Monday, October 5, 2020


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

লাইসোজোম

আফতাব হোসেন


ইন্দিরা গান্ধীর গাড়িটা 'এইমস'এ ঢুকেছিল ন'টা ৩২ মিনিটে। অফিসিয়ালি তার অনেকক্ষন পরে ওনার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা হলেও  রাজনৈতিক টালমাটাল তখন শুরু হয়ে গেছে কংগ্রেসের অন্দরমহলে । প্রণব বাবু আর রাজীব গান্ধী দুজনেই তখন উত্তরবঙ্গে । মৃত্যু খবর শুনে একসঙ্গে দিল্লির উদ্দেশ্য রওয়া হয়েছেন । ওই দিন ওই প্লেনে দুজনের কথাবার্তার কোন রেকর্ড কারো কাছে নেই । কিন্তু রটনা রটান হয় প্রণব বাবু রাজি উত্তরসূরি হতে । আর হবে নাই বা কেন ,, 1977 এর পরাজয়ে ইন্দিরা তথা কংগ্রেসে থেকে যখন সবাই মুখ ফেরাচ্ছে তখন একমাত্র ক্রাইসিস ম্যানেজার তো ওই মুখার্জি বাবুই । কিন্তু নাঃ,,বাঙালি আবার বুদ্ধিমান । সাথে দক্ষ ও প্রায় সব হেভিওয়েট দপ্তর নখদর্পনে । যদি মাথায় চেপে বসে । ব্যস । ধুকপুক শুরু । যে মাইকে উনি রাজীব গান্ধীর মাথায় মুকুটের ঘোষণা করছেন সেই মাইকে তার নামটাই উচ্চারিত হল না । এমনকি মন্ত্রী সভাতেও উনি নেই । 
ভদ্রভাষায় এটাকে কি বলে আমি জানি না । কিন্তু বাস্তবে এটা  মার্ডার । শুধু মুখার্জি বাবুকে নয় ।বাঙালি সত্তার মার্ডার সেদিন হয়েছিল ।

এবার একটু গুটিগুটি পায়ে বর্তমানে আসুন । 
টিভির সামনে ….
ঝকঝকে একটা স্টেজ,, মঞ্চে দি সুপারস্টার সালমান খান,সাথে প্রভাবশালী নেতা পুত্র রিতেশ দেশমুখ । টানটান উত্তেজনায় পুরো স্টেডিয়াম সদৃশ একটা অডিটোরিয়াম ফুটছে । 
রিতেশ দেশমুখ এনাউন্স করলেন : এন্ড দি বেস্ট প্লে ব্যাক সিঙ্গার গোজ টু অরিজিৎ সিং । 
কুখ্যাত বা বিখ্যাত হরিণ মাংস খাদক আশা করেছিলেন হয়ত অন্য কিছু । কিন্তু শেষ পর্যন্ত্য বাঙালি ;

ব্যাস গায়ে লেগে গেল মহারানা খানের ,উঠেপড়ে লাগলেন এক সুরেলা বাঙালির কেরিয়ারের বারোটা বাজানোর । 

বাঙালি সব জানলো,, সব দেখলো ,,তারপর তীব্র প্রতিবাদ করে খান দানের বারোটা বাজিয়ে পরপর দুটো ছবি সুপারহিট করিয়ে প্রমান করলো আমরা বাঙ্গা লি। আমরা ব্রুস লি এর ছোট ভাই। আমাদের কেউ একগাল চড় মারলে আর এক গাল বাড়িয়ে 
দি ।

এটা কি বলবেন বাঙালির সুইসাইড না মার্ডার ?

আবার  একটু ফ্ল্যাশব্যাকে চলুন….

নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স ১৯৯৬–২০১২’–এ প্রণব মুখার্জি জানিয়েছেন, জওহরলাল নেহরুর সম-সাময়িক কংগ্রেসের নীতিনির্ধারক নেতা কুমারস্বামী কামরাজ বলেছিলেন, ‘নো হিন্দি, নো পিএম’। 
সেই ট্র্যাডিশন এখনো চলছে ।
প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রতিযোগিতা থেকে সুকৌশলে সরিয়ে দিতেই প্রণব মুখার্জির সামনে ‘‌রাষ্ট্রপতি’‌ পদটি মিষ্টি থালায় সাজিয়ে তুলে দিয়েছিল কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তার থেকে ‘অনেক বেশি যোগ্য ছিলেন’ প্রণব মুখার্জি। এ কথা বলেছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং নিজেই। কিন্তু রাজনীতির ঘোরপ্যাচে তাঁর বহু আকাঙ্খিত পদে আসিন হতে পারেননি।কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তে প্রণব মুখার্জির পরিবর্তে ড.‌ মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে প্রণব বাবুর বই প্রকাশের অনুষ্টানে এসে স্বয়ং মনমোহন সিং বলেছিলেন 
"২০০৪ সালে সনিয়াজি যখন আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তখন আমার কিছু করার ছিল না। প্রণব সবচেয়ে সম্মানীয় সহকর্মী ছিলেন। তিনিই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী হতে না-পারায়, ওঁর মধ্যে ক্ষোভ থাকাটাই সঙ্গত। কিন্তু, এতে আমার যে কিছু করণীয় ছিল না, প্রণবও জানতেন। তাই দু-জনের সম্পর্কে কখনও চিড় ধরেনি।’

কি বলবেন এটাকে । আমি বলি এটাও মার্ডার । বাঙালি সত্তার মার্ডার । অহিন্দি ভাষীদের অহমিকার খুন ।

দাঁড়ান দাঁড়ান…
এখনো শেষ হয়নি ..
এবার আবার টিভিতে চোখ দিন..
শুনতে পাচ্ছেন… শুরু হচ্ছে.. সিরিয়াল..নাম দাদাগিরি..
লর্ডসে জামা ওড়ানো ছেলেটা মেক আপ করে সং সেজে দাঁড়িয়েছে ।
আপনাকে আনন্দ দিতে কোমর নাচাচ্ছেন । 
এবার একটু পুরোনো ইতিহাস শুনুন..

একটা সাদামাটা কলঙ্ক লাগা জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়া একজন বাঙালি অধিনায়ক সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে একটা দলকে দাড় করিয়ে যখন উপলব্ধি করলেন তিনি নিজেই খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে একটা শক্তপোক্ত হাত খুঁজছেন তখন কেউ ছিলনা ওনার পাশে । কিন্তু এভাবে কি বাঙালি হারতে পারে যখন আবার ওনার নামে মহারাজ আছে । ফিরে এলেন,,ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানাধিকারী হয়ে । কিন্তু বাঙালি তো ,তাই আবার খাদের কিনারায় ধাক্কা দিলেন কিছু পড়শী যাদের কিনা উনিই বাড়ি করে দিয়েছিলেন । 

বাঙালি আবার প্রতিবাদ করলো । প্রায় প্রত্যেক বাঙালি মন খুলে ক্রিকেটার সৌরভ এর স্টেজ শো দাদাগিরি সুপারহিট করলো । 
যে হাতে পৃথিবী শাসন হত আর যে চোয়ালে ছিল দাঁত চেপে লড়ে যাওয়া দম সেই হাতে মাইক্রোফোন আর গালে ক্রিম লাগানো দাদাকে কে দেখে বাঙালির সে কি আনন্দ ।


আরো অনেক আছে,,আর বলছি না । বাঙালি বীর ভুলেই গেছে আত্মলিঙ্গম পেছনপুরম ছাড়াও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গেলে সময় বুঝে ফোঁস করতে হয় । কলকাতার ফুটপাত থেকে দার্জিনিং এর পাহাড়ে যেখানেই তাকান দেখবেন বাঙালি কত ভালো হিন্দি জানে তার একটা প্রর্দশন চলছে । বাঙালি হয়ে বাঙালির বুকে ব্যবসা করা কোম্পানির কাছে এখন বাঙালির কোন দাম নেই । শুধু কি তাই আমরা যাদের লোকসভা রাজ্য সভায় পাঠাচ্ছি সেগুলোও অবাঙালি । তাই তো ওনারা প্রকাশ্য রাস্তায় গর্ব করে মিটিং মিছিল করে বলেন বাঙালি ঝগড়ুটে জাতি । কালাজাদু জানে । ড্রাগ খায় ।

আসলে  আমরা বাঙালিরা রাজ্যে সরকারের চাকরি চাইবো , গুজরাটের বেতন চাইবো , আমেদাবাদের মত পুলিশ চাইবো , কাশ্মীরে জমি চাইবো , উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী চাইবো, কেরালার হাতি চাইবো কিন্তু বাঙালির অপমানের কথা বললেই মুখ বেঁকিয়ে বলবো " দাদা আমি এই সব নোংরা রাজনীতিতে নেই " ।

কি ?? কিছু মনে পড়ছে ?
আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি ?
মাধ্যমিকের সময় যে প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক বুঝতে পারতেন না এবার বুঝতে পারবেন ।

 প্রশ্নটা ছিল " লাইসোজোম কে আত্মঘাতী থলি বলে কেন ?
মেলাতে পারছেন নিজের সঙ্গে লাইসোজোমকে ?

অনেক বেশি বকলাম ,, 
হ্যাশট্যাগ জাস্টিস অনেক করেছেন ।
এবার বাঙালি একটু #JusticeForPM ট্যাগানোর সাহস করুক দেখি । 
#PM মানে শুধু প্রধানমন্ত্রী হয় না প্রণব মুখার্জিও হয় রে পাগলা ।


তথ্যসূত্র : গুগুল দা
#অনিচ্ছাকৃত আঘাত পেলে ক্ষমাপার্থী ।

No comments:

Post a Comment