Sunday, March 9, 2025


গাই দিবসের গণতান্ত্রিক উদযাপন...
রীনা সাহা

কবিশ্রী গোবরাচরণ গড়করির বিশাল গোয়ালঘরে আজ ছিল ফিমেল গরুদের ভোটগ্রহণ পর্ব। বিকেল পাঁচটার আগেই নির্বিঘ্নে মুখ্যগরু নির্বাচন হয়ে গেল। কাল রাতে কাটা খড় আর ভাতের ফ্যান দিতে গিয়েই নাকি গোবরাবাবু ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলেন।

ওনার গোয়ালঘরের তিনটে পার্ট। একটাতে মেয়ে গরু অর্থাৎ গাইরা থাকে। একটাতে পুরুষ গরু অর্থাৎ ষাঁড়রা থাকে। আর একটাতে একা গমিত শা নামে নাদুসনুদুস জার্সি গরুটা থাকে। যেটাকে গোবরাবাবু সুদূর গোরক্ষপুর থেকে কিনে এনেছিলেন মরার পর বৈতরণী পার হবার জন্য।
গোমতী বৌদি এসবের কিছুই বুঝতে পারেননি দেখে গোবরাবাবু রাতে বিছানায় শুয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। গোমতী বৌদির তত্বাবধানে থাকা ষাঁড়গুলো কিছুতেই আর গাইগুলোর দিদি গিরি মেনে নিতে চাইছে না। এটা নাকি কদিন ধরেই গোবরাবাবু টের পাচ্ছিলেন। কেননা বহুবছর হল গোয়ালঘরের সমস্ত পদ ওরা দখল করে বসে আছে।এক একজন গাই আবার তিন তিনটে পদের হেড। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। গোটা গোয়ালঘরে মাৎস্যন্যায়। ইদানিং নাকি নিজের দোষ ঢাকতে বলদগুলোকে মিডিয়ার সামনে ওপেনলি যা ইচ্ছা তাই বলে ধমকে চমকে দিচ্ছে পুলিশ গাই। সাপ- ব্যাঙ - বেজী - নেউল - শেয়াল - কুকুর যখন তখন গোয়ালঘরে ঢুকে আঁচড়ে কামড়ে রক্ত চুষে খাচ্ছে। অথচ পোতিবাদ করা যাবে না। স্বাস্থ্য গাইটা গোয়ালঘরের হাইজিন কিছুই দেখছে না। মশা - মাছি চিন মিউজিক শোনাচ্ছে। আলফা ,বিটা, গামা নামের ডাকসাইটে সব ভাইরাস চোখে দেখা না গেলেও অ্যাটাক করছে। অথচ পোতিবাদ- টোতিবাদ করা যাবে না। শিক্ষা গাইটা গোয়ালঘরের খড়বিচালি সব বেচে খাচ্ছে। শীতকালে আগুন জ্বালানোর কয়লাগুলো আর এক গাই পাচার করছে। এভাবে আর কাঁহাতক চলে! গাইদের বাড়বাড়ন্ত রুখতেই হবে। ষাঁড়গুলো পরিবর্তন চায়। গাইরাজ, গাই সিন্ডিকেট চলবে না। আজই তাই ভোট চাই।
কাল রাতের বেলা এইসব নিয়েই নাকি গাইগুলো লাফাচ্ছিল। ষাঁড়গুলোও শিং উঁচিয়ে গুঁতোগুঁতি করছিল। আর গমিত শা নিজের খোপ থেকে পটলচেরা চোখ পাকিয়ে চুপচাপ ওদের কান্ডকারখানা দেখে যাচ্ছিল।
সব শুনে গোমতী বৌদির গা- পিত্তি জ্বলে গেল। গোয়ালঘরে ভোট হবে তাই না? বুড়ো বয়সে গরু হয়ে যাচ্ছ দেখছি!
গোবরাবাবু বললেন আমার কথা বিশ্বাস করলে না তো! কাল ভোরবেলা গোয়ালঘরে গিয়ে দেখো ভোট হয়েছে কিনা।
যাইহোক আজ সকালে গোয়ালঘরের দরজা খুলতেই গোমতী বৌদির চোখ ছানাবড়া। বাঁশের বাতার পার্টিশনের ফাঁক দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে ষাঁড়গুলো সব গাইগুলোর মুখ চুষছে । গোয়ালঘরের দশটা ষাঁড়ের মুখই দশটা গাইয়ের মুখে চেপ্টে লেগে আছে। বর্তমান মুখ্যগরুর মুখেও একটাই ষাঁড় গরু। তার মানে সবাই সমান ভোট পেয়েছে !
ইউরেকা, বলে গোমতী বৌদির মুখের সামনে চেঁচিয়ে উঠলেন গোবরাবাবু। দেখলে, বলেছিলাম না গোয়ালঘরে ভোট হবে। তবে মুশকিলটা হল কেউই তো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না।
গোমতী বৌদি মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, পাগলের গোবধে আনন্দ !
আরে দাঁড়াও, এখনও হারিনি আমি। আমার গমিত শা তো এখনও ভোট কাস্টই করেনি। এইবলে গোবরা বাবু গমিত শার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, যাও তো আমার অবাঙালি গরু। চকমা দে আও। গমিত শা আবার বাঙালি গরুগুলোর মতো হাম্বা করে ডাকে না। ওর ডাকটা অনেকটা নমো নমোর মতো বাঁশ ফাটা আওয়াজ। তা নমো নমো বলে হাঁক দিতে দিতে সেই মুখ্য গরুটার মুখ চেটে দিয়ে এক ছুটে নিজের খোপে এসে ঢুকে গেল।
গোবরাবাবু অবাক হয়ে বললেন,যা বাবা এটা কি হল! যে মুখরা গরুটা তোকে যখন তখন লেঙি দিতে ছুটে যায় সেটাকেই ভোট দিলি ! তুই কি গাধা নাকি রে? ছ্যাঃ। এবারও তবে গোয়ালঘরের গরু সভার পরিবর্তন হল না! মুখ্য গরুটা দু'ভোটে জিতে গেল!
ওদিকে তখন গরু দিবসে গাইগুলোর সে কি উল্লাস! ওদের আস্ফালনে গোটা গোয়ালঘর যেন কাঁপছে। গাইদের মুঠ্যিমে ষাঁড় লোগ।
গোমতী বৌদিও গোয়ালঘর থেকে মেদিনী কাঁপিয়ে দুই লাফে রান্না ঘর। বাসনপত্রের গুষ্টির তুষ্টি করে দুকাপ চা বানিয়েই সোজা সাজঘরে। আজ তার মহিলা সমিতির সভাঘরে নারী দিবসের উদযাপন। রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আসবে। কিট্টি পার্টি হবে।
গোবরাবাবু চা খেতে খেতে শুনলেন গোয়ালঘরের বাঙালি গাইগুলো গাইছে ---- " গোরখপুর সে আয়া মেরা দোস্ত/ দোস্ত কো সালাম করো/ রাত কো খাও পিও/ দিন কো আরাম করো"।

No comments:

Post a Comment