পুরস্কার
অভিজিৎ সেন
একমাত্র মেয়ে প্রতিভা চৌধুরী। অত্যন্ত মেধাবী ও সরল মনের। স্কুল জীবন থেকেই ধৈর্যশীলা, দয়ালু,সেবা পরায়ণতার মনোভাব তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। সহপাঠীর জ্বর, পেটব্যথা, মাথাব্যথা,হাত পা কেটে গেলে, স্কুলে কারো কোন শারীরিক সমস্যা হলে সে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে এসে সেবা শুশ্রূষা শুরু করে দিত । হঠাৎ কেউ শ্রেণিকক্ষে বমি করে দিলে সে নির্দ্বিধায় জল এনে পরিষ্কার করে, রুগীর সেবায় লেগে যেত। আবার পরীক্ষাতেও সবসময় প্রথম স্থানই পেয়ে এসেছে। বিদ্যালয়ের সকলেই তাকে পছন্দ করতো। শিক্ষক,শিক্ষিকারা তাকে খুব স্নেহ করতেন । ভালোবেসে তাঁরা 'ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল' বলে ডাকতেন । সে স্থির করে নিয়েছিল ভবিষ্যতে ডাক্তার হবে। একদিন সে ডাক্তার হলো। তবে তার লড়াই সহজ ছিল না।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে প্রতিভা। বাবা প্রভাত চৌধুরী একটি বহুতল আবাসনে নাইট গার্ডের কাজ করে। মা তনুজা চৌধুরীকে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে হয়, তার বাবা ততটা সময় দিতে পারেনা বলেই। বাড়িতে সেলাই মেশিন আছে, পাড়ার মেয়ে বউদের কাপড় সেলাই করে সংসারের কিছুটা অভাব দূর করার চেষ্টা করে। মেয়ের কাছের মানুষ তার মা । মায়ের কাছেই যতো আবদার। তবে সে পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য বুঝতো । কখনোই অপ্রয়োজনীয়,অবান্তর আবদার করতো না ।
প্রতিভা অসম্ভব মেধাবী হওয়ার কারণে শিক্ষাজীবনে দয়ালু শিক্ষকদের থেকে সাহায্য পেয়েছে।
ডাক্তারী পড়ার বিপুল খরচ দয়ালু মানুষের সাহায্য নিয়ে করতে হয়েছে। তার পরেও পরিবার বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ নিতে হয় লেখাপড়ার জন্য।শেষে সে ডাক্তার হলো। লড়াই সফল হলো। সেদিন শুধু তার পরিবার নয় তার শুভানুধ্যায়ীরাও খুব খুশি হয়েছিল।
ডাক্তার হবার পর থেকে দিনরাত এক করে দিত মানুষের সেবায়। একাজে যেন তার ক্লান্তি নেই । ক্লান্ত শরীরেরও প্রবল উৎসাহ নিয়ে আবার রোগীর সেবায় নিজেকে সঁপে দিত, কাজটিকে মনে প্রাণে ভালোবাসতো বলেই । পাড়ার মানুষ অসুখ হলেই তার কাছে ছুটে আসতো, সবাই জানতো সে ফিরিয়ে দেব না, যতো রাতই হোক না কেন ! এ মেয়ের সেবা শুশ্রূষা করতে কোনো ক্লান্তি বোধ নেই। বেশিরভাগ সময় বিনা পয়সাতেই চিকিৎসা করতো। চিকিৎসাকে সে পেশা হিসেবে নয় সেবা হিসেবে
মন থেকে গ্রহণ করেছিল। এই মানসিকতা তার স্কুল জীবন থেকেই লক্ষ্যনীয়। দিন নেই, রাত নেই কেউ এসে তার কাছে চিকিৎসার সাহায্য চাইলে সে ছুটে যেত। তার মনে কোন ভয় ছিল না। সে ভাবতো সে তো চিকিৎসক মানুষের সেবা করে, তার আবার কী ক্ষতি হবে? কেই বা ক্ষতি করবে?সমাজ চিকিৎসকে চিরকাল ভগবানের মতন দেখে। তার মনে হতো তার বিপদে তার পাশে মানুষেরা এসে দাঁড়াবে । তার তো এ সমাজে কোন শত্রু নেই। সব সময় সে হাসিমুখে সকলের সাথে কথা বলে। কেউ কটূ কথা বললেও হাসি মুখে বিবাদ এড়িয়ে যায়। বাড়িতে, পাড়ায়, বাড়ির বাইরে, কলেজে, চিকিৎসক হিসাবে তার কর্মস্থলে কেউ বলতে পারবে না সে কখনো কারো সঙ্গে অসভ্যতা করেছে, ঝগড়া-বিবাদ করেছে। নরম তুলোর মতো, মনের মেয়ে ডাঃ প্রতিভা চৌধুরী।
ছিপছিপে গড়নের, দীর্ঘাঙ্গী,গৌরবর্ণা প্রতিভা। বয়স চব্বিশের মেয়েটি কোনোদিন নিজের মুখের দিকে, চেহারার দিকে ঠিক করে তাকিয়ে দেখেনি, দেখার ইচ্ছা হলেও জীবনের লক্ষ্য পূরণের দিকেই ছিল তার একমাত্র ধ্যান ও সাধনা। সৌন্দর্য, বিলাসিতা, রূপচর্চার জন্য তার কাছে বিন্দু মাত্র সময় ছিল না । আজ জীবনের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। নিজেকে নিয়ে ভাববার মতো অবসর সময় আজ তার আছে। নির্জনে একা একা আজকাল যখন সে বসে তখন নিজের সঙ্গে কথা বলে,নিজেকে আয়নায় বারে বারে দেখে । নিজের রূপ দেখে নিজে লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে ওঠে। আজকাল সে সেজেগুজে কাজের জায়গায় যেমন যায় বাইরে বের হলেও আয়নার সামনে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে শুরু করে দিয়েছে।
বাবাকে আর নাইট গার্ডের কাজে যেতে দেয়না,মাকে সেলাইয়ের কাজে বসতে দেয়না। লেখাপড়ার জন্য বাড়ি বন্ধকের টাকা শোধ দিয়েছে।পুরোনো বাড়িটাই সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। খুব সামান্য ভিজিট নিয়ে সে রোগীর চিকিৎসা করে । যে দিতে পারে না তাকে হাসিমুখে চিকিৎসা করে। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার পরিচিত দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো দূরে দূরে।এমন দয়ালু ডাক্তারের অভাব চিরকালেই ছিল আমাদের সমাজে। তার উপরে সে হলো একজন মহিলা। বিশেষ করে মহিলারা তার কাছে বেশি আসতেন,তাদের বহু সমস্যা তার কাছে সহজেই বলতে পারার জন্য। তাদের বাড়ি থেকে অল্প দূরেই একটি বস্তি আছে। সেখানে সে প্রতি রবিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভলেন্টারি সার্বিস নিজে থেকেই দিতে শুরু করেছে ডাক্তারি পাশ করার পর থেকে । এই কাজটা করে সে মনে মনে শান্তি পেতো । তার মনে হয় সমাজের প্রতি তার যে দায়িত্ব আছে, মানুষের কাছে যতো ঋণ আছে এভাবে কিছুটা হলেও শোধ হবে । ডাক্তারি পড়া চলাকালে বহু সহৃদয় ব্যক্তিরা তাকে আর্থিকভাবে এবং বইপত্র দিয়েও সাহায্য করেছিল। তাই তার মনে হয় বস্তির অসহায়, দরিদ্র্য, অশিক্ষিত, দুর্বল, খেটে খাওয়া মানুষগুলিকে সাহায্য করলে তার কিছুটা দায়িত্ব পালন করা হবে । বস্তির একটি প্রাইমারি স্কুলের খোলা বারান্দায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে বস্তির লোকেদের চিকিৎসা করতে থাকে। সে যেমন দয়ালু মনের মানুষ,তেমনি সুচিকিৎসক ।
বাড়ির লোক এবং পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠরা তাকে এবার বিয়ের বিষয়টা নিয়ে ভাবতে বলে। তারা বলে,"তোর বাবা-মায়ের বয়স হচ্ছে, তোর বিয়ে হলে তারাও নিশ্চিন্ত হয়ে যাবে। তোর এবার বিয়ে করা উচিত। তোর জন্য ভালো ছেলের অভাব হবে না । " সে কথা শুনে প্রতিভা শুধু হেসে মনে মনে একটু লজ্জাবোধ করে এবং মাথা নীচু করে কিছু কথা না বলে চলে যায় । বিয়ের কথাটা তার এখন আর খারাপ লাগে না। তারও মনে হয় যদি একজন মনের মতন সাথী হতো । সে তার বাবা-মাকে বলে দিয়েছে তাদের পছন্দেই সে বিয়ে করবে। কিন্তু কোন ডাক্তারকে বিয়ে করবেনা। সে এমন ছেলেকে বিয়ে করতে চায় যে তার অবস্থাটা ভালো করে বুঝতে পারবে। যেহেতু সে তার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে তাই বাবা-মাকে একা ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেনা। বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব সে তার বাড়ি থেকেই পালন করবে অন্য কোথাও গিয়ে নয়। আমাদের সমাজে এটা এখনো স্বাভাবিক নয় তবে অসম্ভব নয়। কেউ ঘরজামাই হয়ে থাকতে চায় না। আবার অনেকেই লোভে পড়ে,কর্মহীন বলে এমন বিবাহে রাজি হয়ে থাকে এমন দৃষ্টান্তও আছে,এসব মানুষ বেশিরভাগ সময় গলার কাঁটা মতন আচরণ করলেই, জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সুখের বদলে অ-সুখই ঘিরে ধরে যা দিনে দিনে ছড়িয়ে পড়ে দুরারোগ্য ব্যাধির মত সমস্ত শরীরে ও মনে । তাই প্রতিভা খুব ভেবেচিন্তে জীবনে বিবাহের সিদ্ধান্ত নিতে চায়।
গত রাতে একটু দেরি হয়ে গেছে ঘুমোতে। বাড়িতে কলেজের জীবনের কিছু বন্ধু-বান্ধবী এসেছিল । সন্ধ্যা থেকে জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতে অনেক রাত হয়ে যায় । ফলে পরের দিন ভোরে ওঠা হলো না। একটু দেরি হয়ে গেল। বাড়িতে দুজন কাজের লোক রেখেছে। একজন রান্নার ও অন্যজন বাড়ির অন্যান্য কাজের জন্য। মা-বাবাকে প্রতিভা শেষ জীবনে সুখী করতে চায়। ওরা আজীবন বহু কষ্ট করেছে । কাজের মানুষ দুজনেরই নিজের বলতে আর কেউ নেই। এবাড়ি এখন ওদেরও বাড়ি। অল্প দিনের মধ্যে পরিবারের লোকেরা এদের যেমন আপন করে নিয়েছে, তেমনি এরাও তাই করেছে।মনেই হবে না এরা কাজের লোক। প্রতিভা যেদিন সময় পায় সেদিন এদের সঙ্গে কাজে লেগে পড়ে । ওরা বাধা দিলেও মানে না। সে বলে,"আমি অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে। ছোট বেলায় লেখাপড়ার পাশাপাশি রান্না থেকে শুরু করে সকল কাজেতে মাকে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছি । আমার কোথাও তাই অসুবিধা পড়িনি। ডাক্তার হয়েছি বলে সংসারের কাজ করা ছেড়ে দেব? তোমরা চিন্তা করোনা আমার কোন অসুবিধা হবে না।"এই বলে সে নিজেই রান্না করতে শুরু করলো। আজ সে বাবার পছন্দের মাছ রান্না করবে । ইলিশ-ভাপা । বাড়িতে ছয় সাত মাসে হয়তো একদিন হয়েছে আগে । আর্থিক দুরবস্থার জন্য সেটা সম্ভব হতো না। তবে বাড়িতে যেদিন 'ইলিস-ভাপা' হতো সেদিনটি প্রতিভার কাছে হয়ে উঠতো রীতিমতো উৎসবের দিন। আজ অবস্থার পরিবর্তনেও প্রতিভা ও তার পরিবার আগের মতই সহজ সরল জীবনযাপন করার মধ্যেই আনন্দ খোঁজে।
প্রতিভা ঠিক যেমন একজন জীবনসঙ্গী আশা করেছে তার মা-বাবা, শুভাকাঙ্ক্ষীরাও তেমনই অনুসন্ধান করে চলেছে। প্রতিভার এই সিদ্ধান্তে অকাট্য বাস্তব-সত্য আছে বলেই তারা বাবা-মা মেনে নিয়েছে। এমনকি মেয়েকে বলেছে যদি তার কাউকে পছন্দ হয় তাতে তাদের কোন আপত্তি নেই। গরীব হলেও উদার ও সংস্কারমুক্ত মনের মানুষ এরা । জাত-ধর্মের সুচিবায়ুতা এদের কখনই ছিল না। মেয়েকেও তেমন ভাবে গড়ে তুলেছিল। মেয়েকে তারা ছোট থেকেই চেনে। মেয়ে কখনো তাদের অবাধ্য হয়নি। কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় নি। মেয়ের লক্ষ্য যে অসহায়,দরিদ্র্য, দুর্বল মানুষের চিকিৎসা করা। এর জন্য স্বার্থত্যাগ করতে হয়। প্রতিভা তার মন ও মানসিকতাকে ছোট থেকেই একটু একটু করে গড়ে তুলেছে।তার জীবন-সঙ্গীর স্বভাব-চরিত্র বিপরীত হলে কোন ভাবেই মঙ্গলের কারণ হবে না।
পথ,নদী চলতে চলতে বাঁক নেয়। শুরু হয় ভিন্ন যাত্রা । জীবনও বাঁক নেয় যুক্ত হয় নূতন মাত্রা। প্রতিভার জীবনে হঠাৎ একদিন প্রবালের সাথে দেখা হলো। না, না তাকে সে আগে থেকে জানতো না। প্রথম পরিচয়। একবার মেডিক্যাল ক্যাম্প করতে তারা একটি পাহাড়ি এলাকায় এসেছিল। তিন দিনের ক্যাম্প। সেখানেই তাদের থাকতে হয়েছিল । প্রবাল সেনগুপ্তের সাথে এখানেই প্রথম পরিচয় । যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির দ্বারা বিষয়টি পরিচালিত হচ্ছে প্রবাল তাদের প্রতিনিধি হয়ে এখানে এসেছে। প্রথম পরিচয়েপ্রবালকে আলাদা মনে হয়েছে। সে জানতে পারে প্রবাল অনাথালয়ে বড়ো হয়েছে। পথ-দুর্ঘটনায় তার মা-বাবা মারা গেলে তাকে উদ্ধার করে ফায়দা ডিসুজা এখানে নিয়ে আসে, তখন তার বয়স তিন। এখানেই তার জীবন অন্য অনাথ শিশুদের মতো কাটে । ফাদার ডিসুজা টেইলর তাকে এখানে নিয়ে আসে। আদর যত্নে বড়ো করে বাকি শিশুদের মতো। ওকে অন্যের হাতে তুলে দেয় নি।ফাদার শিশুগুলোকে প্রগতিশীল শিক্ষা দিয়েছে কিন্তু কখনোই ধর্মান্তরিত করে নি । তিনি বিশ্বাস করতেন সব মানুষই যেহেতু এক ঈশ্বরের সন্তান তখন জাতের বিভাজন মনের ক্ষুদ্রতা,সংকীর্ণতা ছাড়া কিছুই না। প্রবাল এখান থেকে পড়াশুনা করে। খুব ভালো ছাত্র ছিল। অনায়াসে উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি করতে পারতো, কিন্তু সে সমাজ সেবাকে,অনাথ শিশুদের, বৃদ্ধাশ্রমের মানুষদের সেবায় নিজেকে আজীবন নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । জীবন যাপনের জন্য একটি দৈনিক ইংরেজি পত্রিকায় সহ: সম্পাদকের কাজ করে। মূল লক্ষ্য অনাথ শিশুদের, বৃদ্ধাশ্রমের মানুষদের পাশে সব সময় থেকে তাদের সেবা- শুশ্রূষা করা । দুজন যেন একে অপরের যথার্থ পরিপূরক । " খুঁজিয়া পাইলো যেন হাঁড়ির মতো সরা " এ যেন চন্ডীমঙ্গলের কালকেতু ও ফুল্লোরার মিলন । উভয়ের বন্ধুত্ব গভীর হলো। দুজনের জীবনের লক্ষ্য মিলে গেছে। আর কোন বাধা নেই। বাড়ির কোন অমত নেই। এরপর থেকে প্রতিভার দিনে দিনে যেন রূপ সৌন্দর্য আরও আকর্ষনীয় হয়ে উঠতে লাগলো। প্রেমে পড়লে এমনি হয়ে থাকে সাধারণত ।পাড়ার লোকেরাও খুশি, ছেলেটির অমায়িক ব্যবহারে । ছয় মাস পরে বিয়ের একটি ভালো দিন আছে,বিয়ে তখন হবে ঠিক হলো।
বিয়ের তারিখ যতই এগিয়ে আসছিল প্রতিভা ততই যেন আনমনা হতে শুরু করেছিল। নির্জনে সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগছিলো তার। তার উপর কাজের চাপও দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে । কাজের সময় তার অন্য বিষয়ে খেয়াল থাকে না। চিকিৎসার প্রয়োজনে মাঝে মাঝে দূর গ্ৰামে, বিপদসংকুল ও এমনকি অগম্য স্থানেও যেতে হয় তাকে ।
এই তো তিন দিন আগের ঘটনা শহরের একটি ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় রোগী দেখে ফিরতে রাত হয়ে যায়। সে একাই চলাফেরা করে দিনে ও রাতে। সে মনে করে তার কোন শত্রু হবেই না। সে কাউকেইঘৃণা করে না। সে মানুষের সেবাতেই বিশ্বাস করে । পথের মানুষই তার পরিচয় জানতে পেরে কতোবার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেছে। তার মনে হয় মানুষকে বিশ্বাস না করার চেয়ে পাপ ও অন্যায় যেন কিছু নেই। রাত নটা হবে। তখনই পথঘাট একেবারে জনমানব শূন্য । পথে রাতের শাসন শুরু করেছে কুকুরের দল। যে বাসস্টপে এসে দাঁড়ালো প্রতিভা, সেখানে কোন লোক নেই। কয়েক মিনিটের মধ্যে কোথা থেকে কতগুলো মদ্যপ লোক এসে প্রায় তার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। মুখ দিয়ে ছুটছে দুর্গন্ধ। একে অপরে নোংরা ভাষায় গালাগাল দিচ্ছে। প্রতিভার পড়নে ডাক্তারি ইউনিফর্ম । এমন ভাবে দুই এক মিনিট পার হওয়ার পর একটি যাত্রীবাহী বাস এসে দাঁড়ালো। সে বাসটাতে কোন যাত্রী নেই ড্রাইভার আর কন্ডাক্টর ছাড়া। প্রতিভা একবার ভাবলো যাবে কি না ? পরে মনে হলো ভয়ের কী আছে এমন ভাবে কতই না সে যাতায়াত করেছে। মিনিট দশেক পরে সে তার স্টপেজে নেমে যাবে। প্রতিভা গাড়িতে উঠলো পেছনে পেছনে উঠলো মদ্যপের দলটিও । প্রতিভার সরল মন ওদেরকে অবিশ্বাস করলো না । গাড়ি চলার একটু পর থেকেই ওই মদ্যপের দলটি কেমন লোভী লোভী চোখে প্রতিভার দিকে তাকিয়ে আছে । আর নিজেদের মধ্যে কী জানি বলাবলি করছিল । প্রতিভার এর আগে কখনো এমন অস্বস্তি হয়নি। আজকাল তার এসব দেখলে কেমন জানি অস্বস্তি হয়। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে এটা তার কেন যে হচ্ছে বুঝতে পারছে না। মদ্যপ লোকগুলোর মধ্যে একজন তার দিকে এগিয়ে আসছিল। প্রতিভার মনে মনে এবার ভয় হতে শুরু হল। তার প্রবালের কথা মনে হল। মনে হচ্ছে যদি সে তার সাথে থাকতো হয়তো তার ভয় লাগতো না। মদ্যপ ব্যক্তিটি ক্রমশ তার দিকে এগিয়ে আসছিল, ঠিক তখনই গাড়িটি একটি স্টপেজে এসে থামলো। সেখান থেকে জনা আটেক সশস্ত্র পুলিশ উঠে এলো গাড়িতে,দেখে মদ্যপের দলটি ভয় পেয়ে গেল। যে এগিয়ে আসছিল সে দ্রুত নিজের দলে যোগ দিলো। পুলিশদের দেখে শান্ত ভদ্র হয়ে বসে থাকলো । পাঁচ মিনিট পরে প্রতিভা তার নির্দিষ্ট স্টপেজে নেমে গেল। সেদিন সত্যিই সে বড্ড ভয় পেয়েছিল । মদ্যপগুলির হিংস্র লোভী চোখগুলো তাকে রাতের বেলাও ঘুমের মধ্যে তাড়া করছিল । প্রিয় মানুষটিকে চিৎকার করে ডাকছিল, কিন্তু সে শুনতে পারছিল না, তার দিকে দ্রুত ছুটে যাচ্ছিল। কিছুতেই প্রিয় মানুষটিকে ধরতে পারছিল না। আর পেছনে দাঁত,নখসহ রক্তচক্ষুর হিংস্র দলটি ছুটে আসছিল তাকে ধরবার জন্য । ভয়ে প্রতিভা কেঁপে উঠছিল, একেবারে ঘেমে যায়। মদ্যপের দলটি প্রায় তাকে ধরে ফেলে, বিছানায় সে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে বসে। তখন রাতের আঁধার মুছে সবেমাত্র ভোরের সূর্যোদয় হয়েছে। প্রতিভা বুঝতে পারলো সে বিভৎস স্বপ্ন দেখেছে ।
বিয়ের আর মাত্র ১৫ দিন বাকি । প্রায় সকল আয়োজন সুসম্পন্ন হয়েছে। পাড়ার লোকেরই এ ব্যাপারে সবচেয়ে আগ্ৰহ ও উৎসাহ বেশি। বিয়ে বাড়ির হাজার কাজ। তারা আনন্দের সাথে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের। প্রতিভা সেদিন তার মাকে বলল আজ সে ডিউটির পরে কিছু কেনাকাটি করে বাড়ি ফিরবে । তাই একটু দেরি হবে । তার মা বলল, "বিয়ের আগে কটা দিন না হয় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে। আমি কি তোমার সঙ্গে যাবো" । প্রতিভা বলল,"তুমি আবার কষ্ট করে যাবে কত রাতে ডিউটি শেষ হবে কে জানে। যদি তাড়াতাড়ি ডিউটি শেষ হয়ে যায় তবে আমার কিছু কেনার আছে সেগুলো কিনতেই যাব। তোমাকে কষ্ট করে যেতে হবে না। তুমি চিন্তা করোনা" । সেদিন তার রাত্রি ৮টার মধ্যে ডিউটি শেষ হয়ে গেল। নাইট ডিউটি ছিল কিন্তু তার বদলে আর একজন রাজি হলো। প্রতিভা বিয়ের জন্যে কিছু কেনাকাটি করবে, মেয়েদের অনেক কিছুরই প্রয়োজন থাকে, মেয়েদের সমস্যা মেয়েরাই বোঝে, তাই সহকর্মী ডাক্তার মহিলাটি তাকে বাজারে যাওয়ার সুযোগ করে দিলো ।
পথে যেতে যেতে একবার মনে হলো প্রবালকে ডেকে নিলে কেমন হয় ? পরে ভাবলো না থাক আর কদিন পরেই তো একসাথেই থাকবো । মনের মধ্যে দোটানা চলছে তখন। এক সময় সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে প্রবালকে ফোন করল । প্রবাল দেখলো প্রতিভার ফোন এসেছে মোবাইলে, ফোনটি রিসিভ করে বলল,"বিশ্বাস কর আমার মনে হচ্ছিল তুমি আমাকে এখনই ফোন করবে। ভাবতে ভাবতেই তোমার ফোন চলে এলো। তুমি তো এখন ডিউটিতে আছো।"প্রতিভা বলল আজ নাইট ডিউটি আমি করব না, অন্য একজন করবে। আমি একটু বাজারে এসেছি কিছু কেনাকাটি করার জন্য।"প্রবাল বলল ভালো করেছো । আমার এখন হাতে কোন কাজ নেই। চুপচাপ অনাথ আশ্রমে আমার ঘরে বসে আছি। তুমি চাইলে আমি তোমাকে সঙ্গ দিতে পারি ।" সামান্য কয়টা জিনিস কিনব । বেশি দেরি হবে না। আমি বাড়ি চলে যাব। তুমি ভেবোনা,একা একা কতই না এভাবে বাজারে এসেছি। কেনাকাটা করেছি। আবার বাড়িও ফিরে গেছি একা একাই । তুমি আবার কত দূর থেকে আসবে,আকাশটাও ভালো না যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে। দেখো কী গভীর কালো মেঘ করেছে ? বৃষ্টির সাথে হৃদয় কাঁপানো বজ্রপাত শুরু হয়ে যাবে। না না থাক তোমাকে আসতে হবে না। আমি খুব তাড়াতাড়ি বাজার করে ফিরে যাব, বাড়ি ফিরে তোমাকে ফোন করবো, রাগ করলে না তো?"প্রবাল বললো,"না না। তুমি সাবধানে এসো, এসে আমাকে ফোন করো।"
প্রতিভা নিউমার্কেটের লেডিস এম্পোরিয়াম থেকে বরাবর জিনিস কেনে। তার পছন্দের জিনিসগুলো নিয়ে খুব দ্রুত বেড়িয়ে পড়ল। আকাশের কালো মেঘ আরো ভয়াল হয়ে জাঁকিয়ে বসেছে। আর অল্প সময়ের মধ্যেই প্রবল বেগে বৃষ্টি শুরু হবে। একবার বৃষ্টি শুরু হলে টানা সময় ধরে হতে পারে। বলতে না বলতেই বৃষ্টি নেমে গেল। পুরো একটি ঘন্টা দোকানে বসে থাকতে হলো। বৃষ্টির সঙ্গে ছিল প্রবল ঝড়ো হাওয়া। সেই হাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। বৃষ্টি থেমেছে কিন্তু চতুর্দিকে
গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে শহরের রাস্তায়। পথে কোথাও জল জমে আছে। খুব সামান্য লোকই বাইরে আছে। জন মানব শূন্য পথে চলতে শুরু করল প্রতিভা । তাদের বাড়ি থেকে শহর মিনিট কুড়ির পথ । কিন্তু আজ যেন এই পথ অন্তহীন হয়ে গেছে । গভীর অন্ধকার,তার উপরে লোডশেডিং এবং নির্জন পথ সব মিলিয়ে যেন একটি বিকট চেহারার রূপ নিয়েছে। বাড়ি ফিরবে পথে একটিও টোটো বা অটো নেই। অগত্যা তাকে হাঁটা পথেই বাড়ির দিকে রওনা হতে হলো । শহরের কিছু শর্টকাট গলিপথ আছে। যে দিক দিয়ে গেলে খুব শীঘ্র বাড়ি পৌছানো যায় । সেই গলি পথগুলো খুব সংকীর্ণ। সেসব পথে রাতের বেলা নোংরা লোকের ভয়ে অনেকে যেতে চায় না। তবে প্রতিভা সেসব এলাকাতেও চিকিৎসা করেছে। সে পথ ঘাট গুলো তার কাছে ভয়ের নয়। তাই সে সাহস করে শহরের রাজপথ ছেড়ে নির্জন গলিপথে এগিয়ে চলেছে। সে ভেবেছে এই বৃষ্টির দিনে, বজ্র বাদলের দিনে কেউ আর গলির আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকবে না।
তবে আজ গলিপথটিতে পা দিয়েই প্রতিভার গা টা কেমন যেন শিউরে উঠলো । এমন তার কখনোই হয়নি। মনে হল গলির প্রতিটি বাঁকে ওঁত পেতে অপেক্ষা করে আছে কিছু হিংস্র জন্তু। তাদের চোখগুলো গাঢ় অন্ধকারে যেন জ্বলজ্বল করছে। তারা দল বেঁধে আছে শিকারের অপেক্ষায় । শিকার নাগালের মধ্যে এলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। প্রতিভা মনে মনে একটু ভয় পেলেও পর মুহূর্তে মনে এসব নেতিবাচক ভাবনাকে স্থান না দিয়ে সাহসে ভর করে এগিয়ে চলে এবং নিজেকে বুঝিয়েছে ভয় পেলে ভয় আরো চেপে বসে। জীবনে কত একা একা এমন গলিপথে,অন্ধকারে তাকে যেতে হয়েছে। কিছু হয়নি। আজও হবে না। এই বিশ্বাস নিয়ে তার জীবন, তার দর্শন। আজও এই বিশ্বাস নিয়েই সদা হাস্যমুখী মানুষের বেদনায় যে কাতর হয়ে ওঠে, যে রোগীর চিকিৎসা কে পেশা নয় জীবনের ধর্ম করে নিয়েছে সেই প্রতিভা জীবনে এমন বাস্তবের মুখোমুখি হবে মুহূর্তের জন্যও কল্পনাও করেনি ।
প্রতিভা অন্ধকার গলিটির পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। গলিটি যেখানে বাঁক নিয়েছে সেই বাঁকের মুখে এগিয়ে যাওয়ার সময় কিছু মানুষের চাপা গলায় ফিসফিসানির আওয়াজ যেন শুনতে পেলে। গলিটির বাঁকেরমুখ থেকে কিছুটা পথ খুবই নির্জন। পথের ডান পাশে একটি প্রাচীর ঘেরা পরিত্যক্ত ভাঙ্গা বাড়ি আছে ।প্রতিভার ভয় হতে লাগলো সে দ্রুত হাঁটতে শুরু করল । হঠাৎ দমকা হওয়ার মতো একদল মদ্যপ মুহূর্তের মধ্যে চিলের মতো ছো মেরে প্রতিভাকে নির্জন পরিত্যক্ত অন্ধকার বাড়িতে তুলে নিয়ে গেল। তার মুখ শক্ত করে চেপে ধরেছে একজন।সে চিৎকারে করার চেষ্টা করে কিন্তু পারছেনা । এরপর হাত পা শক্ত করে বেঁধে দেয়,শরীরের পূর্ণশক্তি প্রয়োগ করেও কিছু করতে পারলো না। বুঝতে পারলো জানোয়ারগুলোর সঙ্গে জোরে পেরে উঠবে না । ওদের সবাইকে চিনতে পেরেছে।বাসস্টপের সেই মদ্যপের দলটি । জংলি ইঁদুরের মতো প্রতিভার হাড়,মাংশ, রক্তবিন্দু পর্যন্ত খাচ্ছিল জানোয়ারগুলো। প্রতিভার রাগে, ঘৃণায়, যন্ত্রণায় দুচোখেরকোণ বেয়ে ঝরে পড়ছিল জলবিন্দু হয়ে তার মা-বাবার মুখ, প্রবালের মুখ, পাড়ার মানুষদের মুখ । ভেসে যাচ্ছিলো তার আদর্শ, ভেসে যাচ্ছিলো সমাজ সেবা ও কৃচ্ছ সাধনা । পরের দিন অর্ধ মৃত থ্যাতলানো প্রতিভার শরীরটি সেখানে পড়ে ছিল । অজস্র ক্ষতের চিহ্ন সারা শরীর জুড়ে ।আঁচরের দাগ,বিন্দু বিন্দু রক্ত জমে কালো হয়ে আছে মেঝের অনেকটা জায়গা জুড়ে । এ মেয়েকে আর চেনা যায় না আগের মতন । প্রতিভা জীবিত আছে কিন্তু সে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। শুধু চোখ দুটো মৃত মাছের মতো চেয়ে আছে স্থির হয়ে। অজস্র প্রশ্ন তীক্ষ্ণ জ্বলন্ত শলাকার মতো ঝরে পড়ছিল। অসংখ্য 'কেন' রাতের জোনাকির মতো ঘুরছিল তাকে ঘিরে। শরীরে ও মনে যে আঘাত পেয়েছে এটাই হয়তো ছিল তার সেবা ও শুশ্রূষার উপযুক্ত পুরস্কার, আমাদের বিকৃত মানসিকতার।
পরের দিন তার গোঙ্গানীর আওয়াজ শুনে এলাকার মানুষ সেখানে ছুটে গেল। প্রতিভাকে দেখেই তারা চিনতে পারল। ইনি তো ডাঃ প্রতিভা চৌধুরী যিনি আমাদের বিপদে-আপদে পাশে থাকেন। আজ তার এই অবস্থা দেখে সকলে রাগে ফেটে পড়লো,বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। পুলিশে খবর দেওয়া হলো। বাড়ির লোকেরা জানতে পেরে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এলো। পাড়ার লোক ভেঙে পড়লো । প্রতিভার কাছ থেকে পুলিশ অপরাধীদের তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করলো। প্রতিভা বলার মতো অবস্থায় তখন ছিল না। পরে সব বিবর্ণ দিয়েছে। পুলিশ এলাকার লোকেদের চাপে পড়ে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে বাধ্য হয়েছে মাত্র দুই দিনের মধ্যেই ।
যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে অপরাধীরা কিছুদিনের জন্য কারাবাস করে আবারও পুরনো জীবনে ফিরে গেলো। এদের কোন পরিবর্তন হলোনা, কোন অনুশোচনাও হলো না মনে। নেশা, এদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে আবেগ,বিবেক এবং মনুষ্যত্বকে । তদন্ত করতে গিয়ে অপরাধী এবং তাদের পৃষ্টপোষকদের শেকড় যে কতো গভীর ও দৃঢ় বোঝা গেল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দিল, সবটাই অলৌকিক ভাবে ধোঁয়াশায় ঢাকা । কিছুদিন হৈচৈ হলো। প্রতিবাদে মিছিল হলো। খবরের কাগজে গরম গরম খবর বের হলো। নিউজ চ্যানেলগুলি বিতর্কের ঝড় তুললো । পক্ষ-বিপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করল। তারপর পরিবেশ আবারও শান্ত হয়ে গেল। আমরা সবাই নিজের নিজের চক্রব্যূহতে অভাব অনটনের সঙ্গে, নিত্য দিনের চাহিদার সঙ্গে, যন্ত্রণার সঙ্গে, বাস্তবের রুক্ষতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে এমন নৃশংস, জঘন্য, অপরাধের ঘটনা মনের শক্ত মাটির নীচে চাপা পড়ে গেল । অসহায়ের মতো আমরা ভুলে গেলাম প্রতিভার যন্ত্রণা, প্রতিভার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ক্ষমাহীন অপরাধ । প্রতিভাকে দেখে মনে হয় হঠাৎ কোনো গাছের উপর বজ্রাঘাত হলে সেই সবুজ পল্লবীত সতেজ ছায়া দানকারী গাছটি যেমন পুড়ে ছাই হয়ে যায় আজ প্রতিভার তেমনি হয়েছে । অথচ শিকারির দল বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে সমাজের বুক দাপিয়ে। এরা বেলাগাম, বেপরোয়া এবং সংরক্ষিত । অপেক্ষা করছে পরবর্তী শিকারের । আরেকটি প্রতিভার।
No comments:
Post a Comment