Tuesday, March 4, 2025


 

ফাগুনের ঘ্রাণ 
মিষ্টু সরকার 


আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, তাই সকাল সকাল অনুষ্ঠানে যাবার তাড়া ,তৈরী হয়ে খেয়ে তবেই বেরোবো, নইলে সারাদিন কাজ থেকে আর ফুরসৎ নেই । 

ওপারের  ইলিশ চড়া দামে নিয়ে এসেছে বাবা ।  
বললো, আজ সারাদিনমানে আর সময় হবে না মামনি, তোদের জন্য এত  কষ্ট  করে  পায়ে  ব্যথা  নিয়ে দিনবাজারে গেলাম , একটু তো খেয়ে যা । ইলিশ এত ভালবাসিস ; তোরা না খেলে আমরা কি খেতে পারি বল !! 

এদিকে ভাই ও স্কুলে যাবে। তাই খাবার টেবিলে একসাথে সবাই । 

স্কুলে গেলেই কতো কাজে হাত লাগাতে হবে ; মাছটা ভেজে দিতে তাগাদা  দিচ্ছি বারবার মাকে !!

ব্যস্ত মা, নাকে আঁচল চাপা দিয়ে ..
ইলিশ ভাজছেন । মা যে কি !! ইলিশের গন্ধ আবার কারো খারাপ লাগে  ! আমি তো ভাবনাতেই আনতে পারি না !

টিভির পর্দায়  অমর একুশের শহীদদের জয় গানে, ফুলে, চন্দনে বিরসাতের বাজনা বুঝি ওদেশেও 
বেজে উঠলো- 
                 " আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ।"

ভাইকে মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছি আমি ।

আমাদের বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত কে বক্তৃতার মাধ্যমে জানছেন নতুন প্রজন্ম ।

মা আজও ইলিশ পাতে নিলোনা । আমি লক্ষ্য করেছি,  বেশ কিছুদিন থেকে আর ইলিশ খাচ্ছে না মা , 
সেই ; ....সেবার... ওদেশে রাস্তায় মামাকে........ না থাক... মনটাও  কি ফেসবুকের মতো, না  উল্টোটা...! 

রুদালি ফাগুন সংকীর্তনে নেমেছে, পথে পথে ধূলোর চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে শিমুল - পলাশের বিশ্বাস। অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বাতাসের  প্রতিকূলতাকে জারি  রেখেছে ।

অনেক, বেশ অনেক দিন আগে , মা  ছোট কাকিমাকে নির্বিকারভাবে  বলছিল, জানিস ছোটো  পড়ার বইয়ে - "ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল " ,  পড়ি তখন আমরা.... মায়ের কোলের সদ্যজাত  ভালোবাসার ফুলটির নাম রেখেছিলাম কাঞ্চন.......

পর্দায় শাহনাজ রহমতউল্লাহের কন্ঠ....
"একবার যেতে দেনা আমায় ছোট্ট সোনার গাঁয় "
আঃ  !!
পদ্মার ঢেউ আছড়ে পড়ে মায়ের বুকে।   
মা এখন আর ইলিশ মুখে তোলে না 
একি একুশের সমর্পণ !!
নাকি বোধের ? 

No comments:

Post a Comment