ফেরারি মন
সুস্মিতা পাল কুন্ডু
বাবা
বারবার ফোনে বলে ,আমি আর কয়দিন আছি মা,একবার আয় ,একটু ঘুরে যা | মারও কত
অভিযোগ ,"অমৃতা তুই আমাদের একেবারেই ভুলে গেলি মা ?" অমৃতা কেমন করে বোঝাবে
,সে কিছুই ভোলে নি ! তার যে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে- ই করে না,বেশ আছে এই
বিদেশ-বিভুয়ে ; কি করে ভুলবে সুবিনয়ের বাবার সেই অপমানের কথা !
" আমার ছেলের দিকে হাত বাড়িয়ো না অমৃতা ,গরীব মাষ্টারের মেয়ে তা আবার নার্স ; নিজের ছেলের বউ কিছুতেই তোকে করব না আমি |"
সুবিনয়
প্রতিবাদ জানালেও বাবার অমতে তাকে বিয়ে করারও সাহস দেখাতে পারেনি |
বড়লোকের একমাত্র মেয়ে সুমনার সাথে সুবিনয়ের বিয়ে ঠিক করে সুবিনয়ের বাবা
|অপমানে ,লজ্জায় অনেক দূরে চাকরী নিয়ে চলে আসে অমৃতা | মার ফোনে শুনেছে
সুমনার সাথে সুবিনয়ের বিয়ে হয়েছে | দু'বছর কেটে গেল....সে কি পারল সুবিনয়
কে ভুলতে ! কিছুদিন আগে পাড়ার মেয়ে পৌলমীর ফোনে জানতে পারল সুবিনয়ের
ক্যান্সার ধরা পড়েছে...কেমো চলছে ; ক'দিন নিজের সাথে লড়াই করেছে
,শেষপর্যন্ত আর পারেনি অমৃতা ,নার্সিং হোমের নাম শুনে নিয়ে ছুটে এসেছে
কলকাতায় | নার্সিং হোমে পৌঁছে এনকোয়ারিতে সব জেনে নিয়ে লিফটে উঠতে যেতেই
সুবিনয়ের বাবার সাথে দেখা..
— কাকু কেমন আছে এখন ?
— সুমনা ,ক্ষমা করিস মা ,তোকে অনেক দুঃখ দিয়েছিলাম ,ভগবান তাই শাস্তি দিলেন ;
— না না কাকু ,ভাগ্যে যা লেখা থাকে কেউ খণ্ডাতে পারে না ,সুমনা কোথায়..?
—
অসুখটা ধরা পড়তেই ওর বাবা ,ওকে নিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে ,বলল এসব ওর সহ্য হবে
না... মা চল, , তোকে দেখলে আমার ছেলের একটু ভালো লাগবে... একটা লোভ হলেও
সামলে নিল অমৃতা ..
— কাকু এখানে দু'লাখ টাকা আছে ,সুবিনয়ের চিকিৎসা করান ,চিন্তা করবেন না..ঠিক হয়ে যাবে ও আর সুমনাকে বোঝান..ও ঠিক ফিরে আসবে ....
—মা ,তুই এভাবে আমার অপমানে প্রতিশোধ নিলি ! এ টাকা আমি কিছুতেই নিতে পারব না ...
— না কাকু , এটাকে প্রতিশোধ ভাববেন না...এরকম পরিস্থিতি হোক ,আমি কোনো দিন চাইনি ; চিকিৎসার যেন কোনো ত্রুটি না হয় ..
— একবার যাবি না মা ...? — না কাকু থাক ,দুর্বল হয়ে পড়ব...ওর এখন সুমনাকে
খুব দরকার.. লিফটে না উঠে ভাঙ্গা মনটা আবার শক্ত করে ,অমৃতা পা বাড়ায়
নিজের কাজের জায়গায়.....
*************************
দু'বছর
কেটে গেছে ...পৌলমী সেদিন ফোনে জানিয়েছে সুবিনয় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে
...ওর সাথে একদিন রাস্তায় দেখাও হয়েছিল | ভগবানকে একরাশ কৃতজ্ঞতা
জানিয়েছে শুধু আর নিজের মনকে শুধু শক্ত করে নিয়ে কাজের মধ্যে ডুবে
গিয়েছে | -- ও দিদি ,তোমার চিঠি ... -- হ্যাঁ গো , দেখো তো ... রুমমেট
শিবানীর হাতে নীল খামে জড়ানো চিঠিটার উপর নিজের নামটা দেখে একটু অবাক হল
,কে লিখবে তাকে চিঠি ! একরাশ দ্বিধা নিয়ে চিঠিটা খুলে পড়তে পড়তে চোখটা কখন
ঝাপসা হয়ে যায় জানতেও পারে না...
স্নেহের মা
অমৃতা,
সুবি
ভালো হয়ে গিয়েছে ,তোর টাকাটা আমার খুব কাজে লেগেছিল | সুমনাকে অনেক ফেরাতে
চেষ্টা করেছিলাম..ফিরে আসেনি | সুবিকে অনেকবার বলেছি তোর সাথে দেখা
করতে..কিছুতেই রাজি নয় | প্রিয়তোষবাবুর কাছ থেকে ঠিকানা জোগাড় করেছি তোর |
আমি আর সুবির মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি | তোকে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে
এসেছি | আসবি মা ?
-- কাকাবাবু ....
অমৃতা এক পা করে এগোয় ; কবে থেকে যে এই ডাকের জন্যই অপেক্ষা করে বসে আছে ..||
No comments:
Post a Comment