগাতে হবে ; মাছটা ভেজে দিতে তাগাদা  দিচ্ছি বারবার মাকে !!

ব্যস্ত মা, নাকে আঁচল চাপা দিয়ে ..
ইলিশ ভাজছেন । মা যে কি !! ইলিশের গন্ধ আবার কারো খারাপ লাগে  ! আমি তো ভাবনাতেই আনতে পারি না !

টিভির পর্দায়  অমর একুশের শহীদদের জয় গানে, ফুলে, চন্দনে বিরসাতের বাজনা বুঝি ওদেশেও 
বেজে উঠলো- 
                 " আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ।"

ভাইকে মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছি আমি ।

আমাদের বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত কে বক্তৃতার মাধ্যমে জানছেন নতুন প্রজন্ম ।

মা আজও ইলিশ পাতে নিলোনা । আমি লক্ষ্য করেছি,  বেশ কিছুদিন থেকে আর ইলিশ খাচ্ছে না মা , 
সেই ; ....সেবার... ওদেশে রাস্তায় মামাকে........ না থাক... মনটাও  কি ফেসবুকের মতো, না  উল্টোটা...! 

রুদালি ফাগুন সংকীর্তনে নেমেছে, পথে পথে ধূলোর চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে শিমুল - পলাশের বিশ্বাস। অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বাতাসের  প্রতিকূলতাকে জারি  রেখেছে ।

অনেক, বেশ অনেক দিন আগে , মা  ছোট কাকিমাকে নির্বিকারভাবে  বলছিল, জানিস ছোটো  পড়ার বইয়ে - "ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল " ,  পড়ি তখন আমরা.... মায়ের কোলের সদ্যজাত  ভালোবাসার ফুলটির নাম রেখেছিলাম কাঞ্চন.......

পর্দায় শাহনাজ রহমতউল্লাহের কন্ঠ....
"একবার যেতে দেনা আমায় ছোট্ট সোনার গাঁয় "
আঃ  !!
পদ্মার ঢেউ আছড়ে পড়ে মায়ের বুকে।   
মা এখন আর ইলিশ মুখে তোলে না 
একি একুশের সমর্পণ !!
নাকি বোধের ? 


 

বিশ্ব দিবসে

মাথুর দাস


বিশ্ব দিবসে নিঃস্ব কবিতা

থোড়-বড়ি-খাড়া শব্দে,

লিখছে মানুষ অং বং চং

জং-ধরা শত অব্দে ।


সংজ্ঞা-ই নেই কবিতার কোনও

এখনও সর্বগ্রাহ্য,

তাকে নিয়ে চলে তবু বাড়াবাড়ি

জল্পনা এহ বাহ্য ।


কাল জয়টয় শেষ হয়হয়

রূপ নয়ছয় কবিতার,

গদ্যের কাছে নত অবয়ব

বড় অকরুণ ছবি তার ।


 

প্রথম 

নির্মাল্য ঘোষ 

যেখানে আমার মাথা রাখার কথা ছিল
সেখানে আজ...
অন্য কারো মাথা।

জানি,তুমি না চাইলেও...
তোমার কাঁধ সে মাথার ভার
বহন করতে করতে ক্লান্ত। শ্রান্ত।

তবুও, জোকার সমাজের ভয়ে
আমাদের কত কিছুই না করতে হয়!!!


প্রথম প্রেম সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেও
বুকে পাথর রেখে 
অস্পৃশ্য মনে করি।


 

 বলবো ভেবেছিলাম 

       চিত্রা পাল 


বলবো ভেবেছিলাম, সেদিন যে চন্দ্রমল্লিকা গাছটা দিয়েছিলে

সেটাতে কুঁড়ি এসেছিলো, ফুটবে বলেওছিলো,কিন্তু,যাকগে 

সে কথা। আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম,ওই যে সবুজ বনটায়

ওর ডালপালা জড়িয়ে ধরেছিলো,একেবারে তোমার মতো

তীব্র হয়ে, তারপরে সেদিন যে পাহাড়ি গাঁয়ে ছিলাম,রাতে

খুব বৃষ্টিতে, দীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো, ক্ষেত,জমি,কেমন অন্ধকার

চোখহীন দৃষ্টির মতো, 

সবই আছে বহমান ,তানপুরার তারে সুর মেলানোর

মতো, ভেবেছি সব বলবো তোমাকে যেদিন তুমি থাকবে শোনার মতো।। 


 

নিভৃত সন্ধ্যায় 

অমিতাভ চক্রবর্ত্তী 


বর্ষায় ভরন্ত ছিল 
এরপর পেরিয়ে গেছে এক এক করে 
শরৎ ,হেমন্ত, শীত। 
আজ নদীটির বুকে শুধু 
জেগে আছে বালি 

হেমন্তের এক নিভৃত সন্ধ্যায় 
সে আমায় ডেকেছিল, 
ডেকে বুক খুলে দেখিয়েছিল ,
কত কষ্টে স্রোতস্বিনী,
একপাশে বয়ে যায় ক্ষীণধারা নিয়ে 
আর বাকি শুধু জেগে থাকা 
বেলাভূমি অনাবৃত।।


 

সে পৃথিবী অনন্ত বসন্তের হবে
             তন্ময় ধর


এটুকুই

দূরতম কল্পনাতেও না-থাকা আলো 
         অসংখ্য অসীমে 
রেখে যাচ্ছে এই ক্ষণিক কালের ফুল

এই আয়ুরঙের
প্রাকৃত অস্বীকারে বিগলিত বাস্তবতাই মায়া 

প্রতিটি নি:শ্বাসে আমি তোমার ঘ্রাণনিমগ্ন অপরাধ হই

যা ছিলই না কখনো,
ঘ্রাণের প্রতিনৈ:শব্দ‍্য থেকে 
  তার চরম ইতিহাস খোঁজো কেন?

বিশীর্ণ কুসুম, 
   বাতিল করো অর্ধেক বাক‍্যের উন্মাদনা


 

মা তোমায় 
অভিজিৎ সেন 

অন্ধকারে রেখে 
আর এক অন্ধকারে পা বাড়িয়ে দিলাম 
আমার শৈশব 
আমার উঠোন 
নদী নৌকা মাঝি ভোরের আযান 
মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি নদীর বুকে উথাল পাথাল সাঁতার 
বিন্নি ধান ছোট ছোট ডিঙি 
মন ভালো করা সেই সবুজ মাঠ 
একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রাণ খুলে গান
এ যাবৎ জড়ো হওয়া সমস্ত স্মৃতি
একটি ঝড়েই সব উড়ে গেলো...
সমস্ত সম্পর্কেরা, আর আমি 
অন্ধকারে মিলিয়ে চলেছি একটু একটু করে...
আমার ভালোলাগা আবেগ গুলো সরে যাচ্ছে একটু একটু করে দূরে.....                                                 

নাড়ি ছেড়ার যন্ত্রণা টের পেলাম অন্ধকারে.....

পালিয়ে যেতে হবে হাজার হাজার মাইল দূরে 
না হলে, লাশ হয়ে ভেসে যেতে হবে.... 
ফতোয়ার কোন ধর্ম হয় না !
সন্ত্রাসের চোখে বিবেক থাকে ঘুমিয়ে !

আবারও ভোর হবে....
সবাই সবার নিজস্ব পৃথিবীতে যাবে নিজের ছন্দে 
শুধু আমার পৃথিবী যাবে বদলে 
উদ্বাস্তুর পায়ের তলায় সর্ষে পড়ে থাকে আজীবন.... 


 

অভিলাষী বসন্ত 

প্রাণেশ পাল 

দিগন্ত বিস্তৃত অনন্ত পথ জুড়ে
পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া,
নৈসর্গিক লাল গালিচা !

চির নবীন বসন্ত জাগে মনে,
তামসিক ফাগুন, বিষাদ-গ্রস্থ প্রকৃতি,
অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ জুড়ে রক্তের হোলি,
দেশ, জাতি, মানুষ, সময়,
ভেসে যায় পলাশের রঙে !

আদিগন্ত আলপথ জুড়ে
অভিলাষী বসন্ত ------
প্রকৃতির ক্যানভাসে হোলি
স্বপ্ন দেখি ------
সাদা রঙে রাঙানো
অনন্ত রঙিন বসন্ত !


 

কালশিটে দাগ

মহঃ সানোয়ার 


কুয়াশার বুকে ঝলমলে রোদ্দুর,
সাভানা তৃণভূমির সেঁতসেঁতে মেঝে
বিষণ্ণতায় ঘেরা গাঢ় অন্ধকার।

পত্র মোচনে ঝরে যাওয়া
পাতাদের অবচেতন হয়ে
পড়ে থাকা; 
শুধু ঋতু বদলের বহিঃ প্রকাশ ।

পরগাছা উদ্ভিদ, ক্যাকটাস 
পাইনের এঁবড়ো খেঁবড়ো ত্বক, 
আলোকবর্ষ দূরে সমুদ্র সৈকত।

পশ্চিমী ঝঞ্জা, মৌসুমী বায়ু;
নৌকার মাস্তুল ছুঁলে; উঠে আসে-
স্মৃতি চাপা ভাবনার অবসাদ।

শিলালিপি ক্ষয়ে ক্ষয়ে উন্মাদ জাগে,
সুদূর পাহাড়ে বঞ্চিত রোদ্দুর,
সমতলে ভাসমান আলো।

হিমেল হাওয়া, জানালার কাঁচ,
মুছে গেছে স্মৃতি,
রয়ে গেছে শুধু 
পিঠের কালশিটে ছাপ।।


 

উদয়াস্ত
আশুতোষ বর্মন 

লিখতে গেলেই আজকাল বাণী হয়ে যায়
যে নির্জন নদীতটে বসে লিখি আমি 
সেখানে শব্দ খুঁজলে জানি না কবিতা পাবে কিনা।

তবু আসবে কি কাছে ? ফেলে যাবে না তো আসবার পর?

ফেলে গেলে যাবেই বা ।
যেও, চোখের জল যেমন করে যায়,
চোখকে যেও না বলে-- ‘যাচ্ছি তবে’;
এখানে শব্দ আমার পছন্দ নয়।

বাণীর উদয়রাগ লিখলেই  ---
কুমায়ুন পাহাড় যেন ঢেকে যায় এক ঘন নীল শাড়িতে ।
বৃথাই অস্তরাগে জড়াতে চাইছে তা আষ্টেপৃষ্ঠে বারবার।
যাবে বলেই যদি এসে থাকো ওই শাড়ি পড়ে এসো না অন্ততঃ

কি পড়ে আসবে তবে ? উঃ এত বলতে পারবো না।


 

প্রার্থনা 
প্রতিভা পাল 

প্রার্থনায় রাখি নৈঃশব্দ।
এত কোলাহল, এত ভিড় চারিদিক
স্বার্থ মিথ্যার দ্বন্দ্ব, ভুল সঠিক !
হারিয়ে যাওয়া নিজের জলছবি খুঁজি অবিরত।

প্রার্থনায় রাখি শূন্যমন।
এত দুঃখ, এত চাওয়া পাওয়ার অধিকার
প্রতিযোগিতা- হারানোর, জিতে যাওয়ার।
নিজেকে বোঝাই নিঃসীমতার ব্যাকরণ। 

প্রার্থনায় আলোর মালায় গাঁথি
অভিযোগহীন অদৃশ্য সমর্পণ, 
প্রতিনিয়ত..... 


 

অভিমানী বসন্ত 
আকাশলীনা ঢোল 

দমবন্ধ করা গুমোট একটা ভাব,
কেমন যেন শ্বাসরোধ করা পরিস্থিতি,
কখনও বা আংশিক মেঘলা আকাশ 
আর তারই সঙ্গে কোকিলের 
একটানা ক্লান্তির ডাক।
রঙিন বসন্তের বুকের ভেতর বুঝি 
জমাট বেঁধেছে তীব্র অভিমান -
তাই, তার চোখ কখনও 
শিমূল -পলাশ রঙে রক্তিম,
আবার কখনও চোখ ফেঁটে আসছে 
জল, ঝরে পড়ছে বৃষ্টিদানা হয়ে।
বসন্তটা বড্ড অভিমানী,
আঁচড় দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে 
নিজেরই অস্হি - মজ্জায়, 
অকালে ডেকে আনে শ্রাবণ, সহসা 
শিলাবৃষ্টি ধ্বংস করে সদ্য 
ফোটা মঞ্জরী -
রঙিন দিনগুলো কেমন ধূসর -তামাটে 
বর্ণের হয়ে যায়, 
তবু যেন, বসন্তের অভিমান কমে না,
দুচোখ জুড়ে তার কেবল 
নিকষ কালো মেঘ,
যে মেঘ, জীবনের বসন্তেও বয়ে আনে 
শ্রাবণের সন্ধ্যা।


 

অন্বেষণ 

অর্পিতা রায় আসোয়ার


তখনও আলো ছিল, ছিল উত্তাপ ,
ছিল মৃদুমন্দ বাতাস;
হালকা বাতাসে মিষ্টি দোলায় 
দুলছিল দুটো গোলাপ।

তখনও বিবর্ণ হয়নি 
গোলাপদুটির পাপড়ি, 
গাঢ় রক্তিম সুগন্ধে 
আবিষ্ট করে রেখেছিল 
পারিপার্শ্বকে।

কোনো এক কবি মোহিত হয়ে 
উপভোগ করছিল 
তাদের অমলিন সৌন্দর্য।
কিন্তু অকস্মাৎ মেঘের গর্জনে 
তোলপাড় হয়ে নেমে আসে 
প্রবল ঝড়।

ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয় গোলাপদুটির 
মোহময়ী পাপড়িগুলি।
নুইয়ে পড়ে মাটিতে 
তাদের কঙ্কালরূপ বৃন্ত।

বিমর্ষ কবি খোঁজে 
ভিন্ন কোনো গোলাপ।



 

আ -মরি 

জয়তী ব্যানার্জী 


মোদের গরব মোদের আশা 
    আ -মরি বাংলা ভাষা, 
আমরা মোরা আধুনিক 
    ভাবখানা মোর বিলেত ফেরত, 
    নাইবা জানি ই ঈ!
ভুলে গেছি প্রানের ভাষা 
মিশে গেছি ওই ধুলিতে -
     বলি না আমরা 
    আমরা যে বাঙালি ।

জানিনা আমরা 
আম কলা পেয়ারার নাম ;
জানি শুধু, 
             ইংরেজির কচকচানি !
তৃপ্তি সুখে বলে উঠি :
বাংলা বড় কঠিন ।
পিসি মাসি খুড়ি জেঠি 
   সেসব পাঠ চুখেছে যে 
          অনেক কাল আগেই ।

দিদিমণি মাস্টারমশাইরা 
    হারিয়ে গিয়েছে শাড়ি ধুতির অন্তরালে ,
তবুও আমরা পালন করি 
উৎসব, বাংলা ভাষার উৎসব __
     ২১শে ফেব্রুয়ারি!

রবীন্দ্রনাথ নজরুল জীবনানন্দ 
গীতবিতান সঞ্চিতা আর সঞ্চয়িতা ,
সবই যেন ওঠে জেগে 
     তবে সে ক্ষণিকের তরে ;
হারিয়ে যায় তা হাই-হ্যালোর জগতে ,
এক বছরের নামে সাঙ্গ হল পাঠ
আমরা যে জানি শুধু 
      বাংরেজির কাঠ।।