Monday, October 5, 2020


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ফেরারি মন

সুস্মিতা পাল কুন্ডু


 বাবা বারবার ফোনে বলে ,আমি আর কয়দিন আছি মা,একবার আয় ,একটু ঘুরে যা | মারও কত অভিযোগ ,"অমৃতা তুই আমাদের একেবারেই ভুলে গেলি মা ?" অমৃতা কেমন করে বোঝাবে ,সে কিছুই ভোলে নি ! তার যে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে- ই করে না,বেশ আছে এই বিদেশ-বিভুয়ে ; কি করে ভুলবে সুবিনয়ের বাবার সেই অপমানের কথা ! 
 " আমার ছেলের দিকে হাত বাড়িয়ো না অমৃতা ,গরীব মাষ্টারের মেয়ে তা আবার নার্স ; নিজের ছেলের বউ কিছুতেই তোকে করব না আমি |" 
 সুবিনয় প্রতিবাদ জানালেও বাবার অমতে তাকে বিয়ে করারও সাহস দেখাতে পারেনি | বড়লোকের একমাত্র মেয়ে সুমনার সাথে সুবিনয়ের বিয়ে ঠিক করে সুবিনয়ের বাবা |অপমানে ,লজ্জায় অনেক দূরে চাকরী নিয়ে চলে আসে অমৃতা | মার ফোনে শুনেছে সুমনার সাথে সুবিনয়ের বিয়ে হয়েছে | দু'বছর কেটে গেল....সে কি পারল সুবিনয় কে ভুলতে ! কিছুদিন আগে পাড়ার মেয়ে পৌলমীর ফোনে জানতে পারল সুবিনয়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছে...কেমো চলছে ;  ক'দিন নিজের সাথে লড়াই করেছে ,শেষপর্যন্ত আর পারেনি অমৃতা ,নার্সিং হোমের নাম শুনে নিয়ে ছুটে এসেছে কলকাতায় | নার্সিং হোমে পৌঁছে এনকোয়ারিতে সব জেনে নিয়ে লিফটে উঠতে যেতেই সুবিনয়ের বাবার সাথে দেখা.. 
 — কাকু কেমন আছে এখন ? 
 — সুমনা ,ক্ষমা করিস মা ,তোকে অনেক দুঃখ দিয়েছিলাম ,ভগবান তাই শাস্তি দিলেন ; 
 — না না কাকু ,ভাগ্যে যা লেখা থাকে কেউ খণ্ডাতে পারে না ,সুমনা কোথায়..? 
 — অসুখটা ধরা পড়তেই ওর বাবা ,ওকে নিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে ,বলল এসব ওর সহ্য হবে না... মা চল, , তোকে দেখলে আমার ছেলের একটু ভালো লাগবে... একটা লোভ হলেও সামলে নিল অমৃতা ..
  — কাকু এখানে দু'লাখ টাকা আছে ,সুবিনয়ের চিকিৎসা করান ,চিন্তা করবেন না..ঠিক হয়ে যাবে ও আর সুমনাকে বোঝান..ও ঠিক ফিরে আসবে ....
   —মা ,তুই এভাবে আমার অপমানে প্রতিশোধ নিলি ! এ টাকা আমি কিছুতেই নিতে পারব না ...
   — না কাকু , এটাকে প্রতিশোধ ভাববেন না...এরকম পরিস্থিতি হোক ,আমি কোনো দিন চাইনি ; চিকিৎসার যেন কোনো ত্রুটি না হয় ..
   — একবার যাবি না মা ...? — না কাকু থাক ,দুর্বল হয়ে পড়ব...ওর এখন সুমনাকে খুব দরকার.. লিফটে না উঠে ভাঙ্গা মনটা আবার শক্ত করে ,অমৃতা পা বাড়ায় নিজের কাজের জায়গায়..... 


*************************


 দু'বছর কেটে গেছে ...পৌলমী সেদিন ফোনে জানিয়েছে সুবিনয় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে ...ওর সাথে একদিন রাস্তায় দেখাও হয়েছিল | ভগবানকে একরাশ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে শুধু আর নিজের মনকে শুধু শক্ত করে নিয়ে কাজের মধ্যে ডুবে গিয়েছে | -- ও দিদি ,তোমার চিঠি ... -- হ্যাঁ গো , দেখো তো ... রুমমেট শিবানীর হাতে নীল খামে জড়ানো চিঠিটার উপর নিজের নামটা দেখে একটু অবাক হল ,কে লিখবে তাকে চিঠি ! একরাশ দ্বিধা নিয়ে চিঠিটা খুলে পড়তে পড়তে চোখটা কখন ঝাপসা হয়ে যায় জানতেও পারে না... 
স্নেহের মা 
অমৃতা, 
সুবি ভালো হয়ে গিয়েছে ,তোর টাকাটা আমার খুব কাজে লেগেছিল | সুমনাকে অনেক ফেরাতে চেষ্টা করেছিলাম..ফিরে আসেনি | সুবিকে অনেকবার বলেছি তোর সাথে দেখা করতে..কিছুতেই রাজি নয় | প্রিয়তোষবাবুর কাছ থেকে ঠিকানা জোগাড় করেছি তোর | আমি আর সুবির মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি | তোকে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে এসেছি | আসবি মা ?
                 -- কাকাবাবু ....

অমৃতা এক পা করে এগোয় ; কবে থেকে যে এই ডাকের জন্যই অপেক্ষা করে বসে আছে ..||

No comments:

Post a Comment