ফাগুনের ঘ্রাণ
মিষ্টু সরকার
আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, তাই সকাল সকাল অনুষ্ঠানে যাবার তাড়া ,তৈরী হয়ে খেয়ে তবেই বেরোবো, নইলে সারাদিন কাজ থেকে আর ফুরসৎ নেই ।
ওপারের ইলিশ চড়া দামে নিয়ে এসেছে বাবা ।
বললো, আজ সারাদিনমানে আর সময় হবে না মামনি, তোদের জন্য এত কষ্ট করে পায়ে ব্যথা নিয়ে দিনবাজারে গেলাম , একটু তো খেয়ে যা । ইলিশ এত ভালবাসিস ; তোরা না খেলে আমরা কি খেতে পারি বল !!
এদিকে ভাই ও স্কুলে যাবে। তাই খাবার টেবিলে একসাথে সবাই ।
স্কুলে গেলেই কতো কাজে হাত লাগাতে হবে ; মাছটা ভেজে দিতে তাগাদা দিচ্ছি বারবার মাকে !!
ব্যস্ত মা, নাকে আঁচল চাপা দিয়ে ..
ইলিশ ভাজছেন । মা যে কি !! ইলিশের গন্ধ আবার কারো খারাপ লাগে ! আমি তো ভাবনাতেই আনতে পারি না !
টিভির পর্দায় অমর একুশের শহীদদের জয় গানে, ফুলে, চন্দনে বিরসাতের বাজনা বুঝি ওদেশেও
বেজে উঠলো-
" আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ।"
ভাইকে মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছি আমি ।
আমাদের বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত কে বক্তৃতার মাধ্যমে জানছেন নতুন প্রজন্ম ।
মা আজও ইলিশ পাতে নিলোনা । আমি লক্ষ্য করেছি, বেশ কিছুদিন থেকে আর ইলিশ খাচ্ছে না মা ,
সেই ; ....সেবার... ওদেশে রাস্তায় মামাকে........ না থাক... মনটাও কি ফেসবুকের মতো, না উল্টোটা...!
রুদালি ফাগুন সংকীর্তনে নেমেছে, পথে পথে ধূলোর চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে শিমুল - পলাশের বিশ্বাস। অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বাতাসের প্রতিকূলতাকে জারি রেখেছে ।
অনেক, বেশ অনেক দিন আগে , মা ছোট কাকিমাকে নির্বিকারভাবে বলছিল, জানিস ছোটো পড়ার বইয়ে - "ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল " , পড়ি তখন আমরা.... মায়ের কোলের সদ্যজাত ভালোবাসার ফুলটির নাম রেখেছিলাম কাঞ্চন.......
পর্দায় শাহনাজ রহমতউল্লাহের কন্ঠ....
"একবার যেতে দেনা আমায় ছোট্ট সোনার গাঁয় "
আঃ !!
পদ্মার ঢেউ আছড়ে পড়ে মায়ের বুকে।
মা এখন আর ইলিশ মুখে তোলে না
একি একুশের সমর্পণ !!
নাকি বোধের ?
No comments:
Post a Comment