অক্ষর পরিচয়
কবিতা বণিক
- দিদি ! তোমার টিফিন।
- সীতামণি! ওহ! দে।
এটাই ওর নাম। রোজই তো সবসময়ই ওকে দেখি কিন্তু আজ যেন অন্যরকম লাগছে। আমার মনের ভিতরটাও একটা অতৃপ্তি উঁকি দিচ্ছে। ও তো স্কুলে পড়ে। আমার থেকে বেশ কয়েক বছরের ছোট। রোজ সকালে আসে সারাদিন থাকে সন্ধ্যেবেলায় মায়ের সাথে বাড়ি ফিরে যায়। সেদিন স্কুল থেকে ফিরে সীতার মাকে বলেছিলাম “ চাচী! সীতাকে আমি রোজ পড়াব। তুমি ওকে হিন্দি স্কুলে ভর্তি করে দাও। আমি সেভেন ,এইট হিন্দি পড়েছি। আমি প্রাথমিক পড়ানো পড়িয়ে দেব।” সাথে সাথে সীতা বলে ওঠে “আমি পড়ব না। আমার মুখ দুখায়।” বললাম, ``বেশ! পড়তে হবে না। আমি গল্প বলব, শুনবি। আর ছবি আঁকব দুজনে কেমন?`` একটু গররাজি হয়ে ও চাচী বললেন “সীতা কি মর্জি।” অনেক যত্নে কয়েক মাসে অক্ষর পরিচয় হলেও সব কটা তখনও হয়নি কিন্তু ওরই মধ্যে নিজের নামটা বেশ লিখতে শিখেছে। তার পর আর আসে না। শুনলাম ওর বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এখন সে শ্বশুর ঘরে যাবে না। বাড়ির, ক্ষেতের কাজ কর্ম শিখে সতের আঠারো বছর বয়স হলে তারপর ঘটা করে বর এসে নিয়ে যাবে।
অনেক গুলো বসন্ত পার করলাম। আমিও সংসারী এখন। একদিন দুপুরে ছেলেরা স্কুলে, স্বামী কাজে। বাড়িতে আমি একাই। কলিংবেলের আওয়াজে দরজা খুলে দেখি সেই চাচী! প্রণাম করে বললাম কেমন আছ? এমন সময় চাচীর পিছন থেকে বেরিয়ে এসে বলল - “ দিদি ! আমি সীতামণি! “ আমি তো অবাক! কতদিন পর দেখলাম। ভিতরে ঢুকিয়ে তাদের দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। সীতা খুব আনন্দের সাথে বলল “ আমরা কোর্ট থেকে আসছি। জান দিদি! আমি নিজে সই করলাম। আমার শ্বশুর মশাইয়ের জমি ভাগ হল তো ! সেদিন তুমি আমাকে শিখিয়েছিলে বলেই আজকে এই জমিনটা পেলাম।“
আমি অবাক হয়ে ভাবি। কিছুই করি নি রে তোর জন্য! তাতেই এত সম্মান?
“ আমি শুনে হাসি আঁখি জলে ভাসি ।”
No comments:
Post a Comment